সত্যজিৎ-উত্তম-রবীন্দ্রনাথে নষ্টালজিক সৌমিত্র

সত্যজিৎ-উত্তম-রবীন্দ্রনাথে নষ্টালজিক সৌমিত্র

"পুলু, কেমন আছিস? ভালো? 

বড় তাড়তাড়ি নিভে যাচ্ছে এই কলমের আলো”

পৃথ্বীরাজ চৌধুরীর লেখাইতি অপুকবিতার অংশবিশেষকবিতাটি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আবৃত্তি করেছিলেনঅপূর্ব কুমার রায়, সংক্ষেপে অপুদুর্গার ভাই, মা-বাবার আদরের ছেলেবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা সত্যজিৎ রায়ের নির্মাণে ইতিহাসের এক অনন্য সৃষ্টি পথের পাঁচালীর অন্যতম চরিত্রএক নামে অপুকে সবাই চেনেবড় বড় চোখে প্রথম রেলগাড়ি দেখে বিস্মিত হওয়া সেই অপু যখন বড় হয়, অপু ট্রিলজির শেষ সিনেমা অপুর সংসারে অপুর চরিত্রে অভিনয় করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়অপু বলতেই আমরা কেবল সৌমিত্রকেই চিনিকোনো বাড়তি সম্ভাষণ নয়, শুধু অপু উচ্চারণেই একসঙ্গে সৌমিত্র সত্যজিতের নাম চলে আসেসত্যিই বড় তাড়াতাড়ি আলো নিভে গেলমৃত্যুর অনেক আগেই তাঁর মুখ থেকেই বেরিয়েছে, ‘মৃত্যু! আয়, তিন পাত্তি খেলি আয় মৃত্যুর কাছে অপরাজিত অপু পরাজিত হয়ে চলে গেলেন দিকশুন্যপুরের উদ্দ্যেশেযাওয়ার আগে অবশ্য বলে গেলেন "এখন যদি আমায় যেতে হয়, তাহলে গীতবিতান অবশ্যই নেব, না হলে বাঁচব কীভাবে? আর সেই সঙ্গে আমি নেব আবোল তাবোলতার মধ্যে দিয়ে এই যে জীবনের অন্য রূপটা দেখা যায়, এটা বাংলা সাহিত্যে আর হয় না''

ADVERTISEMENT

আর রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আবেগের কথা নতুন করে কিছু বলার নেইসৌমিত্র বলতেন, “রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্র না পড়লে তাঁকে পুরোপুরি চেনা যায় না, পড়লে তবেই মানুষটি কী রকম ছিলেন তা বোঝা যায়, নিজের চিঠিপত্রের ভিতর তিনি ধরা পড়েনতাঁর সাহিত্য শিল্পের যে বিপুল বৈভব বিস্তার, তার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে কখনও কখনও যখন অরণ্যে পথ হারানোর মতো অবস্থা হয়, তখন তাঁর চিঠিপত্র সেখানে যেন আলোও ফেলেদীর্ঘ কাল ধরে তাঁর চিঠিপত্রের সঙ্গে বসবাস করতে করতে তেমনটাই মনে হয়েছে আমার’’

জীবদ্দশায় রবি ঠাকুর তাঁর বিভিন্ন নারী প্রিয়জনকে অনেক চিঠি লিখেছিলেনজানা যায়, ২৯ জন নারীকে রবীন্দ্রনাথ হাজার ৪১৬টি চিঠি লিখেছিলেনবিশ্বভারতী থেকে প্রকাশিতরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠিপত্রসংকলনে এই চিঠিগুলো পাওয়া যায়রবীন্দ্রনাথ এই চিঠিগুলো লিখেছিলেন স্ত্রী মৃণালিনী, মেয়ে মাধুরীলতা, নির্মল কুমারী মহলানবীশ থেকে রানু অধিকারী পর্যন্ত অনেককেপ্রায় সাড়ে চার বছর ধরে স্টুডিওতে এই চিঠিগুলো পাঠ করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়এই হাজার ৪১৬টি চিঠি পাঠ করাকে অনেকেই বলছেন রেকর্ডকারণ এর আগে কেউ এতো চিঠি পাঠ করেননি বলেই জানা সবগুলো পাঠ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ৭৬টি অডিও সিডির একটি অ্যালবামনাম দেয়া হয়েছেরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠিপত্রএর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরজীবনস্মৃতি’, ‘ছেলেবেলা’, ‘আত্মপরিচয়পাঠ করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়গীতাঞ্জলি গান কবিতা নিয়ে যে অ্যালবামটি বেরিয়েছে, তাতে কবিতাগুলো আবৃত্তি করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৯৫টি ছোটগল্প পাঠ করেছেন কয়েকজন বিশিষ্ট বাচিকশিল্পীতাঁদের মধ্যে অন্যতম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

সত্যজিৎ সৌমিত্রের সম্পর্ক ছিল পিতা পুত্রের মতসন্দীপ রায় বলেন, অনেকেই বাবাকে সৌমিত্রকাকুরমানসপিতাবলেনআর সৌমিত্রকাকুকে বাবারমানসপুত্রপরিচালক আর অভিনেতার ওই নির্ভরতা দেখে আমারও মনে হত, দুজনের মধ্যে যেন পিতা-পুত্রের সম্পর্কই তৈরি হয়ে গিয়েছিল

সৌমিত্রের চেহারা সম্পর্কে সত্যজিতের এতটাই মুগ্ধতা ছিল, যে বলেছিলেন, ‘‘তরুণ বয়সের রবীন্দ্রনাথ’’ নিজের জীবনের সেরা অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিলেন সৌমিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরেই বাংলা সিনেমায় '‌অপু’‌ হয়ে প্রবেশ করে কবে যে তিনি বাঙালির ঘরের ছেলে হয়ে উঠলেন তা নিজেও বুঝতে পারেননিসেই ১৯৫৯ সালের ঘটনাআকাশবাণী কলকাতার ঘোষকের কাজ করছেন সৌমিত্রকিছু নাটকে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করছেনএর মধ্যেই একদিন অকস্মাৎ স্বয়ং সত্যজিৎ রায়ের কাছ থেকে অপুর সংসারের কেন্দ্রীয় চরিত্রের অভিনয়ের প্রস্তাব আসেসেই ছিল সূচনাএরপর সত্যজিৎ রায়ের ২৭টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ১৪টিতেই অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়এই সৌভাগ্য বাংলার আর কোনো অভিনেতা অভিনেত্রীর ভাগ্যে জোটেনি

সত্যজিতের বড় আদরের ছিলেন এই ‘‌অপু'‌এর পরের ছবি ছিল ‘‌দেবী'‌ (‌১৯৬০)‌সৌমিত্র-শর্মিলা এই জুটিকে সত্যজিৎ ফের ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর এই ছবিতেএক ঘরোয়া গৃহিনীর দেবী হয়ে ওঠার গল্প, যেখানে সৌমিত্র তাঁর স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেনআসলে পরিচালক জানতেন এই সৌমিত্রর মধ্যে রয়েছে এক সুপ্ত প্রতিভাএরপর তিনকন্যা (‌সমাপ্তি)‌, অভিযান, চারুলতা, কাপুরুষ, অরণ্যের দিনরাত্রি, অশনি সংকেত, ঘরে বাইরে একের পর এক ছবিতে অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা দেখিয়ে গিয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়সত্যজিৎ রায় যেন সৌমিত্রকে ছাড়া কিছুই বুঝতেন নাসত্যজিৎ রায় নিজের হাতে গড়েছিলেন তাঁর অপুর সংসারের অপুকে বা চারুলতার অমলকেতবে সৌমিত্র ছিলেন দারুণ প্রতিভার মানুষতাঁর অভিনয়ের পাশাপাশি চিত্রনাট্যের চরিত্রকে নিজের মধ্যে ফুটিয়ে তোলার ব্যাপারটা মুগ্ধ করেছিল সত্যজিৎ রায়কেআর তাই হয়ত তিনি অন্য কোনও নায়ককে তাঁর ছবিতে নেওয়া পছন্দ করতেন না ‘‌হিরক রাজার দেশে'‌ উদয়ন পণ্ডিত আজও দর্শকদের মনে গেঁথে রয়েছে, গেঁথে রয়েছে তাঁর প্রত্যেকটি সংলাপসত্যজিৎ যখন নিজের সৃষ্ট চরিত্র ফেলুদা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছেন, তখনও কিন্তু তাঁর চিন্তনে সেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় রয়েছেনজয় বাবা ফেলুনাথ হোক বা সোনার কেল্লা, ফেলুদা চরিত্রে তিনি যে যথাযথ সেটা প্রমাণ করলেন অভিনেতাআর তাই এতবছর পরও এই ছবিগুলি এখনও চিরস্মরনীয়ফেলুদা চরিত্রে এরপর অন্যান্য অভিনেতাদের দেখলেও, সত্যজিতের ফেলুদা বলতে সৌমিত্র রায়ের কথাই প্রথম মনে আসেফেলুদা সিরিজের অন্য গল্পগুলি পড়ার সময়ও আমাদের মনের কোণে কিন্তু ভেসে ওঠে সেই তাঁর ছবিসত্যজিৎ রায় বুঝেছিলেন এই ছেলে একদিন অপু, ফেলুদা হয়ে সকলের মনে ছাপ ফেলে যাবেন, আর তাই তিনি সৌমিত্র ছাড়া কিছুই বুঝতেন না

আবার অন্যদিকে বাঙাল না ঘটি, মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গল, কংগ্রেস না সিপিএমের মতোই একটা সময় বাঙালির তর্কের বিষয় ছিল উত্তম না সৌমিত্র? বেশ কয়েকটা বছর পিছিয়ে শুরু করলেও উত্তম কুমার যুগেও নিজের আলাদা ছাপ তৈরি করেছিলেন সৌমিত্র- একান্তই নিজের দক্ষতা ক্যারিশ্মায়উত্তম বনাম সৌমিত্র দ্বন্দ্ব যে বিদ্যমান ছিল সেকথা অস্বীকার করবার কোনও জায়গা নেইতবে সৌমিত্রর কথায় এটা নেহাতই 'কম্পিটিটিভনেস'সবমিলিয়ে 'টি ছবিতে উত্তমকুমারের সঙ্গে কাজ করেছেন সৌমিত্রযার মধ্যে ঝিন্দের বন্দী ছাড়াও দর্শক মনে চিরকাল ঠাঁই পেয়েছে স্ত্রী দেবদাসএছাড়াও রয়েছে 'অপরিচিত', 'যদি জানতেম', 'দর্পচূর্ণে' মতো ছবিপ্রতিটি ছবিতেই উত্তম কুমারকে আগাগোড়া ফাইট দিয়ে গিয়েছেন সৌমিত্র, ওই 'কম্পিটিটিভনেস' সত্ত্বা সঙ্গে নিয়েইঝিন্দের বন্দীর সেটে বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল, তাতে চড়াই-উতরাই এসেছে তবে প্রতিদ্বন্দ্বী কিংবা প্রতিস্পর্ধীর বাইরে তিক্ততা তাঁদের ঘিরে ধরেনিতিন ভুবনের পারেহয়ত আজ দু-জনার ফের আড্ডার আসর জমেছে…. পুলুটাকে আদর করে কাছে টেনে নিচ্ছেন উত্তমদাআলাপচারিতায় সৌমিত্র একবার খোলাখুলি ভাবে বলেছিলেন, “সারাদিন খাটাখাটনির পর দুজনে যখন একসঙ্গে বসতাম তখন তিনি আমার জন্যে অর্ডার করতেন ব্র্যান্ডি।  উনি হুইস্কি খেতেনহুইস্কিটাই সাধারণত ওঁকে খেতে দেখতামঅথচ মজা হল, আমাকে ব্র্যান্ডি ধরিয়েছিলেন কিন্তু উনিসেইসধবার একাদশীতে নিমচাঁদের একটা ডায়ালগ ছিল না, ‘‘ক্ল্যারেট ফর লেডিজশেরি ফর উইম্যান।  ব্র্যান্ডি ফর হিরোজ”।

উত্তমদাকে অনেক আগেই চিনতামঘনিষ্ঠতা হয়নিসেটা হয়ে গেলঝিন্দের বন্দী আউটডোর করতে গিয়ে আমরা দুজন দারুণ মজে গেলামআমার ভগ্নিপতি ওঁর দশ-পনেরোজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বৃত্তে ছিলেনওঁদের শনিবার-শনিবার একসঙ্গে আড্ডা বসতএকটা নিয়ম ছিল ওঁদের আড্ডায়, যে প্রতি শনিবার ছেলেদের সাদা পরে আসতে হবেসাদা আদ্দির পাঞ্জাবি আর সাদা মাখন জিন্সের প্যান্টগায়ে সাদা সিল্কের শার্টআমার বোনের বিয়ের পর আমিও সেই আড্ডায় রেগুলার হয়ে গেলামদারুণ ফুরফুরে হত সেই আড্ডাগুলোবসন্তদা থাকতেন, উত্তমদা থাকতেনউত্তমকুমারও ড্রেস কোড মেনে সাদা পরতেন? আরে, উত্তমদা তো আদ্দির পাঞ্জাবি আর মালকোঁচা মারা ধুতি পরে আসতেনকী লাগত যে কী বলব! উফ! ওই রকম গ্ল্যামারাস লোক আমি আর দেখিনি

আমি ওঁর খুব পিছনে লাগতামভীষণ, ভীষণ পিছনে লাগতাম মহিলা নিয়েএকদিন তো উনি চেঁচাতে শুরু করলেন, এই কে আছিস, পুলুটাকে বার কর তো সেট থেকে

বলতাম, দাদা হাতটা একটু দেখাও নাকী আছে হাতে যে এত সব আকর্ষিত হচ্ছেউনি হাসতে হাসতে ডিরেক্টরকে বলতেন, একে বার করোনইলে আমি মন দিয়ে শ্যুটিং করতে পারব নাআসলে, এই জিনিসগুলো তো কেউ জানে নাবাঙালি তার স্বভাবসুলভ প্রবণতা অনুযায়ী আমাদের লড়িয়ে দিয়েছিলকংগ্রেস-সিপিএম, মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল, অতএব উত্তম-সৌমিত্র! বাঙালি যখন উত্তম-সৌমিত্র নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারপিট করে রক্তারক্তি বাধাত, তখন রাতের আড্ডায় একজন হুইস্কি, অন্য জন ব্র্যান্ডি খেতেনঝিন্দের বন্দী আউটডোরের পর থেকে যে আমায় আপন করে নিল, সেটা থেকেই গেলআমরা মদ খেতাম, গ্র্যান্ড, গ্রেট ইস্টার্ন, স্পেনসর্সস্পেনসর্স মানে ডালহৌসি পাড়ার সেই হোটেলটা, যার ওপর ভিত্তি করে শঙ্করেরচৌরঙ্গী’? আমরা দুজনে পরবর্তী কালে অনেক ক্লাবের মেম্বার হইকিন্তু তখন কেউ ক্লাব মেম্বার ছিলাম নাফলে ঘুরে ফিরে মদ খাওয়ার ওই টা সীমিত জায়গাউত্তমদা তখন এমন হয়েছে যে, আমাকে ডাকতে স্টুডিয়ো চলে এসেছেআমি টেকনিসিয়ান্স স্টুডিয়োয়উনি এক নম্বরেহয়তো ফ্লোরেই চলে গেছিউত্তমদা এসে ডাকাডাকি, ‘‘কীরে পুলু, সন্ধেবেলা কী করছিস রে? বসব কিন্তু’’

অনেকে জিজ্ঞাসা করেছেন, ‘বেলাশেষে ওই রকম সাফল্যের পর আপনি অবসরের কথা চিন্তাই করেননি এটা বিস্ময়েরআসলে এটা বিস্ময়ের নয়বুঝতে হবে আমি কী চাই? আমার বেঁচে থাকার জাস্টিফিকেশন স্টারডম নয়, ভাল অভিনয়যশ নিশ্চয়ই চাইযশের আকাঙ্ক্ষা না-থাকলে এত লম্বা দৌড়তেই পারতাম নাযশ তো পেয়েওছিজনপ্রিয়তা পেয়েছি প্রচুরবিনয় না করেও বলি, উত্তমকুমার ছাড়া এত বড় স্টার আর হয়নিতবু আমার বরাবরের লক্ষ্য থেকেছে স্টার বলতে যে সব প্রোটোটাইপ বোঝায়, সেই ইমেজারিকে জাস্ট উড়িয়ে দেওয়াসব সময় আমি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েছিনতুন সব চরিত্র করতে চেয়েছিলোভীর মতো চেয়েছি আরও আরও আরওআমি স্টারডমের তথাকথিত ভূখণ্ড ছেড়ে নতুন ভূখণ্ড জয় করতে চেয়েছি

ঋণ: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সাক্ষাতকার – আনন্দবাজার, ২০১৬ইন্টারনেট


0 comments

Paramita Ghosh

Paramita Ghosh

Shared publicly - 16th Nov, 20 10:52 am

ভালো লাগলো পড়ে। ধন্যবাদ।

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait