- এএএইই একটা স্পেশাল আর দুটো বিস্কুট দে তো।
- আমায় একটা দিস। কী রে,আজকের খবরটা দেখলি!
- কোন খবরটা!
- আরে, চীনে কী একটা ভাইরাস এসেছে নাহ। আমাদের আবার আসবে না তো!না না, ওসব গুজব। কী রে দে চা টা।
- বললেই হলো গুজব, আমেরিকার মত দেশেও হয়েছে বলছে।
- ইশ! চা টা ফুটিয়ে তেঁতো করে দিলি তো রে। এসব এদেশে হবে না গুরু। কত ভাইরাস এলো গেলো।
ADVERTISEMENT
মোড়ের চায়ের আড্ডায় এমন কত দুরূহ বিষয়ের সহজ সমাধান মেলে , তর্ক আর আড্ডায় চায়ের কাপে তুফান ওঠে। রাজনীতি থেকে শেয়ার মার্কেট, আই পি এল থেকে আই লীগ,আম্বানি থেকে আমওয়ালা, জিও থেকে পাড়ার মিয়াও সবাই আসে আর যায়। পাড়ার চায়ের দোকান সরগরম হয় রোজ, উৎকৃষ্ট চা পাওয়ার নেশায় নয়, চা নিয়ে মুখরোচক আড্ডা দেওয়ার জন্য। সেই সকালের চা পাতা, চিনি দুধ ফুটিয়ে ফুটিয়ে মাটির ভাঁড়ে এক বিজাতীয় স্বাদের যে তরল তাকেই অমৃত ভেবে পান করা। চায়ের দোকান, তার খদ্দের, তার মালিক আর তার ছাঁকনি, কখনো বদলায় না, ওরা চিরকালীন।
সকালের খবরের কাগজ আর ধূমায়িত এক কাপ চায়ের যে যুগলবন্দী, আলিআকবরের সরোদ আর রবিশঙ্করের সেতারের যুগলবন্দীকে হার মানিয়ে দেবে। চায়ের বারবার আবদার কখনো গৃহযুদ্ধের কারণ হয়েছে কখনো সেই এক কাপ চা কত শীতল দাম্পত্যে উষ্ণতা এনে দিয়েছে।
বাজার নামিয়ে ,গিন্নি এক কাপ চা দাও দেখি, দাম্পত্যে এই বায়না শোনেনি এমন গিন্নি খুঁজে পাওয়া ভার। গিন্নিমাও হাতের হাজারো কাজ ফেলে গজ গজ করেও ঠক করে চা নামিয়ে গেছেন, ইতিহাস সাক্ষী।
দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে শুধু বড় পাতার সুবাসিত দার্জিলিং চা স্বচ্ছ কাঁচের কাপ ভরিয়ে তুলেছে। স্বাস্থ্যের খাতিরে দুধ চিনি ব্রাত্য আমাদের, তবুও চায়ের সুগন্ধে আবেশে চোখ বুজে গেছে। স্বাস্থ্যবাতিক আমরা গ্রিনটি খেয়ে স্লিম হতে চেয়েছি। আবার পাহাড়ের শীতে সব ভুলে মোটা দুধের এলাচ চা নিয়ে শরীর সেঁকেছি।
প্রেমের বিকেলে কখনো এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা দুজনেরই ঠোঁট ছুঁয়েছে। সকালের হুড়োহুড়ি শুরুর আগে এক চা আর নিজের সঙ্গে একলা হয়নি এমন রমণী কেউ নেই হয়তো।
অফিসের রাজনীতিতে চা সিগারেট আর সহকর্মী এক চিরন্তন দৃশ্য।
সাহিত্যসৃষ্টির চিন্তায়ও বারবার কাপের তলানিতে এসে ঠেকেছে চা।
কলেজ ক্যান্টিনের বা পার্টি অফিসের চালু চায়ে মার্ক্স, এঞ্জেলস ফ্রয়েড ট্রটস্কি থেকে দেশ ভাগ ,আর রাজনীতি ছুঁয়ে সিনেমা থিয়েটার শেষে প্রেমিকার বাবা অব্দি হাজির হযে যান।
পিঠের ভারী বোঝা নামিয়ে যে মুটে গামছায় মুখ মুছতে মুছতে এক কাপ চায়ে নিজের খিদেটাকে গলা টিপে মারে, তার কাছে চা পান কোনো বিলাস নয়।
এক কাপ চা তাই বারবার ঘুরে বেড়ায় আমাদের জীবন জুড়ে, ঠোঁট ছুঁয়ে আর রান্নাঘরের সস প্যান উপচে।
যতই আমরা অর্গানিক চা বা কফিতে আধুনিকতা খুঁজি, চা আমাদের একান্ত আপনার জন। তাই অতিথি আপ্যায়নের প্রথম কথাই হলো, একটু চা করি!
সুমন গেয়েছিলেন, এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই, আমি আজও সেই তুমিটাকে খুঁজি। পারফেক্ট ম্যাচ কোন তুমি- প্রেম নাকি রাজনীতি, সংসার নাকি আড্ডা, খবরের কাগজ নাকি সিগারেট! ততদিন থাক একলা প্লেটের ওপর এক কাপ চা।
0 comments