ওরাও ভালোবাসতে জানে

ওরাও ভালোবাসতে জানে

হ্যাগা ও দিদিমনি, বলি তোমার বাড়ির মিস্ত্রি গুলো এত্ত দিন ধরে কাজ করছে সেই একনাগাড়ে, কি নোংরা টাই না করে রেখেছে বলোতো চারিদিকে। আমার হয়েছে যত্ত জ্বালা, ওদের দুবেলা খ্যাটনের জোগাড় করো রে, ঘর বাড়ি মোচো রে, বাসন মাজো রে, বলি আমার গতরের বুঝি কোনো দাম নেই গা তোমার কাছে? বলি আর কদ্দিন মিস্ত্রি দের কাজ চলবে বলো দিকিনি, আর যে পরিষ্কার করে করে পারিনে বাপু!


এটা যে ঝিনটির গলার আওয়াজ তা শুধু বাড়ির মালকিন কেয়া ম্যাডাম না, বাড়ির আশপাশের প্রতিবেশীরাও জেনে গেছে। ঝিনটি হোলো এ বাড়ির কাজের মেয়ে, সারাদিন সে এই বিশাল বাড়ির দেখাশোনা সব করে,সন্তান সন্ততি হীন নির্ঝঞ্ঝাট বিধবা স্কুল টিচার কেয়া ম্যাডাম ওরফে কেয়া মিত্র হলো এই বাড়ির মালকিন।ঝিনটির তখন হবে বছর দশ বয়স, ট্রেন লাইনের ওপারের বস্তির মালিক মুসকান বেগমএর হাত ধরে এসেছিলো এবাড়িতে কাজ করতে, আজ আট টা বছর কেটে গেছে মেয়েটা একই ভাবে এ বাড়িতে কাজ করে চলেছে। কেয়া ম্যাডামের কাছে অল্প অল্প লেখা পড়াও শিখেছে। এখন সারাদিনের রান্না বান্না সেড়ে, বাসন পত্র মেজে, ঘর দোর মুছে, রাতের বেলা রাতের রান্না টুকু সেড়ে দুটো সিরিয়াল গিলে, সারা পাড়ার হাঁড়ির খবর কেয়া ম্যাডামের কানে ঢেলে তবে গিয়ে ঝিনটি বাড়ি ফেরে। বাড়ি মানে ঐ রেল বস্তি। কেয়া ম্যাডাম কতবার বলেছে ঝিনটি কে পাকাপাকি ভাবে এবাড়িতে থেকে যেতে, কিন্তু মুসকান বেগমের মুখের দিকে চেয়ে মেয়েটা থাকতে পারেনা, মুসকান বেগম ঝিনটির মা নয়, কিন্তু মায়ের থেকেও বেশি কিছু। ঝিনটি জন্মানোর সময় ঝিনটির মা মারা যায়, তারপর থেকেই ওকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে মুসকান বেগম, বড্ড ভালোবাসে মেয়েটা মুসকান বেগম কে। ওকে আম্মাজি বলে ডাকে। আসলে ঝিনটি মেয়েটাই ওরকমই,ভীষণ সহজ সরল, একটু পাগলী কিন্তু মন টা খুব খাঁটি, খুব মায়ায় জড়াতে পারে সকলকে। আর প্রচন্ড ভালোবাসার কাঙাল, ও যেমন মানুষ কে ভালোবাসতে পারে ঠিক তেমন ই ওও চায় ওকে কেউ ভালোবাসুক। আসলে আম্মাজি আর কেয়া দিদিমণি ছাড়া তো ওর জীবনে কাছের বলতে কেউ নেই। তাই ও ওর জীবনের এই দুজন মানুষ কে বড্ড ভালোবাসে।

ADVERTISEMENT
Swades Times Book

 

কিন্তু, ইদানিং মাস খানেক হোলো কেয়া ম্যাডাম তার বাড়ির দোতলার ছাদ সারাই, রান্নাঘর সারাই এসবের জন্য মিস্ত্রি লাগিয়েছে, পুরোনো বাড়ি, দেয়াল খসে খসে পড়ছে, তার জন্যই মিস্ত্রির কাজ করতেও সময় লাগছে, যে দিকটাই হাত লাগায় খসে খসে পড়ে, আর সারা বাড়ি বেচারি ঝিনটিকেই পরিষ্কার করতে হয়। শুধু তাই না সকালে বিকেলে দুবেলা চা করে দেওয়া, দুপুরে ভাত রেঁধে দেওয়া, এসবও বেচারিকেই করতে হয়। কেয়া ম্যাডাম তার স্কুল, স্কুলের পর থিয়েটার নাটক বন্ধুবান্ধব টিউশন এসবের জন্য বাড়ির কাজ বলতে গেলে সেরকম কিছুই করতে পারেননা, তাই এ নিয়ে রোজ ই প্রায় ঝিনটি চিলচিৎকার জুড়ে দেয়। তারপর আবার ধীরে ধীরে নিজেই ঠান্ডা হয়ে যায়।
মিস্ত্রি গুলোও ওর পেছনে খুব লাগে, তাই ও আরও ওদের ওপর রেগে যায়। আসোলে সবাই প্রায় ঝিনটির পরিচিত, কেউ কেউ তো ওদের বস্তিতেই থাকে, শুধু একজন ছাড়া, সে হোলো কেষ্টা। ভালো নাম কেষ্ট কুমার। এসেছে ঝিনটিদেরই বস্তির কালু দার সাথে, ওর দেশের বাড়ির দিকে থাকে, এসেছে হাতে হাতে কাজ শিখতে। যখন সবাই মিলে ঝিনটি কে ক্ষেপায়, ওর পেছনে লাগে তখন একা কেষ্টা চুপ করে ঝিনটির দিকে চেয়ে থাকে। যেনো চোখ দিয়ে ও ঝিনটিকে আগলে রাখে। বড়ো মায়ায় ভরা ছেলেটার চোখ দুটো। ছেলেটা নাকি পড়ালেখা করতো, মাধ্যমিক ও দিয়েছিলো, পাশ ও করেছিলো, তারপর বাবা মারা যাওয়ার পর ওখানকার ই এক কারখানায় কাজে লেগেছিলো, বছর চারেক কাজ ও করলো,কিন্তু মাস খানেক আগে মাও দশ দিনের জ্বরে ভুগে চলে গেলে কালু দার সাথে কোলকাতায় চলে আসে হাতে হাতে রাজমিস্ত্রির কাজ শিখতে। ছেলেটার চেষ্টা আছে, এই মাসখানেকেই ও অনেক কাজ শিখে ফেলেছে। ওরা সারাদিন সকাল আটটা থেকে কাজ করে সেই বিকেল পাঁচ টা অবধি। তারপর যে যার বাড়ি চলে যায়, কেষ্টা শুধু এ বাড়িতেই ছাদের পাশে একটা জায়গায় থেকে যায়। কেষ্টা যে ঝিনটির দিকে মাঝে মাঝে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তা শুধু মিস্ত্রি দের চোখেই পড়েনি,সেটা কেয়া ম্যাডামের চোখও এড়ায়নি।


কিন্তু সাতসকালে ঝিনটির চিৎকার শুনে খানিক বিরক্ত হয়েই কেয়া দেবী বললেন-
-কিরে ঝিনটি? আবার কি হোলো? কেষ্টা কিছু বললো নাকি?
-তুমিও যেমন বলো দিদি, ঐ কেষ্টার অতই ক্ষমতা এই ঝিনটি কে কিছু বলবে? ও তো বলে না কিছু, করে শুধু। রাজ্যের বিড়াল ডেকে ডেকে খাওয়াবেন আপনার নবাব পুত্তুর কেষ্টা। আজ ঐ হুলো বেড়াল টা দেখো ওর জন্য ঘরে ঢুকে কি নোংরা টাই না করে রেখে গেছে। এসব আদিক্ষেত্যা আমার একদম ভাল্লাগেনা কিন্তু এই বলে দিলাম।
-তো এতে এতো চেঁচামেচির কি হলো? ওকে বল যেন এরকম না করে। তোর রোজের চিৎকারে তো বাড়িতে কাক চিল বসতে পারবে না। আমার বাপু এতো চেঁচামেচি পোষায় না।
-সেই তো, তুমি তো শুধু এখন আমারই দোষ খুঁজবে, কেন গা তোমার পেয়ারের কেষ্টা কে বলো না আমার হয়ে আজ একটু ছাদ টা , দালান টা ঝাঁট দিয়ে দিতে, ওরই তো পীড়িতের বেড়ালগুলো এসব করেছে, সারা ছাদ দালান ময় মাছের আঁশ,কাঁটা এসব ছড়িয়েছে।
হটাৎ কোত্থেকে কেষ্টা এসে ঝিনটির হাত থেকে ঝাঁটা আর বেলচা নিয়ে ঝাঁট দিতে লেগে গেলো।


-দেখ তো, ছেলে টা তোকে কত মানে,আর তুই কিনা দিনরাত ওদের পিছনে পড়ে থাকিস।
সত্যিই কেষ্টার আজকের ব্যবহারে ঝিনটি অবাক হয়ে গেছে। এর আগে ওর হাত থেকে তো কেউ ঝাঁটা নিয়ে এরকম করেনি। ব্যাটাছেলেরা তো নাকি বৌ মেয়েদের দিয়ে এসব কাজ করায়, কিন্তু কেষ্টা তো এরকম না, ও নিজে কাজ টা করে দিলো।
-এই নাও ঝিনটি, তোমার ছাদ আমি ঝাঁট দিয়ে দিয়েছি, আর কিছু দরকার হলে আমাকে বোলো। শুধু বিড়াল গুলোকে দুবেলা খাওয়াতে দিয়ো।
নাহঃ সত্যি,ছেলেটার স্বভাব টা বড্ড মিষ্টি। ঝিনটি যতই ওর ওপর রাগ করুক, ও ও বোঝে যে কেষ্টারো জীবনে কত দুঃখ। ঝিনটির তো তবু মুসকান বেগম আছে, কেয়া দিদিমনি আছে, কিন্তু কেষ্টার জীবনে তো সেটাও নেই। ঐ বিড়াল গুলোকে আদর করেই কেষ্টা নিজের দুঃখ ভোলার চেষ্টা করে,আর ঝিনটি কিনা সেটাতেও বাধা দিচ্ছে, এসব ভেবে ঝিনটি নিজেই লজ্জায় পড়ে যায়।


-থাক থাক, খুব হয়েছে,তোমাকে আর কিছু করতে হবে না,যাও গিয়ে নিজের কাজ করো। এই ঝিনটি একাই একশো, ওর কাউকে লাগবে না।
-জানি লাগবে না, তবু যদি কখনো লাগে, ডেকো।
তখন সত্যিই আর কিছু বলতে পারেনি ঝিনটি, শুধু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে ছিলো। ওদের অলক্ষ্যে হয়তো ভগবান ও ওদের দিকে তাকিয়ে হেসেছিলেন।সেদিন অন্যান্য দিনের থেকে একটু বেশিই দেরি করছিলো ঝিনটি বাড়ি ফিরতে। হাতের কাজ সারতে সারতে ওর প্রায় ৯টা বেজে গেছিলো। হঠাৎ কেয়া দেবীর বাড়ির দরজায় সজোরে ধাক্কার আওয়াজ পেয়ে ধড়ফড় করে গিয়ে খুলতে দেখে সামনে বস্তির কালু দা আর কিছুজন দাঁড়িয়ে আছে।
-তুই এখনো এখানে কাজ করছিস, আর ওদিকে তো সর্বনাশ হয়ে গেলো রে ঝিনটি।
-কি কি বলছো? কি হয়েছে?
-শিগগির তুই বস্তি তে চল ঝিনটি, মুসকান বেগম কে বোধহয় আর আমরা বাঁচাতে পারলাম না রে ঝিনটি! বলতে বলতে অঝোরে কেঁদে ফেললো কালু দা।
কালুদা কে এরকম হতবম্ভের মতো কাঁদতে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় ঝিনটি।
-কি যা তা সব বলছো? বলবে তো কি হয়েছে!
-এই,কি হয়েছে রে ঝিনটি? এতো চেঁচামেচি কিসের? কেষ্টা একবার নিচে আয় তো বাবা।
-ম্যাডাম, বস্তিতে আগুন লেগে গেছে, তোদের ছাউনি টা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ভেতরে মুসকান বেগম ছিলো। মুসকান বেগম বোধহয় আর নেই।



সেদিন মুসকান বেগমকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। মুসকান বেগম ঝিনটির মাথায় ছাদ হয়ে ছিলেন, ওকে উনি সমস্ত বিপদ থেকে আগলে রাখতেন, কিন্তু উনি চলে যাওয়ার পর ঝিনটির শেষ আশ্রয় স্থল টাও চলে গেছিলো। বড্ড মুষড়ে পরেছিলো হাসিখুশি ঝগরুটে মেয়েটা। দেখে কেয়া দেবীর বড্ড মায়া হতো। কিন্তু এটা ভেবে স্বস্তি পেতেন ঝিনটির এই একাকিত্বে কেষ্টা সবসময় ওর সাথ দিতো, ওকে আগলে আগলে চলতো, কক্ষনো ঝিনটিকে একা চোখের আড়াল করতে দিতো না, কেষ্টার বন্ধুত্বে আর কেয়া দেবীর স্নেহে আসতে আসতে ঝিনটি স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছিলো। মুসকান বেগম মারা গেছেন তাও প্রায় মাস খানেক হয়ে গেছে, কেয়া দেবীর বাড়ি মেরামতির কাজ ও প্রায় শেষ, আর হপ্তাহ খানেক এর মধ্যেই হয়তো কেষ্টাও ফিরে যাবে তার দেশে। তাই ঝিনটির ও মন মেজাজ ভালো নেই। ওরা আসলে এখনো বড্ড ছেলেমানুষ, সহজ সরল, ভালোবাসা কি হয়তো এখনো বোঝেনি, তাই কেউই কাউকে মুখ ফুটে মনের কথা বলে উঠতে পারেনি।

সেদিন সন্ধ্যায়, কেষ্টা চলে যাবে বলে ঝিনটি কেষ্টার জন্য কিছু বেল ফুল পারতে পাশের পাড়ায় ওর বান্ধবী সরলার বাড়ি গিয়েছিলো। বন্ধুর সাথে গল্প করে ফিরতে ফিরতে ঝিনটির প্রায় দশ টা বেজে গিয়েছিলো, ঝিনটি মনে মনে জানতো কেষ্টা যা ক্যাবলা ও তো কোনোদিনও ওকে পিরিতের কথা মুখ ফুটে বলবেনা, তাই ঝিনটিকেই যা করার করতে হবে। তাই ও মনে মনে ঠিক করেছিলো বেল ফুল দিয়ে সে কেষ্টা কে নিজের মনের কথা বলবে। তাই খুব খুশি মনে নাচতে নাচতে ও বাড়ি মানে কেয়া দেবীর বাড়ি ফিরছিলো, কারণ মুসকান বেগম মারা যাওয়ার পর কেয়া দেবী আর ঝিনটিকে বস্তি তে থাকতে দিতে চায়নি। নিজের কাছে এনে রেখেছিলো।

সরলা দের বাড়ির রাস্তা টায় খুব দরকার না হলে কেউ একটা যায় না, গলির শেষের মাথায় খড়ের ছাউনি দেওয়া বাড়ি সরলাদের। সেদিন ওদের বাড়ি থেকে ফেরার পথে কিছুটা রাস্তা গিয়ে কি হয়েছিলো আর মনে ছিলো না ঝিনটির। শুধু মুখটা বাঁধা আর শরীরে অসহ্য যন্ত্রনা অনুভব করেছিলো ঝিনটি। আর জলে ঝাপসা হয়ে যাওয়া চোখে দেখেছিলো কেষ্টার জন্য তোলা সাদা বেল ফুল গুলো রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তারপরে ওর আর কিছু মনে ছিলো না।


জ্ঞান যখন ফিরেছিলো ঝিনটি দেখেছিলো ওর পাশে কেষ্টা বসে আছে ঐ রক্ত মাখা ফুলের মধ্যে থেকে একটা ফুল হাতে আর দুচোখ ভরা জল নিয়ে।
ঝিনটি কে চোখের পাতা খুলতে দেখে মৃদু হেসে বলেছিলো-
-তুমি ঠিক আছো ঝিনটি?
-তু.. তু.. তুমি..? আমি এখন কোথায়?
-তুমি একদম ঠিক আছো ঝিনটি, তোমার কিচ্ছু হয়নি, ভয় পেও না, কেয়াদিদমনি আর আমি তোমার সাথে আছি, ঐ গুন্ডা গুলো তোমাকে কিচ্ছু করতে পারবে না, তুমি এখন হাসপাতালে আছো।
-তুমি জানো, ঐ অসভ্য ছেলেগুলো আমার সাথে কি করেছে?
-জানি ওরা তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে, তুমি কেন ঐ রাস্তায় গিয়েছিলে? আমাকে বললে তো আমি যেতাম তোমার সাথে।
-আমি তো তোমার জন্য বেল ফুল পেড়ে আনতে গেছিলাম! তুমি তো বেল ফুল খুব ভালোবাসো তাই..
-তুমি আমার কথা এতো ভাবো ঝিনটি?
-ভাববো না? তুমি যে আমার কেষ্ট ঠাকুর। আমার প্রানের বন্ধু।
-আমাকে বিয়ে করবে ঝিনটি? তোমাকে কথা দিচ্ছি কোনোদিন কষ্ট দেবো না, খুব ভালোবাসবো।
-কিন্তু আমি যে অপবিত্র হয়ে গেছি..! তাছাড়া তুমি তো পরশুই দেশে ফিরে যাবে!
-এই তুমি আমাকে তোমার কেষ্ট ঠাকুর ভাবো? কেষ্ট ঠাকুর বুঝি তার ভক্তের এরকম বিপদে তাকে অপবিত্র বলতো? তুমি কেন অপবিত্র হবে ঝিনটি? অপবিত্র তো তারা যারা তোমার সাথে এরকম টা করেছে, তুমি তো কিচ্ছু করোনি, আমার মা বলতেন, অন্যায় যারা করে তারা পাপী, তুমি তো কোনো অন্যায় করোনি,তাহলে আমি তোমার কেষ্ট ঠাকুর হয়ে কিকরে তোমাকে একা ফেলে চলে যাই বল দরজার ওপাশ থেকে কেয়া দেবী আজ দুচোখ ভরা আনন্দাশ্রু নিয়ে ছেলে মেয়ে দুটি কে মন ভরে দেখছে, আর দশ বছর আগে তার মেয়ে মিলির সাথে ঘটে যাওয়া এই একই রকম নারকীয় ঘটনার কথা মনে করে অবাক হচ্ছেন। সেদিন ও মেয়েটা এরকমই হসপিটালের বেডে শুয়ে ছিলো, পাশে দাঁড়িয়েছিলো ওর শশুর বাড়ির লোকেরা আর হবু জামাই। কিন্তু কেষ্টার মতো করে মিলির পাশে দাঁড়াতে না, একজন ধর্ষিতা মেয়েকে যে তাদের বাড়ির বৌ করে নিয়ে যাওয়া যাবে না, সেটা বোঝাতে। হাসপাতালে ডাক্তার দের দয়ায় সেদিন মিলি প্রাণে বেঁচে গেলেও অপমানে লজ্জায় বাড়ি ফিরে আত্মহত্যা করেছিলো বাইশ বছরের মেয়েটা। সেদিন কেষ্টার মতো করে কেউ যে ওর পাশে ছিলো না। হায় রে আমার সভ্য সমাজ, সেদিন মান সম্মানের ভয়ে যে অমানবিকতা টা করেছিলো সভ্য শিক্ষিত লোকেরা, আজ অশিক্ষিত কেষ্টা মান সম্মানের তোয়াক্কা না করে সেই মানবিক কাজ টা করে দেখালো। ভাগ্গ্যিস এদের সম্মানের বালাই নেই। ভাগ্গ্যিস!

 

 
 
  •  

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait