বাংলার মাটিতে জগদ্ধাত্রী পূজার ইতিহাস

বাংলার মাটিতে জগদ্ধাত্রী পূজার ইতিহাস

“কাঁদছ কেন, কালীর চাল আমি নেব


শ্রীরামকৃষ্ণদেব (কথামৃত) মাস্টারের প্রতি —"জগদ্ধাত্রীরূপের মানে জানো? যিনি জগৎকে ধারন করে আছেন তিনি না ধরলে, তিনি না পালন করলে জগৎ পড়ে যায়, নষ্ট হয়ে যায় মনকরীকে যে বশ করতে পারে, তারই হৃদয়ে জগদ্ধাত্রী উদয় হন

ADVERTISEMENT

রাখাল — “মন-মত্ত-করী!”

শ্রীরামকৃষ্ণসিংহবাহিনীর সিংহ তাই হাতিকে জব্দ করে রয়েছে

কালীপ্রসন্ন সিংহের - হুতোমপ্যাঁচার নক্সায় (১৮৬৪) যে চিত্রটি ধরা আছে সেটা হল, - বারোইয়ারি প্রতিমাখানি প্রায় বিশ হাত উঁচুঘোড়ায় চড়া হাইল্যান্ডের গোরা, বিবি, পরী নানাবিধ চিড়িয়া, শোলার ফল পদ্ম দিয়ে সাজানো; মধ্যে মা ভগবতী জগদ্ধাত্রী-মূর্তিসিঙ্গির গায়ে রূপুলি গিলটি হাতী সবুজ মখমল দিয়ে মোড়াঠাকরুণের বিবিয়ানা মুখ, রং গড়ন আদল ইহুদী আরমানী কেতা, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ইন্দ্র দাঁড়িয়ে জোড়হাত রে স্তব কচ্চেনপ্রতিমের উপরে ছোট ছোট বিলাতী পরীরা ভেঁপু বাজাচ্চেহাতে বাদশাই নিশেন মাঝে খোড়াসিঙ্গিওয়ালা কুইনের ইউনিফরম ফ্রেষ্ট!... বেলা আটটার সময় যাত্রা ভাঙলো, একজন বাবু মাতাল, পাত্র টেনে বিলক্ষণ পেকে যাত্রা শুনছিলেন, যাত্রা ভেঙে যাওয়াতে গলায় কাপড় দিয়ে প্রতিমে প্রণাম কত্তে গেলেন, (প্রতিমে হিন্দুশাস্ত্রসম্মত জগদ্ধাত্রী-মূর্তি)কিন্তু প্রতিমার সিঙ্গি হাতীকে কাম্ড়াচ্চে দেখে, বাবু মহাত্মার বড়ই রাগ হলো, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাবু করুণার সুরে – ‌

তারিণী গো মা কেন হাতীর উপর এত আড়ি
মানুষ মেলে টের্টা পেতে তোমায় বেতে হতো হরিণবাড়ী
সুর্কি কুটে সারা হোতো, তোমার মুকুট যেত গড়াগড়ি।।
পুলিসের বিচারে শেষে সঁপতো তোমায় গ্র্যান্বুড়ি
সিঙ্গি মামা টের্টা পেতেন ছুট্তে হতো উকীলবাড়ী।।

গান গেয়ে, প্রণাম রে চলে গেলেন

সংস্কৃতে হাতির নাম করী, তাই সেই অসুর, যাকে দেবী বধ করেছিলেন, তার নাম করীন্দ্রাসুরযুদ্ধের সময় মহিষাসুর নানা রূপ ধরে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছিল দেবীকেসেই করতে করতে যেই অসুর হাতির রূপ ধরেছে, দেবী তখন ধারণ করলেন এক চতুর্ভুজা মূর্তির রূপচক্র দিয়ে তিনি উড়িয়ে দিলেন হাতির শুঁড়দেবীর ওই রূপটিই জগদ্ধাত্রীরজগদ্ধাত্রীর মূর্তিতে সঙ্গে মহিষাসুর নেইদেবী উপবিষ্টালক্ষ্মী-সরস্বতী, কার্তিক-গণেশ নেইজয়া-বিজয়া আছেপুজোর রীতিও দু্র্গাপুজোর মতোইতবে বোধন হয় নানবমী তিথিতে একই দিনে দুর্গাপুজোর রীতি মেনেই সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী পুজো অনুষ্ঠিত হয়দেবীর বাহন সিংহের পায়ের কাছে হস্তিমুণ্ড থাকেএই কারণে দেবী জগদ্ধাত্রী করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী নামে পরিচিত

শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা মাকে দীক্ষাদানের সময় তাঁর জিভে জগদ্ধাত্রী মন্ত্রই লিখে দিয়েছিলেনএকবার স্বামী হরিপ্রেমানন্দ মাকে জগদ্ধাত্রীরূপে দেখে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছিলেনভক্ত চন্দ্রমোহন দত্ত একবার মাকে জগদ্ধাত্রীরূপে দর্শন করে ধন্য হয়েছিলেনস্বামী বিবেকানন্দ সারদা মাকে সাক্ষাৎ জগদ্ধাত্রী বলেই মনে করতেন

সম্ভবত ১২৮৪ সালপরম কালীভক্ত ছিলেন সারদাসুন্দরীর মা শ্যামাসুন্দরীসারা বছর ধরে কালীপুজোর জন্য চাল জমিয়ে রাখতেন আর সেই চাল মায়ের নৈবেদ্যরূপে দিতেন নব মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজোয়কিন্তু মনোমালিন্যের কারণে সে বছর নব মুখোপাধ্যায় শ্যামাসুন্দরীর চাল পুজোয় নিতে অস্বীকার করেনমনোবেদনায় শ্যামাসুন্দরীর সারা রাত ঘুম হল নাকেবলই বলতে লাগলেন, কালীর চাল ওরা নিলে না শেষরাতে কখন ঘুম এসে গিয়েছিলহঠাৎ স্বপ্ন দেখলেন, এক লাল টকটকে দেবীমূর্তি পায়ের উপর পা দিয়ে বসে তাকে বলছেন, কাঁদছ কেন, কালীর চাল আমি নেবকে তুমি মা?” দিব্য প্রভায় ঘর আলোকিত করে দেবীমৃর্তি বললেন, “আমি জগদ্ধাত্রী

সকালে ঘুম ভাঙতেই শ্যামাসুন্দরী মেয়েকে স্বপ্নের কথা বলে জানালেন, “আমি জগদ্ধাত্রীর পুজো করবলেগে পড়লেন প্রবল বাসনা নিয়েকিন্তু সেবছর আশ্বিন মাসে তখনও বৃষ্টি হচ্ছেধান শুকোবে কীভাবেসেই চিন্তা হলশেষে আপাতত গ্রামের বিশ্বাস বাড়ি থেকে ধার করে পাঁচ মন ধান নিয়ে এলেনসেই দান সিদ্ধ করা হলকিন্তু শুকোবে কোথায়? প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও অলৌকিকভাবে রোদ উঠলধানও শুকিয়ে গেলব্যাপার দেখে অবাক শ্যামার মুখে হাসি ফুটলকালী তাহলে সত্যিই চাল নিতে আসবেনআসলে সারদার মধ্যে জগদ্ধাত্রীর ভাব ছিল প্রকট

রামহৃদয় ঘোষাল ছিলেন জয়রামবাটি গ্রামের সম্পন্ন গৃহস্থজগদ্ধাত্রীপুজো হত তাঁর বাড়িতে আর ছোট্ট সারদা সেই পুজো দেখতে যেতেনএকবার পুজো চলছেমন্ত্রচ্চারণ, ধুপদীপশুচিশুদ্ধ পরিবেশসারদার কচিমুখে কী পবিত্র ভাব! যেন ধ্যানমগ্ননিবিড় তন্ময়তা ঘিরে রেখেছেরামহৃদয়ের ভ্রম হল, কোনটি আসল জগদ্ধাত্রীওই প্রতিমা নাকি ছোট্ট মেয়েটি? বললেন, মেয়ে সামান্য মেয়ে নয়একদিন মেয়ের পুজো হবেএই সাক্ষাৎ জগদ্ধাত্রী

ওদিকে শ্যামাসুন্দরীর পুজোর জোগাড় সম্পূর্ণজামাই দক্ষিণেশ্বরে মাতৃসাধনায় বিভোরশ্যামাসুন্দরী ছেলে প্রসন্নকে সেখানে পাঠালেনখবর শুনে শ্রীরামকৃষ্ণ হাসিমুখে বললেন, “বেশ বেশ, মা আসবেন, মা আসবেনপুজো করগেতোদের ভাল হবেঅবশেষে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষমায়াতন্ত্রের মতে, শুক্লনবমীর ত্রিসন্ধ্যা জগদ্ধাত্রীপুজোর পক্ষে আদর্শশ্যামাসুন্দরীর আয়োজনে জাঁকজমক না থাকলেও ভক্তির উপচারে পূর্ণ ছিল

বিসর্জনের সময় ভক্তিমতী শ্যামাসুন্দরী প্রতিমার কানে কানে বলে দিলেন, “মা জগাই, আসছে বছর আবার এসোআমি সব জোগাড় করে রাখববছর ঘুরে এলআবার পুজোর সময় উপস্থিতশ্যামাসুন্দরী পুজো করবেনইকিন্তু ঘরে যে অনটন, দারিদ্রের যাতনাএত আয়োজন কি সম্ভব ! সারদা বোঝালেন মাকে, কিন্তু শ্যামাসুন্দরী বুঝতে চান নারাতে সারদাকে স্বপ্ন দিলেন জগদ্ধাত্রীসখী জয়া-বিজয়াকে সঙ্গে নিয়ে দেবী যেন বলছেন, “এবার তাহলে আমরা যাইচমকে উঠলেন সারদাসেবার পুজো হলপরপর বারো বছর হল

জয়রামবাটিতে শ্রীমা সারদা শেষবার পুজো করেছিলেন ১৯১৯ সালেপুজোর ব্যাপারে সেবকদের সাবধান করে দিয়ে একবার মা বলেছিলেন, “আমার হাত-পা ওয়ালা সব জীবন্ত ঠাকুরশ্রীমা বলেছিলেন, “বিসর্জনের সময় একটি অলংকার খুলে রাখতে হয়সেটি মনে করে তিনি আবার আসবেনতারপর মায়ের দিঘিতে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়

স্বামী প্রমেয়ানন্দের মতে, (কৈশোরেই তিনি রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হন১৯৬১ সালে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন১৯৬৬ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত রামকৃষ্ণ মঠ মিশনের দশম সভাপতি স্বামী বীরেশ্বরানন্দর একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেন তিনি)

ধৃতিরূপিণী মহাশক্তি জগদ্ধাত্রীসগুণ ব্রহ্মের সৃষ্টি, স্থিতি বিনাশরূপ তিনগুণের যুগপৎ প্রকাশ যেমন কালীরূপের বৈশিষ্ট্য, তাঁর ধারণী পোষণী গুণের যুগপৎ প্রকাশও জগদ্ধাত্রীরূপের বৈশিষ্ট্যধা ধাতুর অর্থ ধারণ বা পোষণভগবতী নিখিল বিশ্বকে বক্ষে ধারণ করে পরিপালন করেন বলে মুনিগণ কর্তৃক তিনি ত্রৈলোক্যজননী নামে অভিহিতদেবী জগদ্ধাত্রীই সেই ধৃতিরূপিণী মহাশক্তি

স্বামী নির্মলানন্দ [ইনি ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যতম ত্যাগী পার্ষদ স্বামী নির্মলানন্দজী (তুলসী মহারাজ)স্বামীজি তাঁর এই গুরুভ্রাতার নির্মল স্বভাবের সাথে মিল করে তাঁর নাম রাখেন স্বামী নির্মলানন্দ] –

এই প্রসঙ্গে স্বামী নির্মলানন্দ তাঁরদেবদেবী তাঁদের বাহনগ্রন্থে লিখেছেন, দেবদেবীদের মধ্যে জগদ্ধাত্রী দেবী সর্বশ্রেষ্ঠা - ‘নিখিল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ কে? অগ্নি? বায়ু? বরুণ? চন্দ্র? না, অন্য কোন দেবতা? একদা প্রথমোক্ত দেবতাচতুষ্টয় ভ্রান্ত গর্ব্ববশতঃ নিজদিগকেই সর্ব্বশ্রেষ্ঠ এবং জগতের ঈশ্বর লে সিদ্ধান্ত করেনতাঁরা ভুলে গিয়েছিলেনমহাশক্তিরূপিণী জগদ্ধাত্রীর শক্তিতেই তাঁরা শক্তিমান্এর পরে কীভাবে দেবী জগদ্ধাত্রী অহঙ্কারী দেবতাদের গর্ব চূর্ণ করেছিলেন সেই কাহিনিও লিখেছেন তিনিএকই সঙ্গে দেখিয়েছেন কেনোপনিষদের এক উপাখ্যানেও রয়েছে ইন্দ্রাদি দেবগণের অহঙ্কার চূর্ণ করার কাহিনি

সেই কাহিনি অনুসারে, দশপ্রহরণধারিনী মহামায়ার হাতে মহিষাসুর বধের পরে দেবতারা খুব অহঙ্কারী হয়ে পড়েনতাঁদের ধারণা, তাঁরা অস্ত্র দান করার জন্যই দেবী দুর্গা অসুরনাশ করতে পেরেছেনমহামায়ার শক্তিকে তাঁরা অস্বীকার করতে চানভুলে যান মহাশক্তিরুপিণী জগদ্ধাত্রীর শক্তিতেই তাঁরা শক্তিমানসেই অজ্ঞতাকে ভুল প্রমাণ করতে তিন কোটি সূর্যের সমষ্টিগত দীপ্তি নিয়ে আবির্ভূত হন জ্যোতির্ময়ী জগদ্ধাত্রীএকটি তৃণখণ্ড সামনে রেখে তিনি বায়ু অগ্নিকে স্থানচ্যুত বা দগ্ধীভূত করার নির্দেশ দেনকিন্তু কেউই তা পারেন নাবুঝতে পারেন, বৃথাই অহঙ্কার, এক খণ্ড তৃণের শক্তিও তাঁদের নেইবুঝতে পেরেই সকলে দেবী জগদ্ধাত্রীকে সকল শক্তির শ্রেষ্ঠ হিসেবে গ্রহণ করেনদেবী তাঁর তেজোরাশি স্তিমিত করে এক অনিন্দ্য মূর্তি ধারণ করলে সকলে দেখন ত্রিনয়না, চতুর্ভূজা, রক্তাম্বরা, সালংকারা, নাগযজ্ঞোপবীতধারিনী জগদ্ধাত্রীর দর্শন পানমঙ্গলময়ী মহাদেবীর সেই মূর্তি দেখে দেবগণ তাঁর স্তবে বসেন৷

করীন্দ্রাসুর এর বর্ণনা ওই নামে না থাকলেও চণ্ডীতে উল্লেখ আছে মহিষাসুর এক মহাহস্তি রুপে দেবীকে আক্রমণ করে এবং দেবী তার মুণ্ড চ্ছেদ করেন - তখন সে এক পুরুষ রুপে অবতীর্ণ হয়ে দেবীকে যুদ্ধে আহ্বান করলে - মা তাকে তিরে বিদ্ধ করেন

অষ্টাদশ শতকে নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় তার রাজধানী কৃষ্ণনগরে এই পূজার প্রচলন করার পর এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়কিংবদন্তী অনুসারে মুর্শিদাবাদের নবাব কর না দেওয়ার অভিযোগে বন্দি করে রেখেছিলেন তাঁকেনবাব জানতেন পুজোর সময় রাজাকে আটকে রাখলে দ্রুত কর আদায়ে সুবিধা হবেহলও তাইরাজাকে মুক্ত করতে প্রায় লক্ষ টাকা কর উঠে এল দ্রুতপ্রজা-পরিজন-বন্ধুরা হাত বাড়িয়ে দিলপুজোতে তাঁরা তাঁদের রাজাকে ফেরত চান

একদম নবমীর দিন শেষবেলায় কৃষ্ণচন্দ্রকে মুক্তি দিলেন নবাবঅধীর আগ্রহে এই দিনটার দিকে তাকিয়েছিলেন কৃষ্ণচন্দ্রবিসর্জনের আগে একবার অন্তত দেবীর মুখদর্শন করতে চান তিনিবিসর্জনের সময় হয়ে আসছেঢাক ঢোলের শব্দ, প্রজাদের কোলাহল কানে আসছে তাঁররাজবাড়ির কাছে পৌঁছলেন কৃষ্ণচন্দ্রজলে ফেলে দেওয়া হয়েছে দেবীকেডুবে যাচ্ছে মূর্তিকৃষ্ণচন্দ্র কাছে এসে পৌঁছতে পৌঁছতে দেবীর চোখটুকুও ডুবে গেল জলেনিস্তব্ধ হয়ে গেলেন রাজামাকে পুজো করা হয়নি, অঞ্জলি দিতে পারলেন নাসব মেনে নিয়েছিলেনকিন্তু একবার চোখের দেখাও দেখতে পেলেন না দেবীকে!

সেদিন রাজবাড়িতে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছেন, এমন সময় স্বপ্নে এক অপরূপ সুন্দরী কিশোরী মূর্তি দেখা দিলতাঁর আভায় চারিদিক উজ্জ্বল হয়ে গেলক্রমে সেই মূর্তি মিলিয়ে গেলতাঁর জায়গায় দেখা দিল রক্তম্বুজা চতুর্ভুজা দেবীমূর্তিসেই মূর্তি সিংহবাহিনীদেবীমূর্তি রাজাকে বললেন, কুমারী রূপে ঠিক একমাস পরে তিনি আবার আসবেন রাজার কাছেকার্তিক মাসের শুক্লা নবমীতে সপ্তমী অষ্টমী নবমী, এই তিন দিন তাঁর পুজো করার আদেশ দেন রাজাকে

ঘুম ভেঙে চমকে উঠে বসলেন রাজাকে এই দিব্যদর্শন কন্যা? তিনি ছুটে গেলেন প্রসিদ্ধ তান্ত্রিক কালীশঙ্কর মৈত্রের কাছেতিনি বললেন, এই দেবী চণ্ডীরই রূপএর পুজো করতোমার দুর্গাপুজো না-করার কষ্ট দূর হয়ে যাবেঅনুগতরা তাঁকে পরামর্শ দিল কিছুদিন এখন রাজবাড়ি থেকে দূরে থাকতেনবাব যদি খবর পান, রাজা ফিরে এসে পুজোর প্রস্তুতি করছেন তাহলে ফের বিপদ হতে পারেরাজবাড়িতে আর ঢুকলেনই না রাজা কৃষ্ণচন্দ্রসেখান থেকেই তিনি সোজা চলে গেলেন চন্দননগরে তাঁর দীর্ঘ দিনের বন্ধু ইন্দ্রনারায়ণ চোধুরীর কাছে

গোপাল ভাঁড় আর কৃষ্ণচন্দ্রের পুত্র শিবচন্দ্র পুজোর আয়োজন করতে লাগলেননবমীর দিন গোপনে রাজবাড়িতে ফিরে এসে সোজা পুজোর ঘরে ঢুকলেন রাজাপুজো শেষে অঞ্জলি দিলেনমায়ের মূর্তি দেখে রাজার ক্ষোভ প্রশমিত হলদেবীমূর্তি সিংহের ওপর দুদিকে পা দিয়ে বসেচার হাতে শঙ্খ চক্র তির ধনুকসিংহের মুখ ঘোড়ার মতোবলা হয়, হিরণ্যকশিপুকে শ্রীকৃষ্ণ বধ করেছিলেন এই রূপেএটি নৃসিংহ মূর্তিকৃষ্ণচন্দ্র বিশ্বাস করতেন তাঁদের দুর্গা মা- আবার অন্য রূপ ধরে ফিরে এসেছেনতাই দুর্গামূর্তির মতো জগদ্ধাত্রী মূর্তিকেও কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে বলা হয় রাজরাজেশ্বরীতিনিই জগৎ সভ্যতার পালিকা শক্তিতিনি দেবী দুর্গারই আর এক রূপতাই জগদ্ধাত্রীর প্রণামমন্ত্রে তাঁকেদুর্গাবলে স্তুতি করা হয়েছে

ওঁ দুঁ সিংহস্কন্ধসমারূঢ়াং নানালঙ্কারভূষিতাম্
চতুর্ভূজাং মহাদেবীং নাগযজ্ঞোপবীতিনীম্।।  


0 comments

Saurav Chakraborty

Saurav Chakraborty

Shared publicly - 22nd Nov, 20 10:11 am

প্রণাম মা।

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait