চলচ্চিত্র পরিচালক, ভারতরত্ন তথা অস্কারজয়ী সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে ওনার প্রতি আমার এই বিশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি। ওনার জন্ম শতবর্ষে আজ বলব বোড়াল গ্রামের কথা, যেই গ্রামে ওনার কালজয়ী সৃষ্টি ‘পথের পাঁচালী’র শুটিং হয়েছিল। ওনাকে নিয়ে কিছু বলার মত দৃষ্টতা আমার নেই। শুধু শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে বলব, “মহারাজা, তোমারে সেলাম।”
১৯৫৫ সালের ২৬ শে আগষ্ট মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পথের পাঁচালী’ শুধুমাত্র ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতেই নয়, বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতে এক দিগন্ত সৃষ্টিকারী মাইলস্টোন। সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী সৃষ্টি হল এই ‘পথের পাঁচালী’। মুক্তির প্রায় ৬৪ বছর পরও যা আজও আমাদের মননে আলাদা স্হান গ্রহণ করে আছে।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জেলার গড়িয়ার বোড়াল গ্রামে (যদিও এখন গ্রাম বলা যায় না) দীর্ঘ চার বছর ধরে চলেছিল “পথের পাঁচালির” শুটিং। এখানে যে জোড়া শিবমন্দিরটি আছে তার সামনের মাঠেই বায়োস্কোপ দেখেছিল অপু-দূর্গা। মন্দিরটার উপর এখনো এটির সময়কালটা পরিস্কার লেখা আছে, শকাব্দ ১৬৯৮। খ্রীস্টাব্দ হিসেবে এই মন্দিরের সময়কাল ১৭৭৬, অর্থাৎ আজ থেকে ২৪৩ বছর আগে তৈরী। কালের নিয়মে ও যত্নের অভাবে মন্দিরের গা ক্ষয়প্রাপ্ত হলেও মন্দিরটি বহু ইতিহাসে স্বাক্ষ বহন করে চলেছে। এর সামনের মাঠে আর পাশের বাগানে অপু দূর্গার টুকরো টুকরো দৃশ্যের শুটিং হয়েছিল। মাঠের মধ্যে বকুল গাছটি কাটা হলেও কান্ডের একাংশ আজও রয়েছে যেই গাছের নীচে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে অপু দূর্গা আশ্রয় নিয়েছিল।
ADVERTISEMENT
মন্দির পেরিয়ে এগিয়ে গেলে রয়েছে মুর্খাজ্জী বাড়ি। এই বাড়িটি শুটিংয়ের জন্য ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি। বাড়ির সংস্কার করা হলেও এর মধ্যে থাকা জবা গাছটি ও পুকুরটি এখনো আছে (কাউকে ওই চত্বরে দেখতে না পাওয়ার কারণে আমরা প্রবেশ করতে পারিনি)।
১৯৫৫- ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ‘পথের পাঁচালী’ মোট ১২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছিল। সত্যজিৎ রায় শুধুমাত্র বিশ্বের দরবারে বাংলা সিনেমাকে মেলে ধরেননি, সাধারণ মানুষের কাছে হয়ে উঠেছিলেন এক বৃহত্তর পৃথিবীর জানালা। ‘পথের পাঁচালী’ হল আসলে সম্পূর্ণ সত্যজিৎকে জানার প্রবেশদ্বার।
পথনির্দেশ – গড়িয়া থেকে অটোতে করে রক্ষিতের মোড় এর আগে বোড়াল (বকুলতলা মাঠ) ‘পথের পাঁচালী’ শুটিংয়ের গ্রাম।
0 comments