বিজ্ঞান বনাম ভগবান : এই প্রভেদ কার সৃষ্টি

বিজ্ঞান বনাম ভগবান : এই প্রভেদ কার সৃষ্টি

অবিনশ্বর

আজকে মনের ক্ষোভ আর চেপে রাখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে এবার একটা তীব্র প্রতিবাদ দরকার, তাতে যা হয় হোক। এই যে এক বিশ্বচেতনার আবহে মিশে আমরা বেঁচে আছি তাকে আজ কিছু লোকজন চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। এই যে এক অসীম বিশ্বাস আমাদের প্রতিনিয়ত শেখাচ্ছে যেন আমরা জীবনযুদ্ধে কখনো হেরে না যাই, সেই বিশ্বাসে একটা জোর ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, যদিও লাভ নেই৷ কেননা বিশ্বাস চিরকালই অন্ধ। চোখে দামী সানগ্লাস পরে সেই বিশ্বাস কে সাময়িক ঢেকে দেওয়া যায়, মুছে ফেলা যায় না। যেমন সূর্যদেব রাতের বেলা অন্তর্হিত হলেও পৃথিবীর অন্য গোলার্ধে তিনি ঠিকই কিরণ দেন। কেউ কি পেরেছে তাঁকে মুড়ে রাখতে? ব্যপারটা সেরকমই!

ঘটনা হল, কাল থেকে সোশাল মিডিয়ায় একটা পোস্ট খুব ভাইরাল। মন্দির মসজিদ গির্জার কিছু ছবি যেখানে কোনো দর্শনার্থী নেই আর হাসপাতাল এর বাইরে ভীড়। মতামত: ঈশ্বর ঘুমাচ্ছেন আর ডাক্তাররা জেগে আছেন। কিছু লোকজন এইসব পোস্ট সোল্লাসে সোচ্চারে শেয়ার করছেন এবং প্রমাণ করতে নেমেছেন যে এইত! এইবার তোমাদের হাতে পেয়েছি। মজা বুঝিয়ে দেব বাছাধন! কোথায় তোমাদের ভগবান? ডাকো দেখি তাকে। কিরকম তোমাকে বাঁচায় দেখি একবার! 

ADVERTISEMENT
Tuhu Momo Video Teaser
 

ঠাকুর পরমহংসদেব বলেছিলেন, “ঈশ্বর তখন হাসেন যখন ডাক্তার বলে আমি রুগীকে বাঁচিয়ে দেব”। এর মাধ্যমে তিনি বলতে চেয়েছেন যে ঈশ্বরেচ্ছা ছাড়া তৃণটিও নড়ে না। জীবনে বহু স্বনামধন্য ডাক্তারের সংস্পর্শে এসেছি। দেখেছি কঠিন অস্ত্রোপচারের আগে তাঁদের ইষ্টের ছবি পকেট থেকে বের করে মাথায় ঠেকাতে। অপারেশন টেবল এ জিগ্গেস করেছি কেনো তিনি ওরকম করলেন! তিনি তো এত বিখ্যাত ডাক্তার। তিনি উত্তর দিয়েছেন, ‘এত বড় হয়ে যাই নি যাতে নিজেকে ঈশ্বর মনে করি’! প্রিয়জনের অপারেশন, বাইরে আমরা। ডাক্তার ও টি তে ঢোকার আগে বলে গেলেন, ‘ভগবানকে ডাকুন, সব ঠিক হয়ে যাবে’! বন্ড সই করতে হাত কাঁপছে, হটাত দেখলাম এক অদৃশ্য শক্তি যেন হাতটাকে চেপে ধরল। কানে ফিসফিস করে বলল, ‘বিশ্বাসই আসল শক্তি। বিশ্বাস রাখো। সব ভাল হবে!’ আমার বাবা মারা গেছেন, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে, কে যেন চাবুক মেরে শক্ত করে দাঁড় করিয়ে দিল একশ লোকের মাঝে। একটুও চোখের জল পড়েনি সেদিন। একরাশ দায়িত্ব মাথার ওপর নিয়ে সেদিন কাঁদবার বিলাসিতা করতে পারিনি। এই চাবুক, এই মনের জোরও ঈশ্বরের দান। জীবনের নানা বাঁকে সংঘাত, টানাপোড়েন এখনও বিদ্যমান, অবিরত। সাহস যোগাচ্ছে আমার ঘরের একটা ছবি। ভগবান রামকৃষ্ণদেবের ছবি। তুমি যেদিকেই যাও, সেই ছবির মানুষটির চোখ তোমার দিকে। এক অসীম ভরসা, এক হৃদয় ভরা ভালবাসা নিয়ে তিনি বলছেন, “আয়! ভয় কি? আমি তো আছি! আমি থাকতে তুই হেরে যাবি?” বিশ্বাস কর, যাদুমন্ত্রে ভুলে যাই সব কষ্ট, সব যন্ত্রণা! গা ঝেড়ে আবার উঠে দাঁড়াইগ

বড় বড় কথা বলব না, অভ্যেস নেই৷ শুধু যেটুকু অনুভব করেছি সেটুকুই বললাম। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে বিশ্বরূপ দেখিয়ে বলেছিলেন, “আমি লোকক্ষয়কারী ভয়ংকর কাল। এই সকল যোদ্ধারা কেহই বাঁচিবে না, আমি তাদের মারিতে প্রবৃত্ত হইয়াছি, অতএব ইহাদের বিনাশের নিমিত্ত তুমি যুদ্ধার্থে সজ্জিত হও। তোমার যুদ্ধের পূর্বেই কালরুপী আমা-কর্তৃক ইহারা নিহতপ্রায়, তুমি শুধু এই বিনাশের কারণমাত্র হও! (শ্রীমদ্ভগবদগীতা, অধ্যায়:একাদশ, শ্লোক:৩২/৩৩)।”

সুতরাং, এই যে করোনাভাইরাস এর করাল গ্রাসে আমরা পড়েছি, তা পূর্বনির্ধারিত! এ কথা আমাদের বুঝিয়ে লাভ নেই যে ঈশ্বর নেই৷ আমরা বুঝব না। যেরকম তাদের বুঝিয়ে লাভ নেই যে তারা কতটা বেড়েছে! আর এই বাড় এর জন্যই আজ মানচিত্র থেকে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে।

স্বামীজী বলেছেন,”বিশ্বাস বিশ্বাস বিশ্বাস! নিজের ওপর বিশ্বাস, ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস!” বস্তুত এই বিশ্বাসের জোরেই এই নিদারুণ বিপদ আমরা পার হবই, এটা আমার নবতম বিশ্বাস।

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait