সুমন্ত বোসের কলমে থ্রিলার গল্প : যন্ত্রণার অবসান

সুমন্ত বোসের কলমে থ্রিলার গল্প : যন্ত্রণার অবসান

গল্প প্রতিযোগিতা : থ্রিলারের থ্রিল
গল্পের নাম : যন্ত্রণার অবসান   
কলমে : সুমন্ত বোস

 


(১)

 

বিকেলে ঘুম থেকে উঠে, বিছানা ছেড়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো ছোট্ট রিমলি। রান্নাঘর থেকে বাসনপত্রের আওয়াজ শুনতে পেল। মিনতিমাসি বোধহয় রাতের খাবার তৈরি করছে। বাবার আসতে এখনও ঢের দেরী। রিমলি রান্নাঘরের দিকে যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়ালো। উঠানের আমগাছটার দিকে চোখ পড়তেই তার মুখে হাসি ফুটে উঠল। সেখানে দাঁড়িয়ে এক নারীমূর্তি হাতের ইশারায় তাকে ডাকছে। তাইতো! সে একদম ভুলে গেছিল কথাটা। আজ তার জন্য অনেক সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। এখনই তাকে যেতে হবে এই নারীমূর্তির সাথে।
                চটিটা পায়ে গলিয়ে নিঃশব্দে উঠানে নেমে এল রিমলি, এগিয়ে গেল সেই আমগাছটার কাছে। নারীমূর্তি ততক্ষণে আমগাছ ছাড়িয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে, পিছনে ফিরে রিমলিকে আরেকবার ইশারা করল। ইশারার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে তাকে অনুসরণ করল সেই ছোট্ট পা দুটো। চারিদিক শুনশান, কেউ দেখতে পেল না তাদের।
                হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলে প্রবেশ করল দুজনে। রাস্তা দিয়ে বাবার সাথে সাইকেলে চেপে  যাওয়ার সময় বেশ কয়েকবার সে দেখেছে, ভয়ও পেয়েছে প্রতিবার। কিন্তু আজ জঙ্গলে ঢুকেও তার ভয় করছেনা। আজ সে যা পেতে চলেছে, ছোটবেলা থেকে সে সেটা পেতে চেয়েছে। আজ এইভাবে পেয়ে যাবে ভাবতেই পারেনি। আগে আগে হেঁটে চলা নারীমূর্তি জঙ্গলের গভীরে একটা শুকনো গুঁড়ির উপর বসে পড়ল। মুখে একগাল হাসিমেখে তার গা ঘেঁষে বসল রিমলি। খুব ভালো লাগল তার।
                চকলেট জাতীয় কিছু একটা খেতে দিল সেই নারী। আনন্দের সাথে সেটা শেষ করল রিমলি। তারপরেই তার ভীষণ ঘুম পেল, পরম নিশ্চিন্তে সে ঘুমিয়ে পড়ল নারীর কোলে। অস্ফুটে সে শুধু বলে উঠল, "মা…" কিন্তু পরমুহূর্তে ঘুমের মধ্যেই তার কষ্ট হতে শুরু করল। তার মনে হল, একটা হাত যেন নাক, মুখ চেপে রেখেছে, তাকে শ্বাস নিতে দিচ্ছে না। কষ্টে হাত পা ছুড়তে শুরু করল, কিন্তু ঘুমের ঘোরটা কাটিয়ে উঠতে পারল না। অল্পসময়ের মধ্যে স্থির হয়ে গেল তার নিষ্প্রাণ দেহটা।

ADVERTISEMENT

(২)

গ্রামের শেষ প্রান্তে ছোট্ট একটা বাসস্ট্যান্ড। বেলার দিকে বাস থেকে নামতেই মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেল সৌগতর। এরকম জায়গা তার বরাবরের পছন্দের। বেশ শান্ত নিরিবিলি জায়গা, সবুজ গাছের জঙ্গলে ভরা চতুর্দিক। তার মাঝখান দিয়ে একফালি রাস্তা চলে গেছে। সৌগত হাঁটতে শুরু করল সেই রাস্তা ধরে। জঙ্গলটা পেরিয়ে একটা মাঠ, মাঠ অতিক্রম করেই গ্রামের ঘরবাড়ি চোখে পড়ল। পকেট হাতড়ে সেলফোনটা বের করে অনন্তবাবুর ফোন করল সে।
              সৌগত এখানে এসেছে পীরপুকুর গ্রামের হাইস্কুলের ইংরাজী শিক্ষক হয়ে। আগে সে অন্য স্কুলে শিক্ষকতা করত। আজ সে বদলি হয়ে এসেছে। ঘরভাড়ার ব্যাবস্থা আগেই করেছে, গ্রামেরই একজন বয়স্ক মানুষ অনন্তবাবুকে বলে কয়ে। তাই ফোন করতেই তিনি নিজে এগিয়ে এসে ওকে ঘরে নিয়ে গেল। ঘর দেখিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সৌগত দুপুরে এবং রাত্রে কি খাবে, জেনে নিল। আজ উনিই ওর খাবারের ব্যাবস্থা করবেন। আগে থেকেই সেভাবে কথা হয়ে আছে। আগামীকাল থেকে সৌগত নিজের খাবার নিজে বানিয়ে নেবে।
               ছোট একতলা বাড়ি। সামনে ছোট একটা উঠান। চারপাশে বড়ো বড়ো গাছপালা। অনন্তবাবুর বসতবাড়ি কিছুটা দূরে। সৌগত ঘুরে ঘুরে দেখল বাড়িটার চারপাশ। বেশ শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ, ঠিক যেমনটা তার পছন্দ।
              পরদিন সকালে স্কুলে গিয়ে শিক্ষক শিক্ষিকাদের মুখে একটা খবর পেল সৌগত। এলাকায় নাকি বিগত কয়েকমাস ধরে বেশ কিছু বাচ্চা খুন হয়েছে। কেউ বা কারা নাকি বাচ্চাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। সকলেরই বয়স সাত, আট বছর। আর সকলেই এই পীরপুকুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। এই কারনে শিক্ষক শিক্ষিকাদের মন বিশেষ ভালো নেই, আর গ্রামবাসীরাও বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে বিশেষ সাহস পাচ্ছে না।
                সৌগতর আজ প্রথম দিন, ক্লাসে গিয়ে দেখল সত্যিই খুব অল্প কয়েকটা বাচ্চা উপস্থিত আছে। ক্লাস শেষ করে সকলের সাথে পরিচয় করে সে কমনরুমে এসে নিজের চেয়ারে এসে বসল। সকলের কথা শুনল, কিন্তু নিজে কিছু বলল না। ছুটির ঘন্টা বাজতে সে স্কুল থেকে বেরিয়ে ঘরের দিকে হাঁটা দিল। এত কম বাচ্চা নিয়ে ক্লাস করতে ভালো লাগেনা।
                ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে পরনের জামা প্যান্ট খুলে ফেলল একে একে। তারপর স্নান করে একটা ব্যাগ থেকে বের করল তার পছন্দের পোশাক। এখন তাকে বেরাতে হবে। আজ রান্না করতে ইচ্ছে করছে না, বাইরে কোথাও খাবারের ব্যাবস্থা করতে হবে। আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো সৌগত। নিজেকে দেখে বেশ ভালো লাগল তার। তারপর অতি সন্তর্পণে বেরিয়ে এল বাইরে।

(৩)

ইন্সপেক্টর পবন নিয়োগী একমনে কাজ করছিলেন। এমন সময় ফোন বেজে উঠল। রিসিভার কানে দিতেই ওপাশ থেকে উত্তেজিত কন্ঠস্বর ভেসে এল। রিসিভার নামিয়ে তিনি হাঁকডাক শুরু করে দিলেন। কারজলা গ্রামের ধারে যে জঙ্গলটা আছে, সেখানে দুটো বাচ্চার মৃতদেহ পাওয়া গেছে। কালবিলম্ব না করে ইন্সপেক্টর নিয়োগী চারজন কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দিলেন।
             স্পটে পৌঁছে দেখলেন একটা ছোটখাটো ভিড় জমে গেছে। তার মধ্যে থেকে একজন জানালেন, তিনিই ফোন করেছিলেন। এই জঙ্গলে বিশেষ কেউ আসে না। কাঠুরের দল সামনে থেকেই প্রয়োজনীয় কাঠ সংগ্রহ করে চলে যায়। আজ ভোরবেলা সুকদেব মন্ডল নামের এই কাঠুরে গ্রামবাসী কাঠ কাটতে এসে দেখেন তিন চারটে কুকুর ছোটদের ছেড়া জামাকাপড় নিয়ে টানাটানি করছে। লোকটা সেই কুকুরদের অনুসরণ করে জঙ্গলের আরও ভিতরে গিয়ে বাচ্চাদুটোকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। তখনই সে ছুটে গিয়ে গ্রামের অন্যান্যদের ডাকে এবং পুলিশকে খবর দেয়।
             ইন্সপেক্টর নিয়োগী দেখলেন একটা বাচ্চা, যার বডিটা অনেকটা দূরে ঝোপের আড়ালে পড়ে আছে, তার ডেডবডি চার পাঁচ দিনের পুরোনো, আরেকটা বাচ্চার বডি দেখে আন্দাজ করলেন, হয়তো কাল রাতে মারা গেছে। তিনি বডিদুটোকে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দিলেন। বাচ্চাদুটোর বাড়ির লোককেও পাওয়া গেল ভিড়ের মধ্যেই কান্নায় বিহ্বল অবস্থায়। সেইসব ঝামেলা মিটিয়ে কিছু প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ সেরে তিনি যখন থানায় ফিরলেন তখন বেলা গড়িয়ে গেছে।
              বিগত একবছর ধরে পুলিশমহল নাজেহাল হয়ে গেছে এই একই ঘটনায়। তিনি ভালোমতো জানেন, পোস্টমর্টেম রিপোর্টে কি তথ্য আসবে। বাচ্চাদুটোকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে, আর তাদের পেটে ঘুমের ওষুধ পাওয়া গেছে। মেরে ফেলার আগে হত্যাকারী তরল পানীয়ের সাথে ওটা মিশিয়ে বাচ্চাদের খাইয়েছে। এছাড়া স্পট থেকে বা অন্যান্য সামগ্রী থেকে খুনীর কোনো ট্রেস পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে সালকিনগরে দুটো, হিনলগঞ্জে একটি, পারিহাটিতে তিনটে এবং পীরপুকুরে পাঁচটা বাচ্চা খুন হয়েছে। এগুলো সবই অন্যান্য গ্রামের, অন্যান্য থানার ঘটনা। এইবার কারজলাতেও এই ঘটনা শুরু হয়েছে।
             মোবাইল ফোন থেকে পীরপুকুর থানার ইন্সপেক্টর রতন সমাদ্দারকে কল করলেন ইন্সপেক্টর নিয়োগী। ইন্সপেক্টর সমাদ্দারের বয়েস হলেও প্রখর বুদ্ধি রাখেন। তাছাড়া তিনি জানেন, মিস্টার সমাদ্দার এই তদন্তে অনেকটা এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু হঠাৎই ঐ এলাকা থেকে খুনী ডিঅ্যাক্টিভ হয়ে যায় এবং খুন বন্ধ হয়ে যায়। এবার হয়তো সেই একই খুনি কারজলাকে টার্গেট করেছে! তাই সমাদ্দারবাবুর সাহায্য এই মুহূর্তে একান্ত প্রয়োজন। ইন্সপেক্টর সমাদ্দার সব শুনে বললেন, "এখনই আসছি।"
             সত্যিই খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। গাড়ি নিয়ে কারজলা থানায় হাজির হলেন ইন্সপেক্টর সমাদ্দার। তিনি যতটা জেনেছেন সবটাই বললেন ইন্সপেক্টর নিয়োগীকে, "দেখুন মিস্টার নিয়োগী, এই খুনীর খুন করার ধরন বড়ো অদ্ভুত। প্রথমত খুনী বাচ্চাদের হত্যা করার জন্য কোনো জঙ্গল বা নিরিবিলি স্থানকে বেছে নেয়, যেখানে সচরাচর মানুষ যায়না। তাই ডেডবডি পাওয়া যায় অনেক দেরীতে। দ্বিতীয়ত, যে কোনো কারণেই হোক বাচ্চারা নিজে থেকে এর সাথে জঙ্গলে যায়। খুনী কখনই তার সাথে জোরাজুরি করে না, এমনকি তাকে স্পর্শ অবধি করে না। শুধু পানীয়ের লোভে বাচ্চারা ঘর ছেড়ে অচেনা কারোর সাথে এতদূর চলে যাবে বলে মনে হয়না। সেই বাচ্চাদের নাক মুখ চেপে হত্যা করার সময় হয়তো হাতে গ্লাভস জাতীয় কিছু পড়ে নেয় সেই আততায়ী। তাছাড়া এক একটি খুনের পর পরবর্তী খুনের জন্য পাঁচ ছয়দিন সময় নেয়, আমার অনুমান এই সময়ের মধ্যে খুনী তার টার্গেট করা বাচ্চাদের সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে তোলে।"
                একটু থামলেন সমাদ্দারবাবু, তারপর বললেন, "এসব তো হল সাধারণ বিষয়। মোটামুটি সব থানার ইন্সপেক্টররাই জানেন, কিন্তু শেষ দুটি তথ্য যেটা আমি জানতে পেরেছি তা আরও চাঞ্চল্যকর। তারিখ, সময়, স্থান এবং কিছু উইটনেসের বয়ানের নিরিখে খুনীর অস্তিত্বের যেটুকু তথ্য সামনে এসেছে, তাতে করে সে একজন নারী। আর যেসমস্ত বাচ্চাদের সে খুন করেছে তারা সকলেই হয় অনাথ, নাহলে দত্তক সন্তান, বা হয়তো তাদের মা মারা গেছে, না হয় তারা সৎমায়ের কাছে পালিত।" এই তথ্য শুনে ভ্রূকুঞ্চিত হয় ইন্সপেক্টর নিয়োগীর।
               ইন্সপেক্টর সমাদ্দার একটা সিগারেট ধরিয়ে বললেন, "এই সমস্ত তথ্য অনেক পরে আমার হাতে আসে। আমার সন্দেহের তালিকায় যারা ছিল তারা সকলেই পুরুষ। তাছাড়া যার উপর সকল থানার সন্দেহ বেশি সে কিন্তু খুন হওয়ার সময় এলাকায় উপস্থিত ছিল না। পরে সেখানে এসেছে।"
"তাহলে তাকে সন্দেহ করছেন কেন?" প্রশ্ন করলেন ইন্সপেক্টর নিয়োগী।
ধোঁয়ার রিং ছেড়ে সমাদ্দারবাবু বললেন, "তার অতীত জীবনের কিছু ঘটনা থেকে।"
"আচ্ছা, তাহলে তার উপর কড়া নজরদারি রাখতে হবে। আর কারজলা এলাকায় যত মা হারা বাচ্চা আছে তাদের একটা লিস্ট তৈরি করে তাদের উপরেও নজর রাখতে হবে।" বললেন মিস্টার নিয়োগী।
ঠিক এই সময় সমাদ্দারবাবুর সেলফোন বেজে উঠল। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে এমন কিছু শুনলেন, ইন্সপেক্টর সমাদ্দারের মুখের ভাব পরিবর্তন হল। ঠোঁটের কোনে হাসিও ফুটে উঠলো। ফোন রেখে তিনি পবন নিয়োগীকে বললেন, "তৈরী হয়ে নিন। এতদিনে ঘুঘু ফাঁদে পড়েছে। আশা করি এইবার এই কেসের সমাধান হবে।"

(৪)

দুপুরের দিকে জঙ্গলের আনাচে কানাচে টীম নিয়ে লুকিয়ে পড়লেন ইন্সপেক্টর নিয়োগী। ওদিকে আততায়ীর উপর কড়া নজর রাখছেন ইন্সপেক্টর সমাদ্দার এবং তার দলবল। একটা অনাথ শিশুকে ইতিমধ্যেই টার্গেট করেছে সে। বাচ্চাটা তার মামাবাড়িতে থাকে। সেখান থেকেই আততায়ী তাকে জঙ্গলে আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
               সহসা সমাদ্দারের ইনফরমেশন পেয়ে তৎপর হলেন নিয়োগী। আততায়ীকে দেখতে পেলেন তারা। রোগাটে গড়ন, পরনে সবুজ রঙের শাড়ি, কাঁধে একটা ঝোলাব্যাগ। তার পিছনে নিশ্চিন্তে হেঁটে আসছে একটা বছর সাতের বাচ্চা ছেলে। জঙ্গলের একটা জায়গায় এসে বসল দুজনে। বাচ্চাটা তাকে 'মা' বলে ডাকছে। এতক্ষণে ইন্সপেক্টর নিয়োগী বুঝতে পেরেছেন, বাচ্চারা কিসের টানে খুনীর পিছনে হেঁটে আসে। মহিলা ব্যাগ থেকে পানীয়র প্যাকেটটা বের করতেই চারপাশ থেকে ঘিরে ধরল পুলিশ। ভয় পেয়ে পালানোর চেষ্টা করল সেই নারী, কিন্তু পারল না।
               খুনীকে সঙ্গে নিয়ে থানায় হাজির হলেন ইন্সপেক্টার সমাদ্দার, নিয়োগী এবং অন্যান্য পুলিশ। এছাড়া অনন্তবাবু এবং পীরপুকুর বিদ্যালয়ে সৌগতর সহ শিক্ষক বিপ্লব রায়, যারা সমাদ্দারবাবুর কথামতো তাকে ইনফরমেশন দিতেন। সমাদ্দারবাবু একটানে চেয়ারে বসে থাকা খুনী মহিলার পরচুলা খুলে দিলেন। মুখে মেকআপ থাকলেও সৌগতকে চিনে নিতে কারোর অসুবিধা হল না। এরপর দুই ইন্সপেক্টর তাকে জেরা করতে শুরু করলেন। সে কিন্তু ভেঙে পড়ল না। শান্তস্বরে বলে গেল, কিভাবে মহিলা সেজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে মাতৃহারা বাচ্চাদের মা'কে পাওয়ার লোভ দেখিয়ে খুন করত। তারপর সেই গ্রামেই এসে থাকত এবং অন্য গ্রামে খুন করতে যেত। সবকিছু স্বিকার করে সে চিৎকার করে বলে উঠল, "আমি ওদের হত্যা করিনি। আমি ওদের মুক্তি দিয়েছি, অসহ যন্ত্রণা থেকে চিরতরে মুক্তি দিয়েছি।"
               থানার বাইরে এসে দুই ইন্সপেক্টরকে একটা প্রশ্ন না করে থাকতে পারল না বিপ্লব এবং অনন্তবাবু, "আপাত ভদ্র এই ছেলেটি কেন করত এই নৃশংস হত্যাগুলো!" ইন্সপেক্টর সমাদ্দার বললেন, "ওর অতীতের দিনগুলো সুখের ছিল না। ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করে। সৎমা তার উপর অকথ্য অত্যাচার চালায়। ঐটুকু বাচ্চা সেখান থেকে পালিয়ে, থাকা খাওয়ার বিনিময়ে একটা হোটেলের কাজে ঢোকে। সেখানে তাকে বিকৃত যৌন লালসার শিকার হতে হয়। অনেক পরে এক অনাথ আশ্রম তাকে উদ্ধার করে। এতগুলো বছর পর হয়তো সেইসব দিনের যন্ত্রণার কথা তাকে, মা হারা সমস্ত বাচ্চাদের মাতৃস্নেহ শূণ্যতা উপলব্ধি করায়, এবং তাকে পরিনত করে এক সাইকো কিলারে।" কথাটা শুনে দুই গ্রামবাসীর সাথে ইন্সপেক্টর নিয়োগীর মনটাও অজান্তেই ভিজে যায়।

 


0 comments

Avishek Sarkar

Avishek Sarkar

Shared publicly - 13th Jul, 21 01:43 am

ভাল লিখেছ।

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait