ভার্চুয়াল পৃথিবী কী আমাদের আত্মিক বন্ধন ব্যাহত করছে?

ভার্চুয়াল পৃথিবী কী আমাদের আত্মিক বন্ধন ব্যাহত করছে?

ভার্চুয়াল পৃথিবী অবশ্যই আমাদের আত্মিক বন্ধন ব্যাহত করছে।

ভার্চুয়াল বিষয়টি অবশ্যই একটা সময়োপযোগী মাধ্যম। এ কথা সত্য যে এরা দ্বারা সময় ও দূরত্ব দুটোই অনায়াসে হাতের মুঠোয় চলে এসেছে, কিন্তু কোথাও যেন একটা যান্ত্রিকতা, একটা নিষ্প্রাণতা কাজ করে, ভালোবাসার মানুষকে সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে গোলাপ উপহার দিয়ে মনের কথা বলা কিম্বা তাকে আলিঙ্গনে বেঁধে তার শরীরী গন্ধের মাদকতা লাভের বিকল্প  কী ভার্চুয়াল মাধ্যম হতে পারে? আপনি কাউকে ভালোবেসে কিম্বা স্নেহের বশে কপালে চুম্বন করলেন, আর মোবাইল বা কমপিউটার  - ল্যাপটপের স্ক্রিনে চুমু খেলেন,  দুটোর ধরণ ও অনুভূতি কী এক হবে? কিছুতেই না।

 

আরও পড়ুন - ছোট্ট বিলে থেকে স্বামী বিবেকানন্দ - আঁধারে আলো হয়ে বিরাজিত

 

ভার্চুয়াল মাধ্যম সম্পর্কগুলোকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখে, যেমন কৃত্রিম ভাবে অক্সিজেন বা ভেন্টিলেশন  মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে,  সেরকমই কিন্তু পারষ্পরিক সম্পর্কগুলো  সেখানে নেহাতই ঠুনকো।  ভাবুন তো আপনজনের মৃত্যু জনিত বিরহের বহিঃপ্রকাশ তার শবদেহ ছুঁয়ে যেভাবে হৃদয় থেকে নিংড়ে বের হয়, ভার্চুয়ালে তা আদৌ সম্ভব? সামনা সামনি কফি খেতে খেতে গল্প বা আড্ডার  বিকল্প কী মেসেঞ্জার, হোয়াটসআপ কিম্বা মোবাইল বা কমপিউটার /ল্যাপটপে চ্যাট হতে পারে? সেখানে হয়তো প্রয়োজন মেটে, কিন্তু তা হয় একেবারে প্রাণহীন, মানুষ এখন বড় ব্যস্ত, নিজের প্রয়োজনে অহরহ ছুটছে, তার দু-দণ্ড মুক্ত মনে বসে কথা বলার  সময় নেই, তাকে বাসে ট্রেনে বসে চ্যাট করে হয়তো মনের খোরাকি কিছুটা মেটাতে বাধ্য হতে হয়। কিন্তু তা নেহাতই যান্ত্রিকতায়। নেমন্তন্ন বাড়িতে গিয়েও তাদের কথা বলার সময় নেই, কোনোরকমে গিফ্ট দিয়ে গোগ্রাসে খেয়ে বাড়ি ফেরার পথ ধরে তারা।

ADVERTISEMENT

এভাবে বেঁচে লাভ কী? আত্মিক বন্ধন থাকছে কোথায়? এরপর মানুষ এই আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে মানসিক রুগীতে পরিণত হয়। মোবাইল বা ল্যাপটপ-কমপিউটার কি-বোর্ড টিপে কী আর হৃদ্যতা তৈরি হয়? কাছে না গেলে, মন খুলে কথা না বলে chat করে কী সেই অনুভূতি আসে, না শুধু দরকারটাই মেটে, কোনো  আত্মিক বন্ধন রচিত হয় না সেখানে। মানুষের বিপন্নতা তো দুরস্ত , নিকট আত্মীয়ও চরম বিপদে পড়লে ভার্চুয়ালি কর্তব্য পালন। বোতাম টিপে গোটা কতক সংক্ষিপ্তভাবে হাস্যকর শব্দ নিক্ষেপ। "tnsn krsna sob thk hye jbe ..bhgbn ache..." - অর্থাৎ বলতে চাওয়া হচ্ছে - টেনসন করিসনা  সব ঠিক হয়ে যাবে, ভগবান আছে, অথচ সেই চরম পর্যায়ে তার পাশে দাঁড়ানো, তার মাথায় সান্ত্বনার হাত রাখাটা বড় প্রয়োজন ছিল। প্রবল যন্ত্রণা আর দুঃখ কষ্টে আমরা ইমোজি ছবি পাঠিয়ে তা ব্যক্ত করছি, প্রকৃত চোখের জল আর ঝরে না হৃদয় হতে চোখ বেয়ে। আন্তরিক বন্ধন আলগা হয়ে মানুষ আজ শুধু নিজের মধ্যেই একাকী আবদ্ধ। এ লক্ষণ আদৌ স্বাস্থ্যকর লক্ষণ নয়! সুতরাং ভার্চুয়াল পৃথিবী আমাদের আত্মিক বন্ধন অবশ্যই ব্যাহত করছে, মানুষের মধ্যেকার মানবিক সম্পর্কগুলোকে হত্যা করে চলেছে - এ কথা নিদারুণ সত্য।

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait