প্রশ্ন অনেক কিন্তু  দুঃখ আর লজ্জা তার চেয়েও বেশি

প্রশ্ন অনেক কিন্তু দুঃখ আর লজ্জা তার চেয়েও বেশি

জয়া ঘোষ, ক্যালিফোর্নিয়া-  একটি দেশ কেন সভ্য, উন্নত হয় ? কারণ সে দেশের মানুষ আইন মেনে চলে। না মানলে জরিমানা বা জেল হয়। পশ্চিমবাংলায় আইন থাকলেও সেই আইন কার্যকরী করা বা মেনে চলার প্রবণতা অন্যান্য জায়গার তুলনায় অনেকটাই কম।  আমি আমেরিকা প্রবাসী ২৬ বছর। আমেরিকাতে সাধারণত সকলেই  আইন মেনে চলে দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া। এখানকার প্রশাসন অত্যন্ত কঠোর। 
কিছুদিন আগেই গিয়েছিলাম বার্কলে ইউনিভার্সিটির একটা অনুষ্ঠানে।  

 

বিশাল খোলা স্টেডিয়ামে প্রায় ৩৫ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিল। অথচ কি সুশৃঙ্খল সে জনতা।   অল্পবয়েসী কলেজ ছাত্রছাত্রী  ও তাদের পরিবারের লোকজন এসেছিল গ্রাজুয়েশন সেলেব্রেট করতে।  অনুষ্ঠানের শুরুতেই বলে দেওয়া হলো যদি আচমকা কোন ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন হয় তাহলে কে কোন দিকের গেট দিয়ে বেরোবেন। যাতে  কোনরকম স্টাম্পেড বা অরাজকতার সম্মুখীন হতে না হয় দর্শকবৃন্দের। খোলা স্টেডিয়ামে গ্যালারিতে কোন AC ছিল না।

ADVERTISEMENT

 

দুপুরের রোদে একটু গরম লাগলেও সেরকম অসুবিধা কারও হয়নি , কারণ ভিড়ে ঠাসা ছিল না। আমেরিকাতে যে কোন ইভেন্টর আগে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমুতি নিতে হয় এবং সরকারি নির্দেশ ও নিয়মাবলী মেনে অনুষ্ঠান করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের  অডিটোরিয়ামে বহু শো দেখেছি বা অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছি । উল্লেখ্য সেখানে  ক্যাপাসিটির বেশি লোক  একসাথে কখনোই ঢুকতে দেওয়া হয় না। বদ্ধ মন্দিরেও  ফায়ার হ্যাজার্ড যাতে না হয় তার জন্যে পুজোর সময় যজ্ঞ হলে সেখানে একেকবারে  নির্দিষ্ট সংখ্যক দর্শনার্থীদের বা ভক্তদের  ঢুকতে দেওয়া হয়। এত কিছু নিয়ম মেনেও কি দুর্ঘটনা ঘটে না? ঘটে। তবে তা সংখ্যায় খুবই কম। আর ঘটলেও সেখানে যারা অনুষ্ঠান পরিচালনায় থাকেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় ,জরিমানা বা শাস্তি হয়।  

 

গতকাল কলকাতায় প্রিয় শিল্পী কে.কে.র কনসার্ট নিয়ে যে ঘটনা সারাদেশ ও প্রবাসীরা প্রত্যক্ষ করল তা অত্যন্ত দুঃখের ও লজ্জাজনক ! বাঙালি বলে যে গর্ব ছিল তা নিঃশেষে ভেঙে দিয়ে গেল কলকাতার উদ্বেল জনতা ও বাংলার এক নিন্দুক শিল্পী ! আমি যখনই কোন অবাঙালি শিল্পীর সাথে কথা বলেছি তাদের চোখে-মুখে বাংলা সম্পর্কে একটা অদ্ভুত সম্ভ্রম ও আবেগ দেখেছি। কলকাতায় পারফর্ম করতে তারা সবসময়ই আগ্রহী বোধ করেন।

 

সংস্কৃতিপ্রেমী কলকাতার প্রতি তাঁদের যথেষ্ট ভালবাসা ! আজকে তাদের চোখে চোখ রেখে বা সোশ্যাল মিডিয়ায়  কোনদিন বলতে পারব না যে, আমার কলকাতার জন্য আমি গর্বিত ! আমার শহর যে উন্মাদনার স্রোতে গা ভাসিয়ে, অব্যবস্থার জেরে একটা মানুষের জীবনকে এভাবে কেড়ে নিল তার জন্য লজ্জায় মাথা নত আমার। আমাদের ছোটবেলার কিশোর ,রফি,হেমন্ত মান্নার পরে যারা সংগীতজগতে নিজেদের উড়ান বজায় রেখেছেন, তাদের মধ্যে কে.কে অত্যন্ত জনপ্রিয় এক শিল্পী।  

 

বয়েস হলে সকলেরই কিছু না কিছু সুপ্ত শারীরিক সমস্যা থাকে। অজান্তেই অযথা মানসিক উত্তেজনা ,উদ্বেগ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে সেটা যে প্রাণঘাতী মারাত্মক  হতে পারে তা অনেকেই আমরা বুঝতে চাইনা বা মানিনা।  কে.কে-র এই আকস্মিক মৃত্যু বোধহয় আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়ে গেল। প্রশ্ন রয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গের আইন শৃঙ্খলা ,স্বাস্থা পরিষেবার মান সম্পর্কে।  একজন অসুস্থ গায়ককে নিয়ে যাবার জন্য কোন wheel চেয়ার কেন ছিল না?  তাঁকে রীতিমত হাঁটিয়ে  নিয়ে যাওয়া হল। হোটেল থেকে কোন এম্বুলেন্স পাওয়া গেল না কেন ? হোটেলে কোন নার্স বা হেল্থ কেয়ার স্টাফ বা CPR বা কোন প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না কেন?

 


                                                                                       

 

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait