মুভি রিভিউ - দ্য কাশ্মীর ফাইলস

মুভি রিভিউ - দ্য কাশ্মীর ফাইলস

অভিনয়: মিঠুন চক্রবর্তী, অনুপম খের, পুনীত ঈশার, দর্শন কুমার, পল্লবী যোশী ও আরো অনেকে।

পরিচালক: বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রী.

সিনেমার রিভিউ হয়। কঠিন বাস্তবেরও "রি ভিউ" হয়। সেই কবে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ থিয়েটার দেখে এসে বলেছিলেন, "হাজার বক্তিমেতে (বক্তৃতা) যে কাজ হয়না, একটা অ্যাক্টোতে সেই কাজ হয়ে যায়।" কি এমন আছে উপরোক্ত দলিলটিতে (The Kashmir Files), যা গোটা ভারতবর্ষকে শিহরিত করে দিয়েছে?

না! কান্না আসেনি। বরং বমি পেয়েছে। এত নৃশংস, এত ভয়াবহ অত্যাচার যে একটা মানুষ অন্য মানুষের ওপর করতে পারে, তা না দেখলে বিশ্বাস হত না। একটা মানুষকে মেরে তার রক্ত তার স্ত্রীকে খাওয়ানো হচ্ছে, সেই মহিলার বাচ্চার মাথায় বন্দুকের নল ঠেকিয়ে রেখে। প্রতিবাদ করলেই জুটছে গুলি। হিন্দুরা নিজের দেশে রেশন পাচ্ছেন না, তাঁদের "কাফের" হওয়ার অজুহাতে খাবার দেওয়া হচ্ছে না। ভারতবর্ষের ভূখন্ডে দাঁড়িয়ে অন্য দেশের নোট চাওয়া হচ্ছে, বলা হচ্ছে গান্ধীর ছবি দেওয়া নোট এখানে চলবে না। গোটা উপত্যকা জুড়ে আওয়াজ উঠছে, "রলিভ, গলিভ ইয়া সলিভ", মানে হয় ধর্মান্তরিত হও, নয়ত কাশ্মীর ছাড়ো, নয়ত মরো! পাঠশালায় হিন্দু ছাত্র তার গলার মাদুলি লুকোচ্ছে, ভয়ে! মুহুর্মুহু কার্ফু, আওয়াজ উঠছে "আল জিহাদ"। আওয়াজ উঠছে ভিন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের গলায়, "কাশ্মীর কা বাচ্চা বাচ্চা বোলেগা আজাদী, বোলেগা আল জেহাদ।" যন্ত্রের মত, রোবটের মত বন্দুক চালাচ্ছে তারা, যাদের হাতে বই তুলে দেওয়া উচিৎ ছিল। ছোট শিশুরা সচিন তেন্ডুলকরের শতরান করার খবরে আনন্দ করতে পারছে না, তাদের তাড়া করছে সশস্ত্র জঙ্গিরা! হিন্দু দেবদেবীর ছবি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে! এরকম আরো কত কত কত...শেষ দৃশ্যে শুধুমাত্র "কাফের" হওয়ার অপরাধে এক মহিলাকে জ্যান্ত ধরে করাত কলে চিরে দেওয়া হল! ঠিক শুনছেন! জ্যান্ত! তার মাথাটা ফেটে গেল, ধড় কাঁপছে, এইভাবে তার মাথা থেকে পায়ু পর্যন্ত চিরে দেওয়া হল। এই নারকীয় হত্যাকান্ড দেখে উপস্থিত জনতা বরং মাথায় গুলি করে মৃত্যু স্বীকার করে নিল। সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড় করিয়ে এক এক করে তাঁদের মেরে ফেলা হল। একটা বছর দশেকের শিশুও রেহাই পেল না! জয়ধ্বনি উঠল, "আল জিহাদ"।

ADVERTISEMENT

রাষ্ট্র নির্বাক দর্শক! কাশ্মীরের এক নেতার বাড়িতে ঘুরছে সেই জঙ্গি স্বয়ং। কার কার সাথে সেই জঙ্গির সখ্যতা ছিল, তা আজ সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সবার সামনে প্রকাশিত! এ কোন দেশ? এ কোন উপত্যকা? ভাবুন তো, যদি এরকম আপনার আমার সাথে হত? যদি হয়? ওই করাত কলের নীচে নিজেকে একবার কল্পনা করে দেখুন! বিশ্বাস আসবে, যে ভারতবর্ষে আপনি এখন আছেন তা কতটা  নিরাপদ, তা কতটা সুন্দর!

কোন অপরাধে নিজের দেশেই রিফিউজি কিছু মানুষ? কিসের জন্য ওই জঘন্য, মানবতার শত্রু বিট্টার মত লোকগুলো বুক চিতিয়ে ঘুরত উপত্যকায়? কোন মাদকে দেশের মধ্যেকার শিক্ষাঙ্গনে চলে এই জঙ্গিদের আরাধনা? কোথা থেকে আসে মদদ? কোন অধিকারে ওই শিক্ষাঙ্গনের অধ্যাপিকা বলেন, "কাশ্মীর হ্যাজ নেভার বিন অ্যান ইন্ট্রিগাল পার্ট অফ ইন্ডিয়া"? কেন ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের করের টাকায় সরকারি কলেজে প্রায় "ফ্রি"তে  পড়াশোনা করে সেই দেশের মানুষের প্রতি বিরোধিতা করার সাহস পায় কিছু এমন ছেলেমেয়ে, যাদের দেখে আর যাই মনে হোক, ছাত্র বা ছাত্রী মনে হয় না?

এসব তর্ক চলতেই থাকবে। তবে কয়েকটি জিনিস মাথায় ঢুকল না। কৃষ্ণা পণ্ডিত তার বাবা, মা বা ভাইকে তো ছোটবয়সে হারিয়েছিল, কিন্তু তার দাদু তো বেঁচে ছিলেন! নাতি যা ছোট থেকে দেখেছে তা বিশ্বাস করেছে জেনেও, অর্থাৎ যা মিথ্যে তা বিশ্বাস করেছে জেনেও তিনি তার সামনে তার বাবা, মা ও ভাইয়ের কিভাবে মৃত্যু হয়েছিল তা খুলে বলেন নি কেন? তা কি তাঁর একমাত্র বংশধরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই? আরো আছে! জঙ্গি ভাবধারা আশ্রিত শিক্ষাঙ্গনে যখন কৃষ্ণা বক্তৃতা রাখছেন, এবং যেভাবে রাখছেন, তাতে তাঁর সাথে যা কিছু হতে পারত। সেটা না হয়ে লক্ষী ছেলেমেয়ের মত সবাই হাঁ করে তাঁর কথা শুনছেন, তাতে করে এই দৃশ্যায়ন একটু অনুপ্রাণিত মনে হল। তৃতীয়ত, ওই শিক্ষাঙ্গনে যারা পড়ে, তারা দাদুর অস্থি ভাসানোয় বিশ্বাস করে কিনা জানা নেই। মানে ভারতের যা কিছু সনাতন, যা কিছু ভাল সেসব কিছুই তাদের কাছে খারাপ কিনা! কৃষ্ণা কিন্তু একটু কনফিউজড, বিভিন্ন ব্যাপারে। তার চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখা গেল না।

অভিনয়ের ব্যাপারে মিঠুন আর অনুপম খেরের কথা কিছু বলার নেই। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন পল্লবী জোশী। কোনো অভিনেতা তখনই সফল, যখন তিনি মানুষকে বাধ্য করেন তাঁর চরিত্রটিকে ভালোবাসতে বা ঘৃণা করতে।

একে তথ্যচিত্র বলাই উচিৎ হবে। এরকম তথ্যচিত্র আরো তৈরী হোক। যে ভুল ইতিহাস আমাদের এতদিন ধরে পড়ানো হয়েছে, আগামী প্রজন্ম যেন তার বিপরীতটা, অর্থাৎ "সত্য"টা জানতে পারে।

রাজনীতি ছেড়ে বাইরে এসে সত্যিটা দেখুন! বমি পাবে। আটকাতে পারবেন না।

ছবি: গুগল

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait