প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য পুরাণে সূর্য দেবতার পূজার এই ব্যাখ্যা পাওয়া যায়

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য পুরাণে সূর্য দেবতার পূজার এই ব্যাখ্যা পাওয়া যায়

হিরণ্যপাণি

 
ঋগবেদ এর প্রথম মন্ডলের ২২ নম্বর সূক্তে সূর্যদেব কে স্তুতি করা হচ্ছে এইভাবে :
 
"হিরণ্যপানিমুতয়ে সবিতারমুপ হ্বয়ে স চেত্তা দেবতা পদম,
অপান নপাতমবসে সবিতারমুপস্তুতি। তস্য ব্রতান্যুশ্মসি।। (৫/৬)"
 
অর্থাৎ, হিরণ্যপানি সবিতাকে আমি রক্ষনার্থে আবাহন করি, সে দেব যজমানের প্রাপ্য পদ জানিয়ে দেবেন। জলশোষক সবিতাকে রক্ষনার্থে আবাহন করো, আমরা তাঁর যজ্ঞ কামনা করি।
 
ঋগবেদ এর সুক্তগুলি পড়লে আমরা জানতে পারবো, সূর্যদেবতাকে সমস্ত জগতের অন্ধকার বিনাশকারী, অতীব মঙ্গলময় এক দেবরূপে চিহ্নিত করা হচ্ছে। উষাদেবীর সাথে ক্রীড়ারত অবস্থায় পূর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্ত অবধি তিনি বিচরণ করেন। গরুড় দেবের দাদা অরুণ তাঁর রথের চালক, আবার সূর্যের আরেক নামও অরুণ। সূর্য আদিম আর্যদের উপাস্য ছিলেন, গ্রিকদের 'Helios' শব্দটি সূর্য শব্দের রূপান্তর মাত্র। লাটিনদের 'Sol' ও টিউটনদের 'Tyr' ও সূর্য শব্দটির রূপান্তর। ঋক এ সূর্যকে হিরণ্যপাণি বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। স্বর্ণের ন্যায় কিরণসম্পন্ন সূর্যকে প্রথমে সুবর্ণপাণি বলা হত। আকাশ হতে যখন অন্ধকার দূরীভূত হয়, আলোর প্রকাশ ঘটে, তাই সবিতাকাল। সূর্য আমাদের আকাশদেব। গ্রিকদের 'জিউস', লাটিনদের 'জু(পিটার)', জার্মানদের 'টিউ' ও 'জিও' আসলে সূর্যদেবেরই বিভিন্ন নাম। সূর্যের উদয়গিরিতে আরোহন, মধ্য আকাশে স্থিতি এবং অস্তাচলে অস্তগমন, এই তিনটিকে ভগবান বিষ্ণুর তিনটি পদক্ষেপ বলে বেদে বর্ণনা করা হয়েছে।
 
বেদ যা বলছেন তা আমরাও উপলব্ধি করতে পারি। সূর্যদেবতার প্রকাশ ছাড়া আমরা মরলোকের জীবেরা নিতান্তই অসহায়। জীবসকল, বিভিন্ন প্রাণী, উদ্ভিদ মায় ওষধিসকলও সূর্যের রশ্মির ওপর নির্ভরশীল। এমনকি বিজ্ঞানের ভাষায় আমরা যাকে precipitation, condensation, evaporation বলে থাকি, অর্থাৎ যে পদ্ধতির দ্বারা মেঘ সৃষ্টি ও বৃষ্টি হয়, সেটিও সূর্যের তাপের দ্বারাই হয়। সূর্যের প্রকাশ আবার জ্ঞানালোকের মতোই। যা মনের অন্ধকার দূরীভূত করে। ঠাকুর বলছেন, "জ্ঞানসূর্য উদয় হলে ভক্তিহিমের বরফ গলে।"
 
আজ সবিতৃমন্ডলের প্রধান দেবতা সূর্যদেবের পূজা। তাঁর উদ্দেশ্যে নিবেদিত হবে ভক্তিঅর্ঘ্য। এ শুধু এক প্রদেশের পুজো নয়, বরং মহান আর্যজাতির উত্তরপুরুষদের এক ঐতিহ্য। যিনি প্রকাশের কিরণ দ্বারা অন্ধকার দূরীভূত করেন, তাঁর উদ্দেশ্যে পুজো।
 
সেই হিরণ্যপাণি সূর্যদেবতাকে কোটি কোটি প্রণাম। জগৎচরাচর উদ্ভাসিত হোক নব রবিকিরণে।
 
শুভ ছট পূজা।
 
সূত্র: ঋগবেদ ।
ADVERTISEMENT

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait