বিদ্যারূপেণ

বিদ্যারূপেণ


"সরস্বতীম দেবয়ন্ত হবন্তে সরস্বতীমধ্বরে তায়মানে/ সরস্বতীম সুকৃতো অহবয়ন্ত সরস্বতী দাশুষে বার্ষঙ দাৎ।" (ঋগবেদ)

অর্থাৎ, যারা দেবতার উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করে, তারা সরস্বতীকে আরাধনার জন্য আহ্বান করছে, দেবী যেন যাচকের অভিলাষ পূর্ণ করেন।

ঋগবেদ এ বলা হচ্ছে, সরস্বতী একজন হিন্দু দেবী, তাঁর হাতে বীণা এবং পুস্তক শোভিত হচ্ছে। মহাভারতের শান্তিপর্বে উল্লিখিত আছে দেবীর নাম। দেবী সরস্বতী জীবের কল্যাণার্থে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার ইচ্ছায় আত্মপ্রকাশ করেন।

আমাদের দেশে সরস্বতী নদীর অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। পদ্ম পুরাণ এবং স্কন্দ পুরাণ মতে, পুরাকালে ভার্গব ও হৈহেয় দের মধ্যে এক যুদ্ধ হয়েছিল। সেই যুদ্ধের আগুনে ত্রিলোক যখন ধ্বংস হতে বসেছে, তখন দেবতারা ভগবান বিষ্ণুর কাছে গিয়ে প্রতিকার চান। বিষ্ণু তখন দেবতাদের সরস্বতীর স্তব করতে বলেন। দেবতাদের স্তবে খুশি হয়ে মা সরস্বতী ব্রহ্মলোক ত্যাগ করে মহর্ষি উতঙ্কের আশ্রমে আসেন এবং এক নদীর রূপ ধারণ করে সেই আগুন নির্বাপিত করেন। সেখান থেকে তিনি পুস্করের উদ্দেশ্যে ধাবিতা হন।

ADVERTISEMENT

এই হলো মর্ত্যলোকে দেবীর আগমনের কাহিনী। এবার আসা যাক তাঁর রূপের প্রসঙ্গে। তাঁর বর্ণ, পোশাক অর্থাৎ শাড়ি, তাঁর বাহন রাজহংস---প্রত্যেকটির রং সাদা। এই সাদা রং বিশুদ্ধ সত্ত্বগুণের প্রতীক। প্রকৃত জ্ঞান এবং প্রখর অন্তদৃষ্টি দেবীর সাত্বিক গুণ। তাঁর বাহন রাজঁহাস জল মেশানো দুধের মধ্যে থেকে দুধটুকু বের করে নিতে পারেন। এও প্রতীক সত্ত্বগুণের। প্রকৃত সত্ত্বগুণী বিশুদ্ধ জ্ঞান আহরণ করে নিতে সক্ষম। এই জ্ঞান হলো ঈশ্বরকে চেনা বা তাঁর স্বরূপ উপলব্ধি করা। বা আরেক মতে বলা যায় যে সংসারের  গোলমালের মধ্যে থেকে 'গোল' বাদ দিয়ে সারটুকু নেওয়া।

আরও পড়ুন - পুরাণে বর্ণিত দেব দেবীর পরিচয় ও বৈদিক দেবদেবী

দেবী ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পূজিতা হন। তবে তাঁর মাতৃরূপের নাম দেবী ব্রাহ্মনী, এবং তাঁর মনুষ্য অবতারের নাম সাবিত্রী ও গায়ত্রী। আর দক্ষিনেশ্বরের ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের আধ্যাত্মিক লীলাসঙ্গিনী শ্রীমা সারদাদেবী ভক্তমধ্যে সরস্বতীর আরেক অবতার রূপে পূজিতা হন। মা সরস্বতীর আরেক নাম সারদা। আর ঠাকুর নিজ শ্রীমুখে মায়ের সম্বন্ধে বলেছেন, "ও সারদা, সরস্বতী, মহাবুদ্ধিমতী। জ্ঞান দিতে অবতার গ্রহণ করেছে।"

শুধু ভারতবর্ষেই নয়, ভারতের বাইরে বিভিন্ন দেশে যেমন ইন্দোনেশিয়া, জাপান, কম্বোডিয়া, মায়ানমার, তিব্বত এবং থাইল্যান্ড এও দেবী সরস্বতী বিভিন্ন নামে পূজিতা হন। কিন্তু নাম আলাদা হলে কি হবে, প্রত্যেক দেশেই তিনি জ্ঞান, বাক, মেধা ও ধীশক্তির দেবী হিসাবে পূজা পান।

বসন্ত কালের পঞ্চম দিনে তিনি পূজিতা হন বলে দেবী 'বাসন্তী'। তিথির নাম বসন্ত পঞ্চমী। এই দিনটি প্রায় সমগ্র বিশ্বে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এবং বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মহাসমারোহে পালিত হয়। সেই শুভ তিথি আসন্ন। তাই দেবীর স্তবমন্ত্র দিকে দিকে হোক উদ্বোধিত---

"শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পপশোভি।
শ্বেতাম্বরধরানিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপন।।
পূজিতা মুনিভি সর্বৈবঋষিভি স্তুয়তে সদা।
য়ে স্মরতি ত্রিসন্ধ্যায় সর্বাম বিদ্যাম লভন্তি তে।।" 

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait