ঋতশ্রী মজুমদারের কবিতা - হে মহামানব!

ঋতশ্রী মজুমদারের কবিতা - হে মহামানব!

কবিতা - হে মহামানব!
কলমে - ঋতশ্রী মজুমদার

 

পুরো ঊনত্রিশ দিন তিন ঘন্টা এগারো মিনিট!
একটা চিঠি লিখবো বলে কাগজে শব্দের পর শব্দ সাজাচ্ছি, আবার দ্বিধাগ্রস্ত মন নিয়ে তা মুছেও ফেলছি, ফের তৈরি হচ্ছি আপনার উদ্দেশ্যে কিছু লিখবো বলে, কিন্তু রক্তাক্ত হচ্ছি নিজেই।
অনেক ভেবে শব্দের ফুরিয়ে আসা সম্ভার থেকে একটা প্রশ্ন রাখছি আপনার কাছে-
আমার বাড়ির সামনে একটুকরো সবুজ এনে দিতে পারেন আপনি?
নিদেন পক্ষে একখানা আমগাছ!
আমার ড্রইংরুমের ক্ষুদ্র পরিসরে একখানা বনসাঁই করেছি।
তার চারদিক থেকে ঝুরি নেমেছে।
আমার ছোট্ট মেয়ে সবেমাত্র আপনাকে জানছে।
আপনাকে চিনছে।
ছোট্ট ডানপিটে পাড়াকাঁপানো বিলে কিভাবে ডাকসাইটে সন্ন্যাসী বা পরিব্রাজক হয়ে উঠলো, তা জানতে গিয়ে বারবার হোঁচট খাচ্ছে জানেন!
এ গাছে ও গাছে খেলে বেড়াতেন আপনি-
ঝাঁপ দিতেন ভরা পুকুরে-
হুঁকোয় টান দিয়ে বুঝে নিয়েছিলেন ধর্মের আগা আর মাথা
বনবন করে ঘুরে বেড়িয়েছেন গ্রাম, শহর, অরণ্য, প্রান্তর।
 হিমালয়ের পাকদন্ডী থেকে সোজা দক্ষিণে-
পূবের সূর্যের আলো গায়ে মেখে দেখেছেন পশ্চিমের সূর্যাস্ত!
এহেন আপনাকে চেনাতে গিয়ে আমি নিত্যদিন নাজেহাল হচ্ছি আমার মেয়ের কাছে!
অসম্ভবের দোলাচলে কি বিচিত্র অবস্থা আমার!
"মা, এইটুকু বট গাছের ঝুরি  থেকে বিলে দোল খেত কি করে?"
কি করে বোঝাবো বলুন তো ওকে-
 প্রকৃতির কোলে মাথা উঁচু করে যার শাখা প্রশাখা খুঁজে নিতে চায় মুক্ত আকাশ, তাকে আর যাইহোক- ড্রইংরুমের ক্ষুদ্র পরিসরে বোঝা সম্ভব নয়!

ADVERTISEMENT

ওইটুকু মেয়ে কি বুঝবে পলিটিকাল ডেমনস্ট্রেশনের নেতিবাচক অর্থ?
ও কি বুঝবে বইয়ের পাতায় যে ভুবনডাঙ্গা খেলা করে, তার বুকচিরে তৈরি হওয়া কংক্রিটে চাপা পড়ে আছে আমাদের শৈশব!
সেসব ফসিল চাইলে মিউজিয়াম টিউজিয়ামেও দেখা যাবেনা!

আপনার জন্মদিন আজ।
মায়ের কোল আলো করে জন্ম হয়েছিল এক হীরকখণ্ডের।
আজ মহাসমারোহে পালিত হবে যুব দিবস।
আপনার ছবি নিয়ে পথে নামবে আমাদের ছাত্র সমাজ!
অথচ কি ভীষণ নিরুপায় আমরা!
আপনার তেজোদ্দীপ্ত ভাষণ, আপনার উন্নত চিন্তা, ধর্মাধর্ম সম্পর্কে আপনার ক্ষুরধার বক্তব্য এসমস্ত বোঝার জন্য তো ওদের ভিতটা শক্ত করতে হবে।

ভোরের সূর্য যখন আপন দীপ্তি মাখিয়ে দেয় আম জারুলের বনে, তখন কোথায় থাকে নির্বিচারবাদ?

বটের নীচে তিল তিল করে যখন জমে ওঠে উঁইয়ের মাটি, তখন কি পালানোর পথ পাবে কর্মবাদ?

ভরা নদীর কূলে যখন লেগে থাকে ভাঙা মাস্তুল, সপ্তডিঙ্গার ছাপ- তখন কোথায় হারাবে ভারতের ঐতিহ্য?

তোমার ও দুচোখে যে স্বপ্ন ছিল, যা একদিন নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা পৃথিবীকে তার মহিমায় ঘুম ভাঙুক আমাদের আগামী প্রজন্মের...
নব অরুনের কান্তিতে ওরা পথ খুঁজে পাক-
 নিষ্কাম কর্মযোগের।

শৃন্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রা
আ যে ধামানি দিব্যানি তস্থূ ।।

বেদাহমেতং পুরুষং মহান্তম্
আদিত্যবর্ণং তমসঃ পরস্তাৎ।


0 comments

Saurav Chakraborty

Saurav Chakraborty

Shared publicly - 02nd Feb, 22 10:47 am

মহামানবকে প্রণাম। অপূর্ব লিখেছেন।

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait