বিনোদন ডেস্ক: বার্মিংহামের শহরতলিতে বর্ষণসিক্ত এক রাতে গাড়ি দুর্ঘটনায় চালক শাশ্বতকে আশ্রয় নিতে হয় এক বাড়িতে। যে বাড়িতে বাস করেন উকিল আর বিচারকদের পরিবার। প্রতি রাতে সেখানে বসে এক নকল আদালতের আসর। নতুন অতিথি এলে তাঁকে অভিযুক্ত করে শুরু হয় সেই নকল বিচারপর্ব। শাশ্বত ঢোকার পরও তেমনটি ঘটল। বিচারকের আসনে চূর্ণী, ফাঁসুড়ের ভূমিকায় জয়দীপ, দুই উকিল হলেন ঋদ্ধি ও প্রিয়াঙ্কা। এই শাশ্বতর কলকাতায় নিজের বাড়িতে দুর্গাপুজো ছেড়ে আদালতের সমন পেয়ে একদিনের নোটিসে বার্মিংহামের বাড়িতে আসার কারণটা এই নকল আদালতে ধীরে ধীরে প্রকাশ হতে থাকে। মুক্তি পেল কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়র ‘অনুসন্ধান’ । এটি শুধু থ্রিলার বা রহস্য রচনা নয়, কমলেশ্বরবাবু নিপুণ দক্ষতায় আজকের সময়ের সমাজ ব্যবস্থা, গ্লোবালাইজেশনের নামে ব্যক্তিস্বার্থের উদগ্র চেতনার উন্মেষ ও প্রসার, ফ্রয়েডের সেই চিরন্তন সত্য ‘যোগ্যতমর ঊর্ধ্বতন” অর্থাৎ ‘Survival of the fittest’ তত্বের নির্লজ্জ চেহারা উন্মোচন করে দিয়েছেন এই নাটকে থুড়ি ছবিতে। আজকের অর্থনীতি স্পষ্ট ভাষায় বলে ‘চরৈবেতি’। সব্বাইকে পিছিয়ে ফেলে এগিয়ে যাও, প্রয়োজনে পায়ের তলায় পিষে ফেলে। পুঁজিবাদী অর্থনীতির মূল কথাইতো এমন। বিশ্বাস, ভালবাসা, প্রেম সবকিছুই ব্যবহার কর সমাজের আরও আরও উঁচুতে ওঠার জন্য। জীবনের লক্ষ্য হোক শুধু সীমাহীন উচ্চতা। পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় কিছুদিন আগেই এই গল্প নিয়েই কলকাতার মঞ্চে নাটক তৈরি করেন। এবার তিনিই বড়পর্দায় নিয়ে এলেন সেই একই কাহিনির চিত্রায়ন।
ADVERTISEMENT
আমরা দেখি, বার্মিংহামের শহরতলিতে বর্ষণসিক্ত এক রাতে গাড়ি দুর্ঘটনায় চালক শাশ্বতকে আশ্রয় নিতে হয় এক বাড়িতে। যে বাড়িতে বাস করেন উকিল আর বিচারকদের পরিবার। প্রতি রাতে সেখানে বসে এক নকল আদালতের আসর। নতুন অতিথি এলে তাঁকে অভিযুক্ত করে শুরু হয় সেই নকল বিচারপর্ব। শাশ্বত ঢোকার পরও তেমনটি ঘটল। বিচারকের আসনে চূর্ণী, ফাঁসুড়ের ভূমিকায় জয়দীপ, দুই উকিল হলেন ঋদ্ধি ও প্রিয়াঙ্কা। এই শাশ্বতর কলকাতায় নিজের বাড়িতে দুর্গাপুজো ছেড়ে আদালতের সমন পেয়ে একদিনের নোটিসে বার্মিংহামের বাড়িতে আসার কারণটা এই নকল আদালতে ধীরে ধীরে প্রকাশ হতে থাকে। ছবির মূল আকর্ষণ এই আদালতে অভিযুক্ত শাশ্বত, পক্ষ-বিপক্ষের উকিলের প্রশ্নোত্তর, বিচারক ও ফাঁসুড়ের সংলাপ। কলকাতার সাধারণ এক চাকুরে (সেলসম্যান) থেকে শাশ্বতর চরিত্রের ক্রমাগত এগিয়ে চলা ও উত্থান কেন, কীভাবে? তার এক ব্রিটিশ স্পঞ্জ আইরন কোম্পানির অন্যতম প্রধান পদে উন্নতির সিঁড়িগুলো পেরোনোর কাহিনির মধ্যেই লুকনো থাকে আজকের অর্থনীতি, সমাজ ব্যবস্থার রীতি ও দুর্নীতির জঞ্জাল। সেটাকে দেখাতেই এই নাটকের আশ্রয় নিয়ে কমলেশ্বর একটি অভিনব পন্থার দিক নির্দেশ করলেন।
জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কা সরকার, পায়েল সরকার, ঋদ্ধি সেন – প্রত্যেকেই নিজস্বতায় নজর কাড়েন। আর মূল অভিযুক্তের চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় যেন নিজেকেই ডিঙিয়ে যান দৃশ্য থেকে দৃশ্যে। অনুপম রায়ের চলতি ধারার বাইরে একেবারে অন্যরকম আবহ রচনা আলাদা করে চিনিয়ে দিল তাঁকে। শেষপর্বে নিজের গাওয়া ‘আমি অনেক দূরের মানুষ…’ গানেও চেনা অনুপম একটু অচেনাই লাগল, যা বেশ ভাল।
0 comments