গোধূলি গগনে রঙের খেলা প্রায় শেষ। পাখিদের বাসায় ফেরার যেন কি তাড়া । ওরা বেশ আছে ভোরের আলো ফোঁটার মুহূর্তে সবাই দলবেঁধে যে যার কাজে বেরিয়ে গেল আবার সূর্য ডোবার সাথে সাথেই হৈ হৈ করে ফিরে পড়ল। কত ছোট প্রাণ তবুও দিনের শেষে বাসায় ফেরে আপনজনের টানে রাতটা কাটায় সুখনিদ্রায়। ঈশ্বরের কি অসাধারন সৃষ্টি ,কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে সবারই আছে আপন জন ,আছে নিজের নিজের মত বাসা, সেই বাসায় যেন তাদের শিকড় সেই টানেতে ফিরে আসবেই হঠাৎ একটা পাতা এসে পড়ল সুমেধার কোলে খুব ধীর ভাবে তাকালো পাতাটির দিকে,তখন প্রায় অন্ধকার নেমে গেছে এতক্ষন কত আবোল তাবোল ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে ছিল রোজ বিকেলে পার্কে হাঁটতে বেরোয় সকালে বেরোতে ভালো লাগে না তাছাড়া অনেক বছর হয়ে গেছে বাড়ি ফেরার কোনো তাড়া নেই এখন বাড়িটা তার কাছে কেবলমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই।
বাসা ঠিক নয় মনের মানুষদের নিয়ে তৈরি হয় বাসা ওখানে কেবল অনেক দিনের পুরনো লোক অন্নদা আর সুমেধা থাকে। অন্নদার একটা বাসা আছে সারাদিন সুমেধার কাছে থেকে সন্ধ্যেবেলা বাসায় যায় কোন দিন জল ঝড় হলে বা সুমেধার শরীর খারাপ হলে থেকে যায়। সুমেধার ছেলে বাবান আমেরিকায় পড়তে যাওয়ার সময় অনেকবার বলেছিল মা তুমি একা থাকতে পারো না তাই অন্নদা মাসিকে রেখে দিও কোন কোন দিন বাড়ি পাঠিও তারপর বছর খানেক পর আমি ফিরে এলে তখন যা হোক একটা ব্যবস্থা করবো সুমেধা বাসার মানে বোঝে তাই অন্নদাকে বাসা ছাড়া করতে চায়না ওটা সম্পূর্ণ ভাবে অন্নদার ওপর ছেড়ে দিয়েছে যেমন বুঝবে করবে, আর বসা যাবে না এবার উঠতেই হয় বাড়ি ফিরলে তবে অন্নদা চা বসাবে অন্নদার হাতে চায়ের জন্য এই সময়টাতে বেশ নেশার মতো হয়ে বাড়ি ফেরে, সুমেধার একটা সময় ছিল একা চা খেতেও পারত না আজকাল সবই যেন কিভাবে সইয়ে নিয়েছে বাড়ি ফিরে কলিং বেল বাজার আগেই অন্নদা দরজা খুলে দিল। সুমেধা ঘর ঢুকতে ঢুকত জিজ্ঞাসা করল তুমি কি করে বুঝে যাও বলতো আমি এসে গেছি। প্রায় দিন বেল বাজাবার আগেই খুলে দাও। তোমার পায়ের আওয়াজ তোমার বাইরের গেট খোলার শব্দে বুঝতে পারি, তাছাড়া তুমি তো ওই যে কি বল আকাশে কি তারা টা ওঠে সেটা দেখেই তবে বাড়ি ফেরার কথা মনে হয় আমিও জানালা দিয়ে দেখি তারাটা উঠল কি, উঠলে বুঝলাম তুমি এবার আসবে। সুমেধা একটু জোরে হেসে বলল ধ্রুবতারা। তুমি এত কিছু মনে রাখ আর শুধু তারার নামটাই ভুলে যাও, তুমিও আমার মতো তারা দেখো তাহলে, অন্নদা বললো ওই তোমার আসতে দেরি হলে দেখি নাও হাত মুখ ধুয়ে এসো চা বসাই, চা এর কাপ নিয়ে অন্নদা বললো দিদিমনি তোমাকে একটা কথা বলব?
সুমেধা বললো কিন্তু কিন্তু না করে কি বলবে বলো, অন্নদা বললো আজ তো মাসের আঠাশ তারিখ মাস শেষ হতে দুদিন বাকি, তুমি যদি এবারে আমার টাকাটা আগেই দিয়ে দাও! এবারে আমার খুব দরকার। সুমেধা জানে একান্ত দরকার তাই চাইছে, না হলে তো টাকা চায় না কোন দিন তারপরই হঠাৎ চমকে উঠল বলল কি বললে আজ কত তারিখ ? অন্নদা বললো আঠাশ। সুমেধা কিরকম স্থির হয়ে গেল ওর শিরদাঁড়া বরাবর যেন একটা ঠান্ডা স্রোত এর মত কি বয়ে গেল কি রকম অস্থির লাগছে চায়ের কাপটা রেখে দিলো আজ চা খাওয়ার ইচ্ছে নেই চোখটা বন্ধ করে ফেলল অন্নদা অন্যরকম দেখে বললো তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে জল খাবে দাঁড়াও বলে জল এনে দিল তাড়াতাড়ি তারপরে সুমেধা বলল পাখাটা হাল্কা করে চালিয়ে দাও। অন্নদা বললো তুমি বিছানায় শুয়ে পড়ো আমি খোকাবাবু কে ফোন করি কোন ওষুধ দিতে হবে কি! সুমেধা বললো তুমি এতো ব্যাস্ত হয়ো না একটু রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে। আর হ্যাঁ কাল সকালে তোমার টাকা দিলে চলবে তো? অন্নদা তাড়াতাড়ি বলে উঠল তুমি এখন রেস্ট নাও ওসব কথা পরে হবে। সুমেধা আস্তে করে বলল, “কাল এসো তাহলে”। অন্নদা আজ বাড়ি যাবেনা বলতে সুমেধা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো নাগো হঠাৎ কি রকম লাগছিল, এখন ঠিক আছি সেরকম দরকার হলে তোমাকে ফোন করব তাছাড়া আমি চলে গেলে বা কার কি, অন্নদার এবার চোখে জল এসে গেল তা শর্তেও মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলল এসব কথা আর বলবে না বলে দিলাম আচ্ছা আচ্ছা বলবো না এখন যাও দেখি আমি একটু শুয়ে পড়ি অন্নদা আর একবার ফোন এর কথা মনে করিয়ে দিয়ে সব গুছিয়ে রেখে চলে গেল। সুমেধা যেন একটু একাই থাকতে চাইছিল আবার ঠিক একা হতে চাইছিল না, একটা অস্থির টানাপোড়েন ,আজ আঠাশে নভেম্বর একসময় সুমেধার জীবনে এই দিনটার বিশেষ গুরুত্ব ছিল সকাল থেকে মনটা খুশিতে ভরে থাকত সে কি হৈ হৈ টাই না করতো কখনো বা নিজেকে নতুন কোণের মতো দেখতো সকাল থেকে বন্ধুবান্ধবদের সাথে কথার ফুলঝুরি,হাসির বন্যা নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করত ।শুভায়ন ওকে প্রশ্রয় দিত কখনো কখনো শুভায়ন বলতো দেখো বিয়ে প্রায় বারো বছর হয়ে গেছে মানে এক যুগ এখনো তুমি ওই দিন টা নিয়ে এত পাগলামি করো না লোকে কী বলবে এটা আমাদের দুজনের মধ্যেই রাখো । সুমেধা বললো ইস দুজনের মধ্যে কেন থাকবে আমরা কি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিলাম, কত লোক জনের মধ্যে কত আলোর রোশনাই, কত বাজি পোড়ানো ,কত জাঁকজমক করে বিয়ে হল লোকে এখনো বলে তোদের বিয়েতে খুব মজা করেছি তা সেই বন্ধু আত্মীয়দের ডাকতে হবে না এটা আমার জীবনের সব থেকে রঙিন দিন আর এক দুই নয় যত যুগ বাঁচবো এ রকমই পাগলামী করবো ।না তোমার সাথে পারা যাবে না তাই যা পারো করো ।সুমেধা একটু রাগ দেখিয়ে মানেটা কি তুমি কি বিয়ে করোনি আমি কি একা করেছি শুভায়ন বললো আচ্ছা বাবা বল কি করতে হবে আজ সারা দিন ছুটি নিয়েছি আচ্ছা চলো তোমার পছন্দমত একটা জিনিস আগে কিনে দিই।সুমেধা বলল আচ্ছা বেরসিক তুমি কেন আগে থেকে কিনে রাখ নি আজকে বেরোবার সময় আছে বিকেলে লোকজন আসবে তাদের ব্যবস্থা করব না তোমার সাথে বেরোবো ও থাক পরে হবে বরং তুমি আমার কাজে হাত লাগাও । শুভায়ন এক হাতে ওকে কাছে টেনে অন্য হাতে ওর ঠোঁটে আলতো চাপা দিয়ে বললো আরে বাবা আমার ওপর একটু আস্থা রাখো তুমি তো আমাকে এখনো চিনতে পারোনি সুমেধা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গিয়ে শত ব্যস্ততার মাঝেও তৈরি হতে থাকলো আর ভাবলো সেইদিনও শত ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছিল গায়ে হলুদ গঙ্গাস্নান আচার-অনুষ্ঠান সাজগোজ ও অবশেষে শুভদৃষ্টি ।বাড়ি ফিরে হতবাক নিজের বেডরুম নিজের বাড়ি যেন চিনতে পারছে না এত সুন্দর করে সাজালো কে অন্নদা? দাদাবাবু আমাকে বলে গেল লোক আসবে সাজাতে তুমি থাকো আমি তোমার দিদিমণি কে নিয়ে বেরোচ্ছি ,চোখ ছল ছল করে উঠলো বললো বেরসিক কোথাকার ,শুভ বললো তুমি তো আরো বেরসিক কিছু না বুঝেই বকে চললে বলে শুভায়ন কাছে টেনে নিল।কিন্তু আজ হঠাৎ এত বছর পর এসব কেন মনে আসছে সবই তো বেশ ভুলেছিলাম এমনকি বিয়ের দিনটাও মন থেকে মুছে ফেলে ছিলাম অন্নদা যে কেন তারিখটা বলতে গেল বলতেই পারতো এই মাসে টাকা দরকার দিও তা নয়। দীর্ঘ দশ বছর সুমেধা শুভায়নের সাথে নেই , না কোন তর্ক বিতর্ক নয় কোনো আইনি ঝামেলায় যাইনি যেদিন শুনেছিল শুভায়ান এর সাথে একটি মহিলার নতুন সম্পর্ক হয়েছে সেদিন বুঝেছিল শুভায়নের কাছে ওর কোন অস্তিত্ব রইল না এসব জানার মাসখানেক পর নিজের মনকে শক্ত করে বাবান কে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিল অন্নদাও সাথে চলে এসেছিল সুমেধা অনেক করে বলেছিল শুভর অসুবিধা হবে তুমি না থাকলে কিন্তু অন্নদা কথা শোনেনি সে বলেছিল পয়সাকড়ি দাও আর না দাও আমি তোমার কাছেই থাকব এই ভরা যৌবন কে দেখবে তোমায় আর তুমি বা ছোট ছেলে নিয়ে একা থাকবে কি করে। সুমেধা ভাবছিল একজন পরও এত আপন হয়। অনেকেই বলেছিলো ডিভোর্স দিয়ে অ্যালিমনি নিতে কিন্তু সুমেধার খুব সম্মানে লেগেছিল তাই এসব কথার কোন পাত্তাই দেয়নি বলেছিল যদি শুভায়ন ডিভোর্স চায় আমি এমনি দিয়ে দেবো তারপর ভাগ্যে যা আছে হবে। শুভায়ন কিছু টাকা পয়সা দিতে চেয়েছিল, এর ওর মারফত সেই খবর পাঠিয়েওছিল কিন্তু সুমেধা একেবারে না করে দিয়েছিল আর সকলকে বলে দিয়েছিল ওর কোন খবর বা কোন কথাই আমাদের কাছে আনবে না হঠাৎ আজ কেন পুরনো কথা গুলো জ্বালাতন করছে কে জানে সুমেধার ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছা করলো মনে পড়ে গেল অষ্টমঙ্গলার পরদিন গিয়েছিল হানিমুনে ,জায়গাটা ভারি সুন্দর ছোট ছোট সবুজ পাহাড়ে ঘেরা বাংলোর সামনে দিয়ে খরস্রোতা নদী কুলকুল করে বয়ে যাচ্ছে, চারিদিকে পাখির ডাক, হাতে গোনা কয়েকজন আদিবাসীর আনাগোনা হোটেলের কেয়ারটেকার কুক আর আমরা দুজন ছাড়া এলাকায় কেউ ছিলনা হানিমুনে গিয়ে নদীতে পা ডুবিয়ে অস্তমিত সূর্য কে সাক্ষী রেখে বলেছিলাম বিয়ের পঁচিশ বছর পর আবার হানিমুনে আসব এই জায়গায় এইসব বলতে বলতে সুমেধা একটু টাল খেয়ে গিয়েছিলো ওকে ধরে ফেলেছিল তারপর বলেছিল কখনো তোমাকে পড়তে দেব না শুভায়নের কথার সেই মাদকতা কানে বাজছে হিসেব করে দেখলো এটাই পঁচিশ বছর সারারাত ঘুমাতে পারল না সেই সব দিনগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠলো আর সারারাত ছটফট করল পরের দিন সকাল সকাল অন্নদা এসে গেছে কোনরকমে দরজা খুলে আবার শুয়ে পড়ল ,অন্নদা বললো শরীর ভালো নেই মনে হচ্ছে রাতের খাবারও পড়ে আছে ।কাল রাতে ঘুম হয়নি তাই এখন চা খেতে ইচ্ছা করছে না আধ ঘন্টা বাদে করো আমি উঠলে তারপর ।সুমেধা বিছানায় এপাশ-ওপাশ করতে গিয়ে দেখল অস্বস্তি হচ্ছে তাই বেশিক্ষন শুতে পারল না উঠে পরল সকালে গান চালিয়ে হেলান চেয়ারে বসে চা খাচ্ছে কিন্তু নিজেকে যেন হালকা লাগছে তারপর চায়ে চুমুক দিতে দিতে আবার হারিয়ে গেল সেই হানিমুনের বাংলোয় ,নিস্তব্ধ রাতে একে অন্যের মধ্যে আবিষ্ট হয়ে তারা দেখা সেদিন ওই তারা গুলো কি ঝিলমিল করছিল ঠিক যেন রূপকথার দেশ সুমেধা বলেছিল পঁচিশ বছর পরে কি চিনতে পারবে অন্য রকম হয়ে যাবে সবকিছু । শুভ বলেছিল ওই তারা গুলো একই থাকবে তুমি আমি আর আমাদের পবিত্র বন্ধন একই থাকবে আর কিছু চেনার প্রয়োজন কি সুমেধা বললো আমরা বুড়ো বুড়ি হবো না বুঝি শুভায়ন বললো সে তো তুমি এখনই আছ , সুমেধা বলে উঠল আবার ইয়ার্কি শুভায়ন বললো কার সাথে আর ইয়ার্কি করি বল তবে যাই হোক তখন শরীরে বুড়ো বুড়ি হলেও মনটা আজকের মত থাকবে দেখো ওই তারাদের সাথে আবার মিশে যেতে ইচ্ছা হবে ওরাই পথ দেখাবে যতই আসুক ঝড়, আবার কেমন উজ্জ্বল হয়ে ওরা একসাথে চলে আসে আসল হল মনটা,চঞ্চল হয়ে উঠল কয়েকদিনের জন্য একবার গিয়ে দেখলে হয় না জায়গাটা পরিবর্তন কতটা হলো পরক্ষণেই ভাবলো কি হবে সব ই যখন গেছে সেই জায়গাটা ও হয়তো গেছে। সমাজের নির্মম হাতছানি মানুষকে নিষ্ঠুর করে তুলেছে যে গাছগুলো কত পাখির বাসা ছিল,কতো স্মৃতি ছিল সেগুলো সবই হয়তো কাটা পড়েছে আচ্ছা বড় তেঁতুল গাছটা আছে কি যেটার তলায় বসে ছিলাম আর মাথায় তেঁতুল পড়েছিল কেন জানি না খুব যেতে ইচ্ছা করছে দেখিনা একবার একা গিয়ে গাছ নদী তারা আমাকে চিনতে পারে কিনা হয়তো একা দেখে মুখ ফিরিয়ে থাকবে তবুও না হয় ওদের একটু বোঝালাম এই পৃথিবীতে সবাই একা আজ তবে একটা টিকিট কেটে ফেলি ভাবাও যা মোবাইলে অনলাইন টিকিট কেটে দেখল লোয়ার বার্থ হয়নি তারপর ভাবলো যাক ম্যানেজ করে নেওয়া যাবে নয়তো বসেই চলে যাব ।অন্নদা বলে ডাক দিতেই অন্নদা ছুটে এসে বললো কি হলো শরীর খারাপ, সুমেধা বললো আমি আট তারিখ থেকে কদিন থাকবো না আর এনাও তোমার টাকাটা এক চরম উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে কটা দিন কাটতে লাগলো কে জানে কেমন লাগবে একা একা এই বয়সে অবশেষে যাওয়ার দিন অন্নদা ছেলেকে নিয়ে এসেছে দিদিমণিকে ট্রেনে তুলে দিয়ে আসবে বলে অন্নদার খুব চিন্তা তাও অনেক সাবধান করে দিয়ে সুমেধা কে ছাড়লো ট্রেন এর সঙ্গী হলো এক নবদম্পতি ছেলে মেয়ে দুটিকে বেশ মিষ্টি দেখতে বেশ মানিয়েছে মাঝে মাঝে চশমার ফাঁক দিয়ে ওদের খুনসুটি দেখছে আর মাঝে মধ্যে ফোনের দিকে দেখছে ট্রেনের আলো আবছা বই পড়তে অসুবিধে হয় তাই বই এনেও বার করেনি ।ওরা দুজন হেডফোনে চোখ বুজে কি একটা শুনছিল যেন কোন ভাব সাগরে ডুব দিয়েছ আহা কি পবিত্র লাগছে ঠিক যেন প্রস্ফুটিত গোলাপ হঠাৎ কারো একজনের হাত লেগে মোবাইল থেকে হেডফোনের তারটা খুলে গেল গান হচ্ছিল “তবু মনে রেখো” সুমেধা অবাক হয়ে গেল আরে এই গান তো আমি শুভায়নও শুনেছিলাম পঁচিশ বছর আগে এই জেনারেশন একই গান শুনছে আর থাকতে না পেরে মেয়েটি কে সুমেধা জিজ্ঞেস করল তোমরা আজকালকার ছেলেমেয়েরা এই গান শোনো মেয়েটি বলল কি যে বলেন আন্টি রবীন্দ্রনাথ আর তার সৃষ্টি প্রেম কোনদিন বৃদ্ধ হবে না আরে শুভ বলেছিল প্রেম কোনদিন বৃদ্ধ হয় না তাই সেটাই আমাদের ইয়াং করে রাখবে এত বছর পর সুমেধা যেন নিজেই আগুনে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছে কি প্রয়োজন ছিল বেশ তো সব ভুলে গিয়েছিল হঠাৎ এত দূর আসা আবার ভাবছিল বাবান আমেরিকা যাওয়া থেকে কোথাও যাওয়া হয়নি বাবান বলেছিল ওর কাছে যেতে কিন্তু সে তো অনেকগুলি টাকার ব্যাপার তাই একা যেতে ভয় করে আর তোর সাথে ভিডিওতে কথা হচ্ছে তোকে দেখেই শান্তি এইসব বাহানা দেখিয়েছিল । ঐ নবদম্পতির ছেলেটি বলল আন্টি আপনি লোয়ার বার্থ নেবেন আমরা আপারে যাব সুমেধা বলল হ্যাঁ যাও না আমারও সুবিধা হবে ,ওরা একান্তে আবদ্ধ হতে চাইছে ওরাও এরকমই ছিল শুভায়ন বেশিক্ষণ সুমেধাকে ছেড়ে থাকতে পারত না আউট অফ স্টেশন কাজ পড়লেই সুমেধার মন বিষন্নতায় ভরে যেত। আজকের সুমেধার সাথে আগের সুমেধার অনেক ফারাক ।ট্রেনের হালকা দোলায় আর ওই দুই কপোত-কপোতীর খিলখিল হাসি কখনো বা গুনগুন গান কখনও বা নিজেদের গলার স্বর আসতে করার প্রয়াস বেশ লাগছিল সুমেধার। পরদিন সকালে স্টেশনে নেমে অনেক গাড়ি দোকান-পাট দেখে ভাবল ঠিক জায়গার নামলোত সুমেধা জানে ঠিকই জায়গা তাও আর একবার জেনে নিয়ে নিশ্চিত হলো তারপর সেই পুরনো হোটেলে গিয়ে খবর নিল রুম আছে কি রেজিস্টার দেখে ম্যানেজার বলল আছে সুমেধার মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এল দুইশ বারো নাম্বর রুম খালি আছে ম্যানেজার বলল না তবে ওই ফ্লোরেই সাউথের দিকে রুমটা ভালো ওটা নিন। সুমেধা ভাবলো ওটাই যখন নেই যা হোক একটা রুম হলেই হল ।তারপর লাগেজ নিয়ে একটা বাচ্চা ছেলে এগোতে থাকলো এদিক ওদিক দেখতে দেখতে ছেলেটির পিছন পিছন যেতে থাকলো কত কি পরিবর্তন হয়েছে, আগে জঙ্গলের যে একটা গন্ধ ছিল সেটা অনেক ম্লান আচ্ছা তেঁতুল গাছটা আছে কি এইসব ভাবতে ভাবতে সুমেধা ছেলেটিকে বলল তুমহারা নাম কেয়া হ্যায় ছেলেটি একটু টান দিয়ে বললো রঘু আছে ম্যাডামজি। তুমি বাংলা জানো ?থোরা থোরা লেকিন ঠিক সে নেহি আতা। আচ্ছা এখানে একটা তেঁতুল গাছ মানে ইমলি ইমলি পের ছিল ওটা কি আছে? নদীকা কিনারা যো পের ও তো হ্যায় উস্কে আগে ওয়াচ টাওয়ার বান গ্যায়া ইসলিয়ে ইহাসে দেখাই নেহি দেতা ।সুমেধার শুনে ভালো লাগলো পুরনো বন্ধুদের সাথে আবার দেখা হবে তারপর ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে একটু ঘুমিয়ে নিল বিকেলে একটু পায়চারি করতে লাগলো আজ আর বাইরের দিকে যাবে না তাই ব্যালকনিতে এদিক ওদিক করতে করতে কি মনে হল দুশো বারো নাম্বার রুমের দিকে যেতে ইচ্ছে করলো রুমটা দেখতে কি একই রকম আছে নাকি পাল্টে গেছে তাই আস্তে আস্তে ওদিকটায় গেল দেখল একটা ছোট্ট তালা ঝুলানো সুমেধা ভাবছে আমিও যেমন রুমটা ফাঁকা নেই শুনলাম আর ভিতরে কেউ থাকলেও তো ভিতর থেকে লক থাকত তবুও যদি আলাপ করে একবার উঁকি দেওয়া যেত আবার ভাবল কি সব চিন্তা ভাবনা লোকের রুমের ভেতর উঁকি দেবে এই বলে ঘুরে দাড়াতেই দেখে রঘু এসেছে চা নিয়ে দুশোবারো নাম্বার রুমের গেস্টদের জন্য একটু হতাশ হয়ে বলল আচ্ছা আদমি হ্যায় আভি জানা পাড়েগা ইমলি পেড় কে পাস চাএ ভেজো বোলাথা । সুমেধা বললো কেন ওখানে আছেন বুঝি ওনারা? হ্যাঁ ম্যাডাম জি রাত মে খানা খাকে রুম মে আতা হ্যায় ।সুমেধা ভাবল তার মতো কেউ কেউ আছে যাদের ওই গাছটা প্রিয় । শুভায়ন এখন অন্য দুনিয়ার মানুষ ওর কাছে এসব হয়তো একঘেয়ে ব্যাপার মানুষ সব সময় বৈচিত্র খোঁজে আর এই জন্যই সবকিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে আবার নতুন করে তৈরি করছে সেটা একটা অন্যরকম সৃষ্টি, সেই সৃষ্টির পিছনে অনেকে যেমন আনন্দ পায় তাতে আবার অনেকের অনেক দুঃখ জড়িয়ে থাকে এটাই হয়তো ভাঙ্গা গড়ার খেলা এসব ভাবতে ভাবতেই বেশ অন্ধকার হয়ে এলো তারা গুলো একটা একটা করে ফুটে উঠল আরে এ তো সেই চেনা তারাগুলো সুমেধার খুব লজ্জা পেলো ওদের কি জবাব দেবে আজ ও একা কেন এসবের উত্তর কি দেবে যেন তারা গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছে না একটা যন্ত্রণার কাঁটা গলায় বুকে বিঁধে যাচ্ছে আবঘিটতে গেলেও লাগছে না ভালো লাগছে না বলে রুমের ভেতর চলে গেল সুমেধা বুঝল নিজের মনের দৃষ্টি টাই নষ্ট হয়ে গেছে আর কোন জিনিস তাকে সেভাবে টানে না এই জায়গাটার একটু আধটু পরিবর্তন হলেও অনেকটা একই আছে আসলে পরিবর্তিত হয়ে গেছে নিজে। গান চালিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল সুমেধা ভালো গান জানতো । তাই একটা গানের স্কুল খুলে ছিল তারপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার ডাক আসে এখন বেশ নাম হয়েছে গানের জন্য, ওর গান ওকে বাঁচিয়ে রেখেছে সে এক যুদ্ধের দিন ছিল কিভাবে লড়াই করে গান গেয়ে সবকিছু ম্যানেজ করে ছিল আজ আর পিছন ফিরে তাকাতে চায়না সুমেধা কারণ ওই দিন গুলো ওকে দুঃখ বই সুখ দেয় না। রুমে জোর কড়ানাড়ার শব্দ সুমেধা কে কে বলে সারা দিল কারণ এইখানে কে আবার ডাকবে,আর তাছাড়া বলেও দিয়েছে আজ ডিনার লাগবে না , দরজার বাইরে থেকে আওয়াজ এলো ম্যাডামজি আমি রঘু আছি আপকো পাস ভুখার কা দাওয়াই হ্যায় এবার একটু ইতস্তত করলেও দরজা খুলল সুমেধা জিজ্ঞাসা করল কিউ কিসকা ভুখার হ্যায় । উও যো দুশোবারো নাম্বার রুমমে স্যার হ্যায় উসকা ভুখার হ্যায় । ঠিক হ্যায় ইয়ে লেযাও আভি এক দেদো শুভা ফের এক বলে চারটে প্যারাসিটামল দিয়ে দিল।সুমেধা ভাবল কাল সকালে একবার খোঁজ নেব। সকাল বেলা পাখি কীট-পতঙ্গ সবের মিলিত ডাকে পরিবেশটা যেন অন্যরকম মাত্রা পেয়েছে সবাই যে যার মতো ব্যস্ত পাখিরা এদিকে ওদিকে উড়ে বেড়াচ্ছে, কীটপতঙ্গ গুটিগুটি পায়ে চলে বেড়াচ্ছে, ফুলগুলো যেন হাসিমুখে ফুটতে শুরু করেছে, কোন কোন ফুল ফুটে গেছে, যেন শিশির ভেজা সদ্যস্নাত প্রকৃতি । হনুমান গুলো এডাল ওডাল লাফিয়ে বেড়াচ্ছে সুমেধাও বেরিয়ে পরলো তার পুরনো সখা নদী, তেঁতুল গাছের সাথে দেখা করতে ,এই তো সেই নদী আজও সেই রকম যৌবন আছে একটুও বদলায়নি কেন জানিনা নদীর সামনে বসতে গিয়েও পারল না যেন নিজেকে আড়াল করতে চাইলো তাই উঠে পড়ল এবার আস্তে আস্তে তেঁতুল গাছের তলায় এসে ভাবল আমার সৌভাগ্য গাছটা এখনো আছে আচ্ছা এখানে নিশ্চয়ই তেঁতুল পড়ে ভাবতে ভাবতে একটা জায়গায় বসতে যাবে এমন সময় দেখে বেশ কয়েকটি তেঁতুল এক জায়গায় জড়ো করে রাখা হয়তো হোটেলের কেউ রেখে গেছে অথবা ওই আদিবাসীরা , ওদের কত অভাব-অনটন প্রকৃতির কোলে ওদেরও এক শান্ত সুন্দর বাসা ওরা কত খুশি ।এবার হোটেলের দিকে যেতে হয় বলে পা বাড়ালো ডাইনিং রুমে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে করতে ওই ভদ্রলোকের খবর নিতে রঘু বলল বহুৎ কমজোর হ্যায় আজ পের কে পাস নেহি আয়াথা উপর রুমে চা ভেজা থা। আমাকে একবার নিয়ে চলো বলে রঘুর পিছন পিছন যেতে থাকল সুমেধা হঠাৎ যেন পা থেমে যাচ্ছে একটা যেন কি উৎকণ্ঠা সেই দুশো বারো নাম্বার রুম দেখে দাঁড়াতে পারবে তো নাকি আবার ছুটে চলে আসবে যেমনটি গতকাল রাতের তারা দেখে আজ নদী দেখে হচ্ছিল আবার রুমটা একবার দেখার কৌতূহল মেটাতে পারছে না। রঘু দরজায় নক করতে ভিতর থেকে ভদ্রলোক বললেন কে দরজা খোলা আছে রঘু ভিতরে গিয়ে কিছু বলে বাইরে এসে সুমেধা কে বলল আপ কো বুলায়া সুমেধা সাহস সঞ্চয় করে ঘরে ঢুকেই মাথাটা ঘুরে গেল অন্ধকার দেখছিল কোন রকমের রুমের ওয়াড্রবের হ্যান্ডেল ধরে ফেলল একি কি দেখছে ভুল দেখছে না তো একেই মনের অবস্থা ঠিক নেই এখানে আসা থেকে কোন কিছুর সামনে দাঁড়াতে পারছে না তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে ভালো করে দেখল শুভ ঠ্যাসান দিয়ে বসে তারপর এদিক ওদিক লক্ষ্য করলো দেখল রুমে কেউ নেই ভাবল অন্যজন হয়তো ওয়াশরুমে আছে ।শুভ হতচকিত হয়ে বসে রইল বুঝতে পারছে না কি করবে কয়েক মিনিট নিরবতার পর সুমেধা আমতা আমতা করে বলল আমি জানতাম না তোমরা এই রুমে আছো রাতে ওষুধ নিয়ে এসেছিল তাই ভাবলাম যিনি অসুস্থ তাকে একবার দেখে আসি কেমন আছেন, আচ্ছা আসি বলে সুমেধা বের হতে যাবে এমন সময় শুভায়ন ক্লান্ত গলায় বলে উঠল দাড়াও আমি একাই এসেছি সুমেধা যেন চৌকাট পেরোতে গিয়ে হোঁচট খেলো তারপর শুভ বললো এতদিন পর যখন এলে দুদণ্ড বোসনা এবার সুমেধা আস্তে আস্তে শুভায়নের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। প্লিজ চেয়ারটায় বসো । সুমেধা বসলো আবার নীরবতা ছেয়ে গেল তারপর একসাথে দুজনে দুজনকে বলে উঠল কেমন আছো সুমেধা বললো ঠিকই আছি তারপর তোমার জ্বরটা আর এসেছিল ?হ্যাঁ এসেছিল সকালে একটা ট্যাবলেট খেতে এখন ঠিক আছে আসলে কদিন ওই তেঁতুল গাছের তলায় রাত পর্যন্ত বসে থাকতাম হিম পড়ে মনে হয় ,সুমেধার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো শুধু হিম পড়ল তেঁতুল পড়েনি একটাও শুভায়ন উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো হ্যাঁ পড়ছিল তো আমি তোমার জন্য বলে থেমে গেল তারপর আস্তে করে বললো ওই আর কি দু একটা সুমেধা বুঝতে পারলো , বললো তোমার চেহারাটা খারাপ হয়ে গেছে চোখদুটো বসে গেছে মুখ ভর্তি দাড়ি একটুও মনে হয় নিজের খেয়াল রাখো নি , শুভায়ন বললো তোমার চেহারাও ভেঙ্গে গেছে শুধু বোঝা যাচ্ছে একসময় সুন্দরী ছিলে তুমিও নিজের খেয়াল রাখনি। আজ আর রূপ নিয়ে কি হবে তাই এসব নিয়ে ভাবি না আকাশ ভরা তারার মধ্যে নিজের স্থান টা কোথায় হবে তাই খুঁজে বেড়াই শুভায়ন কেন একা খুব জানতে ইচ্ছা করছিল আবার ভাবল না থাক শুভায়ন বললো তুমি হয়তো ভাবছো আমি একা কেন এসেছি সুমেধা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকালো শুভর দিকে বললো তুমি চলে আসার এক বছর পর থেকে আমি একাই থাকি সুমেধা যেন আকাশ থেকে পড়ল। তারপর বললো এরকম তো হওয়ার কথা ছিল না, ওহ সুমেধা তুমি শুধু তোমার অভিমানটা বড় করে দেখলে আর আমাকে একা ফেলে চলে গেলে ।কেন একা তুমি তো তোমার মনের মতো সঙ্গী পেয়েছিলে আমি কয়েক মাস সময় দিয়েছিলাম যখন দেখলাম তুমি ওর থেকে সরে আসতে পারছো না তখন তোমার আনন্দের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চাই নি শুভ বলল আমি তো তোমাকে কোনদিন চলে যেতে বলিনি তাহলে কেন চলে গেলে সুমেধা বলল যেতে বলবে না তার গ্যারান্টি ছিল কি ?ছিল কারণ আমি ভুল বুঝতে পেরেছিলাম সুমেধা বলল বুঝেও যোগাযোগ বন্ধ রাখনি ।হ্যাঁ রাখতাম ভাবতাম ওর সাথে অন্যায় হয়ে গেছে শুধু সেই কারণে কিন্তু তুমি চলে যাবার পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই একবার খুব অসুখে পড়লাম তখন বুঝলাম আমার সম্পত্তি আর সামাজিক প্রতিষ্ঠার জন্যই ও আমার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখেছিল সুমেধা বলল ঠিক সেই কারণেই আমি দূরে চলে গিয়েছিলাম যাতে তুমি ওকে চিনতে পারো আমি থাকলে তুমি ওকে চিনতে পারতে না আর আমি ক্রমাগতই তোমার চোখে খারাপ হতাম সেটা কিছুতেই মানতে পারব না তাই বেরিয়ে পড়েছিলাম অজানা পথে ।সুমেধা বলল তুমি পরে তাহলে যোগাযোগ করলে না কেন শুভায়ন বললো তারপর প্রতিটা মুহুর্তে তোমাকে ফিরে পেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার কাছে যেতে সাহস হয়নি । তখন তুমি গান গেয়ে বেশ নাম করেছো আমার মনে হতো তোমাকে অনেক দুঃখ দিয়েছি তোমার দুর্দিনে তোমার পাশে ছিলাম না আর তোমার সুখের দিনে কি করে গিয়ে দাঁড়াই জানি আমার ভুলের শাস্তি হয় না তাই বলে এত বড় শাস্তি দিলে আমাকে সুমেধা ভাবল আমিও কি ভালো আছি কিছুক্ষণ দুজনেই নিরব তারপর শুভ বললো বাবান কি পড়ছে সুমেধা বলল আমেরিকায় পিএইচডি করতে গেছে। বাবান কত বড় হয়েগেছে কত দিন দেখিনি বাবান কে কিন্তু তুমি তাহলে একা থাকো? সুমেধা বলল না একা কেন অন্নদা আছে আর আমার গান ,গানের স্কুল আছে এসব নিয়েই চলছে। সব কিছু সময়ের সাথে সইয়ে নিতে হয় শুভায়ন বললো তুমি নিজের ভাগ্যকে আর আমাকে খুব দোষারোপ করো বলো আর সেটাই স্বাভাবিক । দুএকবার তোমাকে দোষারোপ করতে গিয়েছিলাম দেখলাম নিজেই নিজের কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছি কারণ প্রত্যেক মানুষের স্বাধীন মন আছে কাজেই যে যার মতো বিচারবুদ্ধি নিয়ে চলবে আর বিধাতাকে বলি তুমি যে দুঃখ দিলে কান্না দিয়ে শেষ করা যায় না দুঃখের কত রূপ তাই তো কান্না দেওয়া এক গভীর শোক ভেতরে অনুরণিত হয় । শুভায়ন স্থির হয়ে বসে আজ বড় উতলা পঁচিশ বছর আগের মত করে সুমেধাকে পেতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না ।সুমেধা জানতে চাইলে তুমি এখানে এসেছ হাওয়া বদলাতে শুভায়ন বললো আমি প্রতি বছর এই দিনে এই রুমে থাকি বলতে খারাপ লাগছে তবুও বলি শুধু তোমার অপেক্ষায় আমি জানতাম পঁচিশ বছর আগের কথা তুমি ভুলতে পারবে না সুমেধা বললো ঠিক তা নয় এটা জানা জায়গা তাই এসেছি শুভ বললো তাহলে শুনলাম দুশোবারো নাম্বার রুমের খোঁজ করছিলে কেন চেনা বলে ,সুমেধা মুচকি হেসে বলল তুমি একটুও বদলাও নি শুভ বললো তুমিও বদলাও নি আগের মতো নিজের দুঃখ খারাপ লাগা গুলোকে এখনো লুকিয়ে রাখো আমাদের জীবন থেকে অনেক গুলো বছর নষ্ট হয়ে গেছে আর হারাতে চাই না বলতে বলতে কাশি এসে গেল সুমেধা তাড়াতাড়ি জলের গ্লাস মুখের কাছে নিয়ে গেলো, শুভ সুমেধার হাতটা ধরে ফেলল আর বললো পারবে আর একবার আমাকে গ্রহণ করতে সুমেধা চোখ বুজে কয়েক সেকেন্ডের জন্য যেন স্থির শরীরে যেন বরফ ঠাণ্ডা রক্তপ্রবাহ হয়ে গেল , ঐ অবস্থায় বললো কবেই বর্জন করলাম তোমাকে কেবল সময় দিয়েছিলাম কিন্তু সেটা একটু বেশি লেগে গেল ।আচ্ছা বাবান পারবে আমাকে গ্রহণ করতে সুমেধা বললো না পারবে না , শুভ ভয় পেয়ে গেল, সুমেধা বলল ওর অভিমানের সম্মান দিতে হবে তাই একটু সময় লাগবে ।ওতো তোমারই ঔরসজাত তাই বর্জন করতে পারবে না শিকড় হীন হয়ে কেউ কি থাকতে পারে দেখছো না তেঁতুল গাছটা ।
Enter your email address to reset your password.
The very name 'SWADES' denotes the philosophical essence and ideological standpoint of our vision. We envisage serving our 'Swades' by providing news, special stories and literary works of the new generation writers which would cater to the interest of the Nation.
Swades Times © 2020 , All rights Reserved
0 comments