দ্য রেন ওয়াচার

দ্য রেন ওয়াচার

ঝির ঝির বৃষ্টি, দমকা হাওয়া কিছুক্ষণ। আকাশ কালো করে মেঘ, আর তারপর প্রচন্ড মেঘগর্জনের সাথে অঝোরে বৃষ্টি! এই আমার প্রিয় ঋতু, বর্ষাকাল। ছোটো থেকে বর্ষা ঋতু আমার এত প্রিয় কেনো জানিনা। শুধু জানতাম বৃষ্টি বেশি হলে স্কুল ছুটি হয়ে যায়। সে এক মহা আনন্দের ব্যাপার। তৈরী হয়ে বাবার সাইকেলে চেপে রেনকোট পরে স্কুলে যাও আর গিয়ে শোনো যে আজ ছুটি, কম ছাত্র ছাত্রী আসার কারণে। স্কুলের পাশের দোকানের কেনা টিফিনের জন্য গরম গরম লুচি তরকারি অতঃপর বাড়ি এসেই খাওয়া। কিছুটা হলেও রুটিনমাফিক পড়াশোনা থেকে ছুটি! শুধুমাত্র তাই জন্যেই নয়। ছোটবেলায় জমা জলে নৌকা ভাসানোয় ছিল বর্ষার একটা আকর্ষণ। খোলা জানলা দিয়ে দুহাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ছিটে গায়ে মাখার আনন্দই ছিল আলাদা। আজকাল তো ছোটো ছেলেমেয়েদের প্রচন্ড বৃষ্টিদিনেও স্কুল কামাই করানো যায় না, ওদের যেতেই হবে। সুতরাং ওই তৈরী হয়ে স্কুল গিয়েও ফিরে আসার আনন্দ ওরা কোনদিনই পাবে না, ওটা ছেড়েই দিলাম। কিন্তু বাকিগুলো? এই যেমন নৌকা ভাসানো, জানলায় দুহাত বাড়িয়ে বৃষ্টিফোঁটা মেখে নেওয়া, এগুলো চলতে থাকুক। আজও আমি যখন এই ছেলেমানুষীগুলো করি, আমার হাতের সাথে আর একজোড়া কচি হাত এগিয়ে এসে আমায় সঙ্গ দেয়, আমার শৈশবটাকে মনে করায়। “আমরা এই করতাম, আমরা ওই করতাম”—-এসব গল্প হাঁ করে শুনতে থাকে, অবাক দৃষ্টিতে। ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করে মাঝে মাঝে!

ADVERTISEMENT

এতো ব্যস্ত তো আমরা ছিলাম না ওদের মতো। সুন্দর সাজানো একটা শৈশব ছিল। পাড়ায় সম অসমবয়সী কত বন্ধু ছিল। বৃষ্টিদিনে এবাড়ি থেকে চপ তো ওবাড়ি থেকে বেগুনীর (পকোড়া নয় কিন্তু ) আসা যাওয়া লেগে থাকত। অবশ্যম্ভাবী ছিল খিচুড়ি ডিমভাজা। কত খেতাম সে আর বলে লাভ নেই, কিন্তু ওই যে খিচুড়ি হবে খিচুড়ি হবে এই একটা আনন্দ লেগে থাকত। সর্দির ধাত ছিল তাই একটু বৃষ্টি হলেই রাতে শোয়ার সময় গায়ে মোটা চাদর চাপা দিতে হত। ওই চাদরের ভিতর গুটিশুটি দিয়ে শোয়া, চারিদিকে বৃষ্টি বৃষ্টি গন্ধ আর ‘কর কর করাত’ বাজের শব্দ, ছোটো শরীরের মাথায় আর মনে অদ্ভূত এক কুহকের সৃষ্টি করত। একটু বড় হতে যখন “পথের পাঁচালী” হাতে পেলাম, কি আশ্চর্য, অপুও তো দেখলাম বৃষ্টি ভালবাসে! আবার বৃষ্টি পড়বে আর ও তামাকের দোকান করে তামাক বিক্রি করবে, ওর মনের ইচ্ছের সাথে আমার অনেক ইচ্ছেই মিলে যেতে থাকল। ওর কল্পনা, ওর দুঃখ, ওর অনেক কিছু না পাওয়া যেন আমার চোখের জলের সাথে মিশে ওই বৃষ্টির মতই ঝরে পড়তে লাগলো।

আরো কত শত চরিত্রেরা, শ্রীকান্ত, ইন্দ্রনাথ, মেজদিদি, গোরা, ফটিক, অর্জুন, কর্ণ, ভীষ্ম, ঠাকুর-নরেন, রু, মির্চা, আরো অনেকে, অনেকজন এসে ওই বৃষ্টিদিনে ভীড় করতে লাগলো আমার ঘরের জানলায় আমার সাথে। আমার যত কথা ওদের সাথে, যত প্রশ্ন ওদেরকে। বিড়বিড় করতে থাকা আমাকে দেখে কেউ কেউ কিছু না কিছু বলত বা বলে আজও নিশ্চই! কি এলো গেলো তাতে? তোমরা কি কথা বলো না তোমাদের বন্ধুদের সাথে?

চার্লস চ্যাপলিন বলেছিলেন, তিনি বৃষ্টিতে হাঁটতে ভালবাসেন কারণ তাঁর চোখের জল কেউ দেখতে পায় না বলে। কি অদ্ভূত স্প্লিট পারসোনালিটি। যে লোক দুনিয়াশুদ্ধ লোকজন কে হাসান তিনি নাকি বৃষ্টিজলে নিজের চোখের জল মেশান!

বর্ষাকালের এ বড় মঙ্গল আমাদের ওপর। ছোটোবেলার ফেলে আসা দিনগুলোকে মেকি আভিজাত্যের মোড়কে মুড়তে পারব না কোনদিনই। সে চেষ্টাও নেই৷ এক আকাশ কালো মেঘ আর বৃষ্টি দেখতে দেখতে সমারসেট মম এর “দ্য লোটাস ইটার” গল্পের নায়ক থমাস উইলসন এর মত আমি মরতেও পারি!!!

 

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait