ওয়েবসিরিজ রিভিউ - পঞ্চায়েত সিজ্ন ২

ওয়েবসিরিজ রিভিউ - পঞ্চায়েত সিজ্ন ২

ওয়েব সিরিজ রিভিউ
#পঞ্চায়েত সিজ্ন ২
মূল গল্প: চন্দন কুমার
নির্দেশক:দীপক কুমার মিশ্র
সংগীত: অনুরাগ সাইকিয়া

অভিনয়: জিতেন্দ্র কুমার, চন্দন রায়, রঘুবীর যাদব, ফইজল মালিক, নীনা গুপ্তা এবং আরো অনেকে।

4.8 / 5

পঞ্চায়েত সিজন ১ যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের আনন্দ ধরে রাখার জায়গা ছিল না যখন সিজ্ন ২ এর অফিসিয়াল ঘোষণা হল। বহু প্রতীক্ষিত সেই চার অসম বয়সী বন্ধুকে দেখার জন্য আমরা ছটফট করছিলাম, যথা ফুলেরা গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকারী সচিব অভিষেক ত্রিপাঠি, তাঁর সহকারী ভিকাস, প্রধানজী ব্রিজভূষণ দুবে এবং উপপ্রধান প্রহ্লাদ পান্ডেকে আবার একসাথে দেখার আনন্দে আমরা আত্মহারা হয়ে উঠেছিলাম। প্রত্যাশা মতই চারজন একসাথে এলেন, এবং আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে গেলেন উত্তরপ্রদেশের ফুলেরা গ্রামে, যেখানে অনেক অভাব আছে, অনেক হিংসা দলাদলি  কুচুটেপনা আছে, ভালোবাসাও আছে। আছে প্রেম, আছে সমর্পণ, আছে বিশ্বাস। কিন্তু সমস্ত কিছু পেরিয়ে ঐ চার বন্ধুর একসাথে হাতে হাত মিলিয়ে মেরুদন্ড শক্ত করে ধরে রাখাটা, সব প্রতিকূলতাকে জয় করার অদম্য ইচ্ছাটাকে সম্মান না করে আমরা থাকতে পারিনা।
    
      রুক্ষসুক্ষ ফুলেরা গ্রামে সচিবজির আগের পর্বের খিটখিটে মেজাজ অনেকটাই ফুরফুরে হয়েছে। তার কারণ গ্রামের প্রধানের মেয়ে রিঙ্কি। দেহাতি মেয়ে হলেও এত বলিষ্ঠ চরিত্রের মহিলাকে পর্দায় কবে শেষ দেখেছি ঠিক মনে করতে পারিনা। আছে গ্রামের সরল সাদাসিধে মানুষগুলো, যারা অভিষেকের কথা শুনে ঠিক পথ বেছে নেবে না গ্রামের 'বনরাক্ষস' বলে পরিচিত কুচুটে ভূষণ এর কথায় ভ্রমিত হবে, ঠিক বুঝতে পারে না। খুব অল্প চাওয়া তাদের, তাই হয়ত তাদের সহজে আয়ত্তে আনা যায়। ভূষণের প্রতি পদে করে চলা 'বিশুদ্ধ কুচুটেপনা' কে কিভাবে নাস্তানাবুদ করেন সচিবজিরা সবাই মিলে, ছোট ছোট ঘটনা কিভাবে দাগ রেখে যায় আমাদের মনে, তা সিরিজটি না দেখলে বোঝা যায় না। সিসিটিভি সার্ভিলেন্স কিভাবে আমাদের উপকারে লাগে, আবার প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শয়তানি কিভাবে করা যায়, তা ভীষণ পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। রিঙ্কির জন্মদিনে প্রধানজী গোটা গ্রামকে নিমন্ত্রণ করলেন, কিন্তু কেউ কোনো উপহার আনেনি। নিমন্ত্রণ রক্ষার এই অভিনব ধরণ সচিবজিকে বিস্মিত করলেও, এটাই ঐ গ্রামের নিয়ম। শহুরে আমাদের গালে সপাটে চড় এটি। আমরা তো সর্বদা উপহার প্রত্যাশা করি, তাইনা?

ADVERTISEMENT

   যাইহোক, গ্রামকে বদনামীর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য প্রহ্লাদ চা' আর ভিকাস গ্রামের লোক বিনোদকে খোলা জায়গায় শৌচ করার হাত থেকে যেভাবে বাঁচায়, তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায়না। আছে গ্রামের একটি নাচগানের দল। সেই দলের একটা মেয়েকে যখন অভিষেক জিজ্ঞাসা করেন, চটুল নাচ সে ছেড়ে দেয়না কেন, তখন তার উত্তরে দেহাতি মেয়েটি যা উত্তর দেয়, শুনে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠবে। শহরের মানুষের একদিনের জন্য গ্রামে গিয়ে গ্রাম্য জীবন উপভোগ করার আধিখ্যেতা এবং কয়েক ঘন্টা পরেই "পালাই পালাই ভাব" একদম সঠিকভাবে উপস্থাপিত। এরপর ঐ গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলোর নিজেদের আত্মবিশ্বাসে ভর করে কিভাবে উত্তরণ হয়, কিভাবে তাঁরা মাথা উঁচু করে বাঁচার অনুপ্রেরণা পান, তা জানতে গেলে সিরিজটি দেখতে হবে। আছে ভীষণ কড়া একটি বার্তা। নেশা বা মাদক যে কিভাবে মানুষের ক্ষতি করে, তা নেশামুক্তি কেন্দ্রের মাতাল ড্রাইভারটিকে দেখে বোঝা যায়। নেশা কাটতেই সে ভদ্রলোক। এই ছোট ছোট বার্তাগুলি ভীষণ নাড়া দেয় আমাদের। 

  অভিনয় কেউ করেছেন বলে মনে হয় না। প্রত্যেকে যেন ফুলেরা গ্রামের এক একজন আসল অধিবাসী হয়ে উঠেছেন। দু মিনিটের রোলে প্রত্যেক অভিনেতা যা অভিনয় করলেন, তার রিভিউ লেখার সাধ্য আমার নেই। ইন্ট্রো মিউজিক অসাধারণ। প্রতিটি পর্বে সহজ সরল গ্রাম্য জীবনের ক্যানভাস ফুটে উঠেছে সাবলীলভাবে। লেখকের কলম ভীষণ শক্তিশালী। কতটা ওয়ার্কশপ আর আত্মনিবেদন থাকলে, অধ্যবসায় থাকলে এরকম কালজয়ী নির্মাণ সম্ভব, তা ওঁরা করে দেখিয়েছেন।

   তবু খুঁতও কিছু চোখে পড়েছে। সচিবের ঘরে হঠাৎ সেদিনই সাপ ঢুকল যেদিন শহর থেকে তাঁর বন্ধু এল? অন্য কখনো ঢোকেনি তো? প্রহ্লাদ চা' র সাথেই বা কেন ঐ দুর্ঘটনা ঘটল? মালতি কে? এগুলো বোঝা গেল না ঠিক।

  শেষ দৃশ্যে প্রহ্লাদ চা' র অভিব্যক্তি দেখে চোখে জল আসেনি এরকম কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে কি? সেটি দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, ফুলেরা গ্রামের অধিবাসীরা যদি রবি ঠাকুরের "যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙলো ঝড়ে" গানটা জানতেন, তাহলে হয়ত খানিক শান্তি পেতেন।

 

 

এই সিজনের মত শেষ হল ফুলেরার বন্ধুত্ব। প্রত্যাশা বাড়ল। এখন অপেক্ষা, কবে আবার দেখা পাব ঐ চার জন অসমবয়সী বন্ধুর, যাঁরা সমাজে অহরহ ঘটে চলা দুর্নীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠবেন। মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেন। আবার!

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait