শ্রীমা : নারীত্বের শ্রেষ্ঠ আদর্শ

শ্রীমা : নারীত্বের শ্রেষ্ঠ আদর্শ

বিত্রতা স্বরূপিণী, রামকৃষ্ণগতপ্রাণা শ্রীমা সারদাদেবী ছিলেন তাঁর 'খুকি', ভগিনী নিবেদিতার চোখে সনাতন আদর্শের শেষ প্রতিনিধি, বা আধুনিকতার প্রথম উদাহরণ। ত্যাগ, সেবা, সরলতা এবং দিব্যজ্ঞানের মূর্ত প্রতীক শ্রীমা কিন্তু চলনে বলনে ব্যবহারে এক অত্যন্ত সাধারণ রমনীর মত থাকতে চেষ্টা করলেও, তাঁর দিব্য মুখশ্রী এবং সুকোমল ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে তাঁর স্বরূপ প্রকাশিত হয়ে পড়ত, তা তিনি নিজের ঐশী শক্তিকে যতই না লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করুন।

ঠাকুর যখন দক্ষিনেশ্বরে ছিলেন, তখন নহবতের ছোট অপরিসর ঘরটিতে মা কত কষ্ট করেই না ছিলেন। ভক্ত মহিলারা বলতেন, 'আহা! কত কষ্ট করেই না আমাদের সীতা লক্ষী আছেন গো, ঠিক যেন বনবাস!' মা কিন্তু ওই ছোট্ট ঘরে থেকেই ঠাকুর, ঠাকুরের গর্ভধারীনী মা এবং মা ভবতারিনীর সেবা করেছেন। শুধু তাই নয়, ওই ঘরে প্রায়শই মায়ের ভক্তেরা এসেও থাকতেন। এছাড়াও ঠাকুর তথা ঠাকুরের শিষ্যদের নানাবিধ রান্না, মা ওই ঘরেই করতেন। কিন্তু সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ওই ঘরে ঠাকুরের জন্য জ্যান্ত মাছ রাখা থাকতো, হাঁড়িতে ঝোলান। সারারাত ওই মাছের কলকল শব্দে মায়ের ভালো ঘুম হতো না, ঠাকুর ভোররাতের দিকে ঘরের বাইরে থেকে মাকে ডেকে তুলে দিতেন। মা রাতের আঁধার থাকতে থাকতে শৌচাদি সেরে নিতেন, দিনমানে লোকে তাঁকে বাইরে দেখতে পেতো না। আর এইজন্য শৌচের বেগ চেপে রেখে মায়ের পেটে সাংঘাতিক অসুখ হয়েছিল বলে শোনা যায়। কিন্তু সহ্যশক্তি স্বরূপিণী মা একটিবারের জন্যও তা কাউকে জানতে দেননি। শুধু নিরলস সেবা করে গেছেন ঠাকুরের, হাসিমুখে ভক্তদের হাজার আবদার মিটিয়েছেন।

ADVERTISEMENT

 

ছুটি নিলেন বৃহস্পতিরইল শনির দৃষ্টি

ঠাকুরের শিষ্যরাও বহুদিন পর্যন্ত মাকে এক সাধারণ রমনী ভাবতেন। শুধু স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী ব্রহ্মানন্দ এবং স্বামী সারদানন্দের মত কয়েকজন ছাড়া। এমনকি স্বামী অদ্ভুতানন্দ পর্যন্ত মাকে চিনতে অনেক সময় নিয়েছিলেন। আর চিনতেন ঠাকুর। তিনি জীবনের শেষ প্রহরে এসেছেন, এবার শরীর ত্যাগ করবেন। মাকে বললেন, (নিজেকে দেখিয়ে) এ ই কি সব করবে, তুমি( মা)কি তবে এবারেও এমনিই এলে? এটুকুই যথেষ্ঠ ছিল। করুনারূপিণী মা তাঁর সন্তানদের দায়িত্ব নিলেন। এরপর থেকে পোকার মত কিলবিল করা আমাদের মা নিরন্তর দীক্ষা দিয়েছেন, তাঁর সর্বাঙ্গ জ্বলে গেছে আমাদের যা কিছু মন্দ সব গ্রহণ করতে করতে, তবু বিমুখ হন নি। শেষ জীবনে রাতে প্রায়ই ঘুমোতেন না। বলতেন, ছেলেরা দীক্ষা নেয়, তার মধ্যে অনেকেই জপ করে না। তাই তাঁকেই জপ করতে হবে ওদের কথা ভেবে, কেনোনা তিনি ওদের দায়িত্ব নিয়েছেন।

অপরিসীম দারিদ্র, তবু ঠাকুরের মারওয়ারী শিষ্য লছমিনারায়ণ যখন সেই যুগে বিপুল অর্থ ঠাকুরকে দান করতে চেয়েছেন অথচ ঠাকুর নেন নি, মাও দৃঢ়ভাবে সেই অর্থ প্রত্যাখ্যান করেছেন। বলেছেন, তাঁর নেওয়া মানে ঠাকুরেরই নেওয়া। জাগতিক ব্যবহার্য বস্তু তাঁর কাছে পরবর্তীতে কম আসে নি, কিন্তু ঠাকুরের আদেশ মত তিনি কখনো কারোর কাছে 'চিৎ হাত' করেন নি। সুখ সুবিধা কে তিনি ভ্রূক্ষেপের মধ্যেই আনতেন না।

মায়ের নিজের আত্মীয়রা ছিল ঝগড়াটে, বদমেজাজি, কলহপ্ৰিয়। তারা মায়ের গায়ে পর্যন্ত কয়েকবার হাত তুলতে উদ্যত হয়েছিল। কিন্তু এই লোকগুলির সাথে মা এমন ভাবে মিশে থাকতেন, যেন তাদের দোষ তিনি দেখতেই পাচ্ছেন না। এই হচ্ছে, তাঁর নিজের কথাতেই, স্থিতপ্রজ্ঞত্বের লক্ষণ। এইভাবে চলতে তিনি উপদেশ দিয়ে গেছেন।

 

বুলিইং - কি? কিভাবে লড়াই করা যেতে পারে এর বিরুদ্ধে?

 

সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, নারীজীবনের কর্তব্য বা আদর্শ মা যেভাবে নিজ জীবনে অভ্যাস করে আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন, তা মেনে চলার আজ খুবই দরকার। তবেই জীবনে আসবে শান্তি।

আর এই নারীদিবসে সেই নারীকে শতকোটি প্রণাম জানাই, যিনি দিব্য হয়েও আমাদের বড় কাছের, বড় আপন। তিনি মানুষকে সদবুদ্ধি দিন, এটুকুই প্রার্থনা। তিনি তো সৎঅসৎ সবারই মা, তাই অবোধ সন্তানদের বালকসুলভ অজ্ঞতা তিনি ক্ষমার চোখে দেখে যেন তাদের সব দোষ ধুয়ে দেন।

প্রণাম মা। তোমার মত যেন এক শতাংশও হতে পারি, আশীর্বাদ করো।

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait