শব্দহীন গভীর দিন এক সময় আমরা কাটিয়েছি। সব বন্ধ, সব অন্ধকার, শুধু টিভিতে রিপিট টেলিকাস্ট চলছে আর আসছে আপডেট। এই নববর্ষটা আমাদের সেই শব্দহীন, বর্ণহীন বছরটাকেই না হয় উপহার দিই । যে বছরটা নতুন করে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে প্রচুর ভালবাসা নিয়ে হাজির। মনে প্রাণে চাইছি, যারা অনাদরে পড়ে থাকেন বছরভর, বছর শুরুর দিনটায় অন্তত তাদের আদর জটুক! আমি ভালবাসা আর আদর নিয়ে আসলে একটু বেশিই ভাবি ! অবশ্য কাজ কথা সব সময় এক হয় না, এও বড় সত্যি! তবুও যারা ভাবতে পারেন,ভেবে শান্তি পেতে পারেন তাদের কাজে করার দরকার হয় না! তারা কেন খামোখা কাজ করবেন বলতে পারেন ? কিন্তু নববর্ষে তো আমাদের কাজ করার অঙ্গীকারই করতে হবে। কাজের কাজ করতে হবে। আমরা জানি অভাব দরজায় কলিং বেল বাজালেই ভালবাসা নামের মিথ জানলা দিয়ে উধাও হয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কাজ করবে কে? কাজ করবে সেই পুরনো আমিটা, আমার হামিটা। কাজের সঙ্গে কাজের হামি। হামি বড় দরকারী জীবনে! আজকে যত যাই হোক এই নববর্ষের প্রথম দিনে আমরা একটু বেশিই আনন্দিত, একটু বেশিই উৎফুল্ল।  বেশ ফুর্তির মেজাজ। 

 

ADVERTISEMENT

 

ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে। ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে পুবের জানলা দিয়ে। পূবের জানলা দিয়েও ফুরফুরে হাওয়া দেয়, শুধু দক্ষিণে হাওয়া দেয় না। আমাদের বয়স বাড়ে কমে। আর আমরা একটা করে নতুন নতুন বছরে সেই পুরনো আমিটাকে বয়ে বয়ে নিয়ে চলি। যার কথা বলছিলাম... কাজ করবে সে। কাজ অনেক। কাজ গাছের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে, কাজ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে, কাজ আমাদের ঘিরে থাকে, কাজ বোধের ভেতরে থাকে! কর্মময়তায় ভরে উঠুক জীবন। কর্মহীনতা কেটে যাক।
আসলে কাজেই তো আনন্দ। কাজেই তো অর্থ। খুব বাস্তব কঠিন মাটিতে দাঁড়িয়ে আপনি যদি বীরভূম যান, বাঁকুড়া যান বা পুরুলিয়া, মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় দেখবেন গত দুটো বছরে গরিবী বেড়েছে সেখানে। বেড়েছে কর্মহীনতা। এবার সেই কর্মহীনতাটা কেটে যাক। আমরা যারা যেখানে যেখানে একটু একটু করে ভাল আছি, আমরা আর একটু একটু করে ভাল থাকার চেষ্টা করি। ভাল যে থাকতেই হবে। ভাল থাকাটাই তো টার্গেট! সে জন্যই তো এত কিছু‌র আয়োজন। এই যে লিখতে বসেছি, সেটাও তো আমার কাছে এক রকম ভাল থাকা। আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। আপনারা কারা পড়ছেন জানি না,  তবে এখনও পর্যন্ত কিন্তু রেসপন্সিভ কমেন্ট আসছে না! আফসোস বাড়ছে! আসলে কোনও কৃত্রিম পাঠক চাইছি না, কৃত্রিম ভিড় চাইছি না আমি। আমরা কথা বলছি, একে অন্যকে সাড়া দেবো  বলে। একটা জার্নি হোক না! নাম হোক আ সাইলেন্ট সলিটারি ট্রিপ! অথবা শিরোনামেই হোক আমাদের পরিচয়, আমাদের যাত্রা...। 
বিরোধাভাস অলংকারের কথা মাথায় রেখেই বলি, যদিও এটা কাব্য নয় তবুও...।  আমাদের যাত্রা তো আসলে এক মৃত্যু থেকে আর এক মৃত্যুর দিকে। আমরা আমাদের জন্মের আগেও ছিলাম না আর মৃত্যুর পরও থাকব না৷ এই না থাকাটাই তো দীর্ঘ সময়ের ! তবুও যে ক'টা দিন আমরা আছি, একটু হলেও ভাল আছি, আগে পরের কথা জানি না, এই মুহূর্তে অন্তত ভাল থাকি। প্রাণ ভরে বাঁচি! সমস্ত কর্মহীনতা কেটে যাক। প্রত্যেকের জীবনে আলো ফুটে উঠুক। আমরা সবাই সবাইকার হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যাই, ‌আলোর দিকে হেঁটে যাই। 

 

 

'ও আলোর পথযাত্রী এ যে রাত্রি এখানে থেমো না'- এ কথা হ‌য়তো বলতে পারছি না। কারণ যন্ত্রণা থেকে যাচ্ছে। যন্ত্রণা থেকে যাচ্ছে কয়েকশো টাকার জামার গায়ে, কয়েকশো টাকার খাবারের গন্ধে, কয়েকশো টাকার আরও অনেক অনেক কিছুতে। শুধুমাত্র কয়েকশো টাকা আমাদেরকে সত্যিই ভাল রাখছে! কয়েকটা কাগজের টুকরো, কয়েকটা সংখ্যা সত্যি আমাদের প্রাত্যহিক জীবন বদলে দিচ্ছে!
ভেসে যায় সময়, ভেসে যায় মানুষ । দেশান্তরী হয়। দেশে-দেশে, দিশে-দিশে লেখা হয় নানান জীবন কাহিনি। জীবন জীবনের দিকে এগিয়ে চলে, মানুষ বারবার দেশান্তরী হয়, নিজের দেশেও। প্রতিদিন দেশান্তরী হয়। এই প্রতিদিন দেশান্তরী হওয়ার মধ্যে মানুষের আসলে কী চাহিদা? আসলে কী চাই আমরা? কেন দেশান্তরী হই? শুধুই কি কর্মময়তা? যে কাজের কথা শুরুতে বলছিলাম, সেই কাজই কি শুধু দেশান্তরী হওয়ার নেপথ্যে? না, তা নয় বোধহয় ! আমার মনে হয় পৃথিবীতে মানুষ দুটো কারণে সব, সব কিছু করে... এক, 'আমাকে দেখুন' আর দুই, 'ও কেন পাবে' ! এই 'আমাকে দেখুন' আর 'ও কেন পাবে' খুব নেগেটিভ শব্দবন্ধ বলে মনে হতে পারে কারুর কারুর, কিন্তু একটু সচেতন ভাবে, নিরপেক্ষতা বলে কিছু হয় বলে আমি বিশ্বাস করি না, তাই 'নিরপেক্ষ ভাবে' ভেবে দেখতে বললাম না, 'সচেতন ভাবে' ভেবে দেখলে বুঝতে পারব, আমরা আসলে আমাদের নিজেদের যেটুকু পরিচিতি, যেটুকু জানা-চেনা, সেখানে মাথা উঁচিয়ে, বুক চিতিয়ে, সোজা চোখে চোখ রেখে বাঁচতে চাই। বলতে পারেন নোটিশেবল্ হতে চাই! 
নোটিশেবল্ হতে চাই, কারণ, ওই যে বললাম,' আমাকে দেখুন' ওই জন্যেই। খুব ভাল করে ভাবলে পরিস্কার বুঝতে পারব, এই যে, 'ও যেটা পাচ্ছে আমি কেন পাবো না, ও-ই কেন পাবে' এই ধারনার পিছনে কিন্তু লুকিয়ে আমাদের জীবনের যাবতীয় উত্তরণের গল্প। এই সমস্ত শব্দবন্ধ, ভাবনা, আসলে সমস্ত কিছুই বড় আপেক্ষিক! আমাদের সমস্ত পজ়িটিভিটি, সমস্ত নেগেটিভিটি সবই তো আপেক্ষিক। আসলে যেখানে আমাদের বেঁচে থাকাটাই আপেক্ষিক, আমাদের থাকাটাই আপেক্ষিক এবং অনিশ্চিত সেখানে বাকি সব কিছুকে নিশ্চিত বলে ধরে নেওয়ার থেকে বড় বোকামি বুঝি আর কিছুই নেই! 

 

 

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, জলের সঙ্গে সঙ্গে, হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, আরও অনেক, অনেক কিছুর সঙ্গে সঙ্গে আরও একটা নতুন বাংলা বছর। এ দিনটা বাঙালির আরও একটু বেশি করে বাঙালি হওয়ার চেষ্টা মাত্র। পাঞ্জাবি-ধুতি-কাপড়- পোশাকের মধ্যে ছেপে ছেপে রং, ছেপে ছেপে সং সাজি আমরা! আমরা সে দিন সঙই সাজি...আসলে এই নববর্ষে একটাই প্রার্থনা। কর্মময়তায় ভরে উঠুক জীবন। জীবন আমাদের বরং জীবনমুখী করে তুলুক। মৃত্যু নামক যে নিশ্চিত যানে আমাদের চাপতেই হবে । সেই অন্তিম যাত্রাই আমাদের প্রকৃত যাত্রা।  যে যাত্রার অপেক্ষায় আমরা প্রতিদিন রাতে শুতে যাই, সে যাত্রা সময়ে শুরু করি, অসময়ে নয়, অগ্রীম নয়। জীবনের জয় হোক, জয় হোক সমস্ত মানুষের। শুভ চিন্তা জেগে থাক-  সমস্ত খারাপ থাকা, খারাপ লাগা, যা কিছু আমাদের খুব খারাপ রাখে সে সমস্ত ছুঁয়ে যাক। আনন্দ ছুঁয়ে থাক, সমৃদ্ধি ছুঁয়ে থাক, আদর ছুঁয়ে থাক জীবনকে। ভাল থাকুন সকলে, শুভ নববর্ষ!

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait