তবুও তুমি কেন আজ রং খেললে, হোলি খেললে? গায়ে গায়ে ঠেকে গেল রং, কোথায় কোথায় ভেসে গেল! তবু তুমি কেন হোলি খেললে?
পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ আজকে যাদের হোলি, তাঁরা হয় ঘরে না হয় বাইরে আসলে রং মাখছেনই। আজ ছুটি। আজ বাইরে বেরোলেই রং মাখিয়ে দেওয়ার ভয়, রং মেখে নেওয়ার ভয়। আর ঘরে বসে যারা রং মাখতে পারেন তাঁদের থেকে বড় সৌভাগ্যবান তো কেউ নন। তাঁদের জন্য রইল অনেক শুভেচ্ছা!
এই যে হোলি, রঙের উৎসব তাই নিয়ে দু'টো কথা। আমার মনে হয়, আজকে তাঁরাই বেশি করে রং খেলছেন যারা ঘরে বসে এই লেখা পড়ছেন। আজ না হয় আগামিকাল, যে দিনই হোক পড়ছেন, এখনও দোলের রং আপনার মনে লেগে আছে বলেই আপনি পড়ছেন।
বলতে পারেন, এটা আপনার সঙ্গে আমার কথোপকথন, বলতে পারেন অনেকটা পায়ে পায়ে হাঁটা। নামটা বাদই দিন না! আর ধাম? তার তো আর দরকারই পড়ে না। শুধুমাত্র লেখায় লেখায় বরং পরিচয় হোক। সেই আলাপ কোথায় যায়, আর কোথায় গিয়ে থামে, তা নিয়ে হয় অন্য দিন ভাবব!
হোলিকে আর বসন্তোৎসব বলতে ইচ্ছে করে না জানেন! কেবল মনে হয় বসন্তে তো আর এখন উৎসব হয় না, উৎসব হয় শীতে। আমরাও খানিক শৌখিন হয়েছি যে ! দোলের রং লেগে আছে আমাদের শরীরে। শরীর ছেড়ে রং ভেসে যাচ্ছে নগর, বন্দর, বারান্দা, করিডোর... সমস্ত, সমস্ত জায়গা !
আজ দোল। আজ পৃথিবীর সমস্ত ট্রেন, সমস্ত বাস, আজ সমস্ত ধুলোগাড়ি রং মেখে নিয়ে সোজা চলে যাচ্ছে হয়তো বোলপুরে অথবা অন্য কোথাও। যেখানে সে যেতে চায়, যেখানে সে রং মাখতে যেতে চায়।
আসলে তো রং খেলছে, রং মাখছে, রঙিন করছে মন, শরীর। রং লাগলেই দাগ হতে হবে তার কোনও মানে নেই। তার কোনও মানে নেই বলেই আজ আমরা - আমি, আপনি, তুমি, তোরা এই লেখার সঙ্গে রয়েছি।
ভালো থাকার তো কোনও বয়স হয় না, তেমনই রং মাখারও কোনও বয়স হয় না। আমরা সবাই আসলে রং মাখি, রং মেখে চলি। বিশ্বাস করুন, রং মাখা যে দিন শেষ হয়ে যায়, সে দিন থেকে আমরা বিবর্ণ হতে শুরু করি, সেই দিন থেকে আমরা ফুরিয়ে যাওয়ার পথ হাঁটা শুরু করি বোধহয়!
এ আপনার সঙ্গে আমার কথোপকথন, আপনি আপনার মতামত জানাতেই পারেন আমায়, কথা বলতেই পারি আমরা এখানে। তবে হ্যাঁ, একে অপরের সম্মান বজায় রেখে, রেসপেক্ট, ইটস্ টু বি আর্ন। আমি চেষ্টা করছি আর্ন করার! রং নিয়ে কথা বলতে বলতে দেখুন তো কেমন রং রুটে চলে গেলাম! আসলে তো পরিচয় পর্ব। দোল একটা ভালো দিন, আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হল।
আজ যাঁরা রং খেলেছেন, যেখানে যেখানে খেলছেন... কোথায় যাবো বলুন তো? সত্যযুগ, ত্রেতা, দ্বাপর নাকি কলি? আরে কলিতেই তো হোলি ! দ্বাপরে শুরু। যুগবিভাগের দিকে যাচ্ছি না, সেটা কারও কারও ভালো নাও লাগতে পারে। তবে সেও বড় মজার!
এই যে রং খেলা, রং মাখা, রং মাখানো মানে আর কী এই যা যা আমরা করছি, যারা ধর্ম মানেন, অবশ্যই হিন্দু ধর্মের কথা বলছি, দোল তো হিন্দুদের উৎসব। সেই দোলোৎসবের শুরু কিন্তু দ্বাপরে। এই প্রসঙ্গে বলি আজ যাঁরা বাড়িতে বসে রং খেলছেন, তাঁরা আসলে তো পরকীয়ার রংটাও মাখছেন। না, না সবাই নন, তবে অনেকেই! তেমনটা না হলে তো আপনি রঙের উৎসবে মাতলেনই না! আপনি এ লেখার পাঠক হতে পারেন, তবে রঙের উৎসবে গা ভাসানো কেউ নন!
দোল উৎসব, দোলযাত্রা আর তার সূচনা, বিস্তারের কথা অল্পবিস্তর আমরা সবাই জানি। সে সব পরে হবে না হয় ! আজ বরং আজকের কথা বলি না একটু!
পৃথিবীর কোনও প্রান্তে আজ গণতন্ত্রের উৎসব হচ্ছে, কোনও প্রান্ত রঙের উৎসবে মেতেছে, কোনও প্রান্তে আজ কাঁটাতার ডিঙোচ্ছেন একদল শরণার্থী। কোনও প্রান্তে আজ খুব খুব সুখ হচ্ছে, কোনও প্রান্তে হয়তো অত্যন্ত অত্যন্ত শোক হচ্ছে- এসব নিয়েই পৃথিবী। আমি পৃথিবীর কথা বলব, আপনি আপনার পৃথিবীটা শুধু সাজিয়ে নেবেন, পারলে না হয় রাঙিয়ে নেবেন একটু! ওই যে সেই লাইনটা ...
আমার স্বপন কিনতে পারে এমন আমির কই?
আমার জলছবিতে রং মেলাবে এমন আবির কই?
আহা !
ওই আবিরের খোঁজ আমাদের চলতে থাকবে...
হাওয়ায় মিশে থাকা সেই আবির প্রায়ই ইনবক্সের কড়া নাড়ে, হোয়াটসঅ্যাপে টোকা দেয়... বাড়ি আছো? আমরা কি সত্যিই বাড়ি আছি? আমাদের কি সত্যিই কোনও বাড়ি আছে? জানি না তো ! ভালো লাগছে না। তুই কী করছিস? কোথাও বলা যাচ্ছে কোথাও বলা যাচ্ছে না। তবুও যেন এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে হাওয়ায়, হাওয়ায়...
হাওয়া দিচ্ছে আসলে। শিরশিরে হাওয়া, দুপুরের গরমের পর সন্ধের শীতলপাটি হাওয়া। হাওয়া খেলে যাচ্ছে। সে আইটি সেক্টরের আনাচেকানাচে হোক বা গ্রামগঞ্জের রাস্তায় কিংবা শহুরে কোনও এলিট সিনেমা হলে বা মফস্বলী রেস্তোরাঁর ঘুপচি কেবিনে।
সেই হাওয়া লাগছে নতুন অবিশ্বাসী হবে না কিছুক্ষণের বন্ধু অথবা বিশ্বাসী হবে বলা বহুদিনের বন্ধুর মনে। কবে বিশ্বাস ভেঙে যাবে জানি না - আমরা খেলায় মেতে আছি।
রং লাগছে, গায়ে ছিটকে ছিটকে রং লাগছে। জড়িয়ে রাখতে চাইছি তাদের, সবগুলো পারছি না। ফস্কে ফস্কে যাচ্ছে। তবুও ক্যালেন্ডার এক দিক থেকে আর এক দিকে ধাক্কা মারে। হাওয়ায়, দেওয়ালে, ক্যালেন্ডার ধাক্কা মারে। আসলে এরও একটা রং আছে।
আজ দোল, আজ রঙের দিন। আজ রঙিন হওয়ার দিন। আজকের দিনে যেভাবে যেভাবে রঙিন হওয়া সম্ভব, সে ভাবেই হয়তো রঙিন হতে চাইছি আমরা !
তত্ত্ব কথা বরং থাক। থাক শুধু আমার-আপনার মধ্যে তৈরি হওয়া নতুন সম্পর্কটুকু। কিছুটা সময় যদি আমরা আমাদের মতো করে একে অপরের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারি তবে কিন্তু একটা জমজমাট ইন্টারঅ্যাক্টিভ সেশন হতে পারে মনে হচ্ছে! কী বলেন...।
ADVERTISEMENT
0 comments