অসুখ

অসুখ

‘পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন; মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীরই কাছে।’

– আজও প্রাসঙ্গিক এই বিখ্যাত জীবনানন্দীয় লাইন। ক্ষুদ্র মারণ ভাইরাস প্রথমে কাবু করল মানুষকে তারপর সেই বিপর্যস্ত মানুষের শেষ অধ্যায় রচনা করতে চলে এল প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমফান। কথায় বলে ‘রাখে হরি মারে কে?’ কিন্তু এখন হরি আল্লা গড এরা সব কোথায়? লকডাউনে মন্দির মসজিদ গির্জা বন্ধ বলে কি ভিতরের অধিবাসীও ঘুমিয়ে আছে? তারা কেউ কি আর মানুষদের রাখতে চায় না? শুধু মানুষ কেন বহু পুরনো মাটির ভিতর গভীর পর্যন্ত শিকড় ছড়ানো আর একটা গাছও বর্তমানে বেঁচে নেই। সব লাশ হয়ে পড়ে আছে মাটিতে। না! গাছেদের মৃতদেহ নিয়ে শোক করার যদিও এটা সময় নয়। তাদের শীঘ্রই পথ থেকে সরাতে হবে। যেতে দিতে হবে পেট্রোল পোড়ানো দামী গাড়ি। আশেপাশে মানুষের বহুতলে আলো, জলের ব্যবস্থা চাই।

ADVERTISEMENT
Swades Times Book

গাছেদেরও বলিহারি, মরবি মর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইলেকট্রিকের পোলগুলোর গায়ে ঢলে পড়ে মরলি কেন? আর জায়গা পেলি না? দেখে কেমন মনে হচ্ছে সব পথ অবরোধ করে শুয়ে আছে। এতদিন ধরে জঙ্গল সাফ করে ফেলার প্রতিশোধ তুলছে যেন। যদিও মানুষও এতে ভুলছে না। প্রথমবার গ্লোবাল ওয়ার্মিয়ের খবর শুনে মানুষ চমকায়নি, মেরু প্রদেশের বরফ গলায় মানুষ ঘাবড়ায়নি, ওজোন স্তর ফুটো হওয়ায় মানুষ অবাক হয়নি। বছর বছর ভূমিকম্প হোক কী সুনামি লায়লা ফণী বুলবুল মানুষ আবার নিজের সাজানো জীবনেই অভ্যস্ত হয়ে যাবে। আবার টুকরো থেকে টুকরো করে গড়বে সংসার। একান্নবর্তী পরিবারগুলো যত ভেঙে ছোট করা যায় করবে। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা ফ্ল্যাট আলাদা আলাদা ঠিকানার আধার কার্ড। কিন্তু কিছুতেই মানুষ নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে প্রকৃতিকে বাঁচাতে পারবে না। একবেলা ফোনের টাওয়ার না থাকলে পাগল পাগল লাগে সেখানে আর সব কিছু! আঘাত পেলে কিছুদিন শিঁড়দাড়া ঝুঁকে পড়বে ঠিকই কিন্তু আবার উঠে দাঁড়াবে। শুধু মরবে ঐ লড়াকু গরীবগুলো। তাইতো আজ গরীবেরা জলে আর গাছেরা পথে শুয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ওরাও ভেন্টিলেশনে আছে। শুধু দেখতে পাচ্ছি না।

‘ওয়াটার, ওয়াটার এভরিহোয়্যার, নর এনি ড্রপ টু ড্রিংক’ মাঝ সমুদ্রে দাঁড়িয়ে নাবিক দিশা খুঁজছে। চারিদিকে এত জল তবু একফোঁটাও পানের যোগ্য নয়। মাথায় করে শেষ সম্বল কাঁথাটুকু নিয়ে জল পেরিয়ে হেঁটে আসছে পশ্চিমবঙ্গ। বুক অব্দি জলের স্বাদ নোনতা, চোখ থেকে ঝরে পড়া জলও নোনতা। মাঝখানে ধুকপুক করছে প্রাণটা। এখন পায়ের নীচের জলের শব্দ ছাপিয়ে কান অপেক্ষা করে আছে হেলিকপ্টারে আসা ত্রানের শব্দের জন্য। কোনদিন যে হাত ক্যাচ আউট করেনি কোন খেলার মাঠের ক্রিকেটারকে, আজ সেই অদক্ষ কাঁপা হাতে লুফে নিতে হবে মুড়ি, চিঁড়ে, ছাতু, জলের প্যাকেট। একটু ফসকে গেলেই নোনা জল গিলে খাবে তাকে।

  •  

     

কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ায় বই ভাসছে মাছেদের সাথে। বাঁচবে না, বইদের তো কানকো ফুলকা নেই, তাই জলে শ্বাস টানতে পারবে না। তবে রক্ত ঝরবে, সাদা কালো রক্ত। গলে গলে জলে মিশে যাবে সব। শুধু ফ্যাকাসে সাদা শরীরগুলো জড়ো করা হবে পথের ধারে।


0 comments

Saurav Chakraborty

Saurav Chakraborty

Shared publicly - 31st Aug, 20 11:26 am

Manusher kritokormer fol

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait