ভারতে তাসের আগমন মুঘল সময়ে । নাম ছিল গানজাফা । চীনা ভাইরাসের মত এই তাস নামক বস্তুটির উৎপত্তি স্থানও কিন্তু চীন । ৯ম শতাব্দীর প্রথম দিকে উদ্ভাবিত হয়েছিল। তারপর দীর্ঘ পথ হয়ে ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দিকে মুঘল বাদশারা গানজাফা ওরফে তাসকে খেলায় রূপান্তরিত করে । ভারতীয় খেলায় নতুন চীনা খেলার প্রচলনটা ইতিহাসে কতখানি মাহাত্ম্য রেখেছে তা কি বলার অপেক্ষা রাখে ? তবে এই মগজকে ধার দেওয়ার মত ক্ষমতা আপাত নিরীহ কাগজখণ্ডগুলি ক্রমশ খেলতে খেলতে ও খেলাতে খেলাতে জুয়া এবং তদুপরি ভারতকে তাসের দেশে রূপান্তরিত করার বীজ অলক্ষ্যে করে ফেলে।
তাসের দেশ কথা দুটি বলতে কেবলমাত্র পলকা বিষয় প্রাথমিক ভাবে মনে হলেও ওই রঙিন দুনিয়া বানানোতে কসরতের কমতি কারোরই নেই । ১৯৪৭ সাল থেকে আজ অবধি স্বাধীনতার ৭৫ বছরেরও তার দৃষ্টান্ত ভুরি ভুরি । কম্যুনিস্টদের আঁতুড় ঘর তথা বামফ্রন্ট থেকে অনেকে মন তুলে নিলেও আজ থেকে হাজার হাজার বছর ধরে তারা খেলার ছলে যে তাস ভাইরাসকে ক্রমশ সারা পৃথিবীতে সুন্দর ভাবে ছড়িয়ে দিয়েছিল তার ছাপ রাজনীতির জগতে অসাধারণ ভাবে বর্তমান । তৃণমূল থেকে গেরুয়া শিবির , গেরুয়া থেকে ঘাসের পদ লেহন কিংবা কট্টর বামপন্থা থেকে মাটির মানুষের দলে নাম লেখাতে পিছপা কে নন ! এরাই তাসের দেশে ‘জোকার’। ‘রানী’ বা ‘রাজা’র কথাই আলাদা । তাদের চাল মোক্ষম ।
ADVERTISEMENT
গত বিধানসভা ভোট হয়ে গেছে বেশ কিছু মাস হল । অথচ ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার অব্যাহত । রাজনৈতিক হিংসায় মৃত্যু এ তো অতি গর্বের । যারা মরল তারা কয়েকদিনের জন্য সংবাদের শিরোনামে আসবে, চাকরী পাবে আর সর্বোপরি মোমবাতি মিছিল অন্তে ‘শহিদ বেদী’ হিসাবে পরিগণিত হবে । বড় যুদ্ধে দুয়েকটা বোড়ে অথবা মামুলি তাসের বলিদান হবে এ আর নতুন কি?
অর্জুন সিংহ আকস্মিক ভাবে শুরু করে দিলেন আন্দোলন । অজু’হাত’ আছে অবশ্যই । দরদ গরিব পাট শিল্প । সোশ্যাল মিডিয়া এবং মিডিয়াকে হাতিয়ার করে তাসের খেলা করলেন শুরু । আর খেলতে শুরু করলেন স্বয়ং নিজেরই দলের অন্দরে । উদ্দেশ্য যে আছে তা কিন্তু আমাদের মত সাধারণ মানুষরাও ভালো মতই বুঝতে পারেন । সেটা বোঝেও তৃণমূল শিবির । এবারে লক্ষ্য করার বিষয় বাংলার রানী কী করেন ? ভাটপাড়ার গণ্ডি ছাড়া বর্তমানে খুব যে পাত্তা পান না অর্জুনবাবু তা নিজেও খুবই ভালো মত জানেন । বিধান সভা নির্বাচনের আগমুহূর্তেও তার দবদবা ছিল । তারপরের বাংলার রাজনৈতিক ঘটনাক্রম সকলেরই জানা । বিজেপির মধ্যেও খাওয়া খাওয়ই । নিজের গুরুত্বকে জাহির করার জন্য নিজের ঘরেই দিলেন ‘জোকার’এর চাল । যথারীতি ডাক পড়লো দিল্লির দরবারে ।
ক্ষোভ কি নিরসন হল? আসল উদ্দেশ্য কি উন্নয়ন ? বেশকটা প্রশ্ন থেকেই যায় । ৭৫ টা বছর কেটে গেলেও এই তাসের খেলায় দেশ যে মানসিক ভাবে পিছিয়ে পরছে সেটা আমজনতা বুঝলেও উপায় নেই । কারণ আমরা তো সাধারণ মধ্যবিত্ত মার্কা অসহায় তাস ! তবে অসহাকে দুর্বল ভাবার কারণ নেই । চেকমেট বা তাসের বাজি ঘোরাতে রসে বশে বাঙালী তথা আমজনতা ভালই জানেন । সময়ের অপেক্ষা । তবে সময়টা কবে আসবে বা সময় আসলেও তাকে ধরতে পারা যাবে কিনা তা ভবাই জানেন । পাট পাটের জায়গায় থাকবে । কেবল পরিবর্তন হবে ‘জোকার’ এবং গলার উত্তরীয়ের রঙ। স্লোগানের ধারা হয়ে যাবে গতানুগতিক ভাবে পরিবর্তিত । একই ভাবে নির্মিত হবে নতুন তাসের দেশ ।
0 comments