রম্যরচনা – ভূতের রাজা দিলো বর

রম্যরচনা – ভূতের রাজা দিলো বর

অতীন্দ্র পেশায় স্কুলমাস্টার। স্কুলে ভূগোল পড়ায়। মেজাজ ভালোই ছিল সেদিন স্কুল থেকে ফিরেই ভাইপো গুবলুর সাথে খুনসুটিতে মাতলো। গুবলু বড়-বড় চোখ করে গুপিগাইন-বাঘাবাইন সিনেমা দেখছিল। অতীন্দ্র বললো 
–‘ গুবলু এই যে গাঁজাখুরি গল্প দেখছিস পড়াশুনো নেই। জীবনে ভুত ই দেখলাম না তার আবার রাজা তিনি দেবেন বর ! হু যত্তসব !

–‘ওরম বলো না কাকাই ভুতের রাজা সত্যি সত্যি আছে গো ! যা বলে সব ফলে যায়।
–‘তোর মুন্ডু’
পরদিন রবিবার স্কুল যাওয়ায় তাড়া নেই। দাদা (গুবলুর বাবা) গলদা চিংড়ি এনেছিল। কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া-দাওয়া সেরে টানা ঘুমের দেশে গেল অতীন্দ্র।
হঠাৎ এক খনখনে গলা টের পেল। সঙ্গে আলোর ঝলকানি। কোথায় আছে ঠাহর করতে পারলো না বটে তবে গলাটি স্পষ্ট বলছে-

–‘এই পাজি মর্কট
উল্লুক গাধাবোট
ভুতেতে অবিশ্বাস
কেড়ে নেব তোর শ্বাস
ভুতেদের রাজা আমি
তাই আমি অন্তর্যামী
তবু তোর মন ভালো
অন্তরে আছে আলো
দিতে পারি তিন বর অন্তরে সুপ্ত
বলেফ্যাল চটপট  না রেখে গুপ্ত।’

–‘আজ্ঞে আ-আপনি রিয়েল ইয়ে, মানে সিনেমায় যেমন হয় ! বিশ্বাসই হচ্ছে না !’

–‘তিনবর ফলে যাবে
বিশ্বাস হবে তবে
বিলম্ব করিসনে
যা চাওয়ার চেয়ে নে’

–‘আজ্ঞে রাজামশাই আমার গোপন ইচ্ছে আমার স্বপ্নের স্ত্রী। পটলচেরা চোখ-নীলাভ মণি-ঝর্ণার মতো একরাশ ঘন কালো চুল। ঝকঝকে হাসি। দেখেই যেন মনে হয় আর্যা-নারী। টক-ঝাল-মিষ্টির পারফেক্ট কম্‌বিনেশন !’

–‘হবে হবে
খাসা তোর বউ হবে
খাসা তার দীপ্তি
অন্তরে তৃপ্তি ’

–‘আর রাজামশাই আমার ইচ্ছে আমার শ্বশুরবাড়ি হবে বহুদূর।ছেলে-পুলে লটবহর নিয়ে যখন শ্বশুরবাড়ি যাবো যেন মনে হয় world tour এ যাচ্ছি।

–‘বেশ বেশ
যেতে চাস দুরদেশ
হলো তোর শ্বশুর ঘর
চেয়ে নে তৃতীয় বর’।

–‘আজ্ঞে রাজামশাই এমন কিছু একটা ব্যবস্থা করুন যাতে সারা জীবন আমি বসে খেতে পারি।’

–‘বেশ তবে তাই হোক
তোর যদি তাই ঝোঁক
বসে বসে  খেতে চাস
দিলাম এই আশ্বাস ’

খানিক পরে অতীন্দ্র চোখ মেলে দেখল সে এক প্রাসাদের মধ্যে সামনে এক সিঁড়ি। উপরে তাকিয়ে দেখল সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে এক তন্বী-সুন্দরী-নারী। কি চাউনি! নীলাভ মণি! একমুখ হাসি। কোমরের কাছে নেমে রয়েছে একরাশ ঘন কালো চুল। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারলো না সে। কাছে আসতে বিশ্বাস ভাঙার জন্য ছুঁয়ে দেখতে গেল সে।

–‘দোহাই আপনার ছোঁবেন না আমায় ‘
আশ্চর্য অতীন্দ্রর মনে রাজপ্রাসাদ দেখে দেবতা ভর করল।দৈবী কায়দায় বলল
–‘কেন প্রিয়ে?’
–‘অনেক্ষন ধরে makeup করেছি,ছুঁয়ে দিলে ব্রণ-ফুসকুড়ি গুলো আবার দেখা যাবে।makeup উঠে গেলে original রং বেরিয়ে পড়বে।মাজা কালো।আপনার তো ফর্সা চাই তাই না?’
–‘আ্যঁ !! সে নয় ঠিক আছে আপনার চোখে জল মানায় না । কাঁদছেন কেন ?’
একমুখ হেসে আর্যা উত্তর দিলেন
–‘আজ্ঞে কাঁদিনি, কন্‌টাক্ট লেন্স নেওয়া অভ্যেস নেই তো। নীল রঙের কন্‌টাক্ট লেন্স। আপনার নীল চোখ পছন্দ না ?’
–‘এখানেও ঘাপলা !’
মনে মনে বলল তবে লাবণ্য আছে । একরাশ ঘন কালো চুল। দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছে করে। বলে চুলের দিকে হাত বাড়িয়েছে- রে রে করে উঠলেন আর্যা।
–‘কি হলো?’
–‘চুলে হাত দিচ্ছেন যে! খুলে গেলে কি হবে ?’
–‘আ্যঁ মানেটা কি!’
–‘আজ্ঞে পরচুলা টানাটানি করলে খুলে যাবে না ?’
–‘পরচুলা!!’
–‘কি করি বলুন হেয়ার ফল হতে হতে প্রায় টাক। আপনার তো লম্বা চুল পছন্দ তাই আর কি !’
–‘হয়েগেল !’
–‘আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন না তো !’
ভালো ছেলে অতীন্দ্রর বড় মায়া লাগল।
–‘ইয়ে মানে ছি ছি তা কেন ! অধর্ম হবে যে !’
–‘আসুন কিছু খেয়ে নেবেন খিদে পেয়েছে নিশ্চই। আপনার টেবিল-চেয়ার, সারা জীবন এতে বসে খাবেন কেমন ?’
–‘আ্যঁ মানে আমি ঠিক তা তো চাইনি,মানে ….’
–‘খুব হয়েছে এখন আসুন খাবেন।’
–‘আপনি খাবেন না?’
–‘না’
—-‘কেন?’
–‘আপেলে কামড় বসালেই আমার বাঁধানো দাঁত নড়ে ! ’
–‘বাঁধানো দাঁত !!’
–‘হ্যাঁ পোকায় খেয়েছিল অরিজিনাল গুলো,তাছাড়া আমার খুব অম্বল হয় ,সাথে গলা বুক জ্বালা,ইদানিং diabetes tendency high blood sugar ।
–‘এত complications ! আগে জানলে তো…. !’
এবার আর্যা ক্রুর দৃষ্টি হানলেন
–‘তবে যে বললেন টক-ঝাল-মিষ্টি আপনার পছন্দের !’
BLACKOUT হলো আবার !
চোখ মেলে অতীন্দ্র দেখল সে এক মরুভূমিতে(মরুদ্যানে) শুয়ে । নিশুতি রাত । পাশে একদল লোক খাওয়া দাওয়া করছে।অন্ধকারে ঠাহর হয় না ভালো । নড়ে চড়ে বসতেই কয়েকজন বেশ আপ্যায়ন করল।জল,খাবার দিল। ওদের সর্দার বলল 
–‘আমরা ‘লালু’ দল,লাল পোশাক।তোমার ও তো একই মনে হচ্ছে।তুমি তো দলের হে !’

ADVERTISEMENT
Swades Times Book


অতীন্দ্র বেশ মিশে গেল দলের সাথে ! সে লালুদের সাথে খায়-দায়-গান গায়।

ঘোর ভাঙল সকালে।সূর্য উঠতে।সর্দার বলল ওহে বাপু তোমার জামার রং লাল নয় নীল,অতএব তুমি নীলু, থাকো-চলো আমাদের সাথেই কিন্তু একটা অঘোষিত দূরত্ব আমাদের থাকবেই।

হঠাৎ দৈববাণী—

‘সব বৎস চশমা খোলো ’
সবাই চশমা খুলতেই দেখলো সবার জামা সাদা !!

আকাশ ভেদ করে গান বাজতে শুরু করলো রুপম ইসলামের—
“আজ নীল রঙে মিশে গেছে লাল…আজ রং চিনে নেবার আকাল……”

হঠাৎ ঘুমটা ভাঙল ঠাকুমার চিৎকারে
–‘মুখপোড়া ওঠ না রে ! গান বাজাচ্ছিস সাত সকালে’

যাক সব স্বপ্ন ছিল !!

–’ঠাকুমা রোববার একটু ঘুমাতে দাও না !’
–‘তবে গান বাজাচ্ছিস যে বড়!’
–‘কাল এলার্ম অফ করা হয়নি!’
–‘সে হোক তুই ওঠ ভালো খবর আছে !’
–‘কি খবর ঠাকুমা ?’ উঠে বসলো অতীন্দ্র
একটা ফটো এগিয়ে দিল ঠাকুমা, যুবতী মেয়ের ছবি।
–‘কে গো ঠাকুমা ?’
–‘কে বল দেখি ?’
–‘বা রে আমি কি করে জানব ?’
–‘আমার সইয়ের নাতনী, রাজস্থানে থাকে।কিসে যেন MA অতো বুঝিনে বাপু। নাচ, গান জানে কেমন বল দেখি? পছন্দ তো ?’
এইবার আগ্রহ জাগল অতীন্দ্রর বেশ খাসা দেখতে, ভাসা ভাসা চোখ, মিষ্টি হাসি, পরনে নীল সালোয়ার লাল ওড়না, বিনুনি করা চুল ঘাড়ের পাশ দিয়ে নেমে এসেছে…তন্ময় হয়ে গেল অতীন্দ্র।
–‘আমি আর কদ্দিন, যাওয়ার আগে তোদের চারহাত এক করে যেতে পারলেই শান্তি…নইলে মরে ভুত হয়েও শান্তি পাবো না।’
ভুত শুনেই চমকে উঠলো অতীন্দ্র ,কাল রাতের স্বপ্ন-স্মৃতি এখনো তাজা
–‘ইয়ে ঠাকুমা চুল, দাঁত এসব আসল তো ? মানে চুল পড়ে যায়নি,বা বাঁধানো দাঁত নয় তো!’
–‘আ মলো যা মুখপোড়ার কথা দেখো কাঁচা বয়স চুল,দাঁত পড়বে কেন রা ?’
–‘আর সুস্থ তো ? মানে অম্বল, সুগার নেই তো!’
–‘বালাই ষাট! হে জনার্দন অম্বল, হবে কেন রে? বলি কাল রাতে কি খেয়েছিলি? হজম হয়েছে তো? শরীর ঠিক আছে ?’
–‘কিছু না এমনি!’
–ভালো হাতের কাজও জানে দেখবি?’
একটা উলের বোনা আসন দেখালো ঠাকুমা।

খানিক পরে গুবলু এসে উৎপাত শুরু করল।
–‘ছুটিতে আমায় বেড়াতে নিয়ে যাবে কাকাই।’
–‘গুবলু রাজস্থান যাবি?’
–‘কি আছে কাকাই রাজস্থানে?’
–”উট, বালি আরো অনেক কিছু -‘
–‘কি মজা কি মজা !’ আমায় উটে চড়াবে কাকাই?’
–‘হুম। গুবলু ভুতের রাজা সত্যি না রে?’
–‘সত্যি তো যা বলে তাই হয়। তুমি তো আমায় বিশ্বাসই কর না!’
–‘চকলেট খাবি গুবলু?’

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait