কাশফিয়া নাহিয়ানের কলমে থ্রিলার গল্প : ধূম্রজাল

কাশফিয়া নাহিয়ানের কলমে থ্রিলার গল্প : ধূম্রজাল

গল্প প্রতিযোগিতা : থ্রিলারের থ্রিল
গল্পের নাম : ধূম্রজাল
কলমে : কাশফিয়া নাহিয়ান


সত্যিই কি আমরা সন্ধান পাবো সে জগতের যা রহস্যে আচ্ছন্ন!যা সত্য মিথ্যার ধোঁয়াশায় ঘেরা....আজ এখানেই শেষ করছি..কাল আবার হাজির হবো আপনাদের সবার প্রিয় শো "ধূম্রজালে"...সেম টাইম সেম চ্যানেলে।ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকুন এবং শুনতে থাকুন রেডিও স্বাধীন 91.4 fm
মাইক্রোফোনের সুইচটা বন্ধ করে একটা প্রশান্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো নিলয়।এতক্ষণ একটানা কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সে।কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো সে।
নিলয় আহমেদ।রেডিও স্বাধীনের নামকরা রেডিও জকি সে।তার "ধূম্রজাল" শোটি শ্রোতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।সব বয়সের শ্রোতা তার শোটি শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে।এটি একটি থ্রিলার শো।রহস্য,ভৌতিকতা,প্রেতাত্মা,অশরীরী এসব নিয়ে আলোচনা বিশ্লেষণ করা হয়।নিলয়ও এই শো টি আরজিং করতে দারুণ পছন্দ করে।বাসায় এসে সোফায় গা এলিয়ে দিলো নিলয়।কিছুক্ষণ পরই তার মোবাইলটা ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠলো।
হ্যালো..মা..
কি খবর তোর?আজ অনেকটা দেরী করে বাসায় ফিরলি যে!
শো শেষ করতে দেরী হয়ে গেছে..
কিছু খেয়েছিস?
হ্যাঁ..এখনই খাবো..
তোর কাজের ছেলে রন্টুটা ঠিকমত রান্না বান্না করতে পারে...
মোটামুটি পারে..কখনও ঝাল বেশী আবার কখনও লবণ বেশী দিয়ে ফেলে..
তোকে কতদিন বললাম একটা বিয়ে শাদি কর..কিন্তু না কে শোনে কার কথা?
মা..তোমাকে কতবার বলেছি এইসব আমাকে দিয়ে হবে না..
তো..এই জবটা ছেড়ে দে..অন্য কোনো জব কর!এটা কি ধরনের জব?না ঘুমের ঠিক আছে না খাওয়া দাওয়ার..
মা..আমি আরজিং জব খুব এনজয় করি।আমার খুব ভালো লাগে।আর আমি তো সেটাই করবো যা ভালো লাগে..তাই তো করা উচিত!
যা ইচ্ছা কর..তাড়াতাড়ি খাবারটা ওভেনে গরম করে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়..
ওকে মা..বাই।
আজ বিছানায় শুয়ে কিছুতেই ঘুম আসছে না নিলয়ের।যদিও অনেক ক্লান্ত সে তাও কেন জানি ঘুম আসছে না।বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করতে লাগলো সে.. তার শো কে নিয়ে লিসেননাররা কেমন কমেন্টস করে তাই চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলো।হঠাৎ একটা কমেন্টসে চোখ আটকে যায় তার।কমেন্টসটা নীলিমা নামক একজন করেছে.."ধুম্রজাল করতে করতে সেই জালে নিজেই জড়িয়ে যাবেন না তো"....বড় অদ্ভুত কমেন্টস।অনেক অবাক হলো নিলয়।
হঠাৎ দেখলো তার মোবাইলে কে যেন কল করছে..আশ্চর্য!এই রাত তিনটার সময় কে কল করলো?
হ্যালো..
আপনি কি আর জে নিলয় বলছেন..ওপাশ থেকে একটি সুরেলা কণ্ঠস্বর শুনলো নিলয়..
জ্বি বলছি..
কেমন আছেন?
ভালো আছি..কে বলছেন প্লিজ..
আমি নীলিমা..
নীলিমা!এই নামের কাউকে তো আমি চিনি না..
আমি আপনার অনেক বড় ফ্যান..
এক সেকেণ্ড!আপনি আমার ফোন নাম্বার কোথা থেকে পেলেন?
কেন,কখন,কোথায়,কিভাবে এসব না হয় নাই বললাম..আচ্ছা আপনি অশরীরী,প্রেতাত্মা এসবে বিশ্বাস করেন?
দেখুন এটা আমার প্রফেশন।আমার শো এর বিষয় বস্তুকে শ্রোতাদের কাছে উপস্থাপন করাই আমার কাজ।ব্যক্তিগতভাবে আমি এসব বিশ্বাস করি না।
একদমই করেন না...
বললাম তো করি না..
হয়ত এমন কোনো মুহূর্ত আসবে যখন আপনি ঠিক বিশ্বাস করবেন কিন্তু হয়ত তখন অনেক দেরী হয়ে যাবে।
আপনার সাথে কথা বলতে আমার ভালো লাগছে না।ফোন রাখছি।বিরক্ত হয়েই ফোন কেটে দিলো নিলয়।
তার পরের রাতেও একই ঘটনা।ঠিক রাত তিনটায় নিলয়ের ফোন বেজে উঠলো।
হ্যালো...
কি করছেন?
কে জানতে পারি...
আমি নীলিমা..ওই যে গত রাতে ফোন দিয়েছিলাম।
আপনি কি চান বলুন তো?
আমি আপনার বন্ধু হতে চাই।
অজানা অচেনা মানুষের বন্ধু হওয়ার আমার কোনো শখ নেই....
একবার না হয় অচেনা মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করে দেখুন।ভালো লাগলেও লাগতে পারে।
গুড বাই।রাগ করেই ফোনটা রেখে দিলো নিলয়।
এরপর থেকে প্রতিরাতেই নীলিমার ফোন আসে।নিলয় সবসময় ভাবে ফোনটা ধরবে না।কিন্তু কি এক অজানা কারণে ফোন না ধরে থাকতে পারেনা!বিরক্তি,অনীহার সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে তা অভ্যাসে পরিণত হয় তা নিলয় নিজেও জানে না।নীলিমার সাথে কথা বলতে বলতে কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায় সে!যে ঘোর কিছুতেই কাটতে চায় না।না চাওয়া সত্ত্বেও নীলিমার সাথে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে জড়িয়ে ফেলে নিলয়।অথচ নীলিমা সম্পর্কে সে তেমন কিছুই জানে না।তার পরিবার পরিজন,সে কোথায় থাকে এখনও নিলয়ের অজানা।এমনকি কখনও ফোনেও নীলিমাকে পায়না সে।একটি নির্দিষ্ট সময়ে নীলিমাই তাকে ফোন করে।নিলয়ও অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে তার ফোনের জন্য।
এভাবে বেশ কিছু দিন পার হয়ে যায়।
আজকের এপিসোডটা কিন্তু দারুন ছিলো..
তাই!তোমার ভালো লেগেছে..
হ্যাঁ..খুবই ভালো লেগেছে....আচ্ছা চলো না কাল দেখা করি।তোমার সাথে লং ড্রাইভে যাবো..
আরে বাহ্!আমি যখন দেখা করতে চাইতাম তখন তো বিভিন্ন কারণে মানা করে দিতে!আজ হঠাৎ এতটা পরিবর্তন?বলো কাল কোথায় দেখা করবো?আগ্রহ সহকারে জানতে চাইলো নিলয়।
কাল রাত নয়টায় তোমার অফিসের সামনে আমি চলে আসবো..
রাত নয়টায়?অবাক হয়ে বললো নিলয়
হ্যাঁ!এতে কি কোনো অসুবিধা আছে?
তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হবে তাও আবার এত রাতে!তুমি অনেক অদ্ভুত..
আমি জানি আমি অদ্ভুত..কাল তাহলে দেখা হচ্ছে বাই..
তার পরের দিন ঠিক রাত নয়টায় অফিসের সামনে হাজির হয়ে যায় নিলয়।হঠাৎ দেখলো একটি সাদা রঙের গাড়ি থেকে একটি মেয়ে নামছে।ধীরে ধীরে মেয়েটি নিলয়ের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে...
সাদা টপস,জিন্সের প্যান্ট,ব্লান্ট কাট চুল আর হাতে একটি ব্রেসলেট।কি অপূর্ব লাগছে নীলিমাকে!ফেসবুকে নিলয় তার ফটো দেখেছে কিন্তু সামনাসামনি দেখে চোখ ফেরাতে পারছে না সে।
কি দেখছো অমন করে!
না..কিছু না..তুমি তো অনেক সুন্দর।একদম যেন ডানাকাটা পরী।
থ্যাংকস..চলো তো এখন..তো শুরু হোক আমাদের লং ড্রাইভ..
ড্রাইভ করতে করতে বার বার নিলয়ের চোখ নীলিমার দিকেই চলে যাচ্ছে।
আচ্ছা..তোমার ভয় করছে না তো?
কেন...ভয় করবে কেন?
না মানে..আমি একজন পুরুষ আর তুমি একা সুন্দরী একটি মেয়ে..এত রাতে বাইরে..কোনো বিপদও তো হতে পারে..
আমি ভয় পাই না।উল্টো ভয় আমাকে দেখে দৌড়ে পালায়।
তাই নাকি..ধরো আমি যদি তোমার কোনো ক্ষতি করি তাহলে..
আমি জানি তুমি তা করবে না।কারণ তুমি অনেক ভালো।
কিভাবে বুঝলে আমি ভালো..
বোঝার ক্ষমতা থাকলে ঠিকই বোঝা যায়।কিন্তু..
কিন্তু কি..
ভালো মানুষের পরিণতি সবসময় ভালো হয় না..
তবে কি হয়?
অনেক মর্মান্তিক হয়..
সবসময় এত রহস্য করে কথা বলা কি খুব জরুরী..
এই দুনিয়াটা বড় রহস্যময়।আর রহস্য না করলে আমরা টিকে থাকবো কিভাবে...
থামো থামো থামো..নীলিমার চিৎকার শুনে চমকে গেলো সে..
কি হলো..
এখানেই গাড়ী থামাও..
গাড়ী থামাতেই নীলিমা তড়িঘড়ি করে নামলো..
কি সুন্দর পূর্ণিমা..
নিলয় গাড়ী থেকে নেমে খেয়াল করলো অনেক নির্জন একটা জায়গায় চলে এসেছে।যেখানে কোনো সাড়া শব্দ নেই।আর ড্রাইভ করতে করতে হয়ত সে অনেক দূর চলে এসেছে!এই জায়গায় সে আগে কখনও আসেনি।কেন জানি এখানে চাঁদটা অস্বাভাবিক রকমের বড় দেখাচ্ছে!
নীলিমা গাড়ীর উপর উঠে বসলো..
আরে কি করছো?পড়ে যাবে তো..
কিছু হবে না..তুমিও এসে বসো..নীলিমা তাকে হাত ধরে একরকম জোর করেই গাড়ীর উপর বসালো..
কি ছেলেমানুষী করছো বলো তো?
আজ আমি তোমার হাত ধরে পূর্ণিমা দেখবো।জানো আমার কতদিনের ফ্যান্টাসি আমার সবচেয়ে কাছের মানুষের হাত ধরে পূর্ণিমা দেখার।
তার মানে..আমি তোমার কাছের মানুষ..
অবশ্যই কাছের মানুষ।না হলে এত রাতে তোমার সাথে ঘুরতে বের হতে পারতাম..
নীলিমার হাত ধরে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে খুব ভালো লাগছে তার।এভাবে কখনও পূর্ণিমা দেখা হয়নি।হঠাৎ সে খেয়াল করলো নীলিমা তার পাশে নেই।
নীলিমা..এই নীলিমা..কোথায় তুমি?
এই তো আমি এখানে..
কোথায় গিয়েছিলে বলো তো...
আমি তো এখানেই আছি..দেখো তোমার অনেক কাছে..
পূর্ণিমার সমুদ্রে অবগাহন করা যদি শেষ হয়ে যায় তো চলো এখান থেকে..আমার শো আছে..দেরী হয়ে যাচ্ছে তো!
না..আমরা এখান থেকে কোথাও যাবো না..
মানে?
মানে আমরা এখানেই থাকবো।অনন্ত অসীম অবস্থান..
এখন তোমার হেয়ালী কথাবার্তা সত্যিই নিতে পারছি না..
হেসেই যাচ্ছে নীলিমা..এই প্রথম তার হাসি দেখে ভিতরটা কেঁপে উঠলো নিলয়ের।
মুহূর্তের মধ্যে নীলিমা একটি কঙ্কালে পরিবর্তিত হলো..যেটা তার দিকে তাকিয়ে অনবরত হাসছে..
ভয়ে পুরো শরীর জমে গেলো নিলয়ের।না হাত পা নাড়াতে পারছে না কথা বলতে পারছে..শুধু মনে হতে লাগলো নীলিমার সেই কথাগুলো.."হয়ত এমন কোনো মুহূর্ত আসবে যখন আপনি ঠিক বিশ্বাস করবেন কিন্তু হয়তো তখন অনেক দেরী হয়ে যাবে।"
তার পরদিন পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ছিলো.."জনপ্রিয় রেডিও জকি নিলয়ের রহস্যজনক মৃত্যু।" বনানীর রাস্তায় তার দ্বিখণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।সোশ্যাল মিডিয়াতে আলোড়ন তোলে এই মৃত্যু।অনেক তদন্তের পরও নিলয়ের মৃত্যু রহস্যই রয়ে যায়।
নিলয়ের মৃত্যুর তিন মাস পার হয়ে গেছে।অনেক মানুষই তা ভুলে গেছে।অনেকের প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি।জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না।কথায় আছে "দ্যা শো মাস্ট গো অন"... কিছুদিন বন্ধ থাকার পর "ধূম্রজাল" শোটি আবার শুরু হয়েছে।এবার এই শো এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছে আর জে ফাহিম।শোটি আবারও আগের মত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।ফেসবুকের কমেন্টস চেক করতে করতে ফাহিমের নজর গেলো একটি কমেন্টস এর দিকে "ধূম্রজাল করতে করতে সেই জালে নিজেই জড়িয়ে যাবেন না তো"....হয়তো "ধূম্রজাল" শোটি নিলয়ের মত ফাহিমকেও টেনে নিয়ে যাচ্ছে সমাপ্তির দিকে।

 

ADVERTISEMENT
Tuhu Momo Video Teaser

0 comments

Siddhartha Pal

Siddhartha Pal

Shared publicly - 11th Jul, 21 02:24 pm

ভালো হয়েছে

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait