আজাদ
“ম্যায় আজাদ থা, আজাদ হুঁ অউর আজাদ রহুঙ্গা”, এই হুঙ্কারের সাথে ভারতীয় বিপ্লববাদে দীক্ষা নিয়েছিলেন চন্দ্রশেখর তিওয়ারি, পরে যিনি স্বঘোষিত পদবী হিসাবে বেছে নেন ‘আজাদ’ শব্দটিকে! পরাধীন ভারতের ভাওরায় (মধ্যপ্রদেশ) 1906 সালের 23 সে জুলাই জন্ম। হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন এর প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রামপ্রসাদ বিসমিল এবং আরো তিন বিখ্যাত বিপ্লবী রোশন সিং, রাজেন্দ্রনাথ লাহিড়ী এবং আসফাকউল্লা খানের এর মৃত্যুর পর আজাদ এই প্রতিষ্ঠান এবং সদস্যদের দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নেন! দলের নতুন নাম হয় হিন্দুস্তান সোস্যালিস্ট রিপাবলিকান আর্মি।
চন্দ্রশেখর এর মায়ের ইচ্ছা ছিল তিনি পড়াশোনা শিখে একজন সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত হবেন। কিন্তু মাত্র পনের বছর বয়সে যে ছেলে বিপ্লবী দলে নাম লেখায় তার ভবিষ্যৎ তো অন্যরকমভাবে লিখিত হয়ে গেছে আগেই। মহাত্মা গাঁধীর মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে গিয়ে তিনি বলেন তাঁর নাম ‘আজাদ’, বাবার নাম ‘স্বতন্ত্রতা’ এবং তাঁর ঠিকানা হল ‘জেল’। ম্যাজিস্ট্রেট অবাক! সেই থেকে তিনি আজাদ নামে পরিচিত হন।
ADVERTISEMENT
অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হবার পর আজাদ সশস্ত্র বিপ্লববাদে উদ্বুদ্ধ হন। মন্মথ নাথ গুপ্ত আজাদকে রামপ্রসাদ বিসমিলের সাথে আলাপ করিয়ে দেন। কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলায় দলের বাঘা বাঘা নেতারা ধরা পড়লেও আজাদ অধরা। ভগত সিং এর নেতৃত্বে সনডার্স হত্যা মামলায় ও পুলিশ তাঁকে ধরতে পারেনি।
চন্দ্রশেখর আজাদ
তিনি ছিলেন একজন দক্ষ বন্দুকবাজ। দলের সদস্যদের বন্দুকবাজির তালিম দিতেন নিয়মিত। এছাড়াও ভারতবর্ষের সশস্ত্র বিপ্লববাদে আজাদের কীর্তি অবিস্মরণীয়।
27 সে ফেব্রুয়ারি, 1931 সাল। ভগত সিং এর গ্রেপ্তারির পর পুলিশ আজাদকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। সেই মুহূর্তে এলাহাবাদের আলফ্রেড পার্কে (বর্তমানে আজাদ পার্ক) আজাদ একটি গোপন মিটিং করছিলেন। পুলিশ সেখানে পৌঁছে গিয়ে এলোপাথারি গুলি চালিয়ে আজাদের সঙ্গীদের আহত ও নিহত করে। আজাদ বীরবিক্রমে গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। অবশেষে তাঁর বন্দুকে একটিমাত্র বুলেট পড়ে থাকে। সেই গুলি নিজের মাথায় চালিয়ে দিয়ে তিনি শহীদ হন। মাত্র তেইশ বছর তখন তাঁর বয়স।
জন্ম থেকেই আজাদ, মৃত্যতেও আজাদ হয়েই মহিমান্বিত হয়ে রইলেন।
ভারতমাতার এই বীর সন্তানকে তাঁর জন্মদিনে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম!
ছবি সৌজন্য ঃ Google
0 comments