রান্নাঘরের পাশেই আমার পুকুর আর ফাঁকা জলা জমি। রান্নার ফাঁকে উদাস চোখ যে কতবার যায় ওই দিকে। বৃষ্টিতে ভেজা জলা জমি দেখেছেন কখনো আপনারা?
কদিন আগে খিচুড়ি রাঁধতে রাঁধতে কী করে যেন চোখ গেল সেই দিকে, ওমা, অমনি হুড়মুড়িয়ে কাশফুল ঢুকে পড়লো আমার রান্নাঘরের জানলা দিয়ে। যত বলি ওরে যা, আমার এখন বিস্তর রান্না বাকি, সে মোটেই শুনলো না আমার কথা। তাই যা হবার হলো, তার জোরাজুরিতে খিচুড়ি ফেলে আমায় চেপে বসতে হলো শরৎ আকাশের সাদা মেঘের ভেলায়।
যতক্ষণে গিয়ে থামলাম, ততক্ষণে ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। সারা রাস্তা চোখ বুজে ছিলাম, আমায় নামিয়ে ভেলা গিয়ে বসলো মেঘের গায়ে। আর সোঁটাসোঁটা কাশফুল আমার সঙ্গে পা বাড়ালো।
কী সুন্দর একটা ছোট্ট গ্রাম, গ্রামের দেওয়াল জুড়ে নানারকমের ম্যুরালস, শিল্পীর হাতের আঁকায় গ্রামের প্রতিটি বাড়ির দেওয়াল ভরে গেছে। চারপাশে শুধু সবুজ, আর সব বাড়ির সামনে ছোট ছোট বাগান ভর্তি জুঁই বেল কামিনী ফুল। রাস্তা ঘাট ঝকঝকে, বাড়িগুলোর নিকোনো উঠোনে ছোটছোট ছেলে মেয়েরা এক্কাদোক্কা খেলছে। গ্রামের পাশ দিয়ে ছোট একটা একটু ধীরা, অল্পচঞ্চলা নদী তিরতির করে বয়ে যাচ্ছে, গ্রামের লোকেদের জিজ্ঞাসা করাতে বলল নদীর নাম আনন্দী।
ADVERTISEMENT
নদীর পাশে ফাঁকা সবুজ একটা জমিতে সার সার মা দুগ্গা তৈরী হচ্ছে, মাটিমাখা হাত দ্রুত মূর্তির অবয়বে মাতৃরূপ দান করে চলেছে। দূর থেকে ভেসে আসছে সুর, ষড়জে, ঋষভে, গান্ধারে, মধ্যমায়, পঞ্চমে, ধৈবতে, নিষাদে চারপাশে তৈরি হচ্ছে এক মায়াময় আবেশ।
শুনতে শুনতে এমন মোহিত হয়ে গেছি, দেখি কাশফুল ধাক্কা দিচ্ছে।
- বলি বাড়ি ফিরবে না, মেলা বেলা হলো তো।
- ওমা, তাই তো। বাড়ি ফিরতে হবে যে।
ছুট ছুট ছুট।
পিছনে কাশফুলের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়।।
- ওরে দাঁড়াও রে, আমি তো মটকে যাব।
- তুই তাড়াতাড়ি পা চালা দেখি।
কলিং বেলের আওয়াজে চোখ খুললাম। কই সেই গ্রাম, নদী, মিঠে সুর!! কাশফুলগুলো গেল কোথায়! ধড়মড় করে উঠে বসলাম।
মাঠ, বৃষ্টি জলাজমি দেখতে দেখতে কখন যে আমার দু'চোখের পাতা এক হয়ে গেছিল খেয়াল ছিল না। সেই ফাঁকে কোথায় যেন মনের ভ্রমণ সেরে এলাম। গ্রামের নামটা যেন কী ছিল! মনে পড়ছেনা তো। আবার একবার কী সত্যি যেতে পারব কোনোদিন সেখানে!
0 comments