সান্টা ও বড়দিনের উপহার

সান্টা ও বড়দিনের উপহার

“প্রবৃত্তিঞ্চ নিবৃত্তিঞ্চ কার্যকার্যে ভয়াভয়ে,
বন্ধন মোক্ষঞ্চ যা বেত্তি বুদ্ধি সা পার্থ সাত্বিকি।”

(শ্রীমদ্ভগবত গীতা, অধ্যায়:১৮, শ্লোক:৩০) 

অর্থাত, ভগবান অর্জুনকে বলছেন, যে বুদ্ধি ধর্মে প্রবৃত্তি এবং অধর্মে নিবৃত্তি আনে, কর্তব্য অকর্তব্য, ভয় অভয়, বন্ধনমুক্তি বুঝিতে পারে তাহাই সাত্বিকি বুদ্ধি!

গীতোক্ত এই মহাবাণী আজ এখানে উল্লেখ করার একটাই উদ্দ্যেশ্য। আজ বড়দিন। ঈশ্বরপুত্র যীশু আজকের দিনে ধরায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। মানুষকে  বন্ধনমুক্ত করার জন্য যে কতিপয় মহামানব জন্ম নিয়েছিলেন, যীশু তাঁদের অন্যতম। তাঁর প্রতি মানুষের শেষ পাপটিকেও তিনি ক্ষমা করে দিয়ে গেলেন অসীম করুণায়। ধরা ধন্য হল। তাই গোটা বিশ্বে আজকের দিনটি খুশির দিন। বিশেষ করে ধর্মাধর্ম নির্বিশেষে  ছোটরা তো সারাবছর অপেক্ষা করে থাকে সান্টা দাদুর কাছ থেকে উপহার পাবে বলে। কিন্তু কে এই সান্টা দাদু?

ADVERTISEMENT

আনুমানিক ২৮০ খৃষ্টাব্দে সেন্ট নিকোলাস নামে এক ধর্মযাজক উত্তর মেরু তে জন্ম নিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। তিনি ছিলেন প্রকৃতই এক সহৃদয় মানুষ। অনেক মানুষ তাঁর দ্বারা উপকৃত হয়েছেন। তিনি যেখানেই দেখতেন দরিদ্র অসহায় মানুষ, সেখানে নিজের স্বোপার্জিত অর্থ দান করে সাহায্য করতেন। ছোটদের জন্য বড়দিনে তিনি অনেক উপহার নিয়ে আসতেন যাতে তাদের মুখে হাসি ফোটে। তিনিই ক্রমে সান্টা ক্লস নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অনুগামীরা বড়দিনে এই উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বজায় রেখে চলেন। যা এখন গোটা বিশ্বে প্রচলিত। 

আসলে আমার আপনার প্রত্যেকের মধ্যেই এই সান্টা ক্লস এখনও জীবিত আছেন। বস্তুত শিশুদের চাহিদা খুবই অল্প। তারা শুধু ভালবাসা পেয়েই খুশি। একটুকু ভালবাসার পরিবর্তে তারা আমাদের ফিরিয়ে দেয় অকৃত্রিম অনাবিল মুখের হাসি। ফিরিয়ে দেয় ভরসা। হাজারো মনখারাপের ভিড়ে, অবসাদের গভীরে একটি শিশু কে জড়িয়ে ধরে আমরা ফিরে পাই নতুন করে বাঁচার মানে। আমাদের সন্তানেরা তো আছেই, এর সাথে আছে এমন আরও অনেকে যারা অনাদরে অবহেলায় বড় হয়। তাদের সান্টা হয়েও এই বড়দিনে আবির্ভূত হন কিছু সহৃদয় মানুষ। স্বামী বিবেকানন্দ এবং তাঁর বিশ্ববন্দিত গুরু শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন, মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের প্রকাশ। কোথায় আমরা ভগবান কে খুঁজতে যাব যদি মানুষের মধ্যেই তাঁকে খুঁজে না পাই? তাই শিবজ্ঞানে জীবসেবাই হোক আমাদের উদ্দ্যেশ্য। এই হল সাত্বিক  কর্ম। এই বুদ্ধিই নির্মল বুদ্ধি। আজকের বড়দিনে দিকে দিকে সান্টা ক্লসরা প্রমাণ দিয়ে চলেছেন তার।

কিন্তু ছোটদের জন্য নয় সান্টাদাদু উপহারের সম্ভার বয়ে আনলেন! কিন্তু আমরা বড়রা? আমাদেরও তো চাই অনেক কিছু। চাই ফেলে আসা শৈশব, চাই মুক্ত প্রকৃতি, চাই বিশুদ্ধ বাতাস। চাই দ্বন্দ্ব হিংসাবিহীন পৃথিবী, চাই সুরক্ষা,চাই ভালবাসা, চাই বন্ধুতা। চাই প্রিয়জনের থেকে সময়। চাই সুস্থ শরীর, সুস্থ মন। আর চাই হাসি। আরও কত কি চাই। লিস্টি তো শেষ হওয়ার নয়। আমাদের কি সান্টা দাদু দেবে তার ঝুলি খালি করে উপহার? আশায় রইলাম। 

শুভ যীশু দিবস। শুভ সান্টা দিবস॥

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait