গল্প প্রতিযোগিতা ঝড়ের সেদিন

গল্প প্রতিযোগিতা ঝড়ের সেদিন

কাল বিধ্বংসী আমফানএ চারিদিকে মর্মান্তিক অবস্থা। ঝড়ের রুপ দেখে মনে হচ্ছিল হয়তো আর বাঁচবো না, এই শেষ। জোরালো বৃষ্টির শো শো শব্দের আওয়াজ  সাথে আশেপাশে সব কিছু তছনছ হয়ে যাওয়ার শব্দ। বুকটা হু হু করে কাঁপছিল। মনে শুধু উল্টো পাল্টা  কথা মনে পড়ছিল। লাইটাও চলে গেছে, ফোন পর্যন্ত চার্জ নেই।কোথাও কোন খবর পাচ্ছি না। আজকাল সোশালমিডিয়া জগতে ফোনটাই একমাত্র সম্বল।উপর থেকে কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকি। এই পরিস্থিতিতে ঘরের লোকের সাথেও যোগাযোগ হচ্ছে না। নিশ্চয়ই ওরা খুব চিন্তাই থাকবে। কি যে করি! উপায় নেই। চুপ চাপ  গুটিশুটি হয়ে বসে আছি। অনেক পরে সব কিছু শান্ত  কিন্তু বৃষ্টি তখনও হয়ে যাচ্ছে। রাতে খাওয়া দাওয়া আর হল না। অনেক রাত, ভাবতে ভাবতে কখন যে শুয়ে পড়েছি জানিনা।

আজ সকালেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। তড়াক করে উঠি। সব ঠিক আছে তো? বেলকনি এসে দাঁড়ায়। বৃষ্টি তখনও হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু চারিদিকে এ কি অবস্থা! এ কোন জায়গা! কিছুই তো আর বেঁচে নেই। গাছপালাগুলো তাসের ঘরের মতো পড়ে আছে। চারিদিকে জলে থৈথৈ করছে। সামনের গাছে একটা শালিক বাসা বুনে ছিল। সেটাও কোথাও উড়ে গেছে।ল্যামপোসট গুলো উপড়ে গেছে। একটা কুকুরও  ঘরের দাওয়াতে ভয়ে যুবুথুবু হয়ে বসে আছে। সব দেখে হাওমাও করে কেঁদে ফেললাম। কি জানি আরও কত কি যে  ক্ষতি ই হয়েছে। কিছুই তো জানিনা বাইরের খবর। আমার পাঁচ তলা ফ্ল্যাট বসে এই অবস্থা তো বাইরের সেই অসহায় মানুষগুলোর কি অবস্থা হবে। কোন রকমে সামলে চিন্তায় চিন্তায় ব্রেকফাস্ট করে বসলাম। একটু গল্পের বই পড়লাম। হঠাৎ লাইট এল।ঝটপট আগে মোবাইলটা চার্জ দিই। কি জানি কতখন থাকবে লাইট কোন ভরসা নেই। একটু চার্জ হতেই আগে ঘরে ফোন করি। আমার কল পেয়ে মা কান্নাকাটি শুরু করে কোন রকমে মাকে বুঝিয়ে শান্ত করি। পরে আবার কল করব বলে ফোনটা রাখি। মা এবার  সস্থির শ্বাস নেয়।দুপুরের খাওয়া সেরে ফোনটা নিয়ে বসি।  Facebook খুলতেই প্রথমেই notification আসে are you safe during cyclone amphan. নিজেকে safe দেখলাম, প্রিয়জনেরা হয়তো চিন্তা করবে জানানো দরকার। scrolling করতেই যে সব দৃশ্য দেখলাম, হায় রে হায় ! আমার সপ্নের শহরের এ কি অবস্থা! চারদিক উথালপাতাল, সব শেষ হয়ে গেছে। প্রিয় জায়গাগুলোকে আর চিন্তে পারছিনা।এ কি রূপ দেখালে মা! মা এত রূঢ়! মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে।

নিজেকে খুব ভাগ্যশালী মনে হল, বেঁচে গেছি এ যাত্রায়।মন একদম ভালো নেই। হঠাৎ একটা unknown নাম্বার থেকে ফোন এল, একবার রিং হয়েই কেটে গেল। ভাবছি এই Jio র আমলেও আবার কে এমন missed call দেয় রে বাবা।! কিছু সময় পর আবার ফোন টা বেজে ওঠে। দেখি সেই unknown নাম্বারটা ই। ফোনটা তুলি কি জানি কোন ফ্রেন্ড ফোন করছে কিনা। রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ এল – ‘মৌ তুই ঠিক আছিস তো ?’ খুব চেনা চেনা আওয়াজ।- ‘কে?’ আমি বলি।
– ‘কে?’ আমি বলি।

-‘গলাটাও চিন্তে পারছিসনা? আমি তোর অভি।অভিজিৎ রায়। 
অভি ঠিক শুনেছি তো? আকাশ ভেঙে পড়ল। চোখের সামনে সব ভাসতে লাগলো, সেই পুরনো সব স্মৃতি। সেই হেটে বেড়ানো কলকাতা। বৃষ্টি ভেজা রাত, সেই আলিঙ্গন। গলাটা শুনে বুকটা ফেটে গেল একটা ভালোলাগাই একটা অভিমানে।কোন মতে নিজেকে সামলে বলি,’ হ্যাঁ বল, কি বলছিস। ‘

-‘ তুই ঠিক আছিস তো? আমি তোকে কতবার ফোন করেছি। ফোনে, ফেসবুকে সবেতেই  ব্লক করে রেখেছিস।অন্য নাম্বার থেকে করছি ফোন বন্ধ, খুব চিন্তাই ছিলাম। নিশ্চই তোর ফোনে চার্জ থাকেনি। তাই না র? কতবার বলেছি ফোনটাকে চার্জে রাখিস। কিন্তু না মহারানী তো কোন দিনই কিছু শুনেননি। ‘ নিজেই গড়গড় বলতে শুরু করল।মনটা খুশিতে ভরে গেল,অভি আমার খোঁজ নিচ্ছে। তবুও গম্ভীর হয়ে বলি-‘ হুমম, আমি ঠিক আছি।’

-‘ যাক, এবার আমার শান্তি।’
-‘ তুই আমার খবর নিতে ফোন করেছিস? এই পাঁচ বছর পর তোর মনে পড়েছে? নাটক করছিস?” ছলছল চোখে।
-‘তুই এখন ও রেগে আছিস? (হালকা হেসে) তুই না এক্কেবারে তেমনি আছি। কে বললো আমি তোর খবর রাখিনা? তোর পাই পাই খবর আছে আমার কাছে। Breakup হয়েছে বলে খবর রাখব না? তোকে আমি ভালোবেসেছি মৌ, এখন ও বাসি, আর হয়তো বেসেও যাব চিরকাল। ‘

  আমার মন আনন্দে আত্মহারা, কেমন জানি এক নিমেষে আমার সব দুঃখ গুলো উধাও হয়ে গেল। আমি কি সপ্ন দেখছি?! তাও গম্ভীর হয়ে বললাম,-‘ তুই তো ভালো করে জানিস এই সম্পর্কের কোন ভবিষ্যত নেই, তাও তুই….. ‘
‘ হ্যাঁ ম্যাডাম তাও। এটা আমার যথার্থই ব্যক্তিগত ব্যাপার, আর তুই তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারিসনা। তুই ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকব।  একটা  request রাখবি? “-‘ বল।
-‘ আমায় ব্লক করে রাখিস না। প্রতিদিন facebook এ তোর আপডেটগুলো দেখে খুশি হই যে তুই ভালো আছিস। কথা দিচ্ছি জ্বলাব না।’- ‘বেশ! তাই হবে।’
– ‘আমি আর আগের অভি নেই রে। খুব বদলে গেছি। যাইহোক রাখি রে এবারে। ইচ্ছে হলে কোনদিন ফোন করিস। bye.’

আমি অবাক হয়ে বসে রইলাম।একটা কথাও বেরোলনা। সত্যিই এটা কোন অভি?  কেমন শান্ত, আগের মতো রাগ, তেজ কিছুই নেই। ওর কথা মতো Facebook খুলে unblock করি আগে। কিছু সেকেন্ড পর ম্যাসেজ ঢোকে একটা,’ Thanks for everything! ‘ওর  প্রোফাইল পিকচার দিকে তাকিয়ে থাকি। আর অজান্তেই চোখের কোণে জল জমতে থাকে।

ADVERTISEMENT
Swades Times Book
 

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait