যত মত তত পথ

যত মত তত পথ

বহু বিতর্কিত অযোধ্যা মামলার নিষ্পত্তি হল। সব পক্ষের কথা মাথায় রেখে একটি ঐতিহাসিক রায় দান করেছেন মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট। ভারতবর্ষের বুকে দাঁড়িয়ে বর্তমান আবহে এই রায় দান খুব একটা সহজ কাজ ছিল না।

 

 

বহুকাল ধরে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এই ভারতের বুকে আশ্রয় খুঁজে শান্তিতে বসবাস করেছেন এবং করে আসছেন। ভারতবর্ষের ঐতিহ্য ও ইতিহাস প্রায় দশ হাজার বছরের। পৃথিবীর বহু দেশ যখন সভ্যতা বলে কোনওকিছু জানত না তখন ভারতবর্ষে বেদ পুরান রামায়ণ ও মহাভারত রচিত হয়েছে। এগুলো কোনও কিছুই কাল্পনিক তো নয়ই, বরং বিজ্ঞান ও সাহিত্যের মিলিত সর্বোত্তম রূপ। এই ভারতভূমে নদীতীরবর্তী অঞ্চলে বহু মন্দির ও উপসনালয় গড়ে উঠেছে। তা নিয়ে রচিত হয়েছে অজস্র সাহিত্য। এ তো শুধু মন্দির বা মসজিদ নয়, এ হল জীবন্ত ইতিহাস। কালের গরিমা মানুষ মুছে দেবে, এ সাধ্যাতীত। সমস্ত অতীত গৌরব নিয়ে সেই দলিল আবার একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই। এই ভারতেই কাশি বিশ্বনাথ মন্দিরে কান পাতলে আজও শোনা যাবে বিসমিল্লা খাঁ এর সানাই এর মূর্ছনা। এই ভারতেই ফতেপুর সিক্রির অলিন্দে ঘুরতে ঘুরতে আপনার মনে হবে ওই তো, তানসেন ধরেছেন শাহী রাগসঙ্গীত, বাদশা আকবর শুনছেন তন্ময় হয়ে। এই সেই ভারত যেখানে প্রতি বছর অমরনাথ ও কেদারনাথ তীর্থযাত্রীদের মুখে জল ও খাবার তুলে দেওয়ার জন্য সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসেন অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ। আবার মসজিদ ভেঙ্গে পড়লে স্থানীয় সব সম্প্রদায়ের মানুষ চাঁদা তুলে গড়ে দেন ঈশ্বরের ঘর। এটাই প্রকৃত ভারত, আমার স্বদেশ। যে নিঃস্ব রিক্ত সব হারানো মানুষকে কখনো ফেরায় না। না অতীতে,না আজও। এই ভারতবর্ষকে কালিমালিপ্ত কিছু মুষ্টিমেয় মানুষ কখনই করতে পারেনি,আজও পারবে না।

ADVERTISEMENT
Swades Times Book

ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব নিজ জীবনে শুধু পরধর্ম সহিষ্ণুতার কথা বলে গেছেন তাই নয়, সমস্ত ধর্মকে অভ্যেস করে তিনি দেখিয়ে গেছেন যে আমরা যে পথ দিয়েই যাই না কেন, আন্তরিক হয়ে ডাকলে পাব তাঁকেই। তাঁকেই আমরা কখনো বলব রাম, কখনো কৃষ্ণ, কখনো কালী, কখনো বুদ্ধ, কখনো চৈতন্য, কখনো মহম্মদ, কখনো বা খৃষ্ট। আর এই সমস্ত মহামানবের বাণী আমরা সাম্প্রদায়িক করে ফেললাম বলেই এবারে এলেন ‘এক’ আধারে, পতিতপাবন দীনতারণ দয়াল ঠাকুর হয়ে। মানুষকে বোঝানোর জন্য যে তিনিই সব হয়েছেন। বললেন,”যত মত তত পথ”! তাঁর মা কে ডেকে কেঁদে কেঁদে বললেন, মা রে,সবাই ভাবে নিজের ঘড়ি ঠিক ঠিক চলছে, কেউ তোর কথা ভাবে কই? আজ সময় এসেছে তাঁর বাণীকে মহামন্ত্র করে এগিয়ে চলার। আজকের রায় কিন্তু কোথাও না কোথাও সেই যত মত তত পথেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছে বলে মনে হয়।

জয় ঠাকুর। তব কৃপা হি কেবলম! তুমি মম মন প্রাণ হে!

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait