যেথায় আছো ভালো থেকো। বিদায়…

যেথায় আছো ভালো থেকো। বিদায়…

 ঠক, ঠক, দরজায় অনেক শব্দ করার পরও ভেতর থেকে কোন আওয়াজ এলো না। বুক টা ধুক ধুক করছে। কি জানি? কি  হয়েছে দরজার ওপারে? এই ‘কি জানির’ জিজ্ঞাসাচিহ্নটা ভারী মারাত্মক। জানা অজানার মাঝের প্রাচীরটা ভারী দুর্ভেদ্য। সূর্যের এক ফোঁটা রোদেরও যেন প্রবেশ নিষেধ সেখানে। বুকের পাঁজরগুলোকে ইঁটের মতো শক্ত করে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ভেঙে ফেললাম দরজাটা। কিন্তু আজ দরজার ওপারেও যেন পাতালের অন্ধকার ছেয়ে আছে। এক্কেবারে কুচকুচে কালো রংয়ের। শুধু ঝুলে আছে একটা নিথর দেহ, জড়বস্তুর মতন। না, জড়বস্তুর মতন নয়, জড়বস্তুই  এখন। ধমনীর মধ্যে সব রক্ত গুলো জমাট বাঁধতে শুরু করেছে একটু একটু করে, তাদের প্রয়োজনীয়তা এখন ফুরিয়েছে।  তুমি যে এখন শেষ নিঃশ্বাস-এর সীমা অতিক্রম করেছ। হ্যাঁ, শুধু একটা নিঃশ্বাস এর ব্যবধান, সেটা ‘শেষ নিঃশ্বাস’। তার  আগে যখন ঐ শক্তপোক্ত ফাঁসটা গায়ের জোরের  থেকেও বেশি জোরে চেপে ধরেছিল তোমাকে,  মানে তুমি ওদের চেপে ধরতে বাধ্য করেছিলে,  তখন  ঠিক কি ভেবেছিলে তুমি?  তুমি কি  বাঁচতে চেয়েছিলে আরো কিছুক্ষণ? আরেকবার কি আগলে ধরতে চেয়েছিলে,  তোমার বিছানার মখমলের চাদরটাকে?  ওই ভীষণ ঝকঝকে নিয়ন এর থেকেও ঝলমলে আলো গুলোকে ছুঁতে চেয়েছিলে?  ক্যামেরারলেন্স তোমাকে কি ডাকে নি একবারও?  তুমি ডেকেছিলে  কাউকে শেষ নিশ্বাস ফেলার আগে,  বাঁচতে দাও বলে?  তোমার দুটো পা হয়তো ছটফট করেছিলো আহত পায়রার ঝাপুটে  ডানার  মত! আনন্দের তিরোধানে তো যাওনি তুমি? 

ADVERTISEMENT

 শুনলাম তুমি নাকি অবসাদে ছিলে?  ইংরেজিতে যাকে বলে “ডিপ্রেশন”।  তুমিতো বইও পড়তে ভালবাসতে,  কেন পড়ে নিলেনা ডিপ্রেশনের তত্ত্বগুলো? উপায়ের কি অভাব ছিল? তা তো নয়,  তোমার পাশে কি সত্যি কেউ ছিলনা?  পৃথিবী তোমাকে আগলে রেখেছিল নিজের করে,  তোমার বাস ছিল কোটি কোটি গৃহের অন্দরে। কত তরুণী তোমার সাথে রোজ দেখা করত স্বপ্নের বাজারে।  গর্বের পাহাড় হয়ে বিরাজ করতে বাবার বুকের উপর।  যারা তোমায় এত কিছু দিল, রাজার সিংহাসন সাজিয়ে ডাকলো তোমায়, তাতে অধিষ্ঠানের আগেই পালিয়ে গেলে। 

 বেশ হতো,  যদি সাদা চাদরে ঢাকা নিথর শরীরটা  মনে মনে টিপ টিপ করে হাসতো, দূর থেকে ভেসে আসত ‘কাট’——– এতো কেবল চলচ্চিত্র, সত্যি বলছি খুব জোরে জোরে হাততালি বাজাতাম, যতক্ষণ সম্ভব ততক্ষণ বাজাতাম,  দিতাম পাঁচ  তারার অংক। 

 কিন্তু এখন কোথায় করতালি?  কোথায় অংক?  ওরা সবাই স্তব্ধ। ওপারে দাঁড়িয়ে তুমি কি শুনতে পাচ্ছ,  এত হাহাকার এত ক্রন্দন? 

সকালটা যেন দড়ির ফাঁস,
পিছনে একরাশ স্বপ্ন ফেলে,
অশ্বমেধের  রথে চেপে,
ছুটে গেছো অনেক দূরে,
বোঝাপড়ার গণ্ডি ছেড়ে,
হৃদপিন্ডে ইতি টেনে।

আমরা এখন উল্টোরথ,
এই আছি এদিক পানে,
সহ্যের সব বেড়াজালে,
গিঁটের  ওপর গিঁট পাকিয়ে,
সুখের খোঁজে দুঃখ নিয়ে।

শুধু তুমি চলে গেলে,
জীবন গিঁটের বাঁধন ছিড়ে,
একটা ফাঁস আগলে নিয়ে,
সব সীমানার গন্ডি  পারে।

যেমন আছো ভালো থেকো,
সব সুখেদের  রসদ কিনো,
                   দুঃখ টুকু ফেলে দিও,
দুঃখ টুকু ফেলে দিও——-।

যেথায় আছো ভালো থেকো ।

বিদায় ———“

চির শান্ত তুমি, নিজের নামের সদার্থকতা প্রমাণ করলে, সবাইকে হতবাকে শান্ত করে, এখন তুমি সত্যই “সুশান্ত”।।

 

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait