আন্তর্জাতিক যোগদিবসে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা

আন্তর্জাতিক যোগদিবসে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা

আজ ২১ জুন আন্তর্জাতিক যোগদিবস।

সুস্থ ভারত নয়, সুস্থ বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে গত ২০১৪ -র ডিসেম্বরে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ভারতের দাবী মেনে ২১ জুন দিনটিকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর এই ২১জুন তারিখ টি বিশ্ব যোগদিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১৯০ টি দেশের ২৬০টিরও বেশী শহরে ২১ জুন আন্তর্জাতিক যোগদিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

সংস্কৃত শব্দ “যোগ” এর অর্থ সংযোগ স্থাপন, অর্থাৎ জীবাত্মার সাথে পরমমাত্মার মিলন। যা শরীর এবং চেতনার মিলের প্রতীক ও বটে।

কেন যোগকে এত গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কেন যোগকে এত গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালন করার ঘোষণা করা হল সে সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করার চেষ্টা করব আজ।

ADVERTISEMENT
Tuhu Momo Video Teaser

পরিশ্রম করতে কার ভাল লাগে? প্রত্যেকদিন সকালে উঠে ব্যায়াম করার কথা ভাবলেই গায়ে জ্বর আসে? এর থেকে শুয়ে শুয়ে পছন্দের বই পড়া বা টিভি দেখা অনেক ভালো। এমনটা আমাদের অনেকেরই মনে হয়। কিন্তু ব্যায়াম করা বা শরীরটা একটু ঘামিয়ে নেওয়া যতই অপছন্দের হোক না কেন সু্স্হ থাকতে এর জুড়ি মেলা ভার। আর ওয়ার্কআউট যদি একান্তই ভাল না লাগে সে ক্ষেত্রে যোগাসন তো আছেই। ওজন কমানো, শক্তিশালী নমনীয় শরীর, উজ্জল ত্বক, শান্ত মন, ভাল স্বাস্হ্য ইত্যাদি যা কিছু আমরা পেতে চাই সব কিছুর দাওয়াই কিন্তু যোগাসনে আছে। এতে কিন্তু অনেকরকম শারীরিক সমস্যা যথা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়েবেটিস, করোনারী আর্টারী ব্লকেজ ইত্যাদি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব এবং শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্যিক ভাবে একটা সুস্হ জীবন কাটানো সম্ভব হবে। যোগ হল এক জীবন দর্শন,যোগ হলো এক জীবন পদ্ধতি, যোগ হলো ব্যাধিমুক্ত এবং সমাধিযুক্ত জীবনের সংকল্পনা। যোগ শুধুমাত্র এক বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিই নয়, বরং যোগের প্রয়োগ পরিমাণের ওপর আধারিত এক এমন প্রমান যা ব্যাধিকে নির্মুল করে। অতএব এটি এক সম্পূর্ণ বিধাতা প্রদত্ত দেওয়া শরীরেরই নয় সমস্ত মানসিক রোগের ও চিকিৎসা শাস্ত্র।
যোগ এ্যালোপ্যাথির মতো কোন লাক্ষনিক চিকিৎসা নয়, বরং রোগের মূল কারণকে নির্মুল করে আমাদের ভিতর থেকে সুস্হ করে তোলার এক উপায়। নিয়মিত যোগাভ্যাসের অসংখ্য উপকারিতার মধ্যে কয়েকটি নিয়ে কথা বলা যাক।

ফিটনেস-শারীরিক ভাবে সুস্হ মানেই কিন্তু পুরোপুরি ফিট থাকা নয়। তখনই পুরোপুরি ফিট যখন মানসিক, আধ্যাত্মিক, শারীরিক ও সামাজিক ভাবেই আপনি সুস্হ থাকবেন। আপনার আবেগ থাকবে আপনার নিয়ন্ত্রনে।

যোগ মানুষের স্ট্রেম কমায় : সারাদিনের কাজের চাপে আমরা সবাই কমবেশি কাহিল হয়ে পড়ি। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পর ক্লান্ত লাগে। অনেক সময়ই মেজাজ খারাপ থাকে। এর কারণ কিন্তু স্ট্রেস। শারীরিক এবং মানসিক দুভাবেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পরি। যোগাসন কিন্তু এর থেকে মুক্তি দেয়। কিছু কিছু যোগাসন, প্রাণায়াম এবং ধ্যান করে স্ট্রেসকে দূরে রেখে প্রাণোচ্ছল জীবন যাপন করা সম্ভব।

যোগ মানসিক শান্তি আনে : মানসিক শান্তি কে না চায়? একটু খানি মানসিক শান্তি পাওয়ার জন্য আমাদের কতই না প্রচেষ্টা। আমরা সুন্দর জায়গায় ঘুরতে যাই, ভাল গান শুনি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে সময় কাটাতে চাই তবে নিয়মিত মানসিক শান্তি পাওয়ার জন্য এত কিছু করার দরকার নেই। নিয়ম করে একটু যোগাসন, ধ্যান, প্রাণায়ম, নিউরোবিক ইত্যাদির মাধ্যমে মন:সংযোগ এবং মানসিক শান্তি উভয়ই বাড়ানো সম্ভব। অভ্যাস করে দেখুন, নিশ্চিত ফল পাবেন।

প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : নিয়মিত যোগাভ্যাস আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। চারিদিকে এখন এত দূষণ যে সবসময় নানারকম জীবানু আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে এবং ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। এদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরের অভ্যন্তরীন প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকা দরকার। ইমিউনিটি হওয়া দরকার জোরালো । যোগাসন রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে ট্যিসু এবং পেশীকে শক্তি দেয়। আর বর্তমানে বিশ্ব তথা আমাদের দেশ যখন ভয়াবহ অতীমারী করোনার সাথে ক্রমাগত যুদ্ধ করে চলেছে, তখন আমাদের যোগা এই যুদ্ধে আমাদের এক জরুরী বন্ধুর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম সেকথাও বলাই বাহুল্য। যোগা শ্বেতকণিকাগুলিকে আরও উজ্জীবিত করে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শ্বাসপ্রশ্বাসের টেকনিক এবং ধ্যান এতে সাহয্য করে।

যোগা এনার্জি বাড়ায় : সারাদিন শেষে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। সারাদিন ধরে নান রকম কাজ করতে হয়। তার পাশাপাশি এখন এই বিচ্ছিরি গরমে একেবারে নাজেহাল অবস্হা। বাড়ি ফেরার পর আর একটুও এনার্জি অবশিষ্ট থাকে না। সারা দিনে মাত্র কয়েক মিনিটের যোগভ্যাস কিন্তু সারাদিনের পরেও এনার্জিও যোগান দেবে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ যোগাসন করলে কাজের ফাকেও ফ্রেশ আর এনার্জেটিক থাকা যাবে।

মনে রাখতে হবে যোগভ্যাস কিন্তু একটি নিয়মিত অভ্যাস। দুদিন করে ছেড়ে দিলে হবে না, নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমেই এর সুফল পাওয়া সম্ভব। তবে নিজে নিজে অভ্যাস না করে একজন ট্রেনারের অধীনে এগুলো অভ্যাস করা ভাল। কারণ প্রয়োজন বুঝে ট্রেনার নির্দেশ দিতে পারবে ঠিক কোন ধরণের আসনগুলো করা উচিত। উপরে যে বিষয়গুলি নিয়ে কথা বললাম সেগুলোর পাশাপাশি নানারকম রোগ যোগাসনের মাধ্যমে সারানো সম্ভব। যেমন-উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, এ্যাজমা, বদহজম, কোষ্টকাঠিন্য, মাইগ্রেন, দুশ্চিন্তা এবং অবসাদ ইত্যাদি। বিশেষ কয়েকটি যোগাসন (প্রাণায়ম, মেডিটেশন, নিউরোবিক জিম ও আকুপ্রেসার) নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমে এই ধরণের রোগগুলো থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

তাই এই সকল কিছুকে মাথায় রেখে আমাদের উচিত যোগ-সাধনা কে আমাদের জীবনের নিত্যসঙ্গী রূপে গ্রহণ করা। হয়তো এই অতীমারী আমাদের মানুষে মানুষে খানিক অতিপ্রয়োজনীয় দূরত্ব রাখতে একপ্রকার বাধ্যই করেছে তবুও আজ এই যোগদিবসে, যোগের উপকারীতার দিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের উচিত বাড়ীতে, পরিবারের সাথে মিলে অবশ্যই এই দিনটি এবং প্রতিটা দিন সুন্দর ভাবে যোগ-সাধনার মধ্যদিয়ে পালিত করা।

আশা রাখী আগামী দিনে শীঘ্রই আমরা এই সংকটময় অতীমারী কাটিয়ে সুন্দর দিনে ফিরে আসবো এবং যোগ-সাধন সেদিনও আমাদের সঙ্গী থাকবে।

সকলে সচেতন থাকুন, অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বল করে সুস্থ থাকুন।

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait