স্বদেশ প্রেমকথা

আমরা প্রেমের দেশে বাস করি। ভারতের প্রতি ধূলিকণায় প্রেম, এ’দেশে ভালবেসে হওয়া বয়, নদীসকল প্রেম ক্ষরণ করে৷ আবহমানকাল থেকে আমরা শুধু প্রেমের কথাই লিখে এসেছি। দয়িতের বনবাসে রাজসুখ ত্যাগ করা দয়িতার কাব্য, এক প্রেমময় পরপুরুষের জন্য নিশীথের অন্ধকারে উতরোল বর্ষার মধ্যে অভিসারে যাওয়া নীল নিচোলে মুখ-ঢাকা এক নায়িকার কাব্য, দেবী চণ্ডীকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে তাকে দারিদ্র‍্যের কাহিনি শোনানো এক ব্যাধ-পত্নীর ছদ্মদুঃখের গল্প।

তবে ফের প্রেমের গল্পের সংকলন কেন?

কারণ মূলত দুটি।

প্রথমত, অমৃতে অরুচি হয় না। যতবার বলা হয়, ততবারই প্রেমের কাহিনি নিজেকে নতুন পাতায় ভরে-ওঠা বসন্তের বৃক্ষ করে তোলে।
আর দ্বিতীয়ত, সেদিনের প্রেমের কথা লিখেছেন সেদিনের রচনাকারেরা৷ আজকের প্রেমকাব্য লিখে রাখব না আমরা? গত দুই দশকে এই বিশ্বপৃথিবী এক সামূহিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে উদ্ভ্রান্ত গতিতে ছুটে চলেছে৷ এই পরিবর্তন প্রেমকেও পালটে দিচ্ছে মুহূর্তে মুহূর্তে। সেই বদলে যাওয়ার ইতিবৃত্ত লিখে রাখতে হবে বইকি! নইলে আমাদের উত্তরপুরুষেরা জানবে কী করে— একদিন আমরাও ভালবেসেছিলাম! যন্ত্রযুগের মত্তমাতঙ্গ বেগের মধ্যেও একটি নিমেষের জন্য স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল পৃথিবী?

এই বইয়ে তেমনই কিছু শাশ্বত গল্প রইল। রইল আমাদের সেই উত্তরসাধকদের জন্য, যাদের উদ্দেশ্যে আমরা বলে যেতে চাই—‘ভালবেসেছিল কবি, বেঁচে ছিল যবে।’
স্বদেশের এই উদ্যোগের সঙ্গে প্রথমাবধি জড়িত আছি। বহু গল্প পড়তে গিয়ে চমকে উঠে ভেবেছি—‘আহা! এমনটি তো কই আমি লিখতে পারি না!’
সগর্বে সেই গ্রন্থ আপনাদের হাতে তুলে দিচ্ছি তাই৷ স্মিতহাস্যে বলতে চাইছি—‘আসুন। প্রেমের জগতে স্বাগত।’

                                                                                                                                                        - রাজা ভট্টাচার্য