সাইক্লোন

সাইক্লোন

বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি আর সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া, কফি মাগ টা হাতে নিয়ে বসে জনালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে তৃধা, আর কতদিন থাকতে হবে এই লক ডাউনে ! আজ নিয়ে বিগত ৬০ দিন গৃহ বন্দী!

আজ আবার খবরে বলছে উম্ফুন না আমফান সাইক্লোন আসছে ধেয়ে, কলকাতায় আসতে আসতে ঝড়ের গতিবেগ ১২০ থেকে ১৩০ কিমি হতে পারে ! 

সাইক্লোন !! 

এই শব্দ টা শুনে অনেক পুরনো স্মৃতি চোখের সামনে ভেষে উঠলো তৃধার, এই আর একটা সেই সাইক্লোন ই দায়ি আজ ওর মনের ভেতরের  সাইক্লোনের জন্য !
আয়লা!

সেদিনই প্রথম কথা হয় অনির্বাণের সাথে তৃধার, একই ব্যাচে একই কলেজে পরলেও কোনোদিন কথা হয়নি ওদের মধ্যে, কারণ অনির্বাণ হলো গিয়ে ক্লাসের হার্টথ্রব, সব মেয়েরা এক কথায় পাগল ওর জন্য, অনির্বাণ যে ওর বন্ধু হতে পারে তা কল্পনাও করেনি সে কোনোদিন !!

তারিখ টা সেদিন : ২৭ মে, ২০০৯ !
 
আগে থেকেই ঝড়ের পূর্বাভাস ছিলো, তাও assignment জমা দেওয়ার  জন্য বাবার বারণ সত্বেও কলেজ গেছিলো সেদিন তৃধা। ক্লাসে  সেদিন উপস্থিত হাত গুনে ৬-৭ জন, সকাল থেকেই একনাগাড়ে হচ্ছে বৃষ্টি, তারাতারি আশুতোষ স্যার কে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়ে বেরোতে যাওয়ার মুখে শোনে সাইক্লোন এসছে ! আয়লা !!
সেকি, বাড়ি যাবে কি করে, খানিক্ষণের ঝড়ে গাছ পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়, বিদ্যুতের তারও ছিঁড়ে গেছে, কি জানি কত মানুষের ক্ষতি হলো কত!

তখন তো আবার ছিলো না এই অ্যাপ ক্যাব ও !
 
বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে এই সবই আকাশ কুসুম ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ পাশে অনির্বাণের আবির্ভাব !

” কিরে তৃধা আজ এলি কেনো? বাড়ি যাবি কি করে?”
 
“আমার Assignment জমা দেওয়ার ছিলো রে, আজই তো শেষ দিন !”

“এই জন্য বলে শেষ মহূর্তের জন্য কিছু ফেলে রাখতে নেই !”
….
“কিরে চুপ করে যে! বাড়ি যাবি কি করে, চল আমি ছেড়ে দি” 

” না তুই যা, আমি চলে যাবো”

” আহ্ ! আমায় ভরষা করতে পারিস, আমি ট্যাক্সি নিয়ে আসছি, এখানে দাঁড়া।”

ট্যাক্সি তে উঠে কথা বলতে বলতে ওরা বুঝতেই পারেনি কখন যে দুজনে কলেজের ২ বছরের কথা ওরা এই টানা ২ ঘণ্টায় বলে ফেলেছে, যেনো মনে হচ্ছে সেই ছোটবেলা থেকেই চেনে দুজন দুজনকে !

যেনো সব জানে তৃধা অনির্বাণের ব্যাপারে ।

আচমকা, ট্যাক্সির ব্রেকে হুঁশ ফেরে দুজনের!

“এই যে madam রবীন্দ্র সরোবর নামবেন তো ?!”

” হ্যাঁ দাদা, কত হলো?

“৩৮০ টাকা”

ভাড়া মিটিয়ে বাড়ির কাছে পৌঁছে দেয় অনির্বাণ, সেই প্রথম ফোন নাম্বার আদানপ্রদান, সেই থেকে কথা শুরু দুজনের, কখন রাত কেটে ভোর হয়ে যেতো রোজ, খেয়াল ই থাকতো না দুজনের, কলেজ ক্যান্টিনে, লেকের ধারে সারাক্ষণ একসাথে দুজনে!

তৃধা যে এত কথা বলতে পারে, জীবনে ভাবেনি সে নিজেও !!

সেদিন দশমী, ( ২৮-০৯-২০০৯ )

এর মধ্যেই কেটে গেলো কয়েকটা মাস, পুজোটা দেশের বাড়ি কাটিয়ে তৃধা ফিরে আসে কলকাতা, ঠিক করে আজই বিকেলে ঠাকুর ভাষানের পর অনির্বাণ কে তার মনের কথা বলবে, বলবে ওকে ছাড়া যে এক মুহুর্ত থাকাও কঠিন তা এই পুজোর কদিনে বেশ বুঝেছে সে, অনির্বাণ ও বলেছে ৭ টায় দেখা করবে মাডক্স এর আড্ডায়, কি যেনো সারপ্রাইজ আছে ওর জন্য, পুজোর কদিন ভালো করে কথাও হয়নি যে অনির্বাণের সাথে !!

আজ, (২০-০৫-২০২০)

বাইরে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তৃধার ফোনে গান বাজছে,

” প্রেমে পড়া বারণ
কারণে অকারণ
আঙুলে আঙুল রাখলেও হাত ধরা বারণ” 

জানলার ধারে বসে ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ চোখ পড়লো অনির্বাণের স্ট্যাটাসে,
ঝড়ের দিনে আমার মিষ্টি বউ এর সাথে একটা সেল্ফি — ফিলিং লাভড উইথ মউপিয়া রায় !!

হ্যাঁ, সেই দশমীর দিন শুধু দুগ্গা মায়ের ভাষান হয়েনি, তৃধার অনুভূতি গুলো ও, মায়ের সাথে বিসর্জন হয়ে গেছিলো অনির্বাণের দেওয়া সারপ্রাইজে !!

ADVERTISEMENT

0 comments

Saurav Chakraborty

Saurav Chakraborty

Shared publicly - 25th Feb, 21 10:28 pm

খুব ভালো লাগলো

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait