রথযাত্রা

রথযাত্রা

রথস্থ বাম নং দৃষ্টে পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে”।।

অর্থাৎ রথারূঢ় জগন্নাথদেবকে দর্শন করলে মানব পুনর্জন্ম এর চক্র থেকে মুক্ত হয়ে যায়।

আষাঢ় মাসে এই রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বলা হয় বাসুকি নাগ জগন্নাথদেবের রথের রজ্জু। কিন্তু রথারূঢ় জগন্নাথদেবকে দেখলে যে আর পুনর্জন্ম হয় না বলা হয়, এর প্রকৃত অর্থ কি? আসলে জীব তার কর্মফল অনুযায়ী এই পৃথিবীতে বিভিন্ন যোনিতে জন্মলাভ করে অশেষ দুঃখকষ্ট ভোগ করে। কর্মফল শেষ না হওয়া অবধি এই যাতায়াত চলতে থাকে। আর যেহেতু খুব কম জীবই সাত্বিক কর্ম সারাজীবন ধরে পালন করে, সেইহেতু সত্বগুণী মানুষও কমই দেখা যায়। তামসিক গুণের প্রভাবে জন্মমরণের নিরন্তর চক্র চলতে থাকে।

ADVERTISEMENT
Tuhu Momo Video Teaser

 

 

 

 

 

 

জগন্নাথদেব পুরীর মন্দিরে সারাবছর জাঁকজমক সহকারে পূজিত হয়ে থাকেন। তাঁর লাখো লাখো ভক্তরা রোজ তাঁর দর্শন পেতে মন্দিরে যান এবং তাঁর কৃপা পেয়ে থাকেন। কিন্তু অনন্ত কৃপাময় শ্রী ভগবান তাঁর বড় দাদা বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রা কে নিয়ে রথের ওপর থেকে অগণিত ভক্তকুল কে দর্শন দিয়ে ধন্য করেন। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে যে কোনো মানুষ আজ তাঁর রথের রশি ছুঁয়ে উদ্ধার হয়ে যান। এরকম দৃষ্টান্ত ভারতবর্ষে আর কোথাও চোখে পরে না। ভক্তবত্সল অনন্ত কৃপাময় ভগবান স্বয়ং রত্নবেদী থেকে নেমে পথের ধুলায় রথে যেতে যেতে দর্শন দিচ্ছেন, সারা বিশ্ব এ দৃশ্য হতবাক হয়ে দেখে। তিনি নিজেই প্রমাণ করে দেন যে তিনি সবার মাঝে সবার হয়েই থাকতে চান।

জগন্নাথ দেবের রূপ নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন আছে যে তাঁর মূর্তিটি অসম্পূর্ণ কেন? এ সম্পর্কে পুরাণে আমরা জানতে পারছি যে একবার মা দেবকী বৃন্দাবনের গোপীদের কাছে শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলা সম্পর্কে জানতে চান। কেননা তিনি তো ছোটবেলায় কৃষ্ণকে পান নি। গোপীরা সেই বাল্যলীলার বৃত্তান্ত শুরু করলে মা দেবকীর চোখ জলে ভরে এল। দরজার পাশ থেকে সেই অপূর্ব বৃত্তান্ত শুনছিলেন বলরাম, সুভদ্রা এবং স্বয়ং বাসুদেব। সেই বৃত্তান্ত শুনে তাঁদের শরীর (হাত পা সহ) দ্রবীভূত হয়ে যেতে থাকে, চোখ বড় বড় হয়ে যায় এবং শ্রীকৃষ্ণের হাতের সুদর্শন চক্র দ্রবীভূত হয়ে লম্বা আকার ধারন করে। এই অপরূপ মূর্তিতে তাঁদের প্রকাশ দেখে তাঁদের ভক্তকুল প্রার্থনা করেন যে প্রভু যেন এই করুণাঘন মূর্তিতেই থাকেন। কিন্তু তা সম্ভবপর ছিল না বলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আশ্বাস দেন যে তিনি এই মূর্তিতে উড়িষ্যার জগন্নাথ মন্দিরে পূজিত হবেন । তাঁর ভক্তরা তাঁকে এই রূপে দর্শন করে ধন্য হবেন।

এর পরের ঘটনা সবারই জানা। দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা যখন ছদ্মবেশে এসে উড়িষ্যার তত্কালীন রাজাকে বললেন যে তিনি জগন্নাথদেবের মূর্তি একটি বন্ধ ঘরে তৈরী করে দেবেন, কিন্তু তাঁর শর্ত হল এই যে তিনি নিজে দরজা না খুলে দেওয়া পর্যন্ত কেউ যেন দরজা খুলে ভিতরে না ঢোকে। এমনটা হলে তিনি মূর্তি তৈরির কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যাবেন। রাজা রাজি হলেন। কিন্তু বেশ কিছুদিন পর ধৈর্য না রাখতে পেরে তিনি কপাট খুলে ভিতরে ঢুকতেই দেখলেন মূর্তি অসমাপ্ত এবং শিল্পী অদৃশ্য। রাজা হাহাকার করতে লাগলেন। তখন স্বয়ং ভগবান তাঁকে এই বৃত্তান্ত শুনিয়েছিলেন যে কেন তিনি এইরূপ মূর্তিতে প্রতিভাত হতে চান। রাজা শান্ত হন। আমরা পাই অতি মনোহর শ্রী ভগবানের দর্শন।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য জগন্নাথদেবের রথের সামনে ভাববিহ্বল হয়ে কীর্তন করতেন। বলা হয়ে থাকে জগন্নাথদেবকে সন্তুষ্ট করার এক অন্যতম উপায় এই কীর্তন বা নামগান।

আর কলিতে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেব তাঁর অন্যতম শিষ্য বলরাম বসুর বাড়ি রথ উপলক্ষে গিয়ে অনেক আনন্দ করেছেন, রথের রজ্জু ধরে টেনেছেন এবং আনন্দে বিহ্বল হয়ে নৃত্যগীতে মুখর হয়েছেন এ তথ্য আমরা সবাই জানি। তিনি বলতেন যে জগন্নাথধামে গেলে তাঁর শরীর থাকবে না। তাঁর ভক্তরা কেউ দারুমূর্তি দর্শন করে এলে তিনি তাদের পরম স্নেহে আলিঙ্গন করতেন। তিনি এভাবেই বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন তিনি ও জগন্নাথদেব প্রকৃতপক্ষে এক ও অভিন্ন।

জয় জগন্নাথ।

 
 

 

 

 


0 comments

Saurav Chakraborty

Saurav Chakraborty

Shared publicly - 11th Jul, 21 09:34 pm

জয় জগন্নাথ

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait