আকুলতা

আকুলতা

ঘরবন্দী হয়ে অন্ততঃ আমার মতো কেউ থাকতে পারে, সত্যি নিজের কাছেই কেমন এক বিচিত্র প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। বন্দী থাকা সত্ত্বেও মন পড়ে থাকে কবিতা গান আর আমার বহুদিনের নিভৃতে ক্যাসিও বাজানোর শখে, যা হয়তো এখন পূরণ করার সাধ পেলাম।

সকালে একটু দেরি করে ওঠা,ঘর ঝাঁট দেওয়া, বাসন মাজা, সাবান কাচা, বাড়িতে যিনি থাকেন তাঁকে রান্নায় মাঝে মধ্যে সাহায্য করা, এইভাবেই চলছে আমার বেশ কদিনের নিউজের সাথে নিঃশ্বব্দ জীবনযাপন। আগে কোনোদিন সেরকম ইচ্ছা হয়নি বিকেলে একটু ছাদে উঠি।একটু দাঁড়াই। এখন উঠি।সূর্য্যিমামা কে হালকা ভাবে কিরণ দিতে দিতে শেষমেষ ঘুমিয়ে পড়তেও দেখি। লাল রঙের তার চোখের জল আমার মনে দাগ কেটে যায় প্রতিদিন। মুঠোফোনে বন্দি করার চেষ্টা করলেও সবটা পারিনা। হাঁ করে চারপাশের পরিবেশ গিলতে থাকি। নিজের সাথে নিজেকে আজ একটু একা করে পেতে থাকি।

ADVERTISEMENT


আমাদের বাড়িতে একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলা থাকেন, তাঁকে আমরা মাসিমা বলে ডাকি। তাঁর শুনেছি দুই ছেলে আর এক মেয়ে। বড় ছেলে গলায় দড়ি দিয়ে কোনো কারণে মারা যায়। মেয়েটির শ্বশুরবাড়ির লোকজন তেমন সুবিধার নয়। তাই ওখানে সে মাঝেমাঝে অত্যাচারিত হয়। আর মাসির ছোটছেলেটির ও ছোটবৌমার ব্যবহার অত্যন্ত বাজে। মাসিমা যখন ও বাড়িতে থাকতো তখন তিনি মানসিকভাবে প্রচুর অত্যাচার সহ্য করেছেন।

 

তো এই যে ঘরবন্দী বা ঘরে আটকে থাকা এটা তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন পরোক্ষভাবে। ছেলে বৌমা নিজেরা ভালোমন্দ খেয়ে মাসিমা কে কিছুই খেতে দিত না।কারোর সাথে কথা বললে বা দেখা করলে মাসিমা কে চামড়ার বেল্ট দিয়ে মারতো, ঘর থেকে বেরোলে খুব ঝামেলা করতো,ঘরে হুড়কো দিয়ে আটকে রাখতো, আর একবার শুনেছি ঘুরিয়ে নাকি হাত ভেঙে দিয়েছিল।

এত অত্যাচার সত্ত্বেও তিনি শুধু নিজের স্বামীর ভিতে ছেড়ে যেতে চান নি। কারোর সেটা তার শ্বশুরবাড়ি। কিন্তু যখন এরকম আর পারলেন না তখন গৃহবন্দী অত্যাচার থেকে নিজেকে মুক্ত দিলেন। চলে এলেন আমাদের কাছে তাঁর বাকি জীবনটা শুধু শান্তিতে যেন ডালভাত খেয়ে কাটাতে পারেন সেই ভেবে।

না আমার গৃহবন্দী, আমার লক ডাউন এরকম নয়, এত কষ্টের নয় যখন, তখন কেন পারবোনা নিজেকে আটকে রাখতে, শুধু একটুকু সুখের আশায় এই অবস্থায় বাইরে যাবোনা, দেশ বিদেশে যাওয়ার সময় অনেক পড়ে আছে, এই লক ডাউন এর শেষে হয়তো এক অন্ধকার পৃথিবী খুঁজে পাবে আলোর দিশা।

একমাত্র আমরাই দায়িত্ব নিয়ে তাকে আনতে পারবো। মানসিকভাবে নিজেকে জর্জরিত করে না ফেলে আমরা পুরোনো দিনের ফেলে আসা সেই স্মৃতি রোমন্থন করতে পারি ঘরে বসেই। বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের আনন্দ আমরা স্মৃতির পাতায় টুকে দিতে পারি ঠিক এই সময়ই।

স্মৃতির পাতায় এই লক ডাউন ও আমাদের স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী ও একরকমের গল্প হয়েই রয়ে যাক।

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait