নতুন বছর কি নতুন আশার আলো নিয়ে আসবে?

নতুন বছর কি নতুন আশার আলো নিয়ে আসবে?

নতুন বছর নতুন আশা
 

ইংরাজি নতুন বছরের (New Year) শুরুটা আমাদের বিশ্ববাসীর কাছে খুব একটা সুখকর বার্তা বহন করে নিয়ে আসেনি। মহামারীর সাথে বিগত দুই  বছর ক্রমাগত যুঝতে যুঝতে, ধুঁকতে ধুঁকতে আমরা আশা করেছিলাম যে নতুন বছরে আমরা মাস্কবিহীন পৃথিবীতে নিঃশ্বাস নিতে পারব। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তা সম্ভব হল না। বিগত দুই বছর যাবৎ আমরা মহামারীর কারণ অনুসন্ধানের অনেক চেষ্টা করেছি, বিভিন্ন ব্যাখ্যা শুনেছি, কিন্তু কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। কোথা থেকে এই রোগের উৎপত্তি, আদৌ এই অসুখ প্রকৃতির বিবর্তনের খেলা নাকি মনুষ্য প্রজাতির কুটিল মস্তিস্ক হতে বিনির্মিত, এ সম্বন্ধে যথেষ্ঠ বিতর্ক হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। কিন্তু এখন আপাতত এসব তোলা থাক। আমাদের এখন যেটি আশু কর্তব্য, সেটি হল ক্ষতি মেরামতের চেষ্টা না করে অন্তত নতুন করে কোনো ক্ষতি হতে না দেওয়া।
 

ADVERTISEMENT

ব্যাপারটা একটু পরিষ্কার করা যাক। দুই হাজার কুড়ি সালের শুরুতে আমরা এক অভিনব পরিস্থিতির মুখোমুখি হলাম। শোনা গেল এক অদ্ভূত ভাইরাসের উৎপত্তি ঘটেছে যা কিনা মানবজাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। মানবজাতি এবং প্রকৃতি বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়েছিল তখন। এক নতুন শব্দের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটেছিল। তা হল "লকডাউন"। সেটা আমরা সবাই মেনে নিয়েছিলাম। ছোট ছোট শিশুদের সে বছরটা বড়ই ফুর্তিতে কাটল। পড়াশোনা ইচ্ছামত, ঘুম থেকে ওঠা ইচ্ছামত, ক্রমে বেহিসেবি এক জীবনে তারা অভ্যস্ত হয়ে উঠল।


তিল তিল করে গড়ে তোলা ভাল অভ্যাসের রুটিন পরিবর্তিত হয়ে তাদের ঠেলে দেওয়া হল শিক্ষাবিহীন, স্বাস্থ্যবিহীন, খেলাবিহীন, মাঠবিহীন এক অন্ধকার জগতের দিকে। সেখানে সবুজ নেই, সেখানে মানসিক বা শারীরিক কসরত নেই, সেখানে নিয়ম নেই। যদি কিছু আছে, তা হল একটা মুঠোফোন। যে ফোনে অসংখ্য প্রলোভন, অসংখ্য উপাদান যা খুব ছোট বয়সেই একটা শিশুকে অভ্যস্ত করে তুলল এক ভয়ঙ্কর নেশায়। তা হল "স্ক্রিনটাইম"। শিশুদের ঠেলে দেওয়া হল এমন এক নেশার জগতে, যে নেশা থেকে মুক্তির হয়ত কোনো চিকিৎসা নেই। অথচ স্কুলের পড়া, কোচিনের পড়া করতে গেলে স্ক্রিনে চোখ রাখা ছাড়া উপায় নেই।


ফলত  তাদের চোখগুলোয় ছোট থেকেই আরো একটা অভিশাপ এসে গেল। তা হল চশমা পড়ে থাকার অভিশাপ। এ যে কতবড় অভিশাপ (Curse), যাঁরা চশমা পড়েন তাঁরা সবাই জানেন। বেশ কয়েকটি পেশায় চশমার কোনো প্রবেশধিকার নেই। যেমন-- সেনাবাহিনী (Indian Army), পুলিশ, পাইলট এঁরা তো চশমা পড়তে পারবেনই না, কেননা চশমা পড়ে এসব কাজ করা যায় না। খেলোয়াড়রা চশমা পড়তে পারেন না, কেননা মাঠে চশমা পড়ে নামা যায় না। তাহলে? কি বুঝলাম? একটা প্রজন্ম তৈরী হবে যেখান থেকে আমরা উপরোক্ত পেশার উপযুক্ত মানুষ পাবনা?

 

আরো আছে চিন্তার বিষয়! ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে পড়াশোনা অনলাইনে হয়কি (Online Education)? একজন ডাক্তার যদি হাতে কলমে রুগীকে পর্যবেক্ষণ না করলেন, একজন ইঞ্জিনিয়ার যদি ক্যালকুলেশনের পদ্ধতি ক্লাসরুমে না শিখলেন, একজন ভাবী শিক্ষাবিদ যদি তাঁর শিক্ষককে সরাসরি প্রশ্ন না জিজ্ঞাসা করতে পারলেন, একজন শিল্পী যদি থিয়েটার বা অঙ্কন বা নৃত্য বা সংগীতের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ না পেলেন, একজন ছবি নির্মাতা যদি ক্যামেরার কলাকৌশল হাতেকলমে না শিখলেন--তাহলে ভবিষ্যতে আমরা কোথায় যাব? কোথায় পাব ডাক্তার, সাংবাদিক, চিত্রশিল্পী, সংগীতকার, মহাকাশচারী, বৈজ্ঞানিক (ISRO)? আমরা কি তবে আমাদের সন্তানদের নিয়ে সারাজীবন এই ছোট ছোট কুঠুরিগুলোতে বসে থাকব? ওদের মানসিক বিকাশ রুদ্ধ, ওরা সামাজিকভাবে মেলামেশা করতে পারছে না, ওদের দম বন্ধ হয়ে আসছে, ওরা সমস্ত শুনছে, সব দেখছে, আর যেসবকিছু এখনই শেখার নয়---সেইসব শিখে যাচ্ছে সময়ের অনেক আগেই।

 

বাজার বন্ধ, দোকান বন্ধ, বন্ধ স্কুল। বন্ধ খেলার মাঠ। বন্ধ শিল্পচর্চার প্রতিটি ক্ষেত্র। বন্ধ মেলামেশা, বন্ধ আদানপ্রদান। তবে হ্যাঁ, খোলাও আছে অনেক কিছু। রাজনীতির ময়দান খোলা আছে। ভোট দেবার জন্য আকুল আবেদন আছে। ভোটের (Election) র‍্যালি আছে, সেই ৱ্যালিতে মাস্ক না পড়লেও চলে, আমরা দেখেই নিয়েছি। সভায় সভায় রক্ত গরম করা বক্তৃতা আছে, পাড়ায় পাড়ায় চায়ের দোকানে বেদম আড্ডা চালু আছে। সৎ মানুষের দুর্দশা আর অসৎ ব্যক্তিদের নিত্যনতুন তামাশা আছে। মদের পার্টি চালু আছে, বর্ষবরণের ফিস্ট আছে। পার্ক স্ট্রিট বা বুর্জ খলিফা দেখার ভীড় আছে। আছে এমন অনেক কিছুই, যা  দুই বছর বন্ধ থাকলে ক্ষতি ছিল না। কিন্তু হয়েছে। আর অসুখ ক্রমশ বেড়েছে।

 

এই জাতির ভবিষ্যত কি, জানা নেই। ন্যূব্জ মেরুদন্ড ভেঙে গেছে। কলমের জোর কমে আসছে। নিদারুণ অশনি সংকেতের মেঘ চতুর্দিকে। কি হবে জানা নেই। কে নেতৃত্ব দেবেন, চেনা নেই। কিন্তু নেতা দরকার। এমন এক নেতা দরকার, যিনি মিথ্যের মুখোশ ছিঁড়ে আসবেন। তাঁর আসার সময় হয়েছে। প্রকৃতি তার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

 

এখন শুধু অপেক্ষা, কখন তাঁর আগমনের সঠিক সময় আসে। কখন আমরা ভণ্ডামির এই মিথ্যে জগৎ থেকে মুক্ত হতে পারি। মুক্তি তিনিই দেবেন, এ নিশ্চিত।


0 comments

Saurav Chakraborty

Saurav Chakraborty

Shared publicly - 28th Jan, 22 11:12 am

Beautifully expressed

Madhumita Dey

Madhumita Dey

Shared publicly - 10th Jan, 22 11:05 am

Ashadharon bhabe amader sobar moner kotha byakhha korle

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait