মহাভারতীয় পর্ব – ৩ (মহারাজ শান্তনু ও মাতা গঙ্গা)

মহাভারতীয় পর্ব – ৩ (মহারাজ শান্তনু ও মাতা গঙ্গা)

ছোটবেলায় টেলিভিশন এর পর্দায় মহাভারত দেখতে দেখতে মনে হত ইসস্!! মা গঙ্গা কিকরে ওই ছোট ছোট বাচ্ছা গুলোকে নদীর জলে ভাসিয়ে দিচ্ছেন? ওই শিশুগুলো এরপর কোথায় যাবে? এইরকম নানান প্রশ্নে ব্যতিব্যস্ত করতাম বড়দের। পরে বড় হয়ে যখন মহাভারত নিয়ে চর্চা শুরু করলাম তখন সদুত্তর পেলাম আমার প্রশ্নের। আজকের লেখাটি সেই নিয়েই।

আগের পর্বের লিঙ্ক :
মহাভারতীয় পর্ব – ২ (গরুড়ের উপাখ্যান)

দুষ্মন্ত আর শকুন্তলার পুত্র রাজা ভরত এর নামানুসারে আমাদের দেশের নাম হয় ভারতবর্ষ। এই ভরতবংশে হস্তী নামে এক রাজা ছিলেন, তিনি হস্তিনাপুরের প্রতিষ্ঠাতা। হস্তীর এক বংশধর হলেন রাজা কুরু যিনি কুরুক্ষেত্রে তপস্যা করেন। কুরুর অধস্তন অষ্টম পুরুষের নাম শান্তনু ।

ADVERTISEMENT
Tuhu Momo Video Teaser

শান্তনু পূর্বজন্মে ছিলেন রাজা মহাভিষ । অনেক তপস্যা করে তিনি স্বর্গে যান । সেখানে একদিন নারীশ্রেষ্ঠা গঙ্গাকে দেখে তাঁর মনে জাগতিক বাসনার উদ্রেক হলে ব্রহ্মা তাঁদের দুজনকে মর্ত্যলোকে জন্মানোর শাপ দেন ।

এদিকে একটি অন্য ঘটনাও ঘটেছিল । সপ্তর্ষিমণ্ডল এর প্রধান ঋষি বশিষ্ঠ মুনির কামধেনু নামক একটি গাভী ছিল । এই গাভীর কাছে খাদ্যবস্তু যা চাওয়া যেত তাই পাওয়া যেত । আমরা পুরাণে অষ্টবসুর বিবরণ শুনেছি । এই অষ্টবসুর সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা দ্যু এর পত্নী জিতবতী একদিন কামধেনু কে দেখে লোভ সংবরণ করতে না পেরে দ্যু কে ওই গাভীটিকে হরণ করতে বলেন । দ্যু এবং তাঁর ভ্রাতারা এই কামধেনুকে হরণ করলে বশিষ্ঠ তাঁদের মানুষ হয়ে জন্মানোর শাপ দেন । অষ্টবসুগন মুনির পায়ে পড়ে ক্ষমা চাইলে তিনি বলেন যে তাঁর শাপ ফলবেই । কিন্তু প্রথম সাত বসুর অপরাধ কম থাকায় তিনি বলেন তারা মনুষ্যজন্মের এক বত্সরের মধ্যে মুক্তি পাবে । কিন্তু অষ্টম বসু দ্যু এর অপরাধ সঙ্গীন হওয়ায় তাকে বহুদিন মানবযন্ত্রণা ভোগ করতে হবে । এই শাস্তিবিধান শুনে অষ্টবসুগণ মূর্ছিত হয়ে পড়েন ।

এদিকে শাপগ্রস্থ গঙ্গা রাস্তায় অষ্টবসুকে মূর্ছিত হয়ে পড়ে থাকতে দেখে সব জানতে পারেন । বসুগণের অনুনয়ে তিনি তাঁর গর্ভে তাদের প্রতিপালন করতে রাজি হন । এদিকে মহাভিষ শান্তনু রূপে জন্মগ্রহণ করে আগের ঘটনা সব ভুলে গেছেন । তিনি মর্ত্যলোকে গঙ্গাকে পত্নিরূপে পেতে চাইলেন । গঙ্গা একটি শর্তে রাজি হলেন । শর্তটি হল শান্তনু গঙ্গা কে তাঁর কোনো কাজে বাধা দিতে পারবেন না । যে মুহূর্তে গঙ্গা তাঁর কোনো কাজে বাধাপ্রাপ্ত হবেন সেই মুহূর্তে গঙ্গা শান্তনুকে ছেড়ে চলে যাবেন । শান্তনু এই শর্তে রাজি হন ।

এরপর একে একে গঙ্গার গর্ভে সাত বসু জন্ম নেন। জন্মমাত্রই গঙ্গা তাদের নদীর জলে ভাসিয়ে দিতে থাকেন। শান্তনু সবই দেখেন কিন্তু শর্তের কথা ভেবে গঙ্গাকে কিছু বলতে পারেন না। এরপর সময় আসে অষ্টম বসু দ্যু এর জন্মের। তাঁর জন্মমাত্র গঙ্গা তাঁকে নিয়ে নদী অভিমুখে চললেন। এবার শান্তনু বিদ্রোহ করলেন! তিনি কিছুতেই ওই পুত্রকে হারাতে পারবেন না। গঙ্গাকে বাধা দিলেন। তখন শর্তানুযায়ী গঙ্গা ছেলেকে শান্তনুর কাছে রেখে শাপমুক্ত হয়ে আবার মহাদেবের জটায় আশ্রয়লাভ করলেন । এই দ্যু নামক অষ্টম বসুই হলেন দেবব্রত ভীষ্ম। যিনি ইচ্ছামৃত্যর বর পেয়েছিলেন। সে কাহিনী অন্য পর্বে।

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait