দশমী মানেই নয় বিজয়া গমন – একাদশীতে দেবীর আবার বোধন! কোথায় ঘটে এই ঘটনা?

দশমী মানেই নয় বিজয়া গমন – একাদশীতে দেবীর আবার বোধন! কোথায় ঘটে এই ঘটনা?

দশমী মানেই মা দুর্গা কৈলাসে পতিগৃহে যাত্রা করলেন এই ধারণায় বিশ্বাসী নন আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া পূর্ব ভোলার ডাবরি গ্রামের বাসিন্দারাতারা বিশ্বাস করেন বাপের বাড়িতে আরও একদিন অন্যররূপে থাকার অনুমতি পেয়েছিলেন মা দুর্গাতাই এই গ্রামে দুর্গার আরেক রূপ ভান্ডানি রূপে পুজিত হন মা দুর্গাবাপের বাড়ি থেকে ফিরে যাওয়ার পথে গ্রামের মানুষেরা ক্রন্দনরত দুর্গার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন এই গ্রামের মানুষেরা

ADVERTISEMENT
Swades Times Book

আর এক গল্পে আছে, মা দুর্গা কৈলাসে ফিরে যাওয়ার পরে মর্ত্যে কেমন পুজো পেলেন, তা জানতে চাইলেন শিবউত্তর মা দুর্গা বলেন, ‘মানুষ ভক্তি ভরে আমার পুজো করেছেসেই কারণে কৈলাসে ফিরেও মা দুর্গার মন দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে ছিলতাই মা দুর্গা আবার মর্ত্যে ফিরে আসেনমা দুর্গা হিমালয়ের পাদদেশে একদল বালককে বাঘের ভয় দেখানবালকেরা ভয় পেয়ে মা দুর্গার পুজোর আয়োজন করেএরপর মা দুর্গা আবার ফিরে যান কৈলাসেলোককথা অনুযায়ী মাভন্ডামিকরে পুজো নেন বলে এই পুজোকে ভান্ডানি পুজো বলা হয়মা ভান্ডানি বাঘের পিঠে বসে আছেনসঙ্গে আছেন কার্তিক, গনেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীমা ভান্ডানি বাঘের পিঠে চড়ে অসুর বধ করছেনমা ভান্ডানির প্রতিমা বিসর্জন করা হয় না

গল্পে যা- থাক না কেন, উত্তরবঙ্গে রাজবংশী সম্প্রদায়ের আরাধ্যদেবী মা ভান্ডানি হলেন বনদুর্গামা ভান্ডানির পুজা করা হয় দুর্গাপুজার পরে একাদশীর দিনউত্তরবঙ্গের ময়নাগুড়ির বার্নিশ, মেখলিগঞ্জ, মাথাভাঙা, রানিরহাট, খয়েরকাটা, নাগরাকাটা-সহ অন্যান্য জায়গাতেও মা ভান্ডানির পুজো করা হয়একাদশীতে যখন পুজো শেষ হওয়া গোটা বাংলায় বিষণ্ণতার সুর, তখন অন্য এক দুর্গা পুজো শুরুর আনন্দ জলপাইগুড়ি জেলার একাংশে

তাই আধুনিকতা কেড়ে নিতে পারেনি এই প্রাচীন গোষ্ঠী জীবনের পরম্পরাসেই কারণে স্বমহিমায় তিস্তা পাড়ের মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভুত রাজবংশী সমাজের শস্য রক্ষার দেবী ভান্ডানিএকাদশী তিথি মঙ্গলবার থেকে ওই দেবী আরাধনাকে ঘিরে উত্তরবঙ্গে শুরু হয় অন্য এক শারদ উত্সব

শিলিগুড়ি, কোচবিহার এবং উত্তর দিনাজপুর থেকেও প্রচুর মানুষ এখানে ভিড় করেনকোথাও একাদশী থেকে তিন দিন, আবার কোথাও লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন ভাবে দেবী ভান্ডানির কাছে শস্যরক্ষা সমাজের মঙ্গল কামনা করেন রাজবংশী চাষি পরিবারের লোকজনদেবী ভান্ডানি দ্বিভূজা ব্যাঘ্রবাহিনীরক্তিম বর্ণতিনি পশ্চিম মুখে বসেনসময়ের সঙ্গে নানা এলাকায় দেবীর গড়নে পরিবর্তন এসেছেএই ভাবেই কোথাও বাহন কখনও বাঘ হয়েছেকখনও সিংহকোথাও দেবী দ্বিভূজা, কোথাও চতুর্ভুজা ভাবনাও পাল্টেছেশস্য রক্ষার দেবীকে দুর্গা অথবা বনদুর্গা রূপে কল্পনার চল হয়েছেরাজবংশী পরিবারের ভাষায় ভান্ডানিকে দেবী দুর্গা কল্পনা করা হলেও, তিনি আদতে শস্যের দেবীশব্দটির উত্ ভাণ্ডার শব্দ থেকেযেমন, শস্য ভাণ্ডারতাই ওই দেবী যে শস্য ভাণ্ডার রক্ষার দেবী সেই বিষয়ে বিতর্ক থাকার কথা নয়

এমনকি মা ভান্ডানি ধন ঐশ্বর্যের দেবীএকাদশীতে দিনভর মা ভান্ডানির পুজা করা হয়ভোরবেলা থেকে পুণ্যার্থীরা বাতাসা, দুধ, কলা দিয়ে পুজো দেনমোমবাতি ধূপকাঠি জ্বালিয়ে দেবীর আরাধনা করা হয়দেবীর নামে পায়রা উড়িয়ে দেওয়ার রীতি আছেমা ভান্ডানির পুজোতে প্রচুর পাঁঠা বলি দেওয়া হয়পুজো উপলক্ষে মেলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়বিজয়ায় মা দুর্গার বিসর্জনের পরে মন খারাপ কাটাতে প্রচুর মানুষ ভিড় জমান মা ভান্ডানিকে দর্শন করতেভান্ডানী পুজাকে নিয়ে সমাজতত্ববিদেরা বলে থাকেন যে, উত্তরবঙ্গের এই সমস্ত অঞ্চল ৬০ বছর আগেও জঙ্গলে ভরা ছিলঅরণ্যে বন্যজন্তু বিশেষ করে বাঘের ভয় ছিলযে কারণে বন্যজন্তুর হাত থেকে রেহাই পেতেই জঙ্গলে ঘেরা এই অঞ্চলের মানুষজন লোকদেবী হিসেবে ভান্ডানী দেবীর পুজো আরম্ভ করেছিলেনএখানে দেবী অরণ্যচারী লোকদেবীরুপেই বছরের পর বছর ভান্ডানী হিসেবে পুজিত হয়ে আসছেনআবার আর একটি প্রচলতি মত হল, এই অঞ্চলের মানুষ নিজেদের শস্য ভান্ডার সবুজ ফসলে পরিপূর্ণ করার উদ্দেশ্যেই ভান্ডানী দেবীর পুজার প্রচলন শুরু করেছিলেনযে রীতি আজও চলে আসছে

 

সূত্র: ইন্টারনেট

ছবি সৌজন্য- FirstPost


0 comments

Illora Chattopadhyay

Illora Chattopadhyay

Shared publicly - 30th Oct, 20 03:35 am

অনবদ্য

Madhumita Ghosh

Madhumita Ghosh

Shared publicly - 27th Oct, 20 12:18 pm

darun bes

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait