বর্ষার গানে ও গল্পে রবীন্দ্রনাথ

বর্ষার গানে ও গল্পে রবীন্দ্রনাথ

বর্ষায় বৃষ্টির গান। বর্ষার টাপুরটুপুর দিনে বর্ষার গান শোনার একটা অন্যরকম মোহমায়া আছে। বর্ষার সঙ্গে বাঙালি মনের মিতালি রবিঠাকুর ছাড়া কার গানেই বা এমন করে পাব। নবীন মেঘের সুর লাগে রবিকবির মনে। তাইতেই তো তাঁর ভাবনা যত উতল হল অকারণে। রবীন্দ্রনাথের ঋতুভিত্তিক গান আছে ২৮৩টি এবং তার মধ্যে ১১৫টি বর্ষার গান। এই নিবন্ধে সেই ১১৫টি থেকে মাত্র কয়েকটি বর্ষার গানের গল্প-ইতিহাস তুলে ধরলাম।

যেতে যেতে একলা পথে নিবেছে মোর বাতি

রচনা; ১২ সেপ্টেম্বর ১৯১৪। বিকেলে সুরুল হইতে শান্তিনিকেতনে। গোরুর গাড়িতে।

ADVERTISEMENT
Tuhu Momo Video Teaser

পড়তে গিয়ে অবাকই লাগে আমাদের –- গোরুর গাড়িতে বসে লেখা কি করে সম্ভব? কিন্তু এমন গান কারও আছে – কোনোটির উপর লেখা আছে ‘ঠিকা গাড়িতে লেখা’, কোনোটি ট্রেনে, কোনোটি এমনকি পালকিতে বসে লেখা। এই সময় রবীন্দ্রনাথ থাকেন সুরুলে, রোজ যাতায়াত করেন শান্তিনিকেতন থেকে।

অমল হোমের স্মৃতিকথা থেকে:

“… গ্রীষ্মের শান্তিনিকেতনে সারাটা দিন দিনেন্দ্রনাথের ‘বেণুকুঞ্জে’ গানে-গল্পে আড্ডা জমিয়েছি কালিদাস নাগ আর আমি। বৈকালিক চা-পর্ব সবে শেষ হয়েছে এমন সময় ঘোর কালবৈশাখী মেঘে ছেয়ে গেল আকাশ। দিকদিগন্ত ধুলোয় ঢেকে ছুটে এল ঝড়। আমরা দেখছি দাঁড়িয়ে বারান্দায়। হঠাৎ দিনদা চেঁচিয়ে উঠলেন–‘ঐ দ্যাখো, রবিদা আসছেন। ‘ দেখি সেই ঝড়ের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ছুটে আসছেন– তাঁর বেশবাস, তাঁর শ্মশ্রুকেশ উড়ছে, জোব্বাটাকে চেপে ধরেছেন বাঁ হাতে, আর ডান হাতে চেপে ধরেছেন চোখের চশমাটা। আরেকটু এগিয়ে আসতেই শুনতে পেলাম গলা ছেড়ে তিনি গাইছেন– মেঘমন্দ্রের সঙ্গে তাঁর কণ্ঠ উঠছে গর্জে– যেতে যেতে একলা পথে।
বারান্দাতে উঠেই বললেন–‘দিনু এই নে’। ঘরে এসে বসে পড়লেন দিনেন্দ্রনাথের ফরাসে। তারপর নামল বৃষ্টি মুষলধারে– আর নামল অজস্র ধারায় কবির ও দিনেন্দ্রনাথের গান। সেদিন খুলে গিয়েছিল কবির কণ্ঠ।

(অমল হোম, পুরুষোত্তম রবীন্দ্রনাথ)  

আজ আকাশের মনের কথা

রচনা; ২৮ জুন ১৯২২। শান্তিনিকেতন।

জনসাধারণের জন্যে রবীন্দ্রনাথের গানের প্রথম জলসা হয় কলকাতায়, ১৯২২ সালে। সেই জলসার জন্য মহড়া দেওয়া অনুষ্টানটি প্রথম পরিবেশিত হয় শান্তিনিকেতনে, ২২শে শ্রাবণ ১৩২৯ তারিখে। তার বিবরণ ছাপা হয়েছিল ভাদ্র-আশ্বিন সংখ্যা শান্তিনিকেতন পত্রিকায়।

শ্রাবণের পূর্ণিমা রজনীতে শিশুবিভাগের নূতন গৃহে ‘বর্ষামঙ্গল’ উৎসব হইয়াছিল। বিশ্বভারতীর কলাবিভাগের অধিনেতা শ্রীযুক্ত নন্দলাল বসু শ্রীযুক্ত সুরেন্দ্রনাথ কর শ্রীযুক্ত অসিতকুমার হালদার তাঁহাদের শিষ্যবর্গ সহ সভাগৃহটিকে পুষ্পপত্রে সুন্দর করিয়া সাজাইয়াছিলেন। পূজনীয় গুরুদেব শ্রীযুক্ত দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর পণ্ডিত ভীমরাও শাস্ত্রী এবং গানের দলের ছাত্রছাত্রীরা বর্ষার অনেকগুলি গান করেন। গুরুদেব একাকী যখন আজ আকাশের মনের কথা ঝরঝর বাজে গানটি গাহিতেছিলেন তখন বাহিরে শ্রাবণের ধারাও রাত্রির অন্ধকারে ঝরঝর ধারে ঝরিতেছিল। মানুষে প্রকৃতিতে মিলিয়া সেদিন যে সন্ধ্যাটির সৃষ্টি হইয়াছিল তাহা দুর্লভ সামগ্রী– জীবনে এমনতর সন্ধ্যা খুব বেশী আসে না।
  

আজ বরষার রূপ হেরি

রচনা; ২৫ জুন ১৯১০। শান্তিনিকেতন।

ওইদিন ভোররাত্রে শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের ছাত্র, রবীন্দ্রনাথের বন্ধু শ্রীশচন্দ্র মজুমদারের পুত্র সরোজচন্দ্র (তার ডাকনাম ছিল ভোলা) অকস্মাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়। ম্যাট্রিক পরীক্ষার্থী সরোজের বয়স ছিল ষোলো। সরোজের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কনিষ্টপুত্র শমীন্দ্রনাথের বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল, তারই মামার বাড়ি মুঙ্গেরে বেড়াতে গিয়ে কলেরায় শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়েছিল তিন বছর আগে। এই মৃত্যু, ও তাতে রবীন্দ্রনাথের প্রতিক্রিয়ার বর্ণনা দিয়েছেন সরোজের সহপাঠী পরে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সুধীররঞ্জন দাস।

“… তখন ম্যাট্রিকুলেশন ক্লাশের আমরা ক’জন লাইব্রেরি-বাড়ির (বর্তমান পাঠভবন দপ্তর) পশ্চিম দেওয়ালের লাগাও নতুন ঘরটিতে থাকতাম। একদিন জ্যোৎস্নায় আকাশ ভরে গিয়েছে – রাত্রে খাওয়া শেষ হলে সুহৃদ ও আমি, আর কে কে বেরিয়ে পড়েছি খেলার মাঠে। … হঠাৎ নজরে পড়ল, আমাদেরই ঘরের সামনে কারা লন্ঠন নিয়ে ছুটোছুটি করছে। … এসে দেখি ভোলা তার বিছানায় বেঁহুশ হয়ে পড়ে আছেন এব গুরুদেব তাঁর পাশে একটা মোড়া না কিসের উপর স্তম্ভিত হয়ে বসে আছেন, নির্নিমেষ চোখে ভোলার দিকে তাকিয়ে। একটা টিপাইয়ের উপর কতগুলি বাইওকেমিক ওষুধের শিশি। একটু পরেই বোলপুর থেকে হরিচরণ ডাক্তারবাবু এসে যখন বুক পিঠ ও নাড়ী পরীক্ষা করে মাথা নেড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, বুঝতে পারলাম যে আমাদের সতীর্থটিকে আমরা হারালাম। গুরুদেবের তন্ময় মুখচ্ছবিতে যে দুঃখ ও করুণার ভাব ফুটে উঠেছিল আজও তা ভুলিনি। ভোলার হঠাৎ কি হল আমরা কিছুই বুঝলাম না, পরেও জানতে পারিনি। মনের মধ্যে বিশেষ করে জাগছিল এই কথাটা, শমী গেলেন ভোলাদের মুঙ্গেরের বাড়ি হতে, আর ভোলা চলে গেলেন গুরুদেবের আশ্রম থেকে। ভোলা ও শমীর মধ্যে বিশেষ প্রীতি ছিল বলেই বোধহয় এই কথাটা বারবার মনে আসছিল। প্রত্যুষে তাঁর দেহ সৎকার করে শ্মশান থেকে যখন সকালে ফিরলাম তখন রোদ উঠে গেছে।

(আমাদের শান্তিনিকেতন – সুধীররঞ্জন দাস)

এই মৃত্যুর দিন (খৃষ্টীয় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেই দিনই, কারণ দিন আরম্ভ হয় রাত্রি বারোটায়) এই গানটি রচিত হয়।

আজ   বারি ঝরে ঝরঝর ভরা বাদরে

রচনা; ৩০ আগষ্ট ১৯০৯। বোলপুর।

শান্তিনিকেতনের প্রথম যুগের বিখ্যাত শিক্ষক তেজেশচন্দ্র সেন (১৮৯৩-১৯৬০) দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এই গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর কথার ভিতর দিয়ে সেকালের শান্তিনিকেতনের ছাত্র ও শিক্ষকের সম্পর্ক এবং স্বতঃস্ফুর্ত আনন্দের পরিমণ্ডলটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে, এবং বোঝা যায় কী পরিবেশের মধ্যে গানের চর্চা করতেন তাঁরা।

“… যেদিন চারিদিক অন্ধকার করে বৃষ্টি নামত, সেদিন আমরা আর ঘরে বসে থাকতে পারতাম না। দল বেঁধে বৃষ্টিতে ভিজতে বের হয়ে পড়তাম। অনেকে হয়ত মনে করবেন – এ আবার কি রকমের কবিত্ব! বৃষ্টিতে ভেজা? এ যে একটু বেশি বাড়াবাড়ি! কিন্তু তারা জানেন না এখানকার বর্ষা কি জিনিস। চারিদিকের খোলা মাঠের বর্ষা যে মোটের কলকাতার শহুরে বর্ষা নয়, তা না দেখলে বোঝা শক্ত। এখানকার বর্ষা সকলকে যেন হাত বাড়িয়ে ডাকতে থাকে, ‘চল, চল, ভিজতে চল’। আমাদের সে ডাকে সাড়া না দিয়ে উপায় ছিল না। হুড়মুড় করে, ছেলে শিক্ষক সকলে মিলে বের হয়ে পড়তাম। যে ঘরে বসে থাকত তাকেও টেনে বের করে নিতাম। দিনুবাবুকেও আমরা ছাড়তাম না। প্রথম তিনি মুখে একটু আপত্তি করতেন; কিন্তু সে আপত্তি কে শোনে? তাঁকে সঙ্গে করে না নিলে কি আর মজা হয়? বিশেষত বৃষ্টিতে ভেজবার মত মজা? ছেলেরা কেউ ধরত তাঁর হাতে, কেউ ধরত তাঁর কোমরে। তখন হৈ হৈ করে তাদের থামিয়ে দিয়ে তিনি বৃষ্টিতে নেমে পড়তেন। তারপর সে কি উৎসাহ। মাঠে পড়েই গান আরম্ভ হত “আজ বারি ঝরে ঝর ঝর ভরা বাদরে”। আমাদের দলে তখন অ-সুরের দলও অনেক থাকত। দিনুবাবু প্রাণপনে তাদের থামাতে চেষ্টা করতেন। গানের মধ্যে বেসুর তিনি মোটেই সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু সে উৎসাহের মধ্যে সুর-বেসুরের জ্ঞান কি আমাদের থাকত? শুধু গানই নয় – তালে বেতালে ধেই ধেই করে নাচও শুরু হত”।

(দিনেন্দ্র স্মৃতি; তেজেশচন্দ্র সেন)

আজি     ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার

রচনা; বর্ষা ১৯০৯। শিলাইদহ। ‘পদ্মা’ বোটে।

তারকনাথ লাহিড়ি [শান্তিনিকেতনের প্রাক্তনী] লিখছেন: “সেটা ১৯১১  সাল হবে– বর্ষামঙ্গল হবে কলকাতায়। প্রথমদিন জোড়াসাঁকোতে গুরুদেব তাঁর উদাত্ত কণ্ঠে আবৃত্তি করলেন। অনুষ্ঠানের একটি গান যখন সবে শেষ হয়েছে শ্রোতাদের মধ্যে থেকে একজন উঠে দাঁড়ালেন। স্টেজ থেকে প্রেক্ষাগৃহের অস্পষ্ট আলোকে তাঁকে দেখা গিয়েছিল। প্রায় শেষের সারিতে বসেছিলেন। জোড়করে তিনি বললেন, ‘আজ এই সুধীজন সমাগমে আমার ভিক্ষার ঝুলি কি পূর্ণ হবে না?’ গানের দলে আমরা বসে; মনে করলাম– তখন উত্তরবঙ্গে প্লাবন– বোধহয় সেখানকার দুর্গতদের জন্যই তিনি সাহায্য্প্রার্থী। গুরুদেব  উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আপনার আবেদন জানতে পারলে, সাধ্যাতীত না হলে, আমি তা মেটাবার চেষ্টা করব। ‘ দর্শক তখন জোড়হস্তে বললেন, ‘আমি কবির নিজের কণ্ঠের একটি গান শুনতে চাই। ‘ গুরুদেব বললেন, ‘পশ্চিমে গিয়ে আমার কণ্ঠ এবারে হারিয়ে এসেছি– তবুও আপনার ইচ্ছা পূর্ণ করব। ‘ তিনি গাইলেন, ‘ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার। ‘ স্তম্ভিত সমস্ত শ্রোতা, এই কি হারিয়ে যাওয়া কণ্ঠ?”
রবীন্দ্রনাথের নিমন্ত্রণে একবার শিলাইদহে তাঁর কাছে গিয়েছিলাম। তিনি তখন কাছারীর পরপারের চরের গায়ে বজরা বেঁধে বাস করছিলেন। দুখানি বজরা পাশাপাশি বাঁধা, একখানিতে কবি নিজে বাস করেন, আর অন্যখানিতে অজিতকুমার [চক্রবর্তী– শান্তিনিকেতনের প্রথম যুগের শিক্ষক] পীড়িত হয়ে স্বাস্থ্যসঞ্চয়ের জন্য বাস করছিলেন। আমি অজিতের বজরায় বাসা পেলাম।…
সন্ধ্যার সময় খুব ঝড়জল আরম্ভ হল। কবি বললেন, অজিত, অতিথির সম্বর্ধনা করো, গান ধরো। কবি গান ধরলেন, অজিত সঙ্গে যোগ দিলেন:

আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার

কোথায় আলো, কোথায় ওরে আলো

এই দুটি গান’ই আমি ‘প্রবাসী’র জন্যে নিয়ে এসেছিলাম, এবং কবির হাতে লেখা কাগজের টুকরো দুটি এখনো আমার কাছে আছে।  

(চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, রবিরশ্মি) 


আজি   ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে

প্রথম প্রকাশ; শরৎ ১৯৩৯

[‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে’] এই গানটি বেহাগের ওপর লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। এটি খুব জনপ্রিয় গান। গানটির সত্যিকারের সুরটা একটু ধীরে, একটু নরম, উদ্দীপনা বেশি নেই।

শৈলজারঞ্জন মজুমদারের স্মৃতিকথা থেকে:

… ষষ্ঠী তালে কাফি ঠাটে মীড়ের উপর মোলায়েম সুরে মধ্যলয়ে তৈরি এই গানটি রচনা করে গুরুদেব যথারীতি শেখালেন। আমি স্বরলিপি করে নিলাম।

এরপরে গুরুদেবের মনে হল, এই গান ছেলেমেয়েরা হয়ত উৎসাহ নিয়ে গাইবে না, এই গানটি হয়ত তাদের কাছে ভারি ঠেকবে, সুতরাং এটাকে হালকা করার জন্য সুর আর ছন্দের পরিবর্তন করলেন। কথারও সামান্য পরিবর্তন হল। ছিল “উদাসী মেঘে”, করলেন “উদভ্রান্ত মেঘে”। সুরের [তালের?] পরিবর্তন করে হল জলদ কাহারবা। সুর পরিবর্তন করায় আমি আপত্তি জানিয়েছিলাম, গুরুদেব বলেছিলেন – এই সুর ছেলেমেয়েদের বেশি ভাল লাগবে। ছেলেমেয়েদের যখন শোনানো হল তখন তারা জলদ কাহারবাই পছন্দ করল। তখন ওদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে উনি বললেন – আমি কিন্তু তোদের সঙ্গে একমত, কিন্তু ও কিছুতেই সে কথা  মানবে না।

গানটা শুনতে শুনতে গুরুদেব “উদ্‌ভ্রান্ত মেঘে”-র জায়গার সুরটা আরও চড়িয়ে দেবার প্রস্তাব করলেন। আমি তাঁর উত্তরে বললাম – অন্তরা তো দুবার গাইবার রীতি আছে, প্রথমবার নিচু সুরে গাওয়া হোক, দ্বিতীয়বার চড়া সুরে গাইলে ইতিহাসে থেকে যাবে –

আমার এই অনুরোধ রবীন্দ্রনাথ সোৎসাহে মেনে নিয়েছিলেন। আজ পর্যন্ত এই রীতিতেই গানটি গাওয়া হয়ে আসছে।…

(যাত্রাপথের আনন্দগান)

মেঘের কোলে রোদ হেসেছেবাদল গেছে টুটি

প্রথম প্রকাশ; শরৎ ১৯০৮

শারোদৎসব নাটকের সময় থেকে শান্তিনিকেতনে গানের সঙ্গে নাচের প্রচলন আরম্ভ হল একটু একটু করে, ১৯০৮ সালে। নাচের সেই প্রথম যুগের কথা লিখেছেন ক্ষিতিমোহন সেনের কন্যা অমিতা সেন:

“… মনে পড়ে আমাদের শারদোৎসবের মহড়া প্রথম দিকে শুরু হয়েছিল দ্বারিক বাড়ির দোতলায়। দিনুদা রোজ গানগুলি শেখাতেন – গানে অভিনয় করতেও প্রথম দিকে তিনিই শেখাতেন। তারপর রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং উপস্থিত থেকে আনন্দের ভাব প্রকাশ করে দাঁড়িয়ে উঠে গানগুলি আমাদের সঙ্গে গাইতেন। … যখন গাইতাম –

কেয়া-পাতার নৌকো গড়ে সাজিয়ে দেব ফুলে–
তালদিঘিতে ভাসিয়ে দেব, চলবে দুলে দুলে।

তখন রবীন্দ্রনাথ নিজে গাইতে গাইতে দেখাতেন দু’হাতে কেয়াপাতার নৌকো গড়ার ভঙ্গি, তারপর বাঁ হাতে যেন নৌকোটি ধরে দোলাতে দোলাতে গান গাইছেন ‘চলবে দুলে দুলে’। এই ভাবেই অল্প অল্প করে ভাবের নৃত্য শিখেছি আমরা তাঁরই কাছে।… বাউলের ঢং-এ ভাবেরই নাচ করতাম আমরা, কারো নাচের সঙ্গে কারো নাচের মিলের প্রয়োজন হত না. সকলেই যার যার মতো করে আনন্দ প্রকাশ করতাম। রবীন্দ্রনাথ আমাদের সঙ্গে গাইতে গাইতে আনন্দে মেতে উঠতেন।    

(অমিতা সেন, নৃত্যরচনায় রবীন্দ্রনাথ, শারদীয় যুগান্তর, ১৩৮৮) 

ঋণ: রবীন্দ্রজীবনী; প্রশান্ত কুমার পাল। গীতবিতান। অমিতা সেন। যাত্রাপথের আনন্দগান। দিনেন্দ্র স্মৃতি। আমাদের শান্তিনিকেতন।

 

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait