সুরশ্রী ঘোষ সাহার কলমে থ্রিলার গল্প : পাহাড় খোঁড়া রহস্য

সুরশ্রী ঘোষ সাহার কলমে থ্রিলার গল্প : পাহাড় খোঁড়া রহস্য

গল্প প্রতিযোগিতা : থ্রিলারের থ্রিল
গল্পের নাম : পাহাড় খোঁড়া রহস্য
কলমে : সুরশ্রী ঘোষ সাহা

 
সেবার আমরা পাঁচ বান্ধবী মিলে বেড়াতে যাচ্ছিলাম দক্ষিণ সিকিমের রাভাংলায়। যাচ্ছিলাম, কিন্তু যাওয়াটা শেষমেশ হয়নি। কেন হয়নি, সেই গল্পই বলতে আসা। 
 
দীর্ঘ পনেরো ঘন্টা ট্রেনে কাটিয়ে আমরা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে যখন পৌঁছলাম তখন অনেক বেলা হয়েছে। একটি ছেলে আমাদের দেখে এগিয়ে এসে বলল 'আপলোগ রাভাংলা যানে কে লিয়ে আয়ে হ্যায়?' আমরা সকলে সমস্বরে 'হ্যাঁ' বলে গাড়িতে ব্যাগ তুললাম। বুঝলাম, আমাদের জন্য হোটেল থেকে গাড়ি অনেক সকালে পাঠিয়ে রেখেছে, ছেলেটি দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছিল স্টেশনে। গাড়ি চলতে শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রকৃতি তার রূপের পসরা সাজিয়ে এগিয়ে এল চোখের সামনে। দার্জিলিঙের পাশ কাটিয়ে গাড়ি সিকিমের পথে ঢুকল। ড্রাইভারটি খবর দিল প্রবল তুষারপাত হচ্ছে দক্ষিণ সিকিমে। এই তুষারপাত সাধারণত উত্তর সিকিমে বেশি হয় জানতাম। ছেলেটি জানাল, ওদিকে সকাল থেকে যে তুষার ঝড় উঠেছে, এমনটা বহু বছরে হয়নি। তাকে নেপালি মনে হল, বাচ্চা ছেলে। আমরা আধা হিন্দি আধা বাংলায় জিজ্ঞেস করলাম 'সন্ধ্যার মধ্যে পৌঁছতে পারব তো?' উত্তর এল 'হাঁ জি'। অগুনতি ঝর্ণা পেরিয়ে পাহাড়ের গা ঘেঁষে এগিয়ে চললাম। পাহাড়ে তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা হয়। চারপাশের গাছপালাগুলো একসময় অন্ধকারে ঢেকে গেল। শুধু গাড়ির হেড লাইটের আলো পাহাড়ি সরু পথে আছড়ে পড়ছিল। একটা দুটো করে গাড়ি অপরদিক থেকেও নেমে আসছিল আলো দেখিয়ে। পথের পাশের গাছগুলো ততক্ষণে বরফের পাউডার মেখে সেজে উঠেছে। যত বাঁক ঘুরছে, তত বেশি বরফে ঢাকা পথ। গাড়ির চাকা তারপর আর আগের গতিতে চলতে পারল না। গতি কমিয়ে এগিয়ে চলার চেষ্টা করল রংলি, মানে আমাদের গাড়ির চালক। ইতিমধ্যেই ওর নাম জেনে নিয়েছি। ওর মুখে শুনেছি এখানে প্রতি বাড়ির পুরুষরা হয় ট্যুরিস্টদের গাড়ির ড্রাইভারের কাজ করে, নয়ত পুলিশ কী মিলিটারিতে জয়েন করে। এখানে মহিলারাই হোটেল সামলানো, রান্না করা, বাজার বিক্রি, মুদির দোকান চালানো এমন কিছু না কিছু উপায়ে উপার্জন করে। রংলি একমাত্র সন্তান। তার মা জমিতে চাষ ও বাজার বিক্রি করে। বাবা নেই। দেখি, রংলির গাড়ি নিয়ে এগুতে বেশ কসরত হচ্ছে। অনেক উঁচু হয়ে জমে থাকা বরফে চাকা স্লিপ খাচ্ছে। তাকে খানিক চিন্তিত দেখায়। শেষে বলে ওঠে 'বহেনজি, গাড়ি অউর নেহি যা পায়েগা, নজদিগ্ এক বাংলো হ্যায় জঙ্গলকে ভিতর্, আপ সব ওহি ঠ্যাহের যাইয়ে আজ রাত কে লিয়ে, কাল সুভা ওয়েদার আচ্ছা হোনে কে বাদ ইহা সে নিকাল যাউঙ্গা। লেকিন, বাংলো ইহা সে পয়দাল জানা পারেগা।' আমরা পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করি। 
 
জঙ্গলের সরু পথ ধরে হাঁটি। পিঠে, হাতে সবার ব্যাগ। মোবাইলের আলো ফেলে চলা। রংলি যাচ্ছে সবার আগে। কোথাও গাছের ডাল এসে পথ আটকে দিচ্ছে। বরফ গলে জুতো স্লিপ খাচ্ছে।মিনিট দশেক হাঁটার পর একটা পুরনো বাড়িতে পৌঁছাই। চারিপাশ শুনশান। শুধু মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িটায় হাল্কা আলো জ্বলছে। উঠোনে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ি। সকলের মুখে ক্লান্তির ছাপ। রংলি বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায় মালিককে ডাকতে। পিছন দিক থেকে অচেনা কোন স্রোতস্বিনী নদীর বয়ে চলার শব্দ ভেসে আসে। আশেপাশে কোথায় যেন কেউ কঁকিয়ে কাঁদছে শুনতে পাই। 
 
- 'এমন অদ্ভুত থমথমে পরিবেশে কী করে কাটাব আমরা! তারচেয়ে গাড়িতেই রাতটা কাটালে ভাল হত না?' বেলা কথা বলে ওঠে। 
বিশাখা ধমকায়  
-'তুই পাগল হয়েছিস? অমন পাহাড়ের গায়ে সরু রাস্তায় বরফে গাড়ি দাঁড়িয়ে গেছে, সেখানে সারারাত কাটানো যায়? সেখানেও যে আমরা জমে বরফ হয়ে যাব! তবু তো এখানে বাড়ি আছে, দরজা জানলা বন্ধ করে শুয়ে কাটিয়ে দিতে পারব একটা রাত'।
 
ভীত সন্ত্রস্ত মুখ করে তখনও বেলা বলে চলে
- 'খুব ভয় করছে রে, কী ঘুটঘুটে অন্ধকার, কোথায় কে লুকিয়ে আছে কে জানে!' 
 
রুমা একমাত্র নির্বিকার থাকে। উল্টে আমাদের সাহস জোগানোর চেষ্টা করে 
-'এত ভয় পাচ্ছিস কেন তোরা? ভয়ের কী আছে? কী দারুণ এই পাহাড়ী জঙ্গল। এক অন্যরকম থ্রিলিং অভিজ্ঞতা হবে এবার বোঝা যাচ্ছে'। 
 
শম্পা ওর কনকনে ঠান্ডা হাত দিয়ে আমায় চেপে ধরে। আরো যেন কেঁপে উঠি আমি। 
 
- 'আমাদের কেউ পরীক্ষা দিতে ডেকে এনেছে বলে মনে হয়, জানিস', ব'লে আমি সিঁড়ির পাশের দেওয়ালে লম্বা হয়ে পড়া ছায়ার দিকে তাকাই। 
ঠিক তখনই উপর থেকে এক বয়স্কলোককে নিয়ে হাজির হয় রংলি। পোশাক চেহারা দেখে বোঝা যায় যে তিব্বতের লোক। আমাদের ভীত চেহারা দেখে ভাঙা হিন্দিতে আশ্বাস দেন, ভয়ের কিছু নেই, নিশ্চিন্তে সেখানে একটা রাত আমরা কাটাতেই পারব। 
ভদ্রলোকের কাছে বেলা জানতে চায় 
-'কৌন রো রাহা হ্যায়?' ভদ্রলোক তার হলদেটে দাঁতগুলো বার করে হাসেন আর জানান 
-'উও সোব জংলি ইন্সেক্ট, কোই ভি নেহি রো রাহা হ্যায়'।
নীচেই একটা ঘরে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন তিনি। এক রাতের জন্য কত কী টাকা পয়সা দিতে হবে জানতে চাইলে বলেন 
-'সোব কথা কাল হবে, বহত দূরসে আপ লোগ আয়ি হ্যায়, আজ রেস্ট লিজিয়ে'।
 
তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে দরজা এঁটে আমরা ঘরে ঢুকে পড়ি। নিজেদের কাছে যা যা খাবার আছে ভাগ করে খেয়ে শোবার ব্যবস্থা করি।
-'আমার আজ ঘুম আসবে না রে, গল্প করে কাটাবি সারারাত?' বেলা প্রস্তাব দেয়। 
-'সারাদিনের জার্নিতে সবাই খুব ক্লান্ত রে, আমি তো আর টানতে পারছি না। দ্যাখ, বাকিরা কী বলে', ব'লে হাই তুলে শুয়ে পড়ে রুমা। 
বিশাখা ওর মোবাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে থাকে। আর বিড়বিড় করতে থাকে
 - 'একটুও টাওয়ার নেই, তোদের কারুর ফোনেও নেই, বল?, সারাদিন বাড়িতে একটা ফোন করতে পারলাম না'। 
আচমকা ঘরের আলোটা দুবার দপদপ করে সম্পূর্ণ নিভে যায়। এমনকি আশ্চর্যজনক ব্যাপার বিশাখার ফোনের আলোটাও নিভে যায় ফোন বন্ধ হয়ে গিয়ে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে চারপাশের সকল শব্দ যেন তখন ঘরের মধ্যে আরো জোরে প্রবেশ করতে শুরু করে। নদীর শব্দ, পোকার গোঙানি, গাছের পাতা থেকে বরফ গলে টুপ টুপ করে জল ঝরে পড়ার আওয়াজ সব কিছু যেন বেড়ে ওঠে ক্ষণিকের মধ্যে। মনে হয় সবই যেন ঘরের মধ্যে ঘটছে। শম্পা খুব আস্তে ঠান্ডা গলায় বলে
- 'শীঘ্রই চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা কর সবাই, এ ভাবে জেগে থাকা সত্যিই বড় বেশি ভয়ের'। একে অপরের গা ঘেঁষে শুয়ে থাকি চুপচাপ। 
 
তখন রাত কটা জানি না ঘুম ভাঙে একটা ঘষ ঘষ শব্দে। এমন শব্দ ওখানে পৌঁছে থেকে শুনিনি। কেমন যেন অন্যরকম, নিবিষ্ট মনে কোন এক কাজ করে চলার শব্দ। শব্দটা ভেসে আসছে পিছন দিকের জানলার ওপার থেকে, খুব কাছ থেকে। যত শুনি ভয়টা তত বাড়তে থাকে, আর ঘুম আসে না কিছুতেই। পাশে ঘুমিয়ে থাকা রুমাকে ধাক্কা দিতে থাকি। রুমা থতমত মুখে আমার দিকে তাকায়। 
-'কিসের শব্দ হচ্ছে, শুনছিস?'
কিছুক্ষণ খুব মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করে রুমা, তারপর বলে, 
-'হ্যাঁ, কিন্তু এতরাতে কিসের শব্দ এটা? ঘরের পিছন দিক থেকে আসছে মনে হচ্ছে, বেশ জোরে। জানলাটা খুলি বুঝলি? দেখি কিসের আওয়াজ!' 
রুমা উঠতে শুরু করতেই আমি বাধা দিতে থাকি কিন্তু ও শোনে না। সাহসের সাথে উঠে পিছনের জানলার একটা পাল্লা খুলে দেয়। আকাশ কখন পরিষ্কার হয়ে গিয়ে চাঁদের আলোয় ভাসছে চারপাশ। আমিও উঠে রুমার পাশে দাঁড়াই। জানলা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস এসে মুখে চোখে চাবুক মারতে থাকে। চাঁদের আলোতেই দেখা যায় একটা ছেলে কোদাল না গাঁইতি দিয়ে বরফ ও মাটি তুলে খাদে ফেলছে। যে শব্দ খানখান করে দিচ্ছে চারপাশের নিস্তব্ধতা। খুব বেশি দূরে নয় তাই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে তাকে। জানলা খোলার শব্দে জানলার দিকে তাকায় ছেলেটা। তখনই শরীর দিয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে যায় আমার আর রুমার। ছেলেটি তো রংলি। কিন্তু, চোখের কোন মণি নেই। শুধুই সাদা অংশটা বরফের মত জমে আছে চোখের কোটরে। শরীরের রঙ ফ্যাকাসে। আমি জোরে জানলাটা বন্ধ করে দিই। আর অমনি 'বহেনজি' বলে ডাক ভেসে আসে। এবার রুমাও ভয় পেয়ে যায়। আমি বকতে থাকি কাঁদো কাঁদো গলায় 
-'কেন খুললি?' 
বাকিরা তখনও ঘুমে আচ্ছন্ন। বাইরে থেকে ডাকটা আরো এগিয়ে আসতে শুরু করে 
-'বহেনজি, বহত ঠান্ডা হ্যায়, মুঝে ভি ঘর যানা হ্যায়', বহেনজি, বহেনজি'
কানে হাত চাপা দিই, ঐ শীতের রাতেও শরীর ঘামতে শুরু করে। সাহসী রুমাও বালিশ দিয়ে কান চেপে ধরে। এবার টের পাই দরজাটাতে ধাক্কা দিচ্ছে রংলি। 
-'বহেনজি, মুঝে ঘর যানা হ্যায়, ঘরমে আকেলি বুড়ি মা হ্যায়'। 
দরজা খুলিনা। যে রংলিকে সারাদিন দেখেছি এই মুখ এই চেহারা তার নয়, এ যেন জীবন্ত পৃথিবীর কেউ নয়। দরজা নড়নড় করতে থাকে। ভেঙে পড়ে গেলেও দরজা খুলব না। ঘুম ভেঙে যায় বাকিদের। সবার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে তখন, শরীরের প্রতিটা রোমকূপ ফুলে উঠেছে। বেশ অনেকক্ষণ 'বহেনজি' ডাকটা দরজার ফাঁকফোকর দিয়ে ঘরে ঢুকে মাতিয়ে বেড়ায়। শেষে আবার সব নিশ্চুপ আবার সেই ঘষ ঘষ করে বরফ ও মাটি সরানোর শব্দ ভেসে আসে নিস্তব্ধ চরাচর ভেদ করে। কখন যে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যাই জানি না। 
 
যখন জ্ঞান ফেরে দেখি সবাইকে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত উদভ্রান্ত দেখাচ্ছে। যেন সবার উপর দিয়ে এক ঝড় বয়ে গেছে সারা রাত ধরে। বাংলোর সেই ভদ্রলোকের কথায় যতটুকু বুঝতে পারি এখানে কাল রংলি নামের কেউ আমাদের নিয়ে আসেনি। আমরা নিজেরা হেঁটে এসেছি। ভদ্রলোক উপর থেকে আমাদের দেখতে পেয়ে নীচে নেমে এসেছিলেন। রংলিকে সকাল থেকে দেখা যাচ্ছে না। ওদিকে শম্পা তখন চেষ্টা করতে করতে রাভাংলার হোটেলের মালিককে ফোনে ধরতে পারে। হোটেল মালিক জানান আগেরদিন তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ফোনে যোগাযোগ করতে পারেননি, তুষারপাতে রাস্তা বন্ধ থাকায় কাউকেই পাঠাতে পারেননি। জানতে চান, আজ যাব কিনা সেখানে! শম্পা শিউরে উঠে বসে পড়ে কথাগুলো শুনে। ওর হাত থেকে ফোন নিয়ে আগের দিন সকাল থেকে ঘটে যাওয়া আমাদের সমস্ত অভিজ্ঞতার কথা সেই হোটেলের মালিককে জানায় রুমা। সব শুনে তিনি আমাদের ওখানেই থাকতে বলেন। তারপর পুলিশ নিয়ে হাজির হন কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। যে জায়গায় দাঁড়িয়ে রংলি রাতভর মাটি তুলেছে সেই জায়গাটা দেখিয়ে দিই। সেখান থেকে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হয় রংলির পচা গলা মৃতদেহ। 
 
তিব্বতী লোকটিকে বহু জেরা করে জানা যায়, রংলি নামের একটি ছেলে ট্যুরিস্ট নিয়ে আসত বাংলোতে। কয়েক মাস আগে টাকা পয়সা নিয়ে বচসা বেঁধে গিয়ে হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়। লোকটি গলা চেপে ধরেন রংলির। উনি ভাবেননি এটুকুতেই সে মারা যাবে। কিন্তু মারা যাওয়াতে তাকে বাংলোর পিছনে মাটিতে পুঁতে দেন। রংলির আত্মা মুক্তি পায়নি। প্রতি রাতে মাটি সরানোর শব্দ ভেসে ওঠে বাংলো জুড়ে। মুক্তি পাবার জন্য রংলি ভূত হয়ে যে আবার ট্যুরিস্টদের নিয়ে আসবে বাংলোতে তা ভাবতে পারেননি তিব্বতী লোকটি। 
 
রংলিকে মুক্তি দিয়ে সেবারে আর আমাদের রাভাংলা যাওয়া হয় নি। তৎকালীন টিকিট কেটে রাতের ট্রেনেই ফিরে এসেছিলাম যে যার নিজের ঘরে। 
 
ADVERTISEMENT
Swades Times Book

0 comments

Saurav Chakraborty

Saurav Chakraborty

Shared publicly - 24th Oct, 21 09:38 pm

দুর্দান্ত।

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait