গল্প প্রতিযোগিতা    চোখের দূরে

গল্প প্রতিযোগিতা চোখের দূরে

অনেক সময় আমাদের জীবনে এমন অনেক কিছু ঘটে.. যার  ওপর আমাদের কোন  নিয়ন্ত্রণ থাকেনা | হয়ত কোনো অসময়ে.. কোনো আগন্তুক এর আগমন ঘটে। তারপর..  

টিং টং.. bell বাজলো.. আর চিন্তার  জাল টা ছিঁড়ে গেলো সেবন্তীর | college এর কালকের lecture টার জন্য notes তৈরী করছিল  সেবন্তী | কখন যে চোখ টা লেগে গিয়েছিলো.. বুঝতে পারে  নি | তাড়াতাড়ি শাড়ি টা  গুছিয়ে নিয়ে দরজা টা খুলে দিল সেবন্তী | ওর  ডাক্তার হাসব্যান্ড হসপিটাল থেকে ফিরলেন |একগাল হেসে স্বামী কে স্বাগত জানাল সে  |”দুপুরে খেয়ে ছিলে?” জানতে চাইল সেবন্তী |”না গো.. সময় পাইনি “.. উত্তর দিলেন Dr. সুধাময় ব্যানার্জী |”আজ একটা অপারেশন ছিলো.. তার পরে opd “..তবে  চা খেয়েছি অনেক বার “|…”তুমি যে কী করো না.. শুধু চা খেয়ে থেকে নিজের শরীর টা খারাপ করবে এবার “.. রোজ রোজ টিফিন বানিয়ে দেবো.. আর উনি রোজ ফেরৎ নিয়ে আসবেন “.. রেগে গিয়ে নিজের মনে গজ গজ করতে থাকে সেবন্তী |লজ্জা পেয়ে সুধাময় কাছে সরে আসেন.. বলেন “আর হবেনা.. সত্যি “|

ADVERTISEMENT

“হুম.. সত্যি “.. অবিশ্বাসের সুরে বলে ওঠে সেবন্তী.. “রোজই ওই একই কথা| “

রাত্রে খাবার পর বিছানায় শুয়ে   ছিন্ন চিন্তা টা আবার জোড়া লাগাতে শুরু করে সেবন্তী |পাশে অঘোর ঘুমে ঘুমিয়ে আছেন.. ক্লান্ত পরিশ্রান্ত স্বামী |সারাদিন রুগী দেখে দেখে ক্লান্ত.. অভুক্ত থাকা মানুষটা কে  ঘুমোতে দেখে বড্ড মায়া হয় আজকাল |আগে স্বামী কে বিছানায় শোবার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে খুবই অবাক লাগতো সেবন্তীর |ভাবত… “এতো তাড়াতাড়ি ঘুম আসে কী করে? পাশে সদ্য বিবাহিতা সুন্দরী স্ত্রী |একটু কথা বলতে ও কী ইচ্ছে করে না? “
এখন সবটাই গা সওয়া হয়ে গিয়েছে |এখন আর অবাক হয়  না সেবন্তী|

একটু একটু করে ভাবতে শুরু করে সেই দিনটার কথা.. সেই দুটো চোখ.. আজ এতো বছর পরেও.. যে চোখ দুটো কে যেন একদম সামনে দেখতে পায়  সে … . কতই বা বয়েস তখন.. মাত্র ক্লাস টুয়েলভ পরীক্ষা শেষ হয়েছে |  মা,  বাবা আর বোনের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিল দিল্লি আগ্রা |যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না সেবন্তীর.. তাও সে যেতে আপত্তি করেনি |মা বাবার কথার ওপর আবার কোনো কথা হয় নাকি |রাজধানী এক্সপ্রেস সকালবেলা দিল্লী পৌঁছেছিল |বঙ্গভবন এ চেকইন করার পর একটু ফ্রেস হয়ে লাঞ্চ করছিলো ওরা |তখন এ প্রথম দেখেছিলো সেই চোখ দুটো… 

এমনিতে সেবন্তী একটু লাজুক … কোনো ছেলের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকা টা তার স্বভাব নয়.. কিন্তু.. কিছু একটা ছিলো ওই চোখ দুটো তে… 
সেবন্তীর মনেহচ্ছিলো কেউ  যেন তার চোখ দুটোকে আটকে দিয়েছে ওই চোখ দুটোর দিকে |
এরকম কোনোদিন হয়নি সেবন্তীর সাথে |এর আগেও  অনেকের সাথে দেখা হয়েছে.. আলাপ হয়েছে.. কিন্তু এইরকম ফিলিংস হয়নি কখনো |
সবাই বুঝতে পারবে.. এই সংবিৎ ফিরতেই.. চোখ ঘরের মধ্যে দিয়ে সরিয়ে নেয়  সেবন্তী |কিন্তূ.. সে কী এখনো দেখছে তাকে? লোভ ছাড়তে পারে না.. আবার একটু আড চোখে দেখতে চেষ্টা করে সে |

হ্যাঁ.. সে দেখছে… একদৃষ্টে… না.. একবারের জন্যেও সে চোখ ফেরায় নি |সেই একই রকম ভাবে তাকিয়ে আছে |
লজ্জায় কান দুটো লাল হয়ে যায় সেবন্তীর |বুকের ভিতরে হৃদয় টা যেন দমাস দমাস করে হাতুড়ি পিটতে থাকে |

টং টং করে দুবার পাগলা ঘন্টি বেজে গেলো |”ইশ.. কী করছি  টা কী.. এখনো.. এতদিন পরেও .. |”..লজ্জিত হয় সে |

বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে দেয়. . জোর করে.. কাল ওনার হসপিটালে যাওয়া আছে.. নিজেরও কলেজে লেকচার আছে |আর কিছু দিন পরেই উনি রিটায়ারমেন্ট নেবেন.. এখন এসব চিন্তা… নিজেই নিজেকে মনে মনে ধিক্কার দেয় সে  |ধীরে ধীরে নিঃশব্দ কান্নায় বালিশ ভিজে ওঠে |

দিল্লি থেকে bus এ উঠে ছিলো ওরা |গন্তব্য আগ্রা  মথুরা আর বৃন্দাবন |জানলার ধারে সেবন্তী আর তার বোন |কালকের সেই চোখ দুটোর কথা মনে পড়ছিলো সেবন্তীর |আর কী তার সঙ্গে দেখা হবে? সেকী এখনো বঙ্গ ভবন এ আছে না…? 

চলন্ত বাসের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে সেবন্তী.. বাইরের দৃশ্য কতক তার চোখে পড়ে.. কতক পড়ে না| বার বার শুধু সেই দুটো চোখ সামনে আসতে থাকে |কী করবে এবার সে.. কোথায় খুঁজতে যাবে তাকে.. যাকে সে ভালো করে চোখ ভরে দেখে নি.. যার নামটাও  জানা নেই.. কী করে খুঁজবে  তাকে.. 
সে কী আসবে তাকে খুঁজতে..? 

“কী ভাবছিস দিদি? “–বলে ওঠে শ্রীমন্তি |সেবন্তী র বোন |”কৈ.. কিছু না তো.. “সেবন্তী উত্তর দেয় “বাইরে টা কী সুন্দর দ্যাখ “–কথা টা চাপা দিতে চেষ্টা করে সেবন্তী |”কথা  ঘোরাস না.. আমি সব জানি “–ছোট বোনের কথা শুনে বুকের ভেতর টা ঢিপ ঢিপ করতে শুরু করে তার..” ও সব জানে? তাহলে তো মা ও…. “
“কী জানিস তু্ই? “কৃত্তিম রাগ দেখিয়ে সেবন্তী জিজ্ঞাসা করে |”

“তু্ই ওই ছেলেটাকে খুঁজছিস তো.. কাল যার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ছিলি “–ছোট বোনের মুখের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে সেবন্তীর মুখটা |”ভাগ.. যা তা বকবি  না.. খুব তোর পাকামো বেড়েছে না.. দাঁড়া.. মাকে বলে তোর পাকামো বার করছি “এই বলে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সেবন্তী |”আমিও মাকে সব বলবো.. “রাগে গর গর করতে থাকে শ্রীমন্তি |

শ্রীমন্তি সেবন্তীর থেকে পাঁচ বছরের ছোট.. ক্লাস সেভেন  এর পড়ে   |পড়াশোনায় তুখোড় |সেবন্তীর মতো সুন্দরী না হলেও খুবই বুদ্ধিদিপ্ত চেহারা.. তাকে ইগনোর করা খুবই মুশকিল |সেবন্তীর মতো ইন্ট্রোভার্ট নয় একদম.. সব কথা মুখের ওপর বলে দেওয়া টা ই ওর স্বভাব.. মনে মনে ওকে ভয় করে চলে সেবন্তী |

ধুর.. আর এই সব যা তা ভাববে না সেবন্তী.. কোথাকার কে তার ঠিক নেই.. 
আবার জানলা দিয়ে বাইরে তাকায় সে.. ক্লাস টুয়েলভ এর রেজাল্টের কথা চিন্তা করতে শুরু করে.. কেমন হবে রেজাল্ট.. কী নিয়ে পড়বে সে..

হটাৎ নিজের হাতের ওপর মৃদু চাপ অনুভব করে ফিরে তাকায়.. শ্রীমন্তি তার হাত টা  চেপে ধরে আছে… জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকাতেই.. বাসের দরজার দিকে ইশারা করে শ্রীমন্তি |
bus টা থেমে আছে রাস্তার ধারে.. কোনো bus স্টপ নয় এটা.. bus টাকে মাঝপথে থামানো হয়েছে.. বাসে উঠে আসছে তিন জন.. যাদের মধ্যে একজন.. সেই একজোড়া চোখের মালিক… 

বুকের ভেতরে রক্ত চলা  চল টা টের পায় সেবন্তী |
হ্যাঁ.. সে উঠেছে বাসে.. চোখ দুটো সেবন্তী র চোখের ওপর নিবদ্ধ |তাড়াতাড়ি চোখ ফিরিয়ে নেয় সেবন্তী |সে কিন্তু কোনো দিকে দৃকপাত করছে না.. সটান গিয়ে বসে পড়ে উল্টো দিকের পিছনের সিট এ | 
শ্রীমন্তি কানে কানে বলে “কী রে.. এবার কী বলবি? “

কোনো উত্তর দেয় না সেবন্তী |বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটার আওয়াজ টা তীব্র ভাবে শুনতে থাকে |”এতো খুব বাজে লোক.. একেবারে bus থামিয়ে উঠে এলো |কী দরকার ছিলো এসব করার… এবার কী হবে..” মনের ভেতরে কে যেন বলে ওঠে|
পরমূর্হুতেই অন্য একজন যেন ভীষণ খুশি হয়ে বলে.. “তাহলে.. তাকে আসতেই হল তো.. তার  মানে.. তুমি একাই তাকে খোঁজোনি সেবন্তী.. সেও তোমাকে খুঁজছিলো এতক্ষন |”একটা হাল্কা হাসি ফুটে ওঠে ঠোঁটে |

শ্রীমন্তি বলে “দিদি.. তোকে দেখছে… দ্যাখ  “….”আঃ, ছাড় তো “–সেবন্তী মুখ সরিয়ে নেয় |দুমিনিট বিরতি নিয়ে শ্রীমন্তি আবার বলে “দিদি.. মনে হচ্ছে south Indian..কী সব আবোল তাবোল কথা বলছে নিজেদের মধ্যে .. কিছু বোঝা যাচ্ছে না রে “

এবার সেবন্তী রেগে গিয়ে বলে.. “তু্ই ঐসব ই শুনতে থাক “

ইতিমধ্যে ওদের মধ্যে একজন ভাব জমিয়ে ফেলেছে শ্রীমন্তির সাথে.. তুখোড় ইংরেজি তে কথোপকথন চলছে |ওদের নাম, কোথায় থাকে,  কী করে সব জানার চেষ্টা চলছে |আর বোকা  মেয়েটাও বক বক করে যাচ্ছে সমানে | মা বাবা একটু দূরেই বসে আছেন .. যদি কিছু বুঝতে পারে.. আর রক্ষা থাকবে না… মনে মনে ভাবে সেবন্তী..

বাস থামে তাজমহলএর কাছাকাছি একটা জায়গায়.. এখান থেকে হেঁটে যেতে হবে খানিকটা.. .. তারপরেই পাওয়া যাবে প্রেমের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শনের  দরজা… 

মুগ্ধ হয়ে যায় সেবন্তী.. তাজমহলের সাদা স্নিগ্ধ জোৎস্নায় যেন স্নান করে তার শরীর মন.. 

কতটা ভালোবেসেছিলেন শাহজান তার প্রিয়তমা পত্নী মুমতাজ মহল কে.. যে এমন একটা সৌধ তৈরী করেছিলেন তাঁর বিয়োগ ব্যথায়.. আজও কী এমন ভালোবাসা আছে? 

“Hi..I am karthikeyan..”হটাৎ  চমক ভাঙে সেবন্তীর… অপরিচিত কণ্ঠ বলে ওঠে.. “why are you alone here?..”
“hi…no nothing.. just watching the monument “
সেবন্তী উত্তর দেয় |”what is your good name?.. “সে  জিজ্ঞাসা করে |”I am Sebonti”….
“wow!!nice name.. what do you do? “
“finished my class 12 exams..will be going to college.. “
“Thats great..I have finished my B.tech this year..and doing a job in Banglore..never came to the northern part of India..so exploring new places”
সেবন্তী মৃদু হাসে.. চলে যেতে উদ্যত হয়.. 
কার্তিক সরে আসে “why don’t you come to banglore? you can complete your study’s over there”

একজন আগন্তুক এর মুখ থেকে.. এরকম  কথা শুনে অদ্ভুত লাগে.. এ বলে কী.. চেনা নেই শোনা নেই.. সটান ব্যাঙ্গালোরে আসার নিমন্ত্রণ দিয়ে বসলো |
মনে মনে রেগে যায় সেবন্তী…

সেবন্তীর মনোভাব বুঝতে পেরে কার্তিক বলে.. “see..I know you are getting anoyed with me….you might be thinking that why this stranger is talking with me in this way…”

লজ্জিত ভাবে বলতে থাকে কার্তিক…. “listen…I am sorry….I have said that in such a way…but..really.. I…I couldn’t stop my self… you know…yesterday when I saw you…I just kept watching you…and that very moment I knew that if I have come to this earth.. then itz only because of you..that I can see you..I can talk to you..stay with you..and..and to love you…

এক নিঃশ্বাসে বলে চলে কার্তিক.. 
“…I know what ever I am telling you, you might not understand that now..you r very young to understand all this feelings.. 
and I should not tell you..and should wait for the correct time to come.. but..I have no option… If I don’t tell you now..the time will go..and you will part from me..and the whole life will become a search for both of us…I know..you too..were waiting for me to come…isn’t it? “

সেবন্তী কিছু একটা বলতে যায়.. কিন্তু তাকে থামিয়ে দিয়ে কার্তিক বলে.. “I had no plans to come here..but this was our destiny that I came and we met…
please don’t misunderstand me..
I really had no options other than to tell you my feelings..
এতক্ষনে  চুপ করে কার্তিক.. তাঁর উত্তেজনা কিছুটা শান্ত হয়..
সেবন্তী হার্ট টা মনেহয় ব্লাড পাম্প করতে করতে ফেটে যাবে… 
কী প্রচন্ড দুসসাহস এই ছেলেটার… কী ভীষণ স্পর্ধা.. 
মাত্র কয়েক ঘন্টার পরিচয়.. আর এই ভাবে propose করে বসলো |

“..দিদি.. দিদি.”. শেফালী র ডাক শুনতে পায় সেবন্তী|
যেন অনেক দূর থেকে.. 
“…sir সেই কোন সকালে বেরিয়ে গেছে হসপিটালে.. আমাকে বলে গেলেন.. তোমাকে যেন না ডাকি.. কিন্তু এখন যে অনেক বেলা হল.. তাই আর না ডেকে পারলাম না.. কী রান্না হবে গো..? “

এলো চুল জড়িয়ে একটা হাত খোঁপা করে করতে সেবন্তী বলে “..তুমি যাও.. আমি আসছি..”

বাথরুম এ গিয়ে চোখে জলের ঝাপ্টা দেয় সেবন্তী.. কেন.. কেন বার বার সেই চোখ জোড়া  তাঁর সামনে চলে আসে.. সে আজ কত বছর পার হয়ে গেল.. তবুও…. বার বার তাঁর সেই কথাটা কানের মধ্যে বাজতে থাকে.. “If I don’t tell you now..whole life will become a search for both of us…”

সেদিন সেবন্তী আর দাঁড়ায় নি কার্তিকের কাছে.. মনের অদম্য ইচ্ছে পরাজিত হয়েছিল ভয়ের কাছে.. সমাজের ভয়.. কী বা করতে পারতো সে..কত ছোট ছিলো সে . .ভয়ে পালিয়ে ছিলো সেখান  থেকে..কোনো  উত্তর দেওয়া হয়নি তাকে..  তাঁর address বা ফোন নম্বর টাও নেওয়া হয়নি আর তখন..
শুধু বার বার শুনছিলো পেছন থেকে তাঁর নাম  ধরে সে ডাকছে.. “sebonti.. sebonti..please..don’t go..please.. tell somthing.. ” 

bus এ উঠে অপেক্ষা করেছিলো সে . শ্রীমন্তি কে বলবে.. ফোন নম্বর টা চাওয়ার জন্য.. 
কিন্তু.. সে আর ওঠেনি ওদের বাস টা তে.. কে যেন ভেতর থেকে বলে উঠছিলো.. “the time has gone..”

ওই বোধহয় হয়ে উনি ফিরলেন…চা এর জল বসিয়ে দেয় সেবন্তী.. জলের গরম বাষ্প যখন উপরে উঠতে থাকে.. সেবন্তীর চোখের জল ও বাষ্প হয়ে উপরে উঠতে থাকে…”
our life has become a search..”

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait