আকাশচুম্বী ডালগুলো থেকে ফোঁটা-ফোঁটা ঝরে পড়া জল টুপ-টাপ শব্দের ছন্দময় সঙ্গীত তৈরি করেছে। কোনো অদৃশ্য পরিচালকের হাতের ইশারায় যেন আলোড়ন পৌঁছে যাচ্ছে পাতা থেকে পাতায়। পাখিদের কিচির-মিচির জানান দিচ্ছে আসন্ন দিনান্তের। ঘিরে থাকা গাছের গুঁড়িগুলোয় ক্রমশ ঘন হয়ে আসা অন্ধকার, ফিস-ফিস করে বলছে, হাতে সময় নেই। পিস্তল পিছনে গুঁজে নরম মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসল অঙ্কন। ক্ষিপ্র হাতে শেওলার ভিড় সরিয়ে খোঁজার চেষ্টা করল পায়ের ছাপ। মিনিট দশেক আগে, নালা পেরোনোর সময় বিলাওরের পা লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছিল সে। এখনও ভেজা মাটির গন্ধে মিশে আছে সেই বারুদের ছোঁয়া। কান ফাটানো আওয়াজ ছোট্ট নালার কুল-কুল শব্দকে ছাপিয়ে সৃষ্টি করেছিল প্রতিধ্বনির। অঙ্কন নিশ্চিত, বিহড়ের ত্রাস আহত। কিন্তু কোথায় লুকাল লোকটা?
হঠাৎ করবীর গোড়ায় লালের ছিটেতে চোখ আটকে গেল তার। গুড়ি মেরে কাছে যেতে বুঝল, দাগ পুরনো নয়। ট্র্যাকার হিসেবে অঙ্কনের জুড়ি মেলা ভার। ঠিক পথেই এগোচ্ছে সে। কনুইয়ে ভর করে কিছুদূর এগোতেই দেখতে পেল রক্তাক্ত বিলাওরকে। এক পুরনো মন্দিরের চাতালে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। মহেন্দ্রগড়ে শান্তি ফিরল তাহলে অবশেষে।
ADVERTISEMENT
“একি কাণ্ড? তুলসি তলায় আলতা ঢেলে একাকার করেছে ছেলেটা! সারা গায়ে কাদা মেখে ভূত …”
মা বাইরে এসেই তুলকালাম শুরু করলো। সুপারম্যান উরফ্ বিলাওরকে কুড়িয়ে পিছনে ফিরল অঙ্কন। দেখল, সাধের বাগানের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। জল দেওয়ার ড্রেন ডিঙ্গিয়ে আসতে গিয়ে বেশ কয়েকটা টব উল্টেছে। দুটো গাঁদা গাছও কুপোকাত হামাগুড়ির ঠেলায়। ডালিয়ার ডাল ভেঙ্গে রয়েছে করবীর পাশে। ইনস্পেক্টর অঙ্কনের আজকের অভিযান নিঃসন্দেহে ছিল রোমাঞ্চকর। প্যান্টুলে খোঁচা মারছে বিশ্বস্ত ক্যাপ পিস্তল। পরের পুজোর এখনও ঢের দেরি। মেপে বুঝে দিনে একটাই ক্যাপ ফাটায় সে। তাই, চম্বলে ডাকু শিকারে অঙ্কনের মূল মন্ত্র এক গোলী, এক দুশমন।
0 comments