সাংবাদিক রবীন্দ্রনাথ এর মানে কেউ এভাবে ব্যাখ্যা করবেন না যে তিনি কোনও দৈনিক পত্রিকায় রাত জেগে বহুকাল ধরে প্রুফ রিডারি করেছেন। সে কাজ রবীন্দ্রনাথকে করতেই হয়নি বলাই বাহুল্য। রবীন্দ্রনাথের জীবনে তাঁকে বহু পত্রিকার সংস্পর্শে আসতে হয়েছে, কোনটার তিনি স্বয়ং সম্পাদক ছিলেন, কোনটার বা নামে সম্পাদক না হলেও কার্যত সম্পাদকীয় দায়িত্বের অনেক গুরুভারই তাঁকে বহন করতে হত। তাছাড়া আরও কত সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রের সঙ্গে অপ্রত্যক্ষ ও ঘনিষ্টভাবে সম্পর্ক ছিল তার ইয়ত্তা নেই।
রবীন্দ্রনাথের বয়স যখন অল্প, তখনই ঠাকুরবাড়ি থেকে ‘ভারতী’ প্রকাশিত হত। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বঙ্গদর্শন’-এর আদর্শকে সামনে রেখে ১২৮৪ সালের শ্রাবণ মাসে ঠাকুর বাড়ি থেকে ‘ভারতী’ পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। বাংলা ভাষার উন্নতি ও সেবার উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠা পত্রিকাটি অর্ধ-শতাব্দী ধরে সচল থেকেছে। ১৩৩৩ বঙ্গাব্দের কার্তিক সংখ্যা পর্যন্ত এই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। ‘ভারতী’-র প্রথম সম্পাদক দ্বিজেন্দ্রলাল ঠাকুর। তবে এই প্রকাশের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় অবদান জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সম্পাদক না হলেও প্রকৃতপক্ষে ভারতী জ্যোতিবাবুরই মানসকন্যা। রবীন্দ্রনাথ জীবনস্মৃতিতে লিখেছেন, “এই সময়টাতেই বড়দাদাকে সম্পাদক করিয়া জ্যোতিদাদা ভারতী পত্রিকা বাহির করিবার সংকল্প করিলেন। এই আর-একটা আমাদের পরম উত্তেজনার বিষয় হইল। আমার বয়স তখন ঠিক ষোলো। কিন্তু আমি ভারতীয় সম্পাদকচক্রের বাহিরে ছিলাম না”।
‘ভারতী’-তে বালক রবীন্দ্রনাথের বহু রচনাই প্রকাশিত হয়েছিল। জীবনস্মৃতিতে তিনি লিখছেন, “ভারতীতেই ‘কবিকাহিনী’ নামক একটি কাব্য বাহির করিয়াছিলাম। … এই কবিকাহিনী কাব্যই আমার রচনাবলীর মধ্যে প্রথম গ্রন্থ-আকারে বাহির হয়। … যে-বয়সে ভারতীতে লিখিতে শুরু করিয়াছিলাম সে-বয়সের লেখা প্রকাশযোগ্য হইতেই পারে না। … যাহাই হউক, ভারতীর পত্রে পত্রে আমার বাল্যলীলার অনেক লজ্জা ছাপার কালির কালিমায় অঙ্কিত হইয়া আছে। কেবলমাত্র কাঁচা লেখার জন্য লজ্জা নহে— উদ্ধত অবিনয়, অদ্ভুত আতিশয্য ও সাড়ম্বর কৃত্রিমতার জন্য লজ্জা”।…
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ভারতী’ পত্রিকার সম্পাদক হন ১৩০৫ বঙ্গাব্দে। বলাবাহুল্য, এই পত্রিকা সম্পাদনা করার অভিজ্ঞতা তাঁর মোটেই সুখকর হয়নি। একবছর পরে ‘ললাটের ঘর্ম মুছিয়া’ সম্পাদকের পদ থেকে বিদায় গ্রহণ কালে তিনি লিখলেন, “সম্পাদক যদি অনন্যকর্মা হইয়া কর্ণধারের মতো পত্রিকার চূড়ার উপর সর্বদাই হাল ধরিয়া বসিয়া থাকিতে পারেন তবেই তাঁহার যথাসাধ্য মনের মতো কাগজ চালানো সম্ভব হইতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশের সম্পাদকের পত্রসম্পাদন হালগোরুর দুধ দেওয়ার মতো-- সমস্ত দিন খেতের কাজে খাটিয়া কৃশ প্রাণের রসাবশেষটুকুতে প্রচুর পরিমাণে জল মিশাইয়া জোগান দিতে হয়”;
যদিও এসময়ে তাঁর পক্ষে কোনও সম্পাদকীয় দায়িত্ব বহন করা সম্ভব ছিল না, তথাপি তাঁর বড়দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথের কাজকর্ম থেকে তিনি যে সম্পাদকীয় কর্ত্যব্যের কিছু অভ্যাস পেয়েছিলেন একথা সহজেই অনুমান করতে পারা যায়।
কিছুকাল পরের কথা। রবীন্দ্রনাথ তখন তরুণ যুবক। তাঁর মেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের পত্নী জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সম্পাদনায় ‘বালক’ পত্রিকা প্রকাশিত হলো। সে সময় অনেকেই জানতেন যে, নামে সম্পাদক না হলেও রবীন্দ্রনাথই ‘বালক’-এর কর্মধ্যক্ষের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। একবছরেই ‘বালক’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ বারোটি কবিতা, কুড়িটি প্রবন্ধ, নয়টি চিঠিপত্র, আটটি রসরচনা, ‘মুকুট’ নামে একটি দীর্ঘ গল্প প্রকাশ করলেন। এছাড়া ছিল ‘রাজর্ষি’ নামে ক্রমশ প্রকাশিত উপন্যাসটি। এই পত্রিকা প্রকাশ রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনস্মৃতি গ্রন্থে লিখেছেন - 'বালকদের পাঠ্য একটি সচিত্র কাগজ বাহির করিবার জন্য মেজবউঠাকুরানীর বিশেষ আগ্রহ জন্মিয়াছিল। তাঁহার ইচ্ছা ছিল, সুধীন্দ্র বলেন্দ্র প্রভৃতি আমাদের বাড়ির বালকগণ এই কাগজে আপন আপন রচনা প্রকাশ করে। কিন্তু শুদ্ধমাত্র তাহাদের লেখায় কাগজ চলিতে পারে না জানিয়া. তিনি সম্পাদক হইয়া আমাকেও রচনার ভার গ্রহণ করিতে বলিলেন।'
এই পত্রিকাটি ছিল মাসিক এবং বর্ষিক মূল্য ছিল ২ টাকা। ১২৯৩ বঙ্গাব্দে কার্য্যধ্যক্ষের পদ থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অবসর নেন। ফলে জ্ঞানদানন্দিনীর পক্ষে একা পত্রিকা দেখাশোনা অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। পরে ‘ভারতী’র সাথেএই পত্রিকাটির যুক্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নতুনভাবে প্রকাশিত এই পত্রিকার নামকরণ করা হয় ভারতী ও বালক। এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১২৯৩ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে [১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দ]। ‘ভারতী’র সাথে বালক পত্রিকার মিলিত হওয়ার পর, ১২৯৩ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে [১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দ]। দুটো পত্রিকার একত্রিত করার জন্য এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশে বিলম্ব ঘটেছিল। তবে এই নতুন পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন তা জানা যায় নাই। ধারণ করা যায় তৎকালীন ভারতী পত্রিকার সম্পাদক স্বর্ণকুমারী এর সম্পাদক ছিলেন। ১৩০০ বঙ্গাব্দে [১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দ] এই পত্রিকা পুনরায় ভারতী নামে প্রকাশিত হতে শুরু করে।
এর পরে এল ‘সাধনা’-র যুগ। ‘সাধনা’-র প্রথম যুগে রবীন্দ্রনাথ তার সম্পাদক হিসাবে আপনাকে প্রচার করেনি। সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সম্পাদক, কিন্তু নামেই। প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রনাথকেই ‘‘সাধনা’ সম্পর্কিত যাবতীয় কাজকর্ম দেখতে হত, সাধনার অর্ধেটাই তাঁর লেখায় পূর্ণ হত, এবং তাঁর রচনাই ছিল প্রধান আকর্ষণ। শেষের দিকে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং ‘সাধনা’-র সম্পাদক হয়েছিলেন। ‘সাধনা’-তে রবীন্দ্রনাথ যে সব রাজনীতি-বিষয়ক মন্তব্য ও প্রবন্ধ প্রকাশ করতেন, তা একদিকে যেমন ছিল সাহিত্য-রসোচ্ছল, অপরদিকে তেমনই সুতীক্ষ্ন শ্লেষ-কন্টকিত।
রবীন্দ্রজীবনী পাঠে জানা যায়, ‘সাধনা’র জন্য কবি সবসময় উৎকণ্ঠিত থাকতেন। উড়িষ্যা, কলকাতা কিংবা রাজশাহীতে জমিদারী কাজের তত্ত্বাবধানে কিংবা পদ্মায় বোটে থাকাকালেও ‘সাধনা’র চাহিদা পূরণে ব্যস্ত থাকতেন। সাধনার শ্রেষ্ঠ অর্জন হিসাবে সাহিত্যালোচকরা রবীন্দ্রনাথের গল্পগুলোকেই চিহ্নিত করেছেন। সাধনায় প্রকাশিত দুটি গল্পমূলক কবিতা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। ‘ব্রাহ্মণ’ (ফাল্গুন-১৩০১) ও ‘পুরাতন ভৃত্য’ (চৈত্র-১৩০১) প্রকাশিত হলে তৎকালীন কুলশীল ব্রাহ্মণ সমাজ কবিতার মর্মবাণীকে মেনে নিতে পারেনি। ‘জন্মেছিস ভর্তৃহীনা জবালার ক্রোড়ে/গোত্র তব নাহি জানি’ কবিতাটির মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ মাতৃত্বের যে অপরাজেয় অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে সামাজিক বিপ¬দকে সমর্থন করেছেন গোঁড়াদের এখানেই আপত্তি। এ কথা বলা অসংগত হয় না যে, ‘সাধনা’ দিয়েই পাঠকসমাজ রবীন্দ্রনাথকে যথাযথ চিনতে পারে। ‘সাধনা’ সম্পাদনার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যের একটি অভিনব ধারার প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি ভাষাগত ও অন্যান্য সমস্যার বিষয়ে সরাসরি পাঠকদের কাছে তাদের মতামত জানতে চাইতেন। এতে করে পাঠকরা সম্পাদক ও পত্রিকার খুব কাছে চলে আসে এবং বলা যায়, সত্যিকার অর্থে সম্পাদক হিসাবে রবীন্দ্র ভাবনায় যে ‘কুঠার’ই ছিল ‘সাধনা’ পত্রিকাটি। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “আমি নিশ্চয় জানি ‘আমার সাধনা কভু না নিস্ফল হবে। ক্রমে ক্রমে অল্পে অল্পে আমি দেশের মন হরণ করে আনব— নিদেন আমার দু-চারটি কথা তার অন্তরে গিয়ে সঞ্চিত হয়ে থাকবে। এই কথা যখন মনে আসে তখন আবার সাধনার প্রতি আকর্ষণ আমার বেড়ে ওঠে। তখন মনে হয় সাধনা আমার হাতের কুঠারের মতো, আমাদের দেশের বৃহৎ সামাজিক অরণ্য ছেদন করবার জন্তে একে আমি ফেলে রেখে মরচে পড়তে দেব না—একে আমি বরাবর হাতে রেখে দেব” ।…
সাধনার প্রথম সংখ্যা প্রকাশ পেলে রবীন্দ্রনাথ শ্রীশচন্দ্র-কে চিঠিতে লেখেন, “সাধনা প্রথম সংখ্যা কি তোমার হস্তগত হয়েছে? আমার ত সবশুদ্ধ মন্দ লাগল না। কিন্তু এর আরো উন্নতি করা আবশ্যক”।
শৈলেশচন্দ্র মজুমদার বঙ্কিমচন্দ্রের বঙ্গদর্শন পুনরুজ্জীবিত করবার সকল্প করলে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে সাহায্য করবার জন্য অগ্রসর হয়ে এগিয়ে এলেন। ‘বঙ্গদর্শন’-এ রবীন্দ্রনাথের ‘চোখের বালি’ ও ‘নৌকাডুবি’ ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হল। এছাড়া ‘বঙ্গদর্শন’-এ তাঁর কত যে শ্রেষ্ঠ ও স্মরণীয় প্রবন্ধপ্রকাশিত হয়েছে তার সংখ্যা নিরূপণ করা সুকঠিন। আমাদের সমাজ জীবনে বাধাবিপত্তির শেষ নেই, সমস্যার নেই অন্ত। রবীন্দ্রনাথের মতে “বঙ্কিমের বঙ্গদর্শন আসিয়া বাঙালির হৃদয় একেবারে লুঠ করিয়া লইল”। রবীন্দ্রনাথের বলিষ্ঠ ও যুক্তিধর্মী লেখনি এই সমস্যার মূল সূত্র নিয়ে আলোচনা করেছে তার সমাধানের ইঙ্গিতও তাঁর এই সময়কার রচনায় রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ১৩০৮ থেকে ১৩১২ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত এই পাঁচ বছর বঙ্গদর্শন সম্পাদনা করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন-“যে নামকে বঙ্কিমচন্দ্র গৌরবান্বিত করিয়া গিয়াছেন, সে নামের মধ্যে সেই স্বর্গীয় প্রতিভার একটি শক্তি বহিয়া গিয়াছে ।সেই শক্তি এখনো বঙ্গদেশে ও বঙ্গ সাহিত্যের ব্যবহারে লাগিবে, সেই শক্তিকে আমরা বিনাশ হইতে দিতে পারি না ।”
১৯০৩ খৃষ্টাব্দে সরলা দেবী (রবীন্দ্রনাথের দিদি স্বর্ণকুমারী দেবীর কন্যা সরলা দেবী) স্বদেশী জিনিসপত্র বিক্রির জন্য ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ নামে একটি দোকান খোলেন। প্রধানত মেয়েদের সাহায্যের জন্য দোকানটি খোলা হলেও এর মূলে ছিল স্বদেশী ভাবের প্রেরণা। এই ভাবকে সঙ্গী করে কেদারনাথ দাশগুপ্ত এখান থেকে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। দোকানটির নামানুসারে পত্রিকাটির নাম হয় ভাণ্ডার। কেদারনাথ রবীন্দ্রনাথকে পত্রিকাটি সম্পাদনার জন্য অনুরোধ জানান। পত্রিকাটির আদর্শের কারণে রবীন্দ্রনাথ রাজি হন। ১৩১২ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে রবীন্দ্রনাথের সম্পাদনায় ‘ভাণ্ডার’ প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, “আমি এই কাগজ-সম্পাদনার কাজে ধরা দিলাম কেন — একথা যদি কেহ জিজ্ঞাসা করেন, তবে আমার জবাব এই যে, ব্যাধের বাঁশি শুনিয়া হরিণ যে কারণে ধরা দেয়,আমারও সেই একই কারণ। অর্থাৎ তাহা কৌতুহল, আর কিছুই নহে। দেশের যে সকল লোক নানা বিষয়ে নানরকম ভাবনাচিন্তা করিয়া থাকেন, তাঁহারা কি ভাবিতেছেন জানিবার যদি সুযোগ পাওয়া যায়, তবে মনে ঔৎসুক্য না জন্মিয়া থাকিতে পারে না। আমি অনেক সম্পাদকি করিয়াছি, আমাকে এ কথা কবুল করিতে হইবে যে আমাদের দেশে বড় বড় কাগজে বড় বড় প্রবন্ধ অধিকাংশই বানাইয়া তোলা। সে সকল লেখার তাগিদ অন্তরের মধ্যে নাই'। দেশ ও জাতির সমস্ত রকম হিত সাধনের উদ্দেশ্যেই 'ভাণ্ডার' পত্রিকার প্রকাশ। সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ জনগণকে সজাগ রাখতে চেয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক,রাষ্ট্রনৈতিক অসংগতি সম্পর্কে 'ভাণ্ডার' টিকে ছিল আড়াই বছর, তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ দু'বছর এর সম্পাদক ছিলেন। এই সময়কালে তিনি রাজনৈতিক প্রবন্ধ ও কিছু দেশাত্মবোধক গান ও কবিতা ছাড়া কোনোরকম গল্প-উপন্যাস বা লঘু রচনা প্রকাশিত হতে দেননি। দু'বছরেরর মাথায় পত্রিকা কর্তৃপক্ষ 'ভাণ্ডার'-এর মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে এলে রবীন্দ্রনাথ সম্পাদকের দায়িত্ব ত্যাগ করেন। 'ভাণ্ডার' পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের অজস্র স্বদেশী গান বেরিয়েছিল। প্রথম বছরে (১৩১২ বঙ্গাব্দ) পঞ্চম ও ষষ্ঠ সংখ্যায় তিনি লিখেছেন, –
“এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে
জয় মা বলে ভাসা তরী”
এই পত্রিকাতেই তিনি বাউলের সুরে লিখলেন 'একা' নামের বিখ্যাত গানটি। সকল বাধা বিপত্তিকে অতিক্রম করে ব্যক্তিমানুষকে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে দৃপ্ত কন্ঠে বললেন, -
“যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে
তবে একলা চলো রে”।
সাময়িক পত্রিকায় উত্তর-প্রত্যুত্তর বা 'প্রশ্ন-উত্তর' বিভাগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি 'ভাণ্ডার'-এর প্রশ্নোত্তর বিভাগটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। এই প্রশ্নোত্তরের বিষয় বেশিরভাগই ছিল সমকালীন কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে। এভাবে কবিতা, গান, প্রবন্ধ ইত্যাদির মাধ্যমে স্বদেশী আন্দোলনের ভাষারূপ দিয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ভাণ্ডার' পত্রিকা।
'তত্ত্ববোধিনী' পত্রিকা :– রামমোহন রায় প্রবর্তিত ব্রাহ্ম ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর 'তত্ত্বরঞ্জিনী' সভা তৈরি করেন। পরে ঐ সভার নাম হয় 'তত্ত্ববোধিনী' সভা। ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট 'তত্ত্ববোধিনী' সভার মুখপত্র রূপে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিচালনায়, অক্ষয়কুমার দত্তের সম্পাদনায়। এরপর সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অয্যোধ্যানাথ পাকড়াশী, হেমচন্দ্র বিদ্যারত্ন, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ 'তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা'র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৩১৮-য় রবীন্দ্রনাথ এই পত্রিকার সম্পাদক হন। চার বছর তিনি এই পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন। এ সময় রবীন্দ্রনাথ পত্রিকার বিষয় ও লেখক উভয় বিষয়ে পরিবর্তন আনলেন। সম্পাদকরূপে নিজে তো লিখলেনই, লিখিয়ে নিলেন দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অজিতকুমার চক্রবর্তী, ক্ষিতিমোহন অজিতকুমার চক্রবর্তী, ক্ষিতিমোহন সেন, জগদানন্দ রায়দের মতো লেখকদের দিয়ে। ব্রাহ্মধর্মের আলোচনার পাশাপাশি যোগ করলেন সংস্কারমূলক তর্ক-বিতর্ক। গুরুত্ব পেলো সাহিত্য। প্রবন্ধের বিষয় হল – সমাজ, সাহিত্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান, সমকালীন সংবাদ।
'তত্ত্ববোধিনী' পত্রিকার মধ্যে দিয়ে তিনি পত্রিকার সাথে শান্তিনিকেতনের যোগসূত্র গড়ে তোলেন। এই উদ্দেশ্যে নতুন বিভাগ খুলেছিলেন 'ব্রহ্ম বিদ্যালয়/আশ্রম কথা'। এই সময় বিশ্বভারতীতে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দানা বাঁধে। অব্রাহ্মণ শিক্ষকদের ব্রাহ্মণ ছাত্ররা প্রণাম করবে কি করবে না— এই মর্মে নানান কথা উঠে আসে। রবীন্দ্রনাথ স্পষ্ট ভাষায় প্রণামের সপক্ষে তাঁর মতামত ঘোষনা করেন এবং তা ছাপা হয় 'তত্ত্ববোধিনী' পত্রিকায়। এখানেই রবীন্দ্রনাথের 'জনগণ মন অধিনায়ক জয় হে' কবিতাটি প্রথম মুদ্রিত হয়— পরবর্তীকালে তা ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পেয়েছে। চার বছরের সম্পাদনায় রবীন্দ্রনাথ তত্ত্ববোধিনীকে ধর্মের বেষ্টনী ছাড়িয়ে সমকালীন সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে জুড়ে দিতে পেরেছিলেন।
তাই সাংবাদিক হিসাবে রবীন্দ্রনাথের খ্যাতি জগৎজোড়া না হোক, বাংলা জোড়া ছিল। সম্পাদনাও করেছেন কয়েকটি কাগজের। তাছাড়া বাংলাদেশের দৈনিক সংবাদপত্রগুলির সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। সাংবাদিকদের কাছে তিনি নিজে শুধু ‘সংবাদ’-ই ছিলেন না, নানাভাবে নানাক্ষেত্রে তাঁর বহু মুল্যবান উপদেশও তাঁরা পেয়েছেন। আর আজও তিনি বাংলা দৈনিকের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছেন। সংবাদের শিরোণামে, সম্পাদকীয় বক্তব্যে রবীন্দ্র-রচনার ছড়াছড়ি।
রবীন্দ্রনাথ বাছা বাছা কতগুলি খবরের কাগজ পড়তেন। শেষ জীবনে অন্যতম সঙ্গী ছিল অমৃতবাজার ও আনন্দবাজার। প্রহসিনী, গল্প-সল্প, অনেক বইয়ে আনন্দবাজারের উল্লেখ আছে। তাছাড়া কার কোন্ কাগজ পড়া উচিত সেই সম্পর্কেও তিনি উপদেশ দিয়েছেন। ১৩১৪ সালে পুত্র রথীন্দ্রনাথকে এক চিঠিতে লিখেছেন, -“’স্টেটসম্যান’ কাগজের চাঁদা ফুরোলেই আর পাঠাবো না। এখন থকে ‘বন্দেমাতরম্’ কাগজ পাঠাতে থাকব। ওটা খুব ভালো কাগজ হয়েছে”।
বাংলা খবরের কাগজের চিরন্তন সমস্যা ইংরেজী শব্দের জুতসই বাংলা প্রতিশব্দ নিয়ে। পদে পদে বিপদ। রবীন্দ্রনাথ যদি কোনও বাংলা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টারের কাজ করতেন, তাহলে অনুমান করতে পারি, প্রথমদিন কাজে যোগ দিয়েই বলতেন, “ওই অন্তরায়ণরিপোর্টার শব্দটি সম্পর্কে আমার আপত্তি, বাংলায় এ অচল”। ভাবতে অবাক লাগে, রিপোর্টার না হয়েও রবীন্দ্রনাথ কিন্তু রিপোর্ট ও রিপোর্টারের বাংলা প্রতিশব্দ অনেক কষ্টে খুঁজে বের করে ছিলেন। তিনি লিখেছেন, - “হঠাৎ মনে পড়ল কাদম্বরীতে আছে ‘প্রতিবেদন’। আর ভাবনা রইল না। প্রতিবেদন, প্রতিবেদিত, প্রতিবেদক – যেমন করেই ব্যবহার করো, কানে বা মনে কোথাও বাধে না”। - রিপোর্ট, রিপোর্টেড, ও রিপোর্টারের এমন চমৎকার বাংলা খুঁজে বের করা রবীন্দ্রনাথের পক্ষেই সম্ভব।
খবরের কাগজে দ্রুত সৃষ্ট শব্দাবলীর মধ্যে রবীন্দ্রনাথের আপত্তি সবচেয়ে বেশি ছিল, ‘বাধ্যতামূলক শিক্ষা, নবতম অবদান, অন্তরীণ, পরিস্থিতি, সম্পাদকীয় স্তম্ভ, অংশগ্রহণ’ ইত্যাদি ব্যবহার নিয়ে। টিয়ারগ্যাসের বাংলা অনুবাদ করা হয় কাঁদুনে গ্যাস। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বলেন, কাঁদুনে নয়, কাঁদানে গ্যাস। এই গ্যাস কাঁদে না, কাঁদায়।
রবীন্দ্রনাথের মতে সর্বাপেক্ষা ‘বদর্থক শব্দ’ হল ‘বাধ্যতামূলক শিক্ষা’। তিনি বলেন, কম্পালসারী এডুকেশনের বাংলা হওয়া উচিত ‘অবশ্য শিক্ষা’। ‘অন্তরীণ’ শব্দটি সম্পর্কে তাঁর আপত্তি অন্য কারণে। তিনি একজায়গায় লিখেছেন, “কিছুকাল পূর্বে ভারতশাসনকর্তারা ইন্টার্ণ শুরু করলেন, তখন খবরের কাগজে তাড়াতাড়ি একটি শব্দ সৃষ্টি হয়ে গেল –‘অন্তরীণ’। শব্দ-সাদৃশ্য ছাড়া এর মধ্যে আর কোনও যুক্তি নেই। ‘এক্সটার্ণমেন্টকে’ কি বলতে হবে ‘বহিরীণ’? অথচ অন্তরায়ণ, অন্তরায়িত (ইনটার্ণড্), বহিরায়ণ, বহিরায়িত ব্যবহার করলে আপত্তির কারণ থাকেনা, সকল দিকে সুবিধাও ঘটে”। - ধাতুগতভাবে, ব্যকরণগতভাবে, নিরর্থক ‘পরিস্থিতি’ শব্দের প্রয়োগ ও ‘অবদান’ শব্দের অপপ্রয়োগ সম্পর্কে তাঁর আপত্তিও সর্বজনবিদিত।
রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, প্রতিশব্দ সৃষ্টির ব্যাপারে সংস্কৃতের সাহায্য নেওয়া উচিত। কারণ ইংরেজিতে যে সব শব্দ অত্যন্ত সহজ ও নিত্য প্রচলিত, দরকারের সময় বাংলায় তার প্রতিশব্দ খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন তাড়াতাড়ি যা হয় একটা বানিয়ে নিতে হয়। সেটা অনেক সময় বেখাপ হয়ে দাঁড়ায়; অনেক সময় মূল ভাবটা ব্যবহার করাই স্থগিত থাকে। অথচ সংস্কৃত ভাষায় হয়তো তার অবিকল বা অনুরূপ ভাবের শব্দ দুর্লভ নয়।
এই প্রসঙ্গে খবরের কাগজের ভাষা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ‘ঠাট্টার’ একটি উদাহরণ দিই ‘তাসের দেশ’-এর নাটিকা থেকে। এই বইয়ে রবীন্দ্রনাথ একটি সম্পাদক চরিত্র জুড়ে দিয়েছেন। ‘তাসের দেশ’-এর উদ্ধৃতিটি নিম্নরূপ, -
রাজা। ওহে ইস্কাবনের গোলাম।
গোলাম। কী রাজাসাহেব।
রাজা। তুমি তো সম্পাদক।
গোলাম। আমি তাসদ্বীপপ্রদীপের সম্পাদক। আমি তাসদ্বীপের কৃষ্টির রক্ষক।
রাজা। কৃষ্টি! এটা কি জিনিস। মিষ্টি শোনাচ্ছে না তো।
গোলাম। না মহারাজ, এ মিষ্টিও নয়, স্পষ্টও নয়, কিন্তু যাকে বলে নতুন, নবতম অবদান। এই কৃষ্টি আজ বিপন্ন।
সকলে। কৃষ্টি, কৃষ্টি, কৃষ্টি।
রাজা। তোমার পত্রে সম্পাদকীয় স্তম্ভ আছে তো?
গোলাম। দুটো বড়ো বড়ো স্তম্ভ।
রাজা। সেই স্তম্ভের গর্জনে সবাইকে স্তম্ভিত করে দিতে হবে। এখানকার বায়ুকে লঘু করা সইব না।
গোলাম। বাধ্যতামূলক আইন চাই।
রাজা। ওটা আবার কী বললে! বাধ্যতামূলক আইন!
গোলাম। কানমলা আইনের নব্য ভাষা। এও নবতম অবদান।
কৃষ্টি, নবতম অবদান, সম্পদকীয় স্তম্ভ, বাধ্যতামূলক আইন প্রভৃতি ব্যবহার লক্ষ্য রাখার মত।
রবীন্দ্রনাথ খবরের কাগজের ব্যস্তবাগীশ লোকেদের জন্য একান্ত প্রয়োজন ইংরেজীর অনেকগুলি বাংলা প্রতিশব্দ আমাদের উপহার দিয়েছেন। তার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করি। যেমন Charred - অঙ্গায়িত, Overpopulation – অতিপ্রজন, Footpath – একায়ন, Body guard- ঐকাঙ্গ, Apathy – অনীহা, Dissolved – প্রলীন, For show – প্রেক্ষার্থ, Out of order – ভিন্নক্রম, Original – মৌল, Self sufficiency – স্বয়ম্ভর, ইত্যাদি
রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘অনুবাদ চর্চা’ বাংলা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নবাগতদের একখানা অবশ্য-পাঠ্য বই। ইংরেজীতে লেখা সংবাদ কিভাবে বাংলায় অনুবাদ করতে হয়, তার অনেক উদাহরণ আছে বইটিতে। ১৯১৭-১৮ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের ‘ইস্কুল মাষ্টার’, তখন প্রধানতঃ অন্য প্রদেশের ছাত্রদের জন্যে কলকাতায় ইংরেজি দৈনিক সংবাদপত্র থেকে তার বাংলা অনুবাদ করে দেখাতেন কী ভাবে তর্জমা করতে হয়। তিনি স্টেটসম্যান, ইংলিশম্যান, বেঙ্গলী প্রভৃতি কাগজ থেকে সংবাদ বেছে পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের কাজ নিজেই করতেন। রবীন্দ্রনাথের লেখা একটি বাংলা সংবাদ নিচে দিলাম, -
“৩১এ অক্টোবরে সমাপিত সপ্তাহে অল্পকয়েক স্থানে লঘুবৃষ্টিপাত হইয়াছে। সমস্ত প্রদেশে আরও অধিক বৃষ্টির আশু প্রয়োজন। কোনো কোনো জিলায় আমন ধান শুকাইতেছে বলিয়া প্রতিবেদন করা হইয়াছে। উত্তর এবং পশ্চিম বাংলায় শষ্যের ভাবী অবস্থা সাধারণত আশাজনক নহে। অন্যত্র ভাবী অবস্থা মাঝামাঝি রকম। রবিশষ্যের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা চলিতেছে। বৃষ্টির অভাবে বীজবপনের ব্যাঘাত ঘটিতেছে। এই প্রদেশে মোটা চালের গড়মূল্য পূর্ব্বসপ্তাহের তুলনায় প্রায় শতকরা হারে দুই মাত্রা বাড়িয়াছে”।…
এই ধরণের সংবাদ রিপোর্টার সাব-এডিটারদের প্রায়ই রচনা করতে হয়। সহজে বোধগম্য এমন ঝরঝরে বাংলা বের করতে অনেককে গলদঘর্মও হতে হয়। উইক এন্ডিং অন থার্টিফাষ্ট অক্টোবর – এই বাক্যাংশটি বাংলায় অনুবাদ করতে গিয়ে এখনও প্রায়ই লেখা হয়ে থাকে – “৩১শে অক্টোবর তারিখে যে সপ্তাহ শেষ হইয়াছে সেই সপ্তাহে”। অথচ রবীন্দ্রনাথ সংক্ষেপে কি সুন্দর লিখেছেন, - “৩১শে অক্টোবর সমাপিত সপ্তাহে”।
যাই হোক, তত্ত্ববোধিনী সম্পাদনাকালেই রবীন্দ্রনাথ ২৪শে মে, ১৯১২ থেকে একটানা দেড় বছর ইউরোপ ও আমেরিকা সহ নানা দেশ সফরে যান। ১৯১৩ সালের অক্টোবরে তিনি দেশে ফিরে আসেন। এই দেড় বছর পত্রিকা দেখাশুনা করতেন সহ-সম্পাদক অজিতকুমার চক্রবর্তী। তত্ত্ববোধিনী মূলত ছিল প্রবন্ধ ও বিবিধ আলোচনা নির্ভর পত্রিকা। তত্ত্ববোধিনী’ই রবীন্দ্রনাথ সম্পাদিত শেষ পত্রিকা। এর পর রবীন্দ্রনাথ আর কোন পত্রিকা সম্পাদনায় হাত দেননি। এমন বহুমুখী প্রতিভাবান মানুষটি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের অসংখ্য কর্মকাণ্ডের মধ্যেও, নিজের ইচ্ছা এবং একাগ্রতা দিয়ে পাঁচটি পত্রিকাকে যে সময় দিয়েছিলেন তা আজ ভাবতেই নিজেদের কেমন যেন অবাক আর আশ্চর্য বলেই মনে হয়।
ঋণ: রবীন্দ্ররচনাবলী। ছিন্নপত্রাবলী। চিঠিপত্র। একত্রে রবীন্দ্রনাথ – অমিতাভ চৌধুরী। উইকিপিডিয়া। ইন্টারনেট।
Enter your email address to reset your password.
The very name 'SWADES' denotes the philosophical essence and ideological standpoint of our vision. We envisage serving our 'Swades' by providing news, special stories and literary works of the new generation writers which would cater to the interest of the Nation.
Swades Times © 2020 , All rights Reserved
0 comments