বিনোদন ডেস্ক: বাংলার নবজাগরণের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শেক্সপিয়র চর্চা। গিরিশচন্দ্র ঘোষের কলমেই ‘ম্যাকবেথ’-এর প্রথম সার্থক অনুবাদ পেয়েছিল বাঙালি। কাছাকাছি সময়ে শুরু হয়েছিল রূপান্তরের প্রয়াসও। ইতিহাস ঘাঁটলে মেলে ‘রুদ্রপাল’ (১৮৭৪), ‘কর্ণবীর’ (১৮৮৫)-এর নামও। নতুন সহস্রাব্দে এসে সেই তালিকায় জুড়ে গেল ‘মন্দার’। গত সপ্তাহে ট্রেলার মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই প্রত্যাশা জেগেছিল। প্রথম পরীক্ষাতেই দারুণ ভাবে সফল অনির্বাণ। বাংলা ওয়েব সিরিজে এমন ঝকঝকে প্রোডাকশন নিঃসন্দেহে এমন ক্লাসিকের পুনর্নিমাণে উৎসাহিত করবে অন্যদেরও। ওটিটি মঞ্চে দেখা মিলল শেক্সপিয়রের। ‘হইচই’ প্ল্যাটফর্মে ম্যাকবেথ ফিরল ‘মন্দার’ হয়ে।
গেইলপুর এক প্রান্তিক জনপদ। তার শরীরের সর্বত্র সমুদ্রের নোনা শ্বাস। এখানকার ‘রাজা’ ডাবলু ভাই। মাছের ভেড়ির একচেটিয়া মালিকানা তার হাতে। তার দুই বিশ্বস্ত অনুচর মন্দার ও বঙ্কা। শেক্সপিয়রের নাটকের গল্প যাদের জানা, তারা জানে রাজমুকুট হাতাতে ম্যাকবেথ খুন করেছিল ডানকানকে। এখানেও একই ভাবে ডাবলু ভাইকে খুন করে সে নিজের হাতে নেয় মাছের ভেড়ির রাজপাট। মাথার মুকুট কীভাবে কাঁটার মুকুট হয়ে উঠল, কোন ভবিতব্য অপেক্ষা করে রইল রক্ত-ক্লেদ-ঘামের ফাঁদে পড়ে থাকা মন্দারের জন্য, তা তো নাটকটির পাঠক মাত্রই জানবেন। অবশ্য অনির্বাণ নাটকটিকে হুবহু অনুসরণ করেননি। বহু জায়গাই নিজের মতো বদলেছেন, এনেছেন নতুন চরিত্র। তাই যাঁরা নাটকটি পড়েননি তাঁদের তো বটেই, যাঁরা পড়েছেন তাঁদের জন্য়ও রয়েছে বহু চমক। একই ভাবে বদলে গিয়েছে শেষও। সেটা কেমন, স্বাভাবিক ভাবেই স্পয়লার থেকে বাঁচতে তা বলা যাবে না। ছবিতে অনির্বাণের চরিত্রটিও নতুন সংযোজন। গোটা গেইলপুরে সে এক মূর্তিমান ব্যতিক্রম। বাকিদের কথায় যখন আঞ্চলিক বাংলা ভাষার স্পষ্ট আদল, সেখানে পুলিশ অফিসার মুকাদ্দর শুরু থেকেই ইংরেজিতে কথা বলতে থাকে। তার বাংলাও একেবারে ‘পালিশ’ করা। চরিত্রটি ধীরে ধীরে প্রবেশ করে কাহিনিতে। নিজের জন্য চরিত্রটি পরিপাটি করেই তৈরি করেছেন অনির্বাণ। কিন্তু তবুও মনে হয়, মোটামুটি শুরু থেকেই তাকে যেমন আন্দাজ করা হয়েছিল, তার মধ্যেই আবদ্ধ থেকে গেল সে। শেষ পর্যন্ত যেন আরও কিছু প্রত্যাশা ছিল চরিত্রটির কাছে।
ADVERTISEMENT
অভিনয়ের সঙ্গেই এসে পড়ে সিনেমাটোগ্রাফির কথা। সৌমিক হালদারের দুরন্ত ক্যামেরার সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের। সারাক্ষণ একটা টানটান, কী হয় কী হয় ভাব বজায় রাখতে যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। অত্যন্ত যত্নে প্রতিটি ফ্রেম তৈরি করা হয়েছে। রয়েছে নানা প্রতীকের ব্যবহার। বিড়াল কিংবা মাছের মতো নানা প্রতীককে ঘুরেফিরে দেখানো হয়েছে। ক্ষমতার লাল রংকে বোঝাতে মন্দারকে পরানো হয়েছে লাল সানগ্লাস। এরকম অজস্র উদাহরণ রয়েছে। এক দৃশ্যে সানগ্লাস পরিহিত মন্দারের পাশেই একটি ম্যানকুইনকে যেভাবে ফুটিয়ে তোলা হয় কিংবা ক্লোজ আপে পাঁঠার মাংস কাটার সমান্তরালে যৌনতার দৃশ্য ফুটে ওঠে, তা বুঝিয়ে দেয় কীভাবে পরতে পরতে বোনা হয়েছে প্রতিটি দৃশ্যকে। অভিনয়, ক্যামেরা ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের ত্রহ্যস্পর্শেই তা সম্ভব হয়।
0 comments