প্রেম! যেটা ওই ১৭ তে আসে! নরম হৃদয়ে ধুকপুক করে সারাক্ষণ। গোলাপী আবির অসময়ে ছড়িয়ে যায় গাল জুড়ে। ওই প্রেম এই বাড়ির ছাদ থেকে ওই বাড়ির ছাদের আলসেতে অলস দুপুর কাটায়।
আবছা গোধূলির বিকেলগুলো কারুর অপেক্ষায় রাঙা হয়। মা বলত, কনে দেখা আলো। ওই আলোয় ভীষণ সুন্দর লাগে সব। ওই কনে দেখা আলোয় কেউ চোখ তুলে তাকাতে আরক্ত হয় ,কারুর মুগ্ধ চোখের পলক পড়ে না।
কারুর একলা ফেরার সঙ্গী হতে অচিন অপেক্ষায় দাঁড়ায় উদাস মুখের অষ্টাদশ। কখনো কারুর অপেক্ষায় বাসষ্ট্যান্ডের সব বাস ছেড়ে প্রতীক্ষার অবসান হয় না কারুর।
হাওড়া স্টেশনের বড়ো ঘড়ির নিচে দাঁড়ানো চোখদুটো ভিড়ের ভেতরের উদভ্রান্ত ছেলেটিকে কখনো খুঁজে পায়, কখনো নয়। হেদুয়া, কলেজ স্ট্রীট ধরে চুপচাপ হাত ছুঁইয়ে হেঁটে যাওয়া যুগল কত কথা বলে যায়। দুটো লাল হৃৎপিণ্ড ভর্তি প্রেম ছলাৎ ছলাৎ করে ভিড় বাঁচিয়ে ।
কোনো সময় এক্সাইড থেকে ঢাকুরিয়া হেঁটে যাওয়া প্রেম কাঁধ ছুঁয়ে ভরসা জাগায়। লেকের নিস্তরঙ্গ জল, গঙ্গার উচ্ছল ঢেউ অবাক হয়ে দেখে দু জোড়া শান্ত চোখের মণিতে শুধু ভরসার আনাগোনা। আমি আছি, আমি থাকব।
কখনো শুধু মুঠো ভর্তি হাত হাজার বার লেখা আই লাভ ইউ কে চুটকিতে নস্যাৎ করে দেয়। এক শহর প্রেম, মফস্বল ভর্তি ভালোবাসা জেগে থাকে অনির্বার।
ADVERTISEMENT
তারপর প্রেম কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে এসে মুগ্ধ বাতাসে, প্রজাপতির টানে বন্ধ দরজার আড়ালে দাম্পত্য শুরু করে স্বপ্নের দিন গোনে। মুহূর্ত পেরিয়ে ঘন্টা, মাস পেরিয়ে বছর। অস্থির প্রেম ততদিনে সংসারের হাল ধরে, চাকরির টেনশনে, মাসি শাশুড়ির বাত আর খুড় শ্বশুরের হাঁটুর বদল ঘটিয়ে হাসপাতাল ঘর করে ক্লান্ত। ননদ দেওর বা
শ্যালক শ্যালিকার সঙ্গে বৎসরান্তে পাহাড় আর নদী ঘুরে সম্পর্কের চচ্চড়ি করে অম্লতার স্বাদে বুক ভরিয়ে ফেলেছে।
ছেলে মেয়ের পড়াশোনা, নাচের বা গানের অনুষ্ঠান, পারিবারিক কোন্দল, রান্নার মাসির কামাই, স্কুল ফিস, প্রতিবেশীর ছেলের নব্বই শতাংশ নম্বর একটা অশান্ত সন্ধ্যে নিয়ে আসে দুকামরার ফ্ল্যাটে। ছাদের কার্নিশে চাঁদের আলো একা হয়, জ্যোৎস্নার রাত অমাবস্যার মতই অন্ধকারে। তার ওপর টাইফোয়েড, নিউমোনিয়া, অ্যানিমিয়া নিদেন পক্ষে ভিটামিন ডির কমতি সব মিলিয়ে সপ্তাহান্তে সিনেমা, চাইনিজ ফুড।
কমাথা চুল হালকা , মাথা ভর্তি ঢেউ খেলানো চুলে তখন সাদা রঙের উঁকি ঝুঁকি। চোখের নিচের বলিরেখা লুকোতে আর দাঁত বাঁধাতে ব্যস্ততা তুঙ্গে। তার ভেতরে প্রেসার সুগার আর ছানি কাটানো। মাঝে মাঝে পি এফের হিসেব আর বকেয়া ডি এ না পাওয়ার হতাশা। ভালোবাসার নরম রোদ্দুর সরে গিয়ে না পাওয়ার হিসেব নিকেশ, অভিমান আর অভিযোগের ডেবিট ক্রেডিটে ব্যালান্স শিট ভর্তি।
শিফন শাড়ির তন্বী, বা কলেজের বন্ধু, চোখের ও মনের আরাম ততদিনে। অপ্রেমে জীবন চলে না। প্রেমের ঘূর্ণিতে কখনো জীবন নৌকা ঘুরে যায় কখনো মুঠো ফোনে লুকিয়ে রাখা সম্পর্কই বেঁচে থাকার জিয়ন কাঠি হয়ে ওঠে। অফিস ট্যুর বা লুকিয়ে সময় যাপন প্রেমের গোপন ঘাঁটি ততদিনে। কিন্তু সুখী সুখী মুখে দাম্পত্যের ছবিতে চোর পুলিশ খেলা।
বয়েস্ হলে প্রেমেও পাক ধরে। মেনে আর মানিয়ে চলে আদর্শ দম্পতির বিয়ের রজত বা সুবর্ণ জয়ন্তী পালন হয়। আবার ফোকলা দাঁতে মালা বদল, সিঁদুর দান। নাতি নাতনীদের সঙ্গে ফেসবুক জুড়ে ছবি। প্রেম ততদিনে কর্পূরের মত উদ্বায়ু । হৃদয় বাইপাস আর পেস মেকারে ঠাসাঠাসি।
সাধের মানব জনম ততদিনে তলানী তে।
0 comments