ঠাকুরদালানে বসে দুর্গাঅষ্টমীতে কুল গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়েছিলাম। আক্ষরিক অর্থে তিনি আমার গুরুদেব।
তারপর যদি তাকিয়ে দেখি, চারপাশে কত যে গুরু পাই আমি। প্রতিদিনের প্রতি মুহূর্তে এই যে শিখছি, জানছি, ঠকছি, সেই শেখা, জানা আর ঠকানোর লোকগুলো গুরু ছাড়া আর কী!
অকৃতজ্ঞ হতে শিখে কুর্নিশ করলাম সেই কৃতজ্ঞতা ভুলে যাওয়া লোকটাকে।
বিশ্বাস নিয়ে চলতে গিয়ে যেদিন বিশ্বাস ভেঙে গেল, সেদিন অবিশ্বাসের মন্ত্র নিলাম যার থেকে সেও গুরু আমার। আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেওয়া মানুষগুলোর জন্যই ঘুরে দাঁড়াতে শেখা। আপন ভেবে এগুলে, দূরে ঠেলে দেওয়া নিষ্ঠুর জনও আমার গুরু।
বন্ধু যখন শত্রু , সেই শত্রু বড় নির্মম তখন। তাকে গুরু মানতে মন চায়নি। কিন্তু হতাশ চোখে তার পারদর্শিতা দেখেছি। সেও একরকম শেখা, কাজে লাগাই বা না।
আরও পড়ুন : গুরু পূর্ণিমার গূঢ় অর্থ
প্রতিকূলতার ভেতর বেঁচে থাকা শিখি যার থেকে সেও এক অর্থে গুরু। গুরু সেও যে প্রথম কষ্ট দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিল আমার অবস্থান। প্রথম ঠকে যাওয়ার কষ্ট নিয়ে হেঁটে চলা শেখাল যে, সেও একপ্রকার গুরুই।
গুরু সেও যে ভালোবাসতে শিখিয়েছিল, দেখিয়েছিল আসল আমিকে।
ভালোবেসে সমর্পন শেখাল যে, তার থেকে সমর্পন শিখলাম। ভালোলাগা শিখলাম।
যারা নির্ভরশীল হলো, তাদের থেকে শিখলাম কী করে ভরসা করতে হয়।
যারা শেখাল মেনে আর মানিয়ে নিতে তারাও আমার গুরু, সে আমি মানি বা না।
মায়ের কর্তব্য পালন করতে শেখাল যে সন্তান, আদর কেড়ে নিতে শেখাল যে সন্তান সেও তো গুরু।
আমার ক্ষমতাকে মান্যতা দেওয়া মানুষটাও আমার গুরু।
বাবা মা সবার আগে বসেন আমার গুরুর সিংহাসনে। তাদের থেকে নিঃস্বার্থ হতে শিখলাম।
যারা ভুলে গেল তাদের থেকে শিখলাম কি করে মনে রাখতে হয়!
ছোটবেলার বন্ধুর মত বড়বেলায়ও অকৃত্রিম কিছু বন্ধুদের ভালোবাসা পেয়ে শিখলাম এখনো সবাই মুখোশ পরে না। কাছে থেকে দূরে থেকে ভালোবাসা যায়।
যার থেকে যতটুকু শেখা আজ তাকেই গুরু মানলাম।
0 comments