লক্ষ্মী সম্পর্কে দুচার কথা

লক্ষ্মী সম্পর্কে দুচার কথা

“নন্দন বনের মাঝে
নির্জন মন্দিরখানি –সেথায় বিরাজে
একটি কুসুমশয্যা রত্নদীপালোকে
একাকিনী বসি আছে নিদ্রাহীন চোখে
বিশ্বসোহাগিনী লক্ষ্মী, জ্যোতির্ময়ী বালা
আমি কবি তারই তরে আনিয়াছি মালা।”
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্যোৎস্নারাতে )

ঋকবেদে লক্ষ্মী হলেন শ্রী ও ঐশ্বর্যের দেবী। তৈত্তিরীয় সংহিতায় লক্ষ্মী ও শ্রীকে সূর্যের দুই স্ত্রী হিসেবে দেখানো হয়েছিল। পুরাণের যুগে তিনি ঐশ্বর্যের দেবী ও বিষ্ণুর স্ত্রী হিসেবে মর্যাদা পেয়েছিলেন। লক্ষ্মীর গায়ের রঙ সোনার মতন শালিধানের মঞ্জরী, পদ্ম এবং কৌস্তভ মণিও তিনি ধারণ করে থাকেন। ধন, জ্ঞান এবং শীল — তিনেরই মহনীয় বিকাশ দেবী লক্ষ্মীর চরিত্রের মাহাত্ম্য। তিনি কমলা, পদ্মের মতোই সুন্দরী! পদ্ম বনেই তাঁর বসতি। পদ্ম হলো বিকাশ আর অভ্যুদয়ের প্রতীক।

পুরাণ মতে,মহর্ষি ভৃগুর ঔরসে ও তাঁর স্ত্রী দক্ষকন্যা খ্যাতির গর্ভে লক্ষ্মীর জন্ম হয়। ইনি নারায়ণের স্ত্রী। দুর্বাসার অভিশাপে ইন্দ্র ত্রিভুবন জয় থেকে বঞ্চিত ও শ্রী হীন হলে সর্ব সৌভাগ্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মী সমুদ্রে প্রবেশ করেন। তারপরে সমুদ্র মন্থনের ফলে আবার লক্ষ্মীর উত্থান হয়। তাঁকে লাভ করার জন্য দেবতা আর দানবদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরুহলে, বিষ্ণু মায়া সৃষ্টি করে লক্ষ্মীকে গ্রহণ করেন। লক্ষ্মী হলেন চঞ্চলা। তিনি শুদ্ধ ও সংযত মনে অবস্থান করেন। পৌরাণিক লক্ষ্মীর নানা রূপের কথা শোনা যায়। যেমন, নদীরূপা লক্ষ্মী, ধনলক্ষ্মী, কৃষি লক্ষ্মী, খনিজ লক্ষ্মী, সমুদ্র লক্ষ্মী, বাণিজ্য লক্ষ্মী ইত্যাদি। মহালক্ষ্মী আর গজ লক্ষ্মীর পূজা নিষ্ঠা সহকারে করা হয়। পেঁচা হলো লক্ষ্মীর বাহন। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের দেবদেবীর সঙ্গে ভারতীয় পুরাণের এই দেবী লক্ষ্মীর কল্পনা মেলে না। এই দেবী কল্পনা একান্ত ভাবে মৌলিক।

ADVERTISEMENT

পৃথিবীতে লক্ষ্মী শ্রী খুব প্রয়োজন। তাঁর চঞ্চলা রূপটিও অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে একমত না হয়ে এক্ষেত্রেও উপায় থাকে না।

“জগতে লক্ষ্মী যতক্ষণ চঞ্চলা, ততক্ষণ তিনি কল্যাদায়িনী। লক্ষ্মীকে একজায়গায় চিরকাল বাঁধিতে গেলেই তিনি অলক্ষ্মী হইয়া উঠেন। কারণ, চঞ্চলতার দ্বারাই লক্ষ্মী বৈষম্যের মধ্যে সাম্যকে আনেন। ”
(‘রূপ ও অরূপ’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait