ছত্রপতির ছত্রছায়ায়

ছত্রপতির ছত্রছায়ায়

১৬৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৯ শে ফেব্রুয়ারী এই ভারতবর্ষের বুকে এক মহান সন্তানের জন্ম হয়েছিল। নাম তাঁর শিবাজী ভোসলে। পরবর্তীকালে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ নামে যিনি প্রসিদ্ধ হবেন। শাহজি ভোসলে এবং জিজাবাই এর এই পুত্র মহারাষ্ট্রের শিবনেরি দুর্গে জন্মগ্রহণ করেন।ভারতবর্ষের বুক থেকে বিদেশি শাসন, বা বলা যায় মুসলমান শাসন কে উৎখাত করতে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর। তিনি ছিলেন এক হিন্দুত্ববাদী মহান শাসক। তিনি ভারতবর্ষের বুকে সর্বপ্রথম হিন্দু-পাদ-পাদশাহীর স্বপ্ন দেখেন এবং অনেকাংশে সাফল্যমন্ডিত হন। তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একজন মহানায়ক। তাঁর বলিষ্ঠ চরিত্র আজও রাষ্ট্রবাদী দেশভক্তদের দেশহিতের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করে।
 
তাঁর গোটা জীবনটাই ছিল সংগ্রামের। সারা জীবন তিনি মুঘলদের সাথে লড়াই করে কাটিয়ে দেন। এছাড়াও বিজাপুর, আহমেদনগর ও গোলকন্ডার মুসলিম শাসকরা তাঁকে ডরিয়ে চলতেন কেনোনা তিনি যখন তখন ঐ বিদেশি শক্তিগুলির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। তখন ভারতবর্ষের বুকে ইংরেজরা উপনিবেশ স্থাপন করতে শুরু করেছে মাত্র। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছত্রপতি মহারাজ এ বিপদ বুঝেছিলেন। তাই ইংরেজদের বিরুদ্ধেও সংগ্রাম তাঁর পক্ষ থেকে ছিল অব্যাহত।
 
বলা যায় ছত্রপতি মহারাজ প্রথম ভারতবর্ষের সশস্ত্র বিপ্লববাদকে এক ছাতার তলায় আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনিই ভারতবর্ষের হিন্দু রাজা ও জনগণকে একত্র করার অভিপ্রায়ে মহারাষ্ট্রে প্রথম গণপতি উৎসবের সূচনা করেন। তাঁর সামরিক রণকৌশল ভারতবর্ষের বিপ্লববাদকে বহুলাংশে প্রভাবিত করেছিল। তাঁর সৈন্যবাহিনী মহারাষ্ট্রের পার্বত্যসংকুল অঞ্চলে লুকিয়ে যুদ্ধ করত। এই গেরিলা বাহিনী ছিল মারাত্মক শক্তিশালী। তাই ছত্রপতি শিবাজী মহারাজকে 'পার্বত্য ইঁদুর' বলা হত।
 
তাঁর বিশ্বস্ত সৈনিকদের মধ্যে তানাজী মালুসারে, বাজি পাশালকার, বাজি প্রভু দেশপান্ডে, যেসাজি কঙ্ক, সদাশিব রাও প্রমুখ ছিলেন উল্লেখযোগ্য।
 
ঔরঙ্গজেবের আদেশে সাইস্তা খান যখন প্রচুর সৈন্য নিয়ে শিবাজী কে আক্রমণ করতে আসেন, তখন চাকন দুর্গ এবং লাল মহল শিবাজী হারাতে বাধ্য হন। কিন্তু তিনি তো চুপ থাকার মানুষ নন। কিছুদিন পর তিনি তাঁর হৃত সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন এবং সাইস্তা খানকে আক্রমণ করে তাঁর হাতের কয়েকটি আঙুল কেটে নেন। সাইস্তা খান পালাতে বাধ্য হয়। শিবাজীর এক গুপ্ত অস্ত্র ছিল তাঁর বিখ্যাত বাঘনখ। আফজল খাঁ শিবাজীকে কৌশলে হত্যা করার ছক কষেছিলেন, তখন এই পরিকল্পনার আভাস পেয়ে এই অস্ত্রের সাহায্যে শিবাজী মহারাজ দুর্দান্ত প্রতিপক্ষ আফজল খানকে হত্যা করেন।
 
ক্রমবর্ধমান বিপদ বুঝে ঔরঙ্গজেব ছত্রপতিকে গ্রেপ্তার করার ছক কষেন। তিনি শিবাজীকে দিল্লিতে ডেকে এনে তাঁকে অপমান করার উদ্দেশ্যে তাঁর সেনাদলে পাঁচ হাজারী মনসবদারের পদ দেন। অপমানিত শিবাজী মহারাজকে এরপর গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ছত্রপতি কৌশলে বেরিয়ে আসেন। এর জন্য তিনি পরিকল্পনামাফিক বৃহৎ ফলের ঝুড়িতে করে জেলখানার বাইরে আসেন। ঔরঙ্গজেব তাঁর ভয়ে এতটাই ভীত ছিলেন যে তাঁকেই প্রধান প্রতিপক্ষ বলে গণ্য করতেন।
 
এরকম অনেক কীর্তিই তিনি স্থাপিত করেছিলেন। সেইজন্য ভারতবর্ষের বুকে তিনি সদা পূজিত হয়ে আসছেন। তাঁর সৈন্যদলের ভিত্তি ছিল কঠোর অনুশাসন। পরবর্তীকালে ইংরেজ, ফ্রেঞ্চ, ডাচ এবং পর্তুগিস ঐতিহাসিকরা তাঁকে বীর আলেকজান্ডার এবং জুলিয়াস সিজারের সাথে তুলনা করেছেন।
 
ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের মত সুসন্তান আজ ভারতবর্ষের বিশেষ প্রয়োজন। তিনি যে অনুশাসনের বীজ রোপন করেছিলেন, তা বর্তমান যুগে বিশেষভাবে অনুকরণযোগ্য। তাঁর সাহস এবং দেশভক্তি আমাদের সদা উদ্বুদ্ধ করে চলবে। আজ সেই মহান আত্মার জন্মদিনে তাঁকে শতকোটি প্রণাম জানাই।
 
জয় ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ।
ADVERTISEMENT
Tuhu Momo Video Teaser

0 comments

Saurav Chakraborty

Saurav Chakraborty

Shared publicly - 18th Feb, 21 09:10 pm

প্রনাম

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait