অনামিকার ডাইরি (প্রথম পর্ব )

অনামিকার ডাইরি (প্রথম পর্ব )

প্রথম পর্ব

আজ অনামিকার ডাইরির প্রথম চিঠি পাঠের দিন। আমি পুরো ডাইরি জুড়েই, আমাদের লেখিকাকে, অনামিকা বলে সম্বোধন করব। আজকের চিঠিটা অনামিকার ডাইরির প্রথম চিঠি হলেও, লেখিকার প্রথম চিঠি নয়। আগের অনেকগুলি চিঠির পূর্বানুবৃত্তি। এক নিয়মিত সকালের ধারাবাহিকতা।।

“আজ সকাল সকাল আলাপ হল আমার পরিবারের এক নতুন সদস্যের সাথে। সবার অগোচরে, এক অপ্রত্যাশিত সৃষ্টি উঁকি দিচ্ছে আমার জানলার ছোট্ট টবে রাখা মৃত্তিকা রাশির বক্ষ চিরে। এক স্নিগ্ধ সরল প্রাণ। তার সবুজ রঙের সরলতা, হিমবাহের শীতল জলরাশির মতন। সমস্ত দূষণ আর স্পর্শ হীন এক নতুন বাস্তব। দিন দশেক আগে আমার কন্যা, একটি কমলা লেবু খেয়ে তার দানাগুলো অলসতার বশেই ফেলে দেয় জানালার বাইরে রাখা টবের ওপর। তার পরের কয়েকদিন, সেই দানাগুলির কপালে কোন খাতির যত্ন জোটেনি। ঠিক যেমন জোটে না অযাচিত মাতৃত্বের। সে যাই হোক, তাতে মমতার কিছু যায় আসে না। মমতা প্রকৃতির নিয়মেই রাঙিয়ে দিয়ে যায় মাতৃত্বের প্রতিটি কোণ।আর তার সাথে শিশুর তুলতুলে অঙ্গ রচনা করে জীবনের সবথেকে মনোরম স্পর্শ। আর এক অমর মূহুর্ত জমা পড়ে যায় জীবনের স্থায়ী আমানতের খাতায়।

ADVERTISEMENT

এই সদ্যজাত লেবুগাছটি আমাকে মনে করিয়ে দিল, আমার দ্বিতীয় জন্মদিনের কথা, হ্যাঁ মানে আমার মাতৃত্বের জন্মদিন। সেদিন আমি পৃথিবীর সমস্ত যন্ত্রণা ধারণ করেছিলাম নিজের জঠরে। দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গিয়েছিলাম সৃষ্টির মহা সংগ্রাম!সমস্ত লড়াই শেষে আমি যখন জয়ী, তখন বেজেছিল ক্রন্দনধ্বনি, ঠিক যেমনটা বাজে যুদ্ধ শেষে বিজয়শঙ্খ! তারপর আমার নিজের সাথে দেখা। সেই হিমবাহের শীতল, স্নিগ্ধ স্নচ্ছ জলরাশির মতন, দ্যুলোক, ভূলোকের সবথেকে সুন্দর মুখটির সাথে দেখা। যার মধ্যে দেখেছিলাম আমি আমার অন্তরের অবয়ব।

এই ছোট্ট লেবু গাছটির, অস্পর্শিত সবুজ রঙ আমার জমা আমানতের, এই মুহূর্তটির সাথে, কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ করে দিল। আমার রোজনামচার জীবনে নিজের সাথে দেখা করার সুযোগ খুব কম। এলোমেলো ইচ্ছাগুলোকে অনেকটাই পূরণ করতে হয় স্বপ্নের মঞ্চে। বাস্তবিকতার ভিড়ে তাদের জায়গা নেই বললেই চলে। আর যেগুলো পূরণ হয় সেগুলোর কোন হিসেব থাকে না। গাছটায় আজ জল দেব। কে জানে হয়ত ওর অতি ক্ষুদ্র দুটি পাতার প্রসার হাত বারিয়ে বলছে, কোলে নাও। পাশের নয়নতারা গাছেও বেশ কয়েকটা সাদা, গোলাপী ফুল ফুটেছে। এরাই আমার সকাল বেলার সাথী। রোজই নিয়ম করে অনেকটা সময় এদের সাথে গল্প করে কাটে। অদ্ভুত প্রাণ এদের। সমস্ত ইচ্ছা, রাগ, ঘৃণা, সমালোচনার উর্দ্ধে। সৃষ্টির ভবঘুরে মেজাজের হাতের পুতুল। যেমন ইচ্ছা সে খেলে, ভাঙ্গে গড়ে। আর তখন ঘরের কোণে আমরা বেঁধে থাকি, ঠুনকো আবদারের বেড়াজালে, ইচ্ছেপুরণের যতিচিহ্নে। মনের ঐশ্বরিকতাকে ভাসাতে চাই ইঁটকাঠের সমুদ্রে। তাই হয়ত ছন্দপতন হয়। আজ আসি। আমার রোজ নামচার ইতিকথারা ডাকছে। এক্ষুনি উঠতে হবে। তুমি ভাল থেকো, সবুজ সকাল।”

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait