ভূত চতুর্দশী স্পেশাল রম্যরচনা - একটি ভুতুড়ে প্রেমের গল্প

ভূত চতুর্দশী স্পেশাল রম্যরচনা - একটি ভুতুড়ে প্রেমের গল্প

হতাশায় পেনটা ছুঁড়ে ফেলল ইন্দ্রনাথ।  লিখতে বসেছিল ভৌতিক গল্প, কিন্তু ঘন্টা তিনেক পরে ডাইরি ভরে উঠল একটা ভৌতিক প্রেমের গল্পেআগের দিন তো আরও যাচ্ছেতাই কাণ্ড ঘটে গেলবাড়ির সবাই সন্ধ্যেবেলা মার্কেটিং করতে যাবার পর ইন্দ্রনাথ বাড়ির আলো নিভিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে লিখতে বসলতার ধারণা হয়েছিল এরকম পরিবেশে ভূতের গল্প লেখার মাথায় প্লট আসবে কিন্তু শেষমেষ হাওয়ায় মোমবাতি গেল নিভে আর অন্ধকারে সুইচ বোর্ডের কাছে যেতে গিয়ে খেল এক আছাড়অন্ধকার ঘরদু-চারটে জোনাকি ঘরের মধ্যে আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছেকি যে করবে ভেবে পাচ্ছে না, এমন সময় কে যেন নাকি সুরে বলে উঠল, “-ন্দ্র-না-, -ন্দ্র-না-, শুনতে পাচ্ছিস? নেতাজী স্কুলের কথা? মনে পড়ছে? স্কুলের পুকুরে নৌকা বিহারের কথা? মনে পড়ছে? …. জানিস, ইন্দ্র! মরেও শান্তি পেলাম না”!

ADVERTISEMENT

ইন্দ্রনাথ চিৎকার করে উঠল, কে, কে ওখানে? একটা ছায়া দেয়ালের গা ঘেঁষে সরে গিয়ে বলল, “এই দেখ, ভূত হয়ে তোদের বাড়ির পাশে বাবলা গাছের ডালে বসে আছিএখন রাত 'টা বাজে, কে জানে! ঘুম ঘুম পাচ্ছেএকটা ঘড়ির ব্যবস্থা যদি থাকত, তবে অন্তত বুঝতে পারতাম, ভোর হতে আর কত বাকি? সদ্য ভূত হয়েছি, তাই এখনো রাতের বেলা ঘুমের নেশাটা কাটেনিতারপর মাথায় উপর টেনসন, শালা! বলে কিনা, এখন প্রেম করতে হবে! প্রেমে পড়াটা যদি অতই সহজ হতো তাহলে বিরহের গান গেয়ে লোকে বেঁচে থাকত নাজীবিত অবস্থায় যেটা হল না, সেটা নাকি এখন মরে গিয়ে করতে হবে! আবার বড় গলায় বলা, এটা এখানকার রুলঅপূর্ণ কাজ গুলো এখানে পূর্ণ করাগুলি মারি তোর রুলের পিছনে

মনে আছে তোর, জয়ন্তীর কথাপ্রেম করার আগে আমাদের দুজনার নৌকা বিহারতুই নৌকা চালাচ্ছিলিতারপর তেনার পুপুদিদি এমন চোখ রাঙানি দিলেন, শেষে জয়ন্তী প্রেমে ভঙ্গ দিলআমিও অবশ্য তখন ভয় পেয়ে পালিয়ে গেছিলামতারপরে নাকি তিনি আমার জন্য কেঁদেছিলেনআর শ্রাবণী, সঞ্চিতার কথা তো তুই সব জানিসচিরকাল ভালোছেলে হয়েই রয়ে গেলাম, কারও প্রেমিক হতে পারলাম না কোনওদিন

তোর মাথা নিশ্চয় গুলিয়ে যাচ্ছে, আমার এইসব কথা শুনেআমারও গিয়েছিলতাহলে একটু আগে থেকে বলি শোনযেদিন ট্রেনের তলায় মাথা দিয়ে, মাটির সাথে চিপকে গেলাম, হাড়-মাস সব দলা পাকিয়ে গেলসব লোক তখন এসে আমার আইডেনটিটি খুঁজতে লাগলো, আর তখন আমি সোঁ সোঁ করে উড়ে যাচ্ছিকোথায় যাচ্ছি, আমি নিজেও জানি নাশুধু উড়ছিএতক্ষন নিশ্চয় নীচে আমার খন্ড খন্ড বডি নিয়ে পরীক্ষা- নিরীক্ষা শুরু হয়ে গেছেকেউ বলছে সুসাইড, কেউ বলছে অ্যাক্সিডেন্ট
বেশ কিছু সময় পর সোঁ সোঁ শব্দে উড়তে উড়তে হঠাৎ পালটি খেয়ে নীচের দিকে পড়তে লাগলামচারিদিকে শুধু কালো আঁধারকিছু দেখতে পারছি নাতবুও আমি নামছিকিছু একটা তে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম আমি কোথায় এলাম?
চারিদিকে গাছ-পালাঘন জঙ্গলকোথাও কোথাও বুনো কাঁটা লতার ঝোঁপ-ঝাড়ে পরিপুর্নআমার চারিপাশে পাঁচ 'জন মানুষ ঘিরে ধরেছেভুল বললাম, মানুষ নয়মানুষের ভূতকিম্ভুতকিমাকার চেহারা, জবা ফুলের মতো লাল চোখ,-আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেআমার চেহারা নিশ্চয় ওদের মতো হয়েছে! সে চেহারা আর আমার দেখতে ইচ্ছে হল না
-"আমি কোথায়?" সামনের ভূত গুলোকে জিজ্ঞেস করলাম আমি
-"এটা ভূতেদের রাজ্যচলো আমাদের রাজার কাছে
রাজ্য আবার কবে তৈরী হল?
রাজ্যের খবর নিশ্চয় মনুষ্য প্রজাতির কাছে অজানানইলে, বলতো আমার, বলতো আমারকিছু সময় পর, আমি রাজার সামনে গেলামএকটা হাড়ের তৈরী চেয়ারের উপর বসে আছেন উনিরক্ত বর্ন চোখলম্বা-চওড়া চেহারাশরীরের হাড় গুলো মোটা মোটাআমাকে দেখে বিশ্রী, বাঁচখাই গলায় বললেন,
-"
পড়া শুনা জানো? শিখেছিলে?"
কি রে! বেটা, জীবিত অবস্থায় কলেজের প্রফেসর ছিল নাকি?
শান্ত গলায় বললাম,-"হ্যাঁ, স্যারকরেছিলাম, তবে বেশি দূর নয়"
-"
আর কি কি করা হত?"
-"
খেলা ধূলা করতাম, টি.ভি দেখতামবই পড়তামবর্তমানে চাকরীও করতাম" আমি বললাম
-"তবে মরতে গেলে কেন?"
-"
ভাল লাগছিল নাতাই দুম করে মরতে ইচ্ছে হলতবে মরে গিয়ে এখন বেশ ভালই লাগছে"
-"
এতটা এক্সাইটেড হওয়ার দরকার নেইপ্রেম করা হয়েছিল?"
-"
না! ওটা আর করা হয়ে ওঠেনিজীবনে সব পেয়েছি স্যার, টাকা-পয়সা,মান-সম্মান, মানুষের ভালোবাসা, কিন্তু ওই নির্দিষ্ট কারও ভালোবাসাটা পায়নি"
-"
কেন?"
-"
মনে হয় ডি.পি. প্রবলেম ছিল"
-"
ডি.পি. মানে?" রাজামশাই অবাক হলেন
-"ওহ! আপনি যখন বেঁচেছিলেন, তখন বোধ হয় ফেসবুক, হোয়াটঅ্যাপস ছিল নাতাই ডি.পি. মানে জানেন না"
-"
বয়স কত?"
-"
এই, সাতাশ পেরিয়ে আঠাশে পড়ল"
-"
হরিপদ!" রাজা হাঁক দিলেন
একটা বেঁটে-খাটো ভূত এলমারবেলের মতো গোল গোল চোখহাতে একটা লাল কভারের খাতাআমি নিশ্চিত, বেটাও নিশ্চয় ওই প্রফেসরের পি..ছিল
-" কে, একটা একুশ নাম্বার পাতা থেকে একটা কাজ দাও" রাজামশাই আমার দিকে আঙুল দিয়ে দেখালেন
হরিপদ খাতা উলটালোআমার দিকে তাকিয়ে বলল,-"তোমাকে প্রেম করতে হবেএকমাস সময় দেওয়া হল"
আমি অসহায় ভাবে রাজামশাই এর দিকে তাকিয়ে বললাম,-" স্যার, কাজ আমার দ্বারা হবে নাঅন্য কোনো কাজ থাকলে বলুন!"
-"
কেন?"
-"
জীবিত থাকতে কেউ ভালবাসতে চাইলো না,- এখন কে বাসবে? প্লিজ অন্য কাজ দিন!"
-"
নাএটাই আমার শেষ কথাএখানে এটাই রুলআর না পারলে, আবার মানুষ হয়ে ফিরে যেতে হবে"
মহা ফ্যাসাদে পড়লামআবার মানুষ! মনে মনে ঠিক করে নিলাম, আবার মনুষ্য জগতে ফিরে যাওয়ার থেকে, এখানে প্রেম করা ভাল
কিন্তু মাস শেষ হতে চললোঅনেক চেষ্টা করলামঅথচ প্রেমিকা জুটলো নাকি করে জুটবে? আমার মতো প্যাংলা ভূত, যাকে দেখে কেউ ভয় পায় না; তাকে কে ভালোবাসবে? যেই দেখে, সেই নাক সিটকে দুরে সরে যায়তাই মন খারাপ করে এই রাত দুপুরে বাবলা গাছের ডালে বসে আছিকি জ্বালা বল তো!
মরেও একটু শান্তি পেলাম না
চারিদিকে নিকষ কালো অন্ধকারতবুও আমি দেখতে পাচ্ছিভূতেরা অন্ধকারেও দেখতে পায়হঠাৎ একটা মেয়েলি কন্ঠের গলা পেলাম
-"এই যে শুনছেন?"
-"
কে?"
-"
আমিএই তিন দিন হল এখানে এসেছিকিছু বুঝতে পারছি না"
মেয়েটি চোখের নিমেষে উঠে আমার সামনের ডালের উপর বসলো
-"আপনি কি কাজ পেলেন?" আমি বললাম
-"এই ঘুরে বেড়ানোকারন, মরার আগের আমি কোথাও কোনোদিন বেড়াতে যাই নিকিন্তু, আপনিই বলুন,একা একা কখনও ঘুরে বেড়াতে ভাল লাগে?"
-"
নাএকদমই না"
-"
আপনি একা একা বসে আছেন, তাই একটু এলাম গল্প করতে"
'
যেন গোদের উপর বিষ ফোঁড়া!' আমি মরছি আমার জ্বালায়,আরেক জন গল্প করতে এলেন! বললাম,-"ভালই করেছেনতবুও একজন সঙ্গী তো পাওয়া গেল"
এখানকার অনান্য ভূত গুলোর কোনো কাজ নেইবেশ মজায় আছে কেউ কেউজীবিত অবস্থায় তারা সব কিছুই কমপ্লিট করে এসেছে
আমরা দুজন হাঁটতে লাগলাম জঙ্গলের ভেতর দিয়েকাঁটা- লতা গায়ে বিঁধে যাচ্ছে,তবুও লাগছে না আমাদের
-"মনে হয়,আপনি খুব কম কথা বলেন?"মেয়েটি বলল
-"তা একটু বলি"
-"
আপনি কতদিন হল এখানে এসেছেন?"
-"
এই, মাস খানেক হতে চলল"
-"
আচ্ছা, আপনি এখানে এলেন কি করে? যদি কিছু মনে না করেন, খুব জানতে ইচ্ছে করছে"মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞেস করল
মানুষ কেন সুসাইড করে, সেটা সবাই জানতে চায়কিন্তু তার কারন টা কেউ বুঝতে চায় নামেয়েটির কথার উত্তরে বললাম,-"ডিপ্রেসান জানেন? মানসিক যন্ত্রনা! সহ্য করতে পারলাম না, তাই দুম করে মরে গেলাম"
-"
হা হা হা হা...নিজের উপর কন্ট্রোল না রাখতে পারলে এরকম হামেশাই ঘটে"মেয়েটি হাসল
গল্প করতে করতে আমরা এখন বড় একটা গাছের নীচে চলে এসেছিদু'জন বসে পড়লামমেয়েটি খুব মিশুকে ছিল, সেটা বেশ বোঝা যায়কিছুসময় থেমে মেয়েটি আমাকে আবার বলল,-"একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?"
-"
করুন"
-"
আপনি কখনো কাউকে ভালবেসেছেন?
আমার হাসি পেলবললাম,-"হ্যাঁভালোবেসে ছিলাম"
-"
তবে মরে গেলেন কেন?"
-"
মানে!"
-"
জানেন না, ভালোবাসা পেলে মানুষ তার জন্যে সব কষ্ট সহ্য করেও বেঁচে থাকে!" মেয়েটি বলল
-"আসলে তা নয়, ভালবেসেছিলাম শুধুই আমি, কিন্তু কেউ আমাকে ভালবাসতে চাই নি"
-"
কেন?"
-"
জানি না আমি
পুবের দিকটা রাঙা হয়ে এলআর বেশীক্ষণ গল্প করা যাবে নাদিনের আলো ভূতেরা সহ্য করতে পারে নাআমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,-"আচ্ছা, আপনি এখানে কি করে এলেন?"
মেয়েটি বলল,-"সে সব অনেক গল্পকাল যদি আপনি এই গাছের নীচে, আসেন তাহলে শোনাবো"
-"
আচ্ছাআসবো"
আমরা দুজন চলে গেলাম,দু'দিকে
পরদিন আমি সেই গাছের নীচে গেলামদেখি, মেয়েটি আগে থেকে এসেই বসে আছেআমাকে দেখেই বলল,-"বসুন"
আমি তার পাশে বসে পড়লামমেয়েটির সঙ্গ আমার ভালই লাগছেমনে হচ্ছে, মেয়েটি যেন আমার খুব কাছেরআসলে ভূত হবার পর সবাই তো কঙ্কালএকই রকম দেখতেমনুষ্য জন্মে সে কেমন দেখতে ছিল এখন আর কিছুই বোঝা যাবে না

বললাম,-"এবার আপনার গল্পটা একটু শুনি"
মেয়েটি বলতে শুরু করলো......
-"জানেন, আপনার মতো আমাকেও কেউ কোনোদিন ভালোবাসে নি"
-"
কেন?" বললাম আমি
মেয়েটি কিছুক্ষন থামলোতারপর বলতে শুরু করলো...." আমার বয়স তিরিশএকটা ছোটো চাকরী করতামসরকারি চাকরীখুব কালো আমার গায়ের রঙচেহারায় কোনো সৌন্দর্যের ছিটে ফোঁটা ছিল নাআমার মুখের দিকে কেউ দু'বার তাকাতো নাআমার বান্ধবীদের যখন দেখতাম, তারা বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে; আমারও খুব ইচ্ছে হত, কেউ আমাকে ভালোবাসুকআমার হাত ধরে ঘুরতে নিয়ে যাককোলে করে উঁচু করে তুলুককিন্তু কেউ সেভাবে এগিয়ে আসেনিস্কুল, কলেজ পেরিয়ে গেলচাকরী পেলামতবুও কেউ এল নাএদিকে বয়স বাড়তে লাগলোমা-বাবা বিয়ে দিতে চাইলেনকিন্তু কেউ আমাকে পছন্দ করল নাএত কালো মেয়েকে কে বিয়ে করবে বলুন? আমাদের গ্রামের লম্পট, মাতাল কয়েক জন আমাকে বিয়ে করতে চাইলোবাবা-মা রাজী হয়ে গেলকিন্তু আমি রাজী হলাম নাকি করে ওই লম্পট দের বিয়ে করি বলুন? ভেবেছিলাম একা একাই কাটিয়ে দেব জীবন টাকিন্তু এদিকে একটা মেয়ে একা একা থাকতে পারে নাআসে-পাশের অনেকের কথা শুনতে হয়মা, আমার জন্যে চোখের জল ফেলতসে জল আমি প্রতি রাতে দেখতে পেতামআসলে কালো মেয়ে নিয়ে সাহিত্যিকরা গল্প বানায়, কবিরা কবিতা লেখে কিন্তু কেউ জীবন সঙ্গিনী করতে চায় নাতারপর নিজের উপর ঘেন্না ধরে গেলরাগ হলতাই আর দেরী না করে, একদিন রাতে গলায় কাপড় জড়িয়ে......
মেয়েটি আর কিছু বলতে পারলো নাআমার মনে হল, মেয়েটি কাঁদছেভূতেরাও কাঁদে! আমার কষ্ট লাগলো খুবচুপ করে রইলাম অনেক্ষনতারপর মেয়েটির হাত ধরলামমেয়েটি আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো
-"এখন যদি আপনাকে কেউ ভালোবাসে, তাহলে কি করবেন?"
-"
এখন কে ভালোবাসবে আমায়?" কথাটি বলে, মেয়েটি চুপ করে রইল
আমি আরেকটু কাছে গিয়ে বললাম,-"আমি ভালোবাসবোখুবমৃত্যুর পর জগতে কোনো ভেদাভেদ নেইকে কালো, কে ফর্সা, কে হিন্দু... ....মুসলিম....খ্রিষ্টান...? সবার একটাই রঙ কালো আর একটাই ধর্ম -সে ভূতএকবার বিশ্বাস করে দেখুন!"
-"
না, তা হয় না" মেয়েটি উঠে সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করলো
আমি পিছন থেকে হেঁকে বললাম,-" প্লিজ! যাবেন নাজানিনা, আপনার সাথে কথা বলার পর খুব থাকতে ইচ্ছে করছে এখানেআপনার গল্প শুনে, আপনাকে সত্যিই ভালোবাসতে ইচ্ছে করছেকিন্তু আমাকে কালই হয়তো আবার মনুষ্য জগতে চলে যেতে হবেআজই শেষ দিন আমারতাই আমি আপনার সাথে আরও কিছুটা সময় থাকতে চাই"
আমার মনুষ্য জগতে চলে যেতে হবে শুনে মেয়েটি থমকে দাঁড়ালোপেছন ফিরে আমার দিকে তাকালোএগিয়ে এল আমার দিকেএকদম আমার পাশে এসে বলল,-" সেকি! না, আপনাকে যেতে দেবো নাআপনিই প্রথম আমাকে ভালোবাসি বললেনকোথাও যেতে দেবো না আপনাকে, বলে আমার হাত ধরলো মেয়েটিদু'জন পাশাপাশি হাঁটতে লাগলাম

ভোরের আলো ফুটতে এখনো অনেক বাকিইন্দ্রনাথ এতক্ষণ সম্মোহিত হয়ে লিখে চলছিল তাঁর বন্ধুর প্রেমকাহিনীলেখা শেষ হতেই ছায়ামুর্তিটা এবার ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নাকি সুরে বলতে লাগল, - চললাম রে ইন্দ্রআসলে অনেক দিন পর তোর সঙ্গে দেখা হয়ে খুব ভাল লাগল তাই আমার প্রেম কাহিনী তোকে বলে একটু হাল্কা হলামতুই যে এতক্ষণ ভূতের গল্প লেখার জন্য ছটফট করছিলি এবার নিশ্চয়ই সেই গল্পের প্লট পেয়ে গেছিস? আজ তোর কাছে আমার এই কাহিনী বলতে পেরে এতদিনে শান্তি পেলামদুর্ভাগ্য আমার এইসব প্লট আমার মাথার মধ্যে থাকলেও লিখতে শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমার জীবনদীপ নিভে যায়, কিন্তু আজ আমার আর কোনও আফশোষ নেইভালো থাকিস আর আমি জানি এবার তুই নিজেই খুব ভালো ভালো ভূতের গল্প লিখতে পারবি

ইন্দ্রনাথের চোখের পাতা দুটো ভিজে এলটেবিলে রাখা নীল পেনটার দিকে তাকিয়ে মনটা ভারী হয়ে এলইন্দ্রনাথ ঠিক করল এবার আগরপাড়ায় গিয়ে মেঘনাথের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেএই মানুষটাকে আরও ভালভাবে জানতে হবেতাঁর অপ্রকাশিত লেখাগুলো পরিবারের কাছ থেকে সংগ্রহ করে সেগুলো প্রকাশ করলে তবেই তাঁর আত্মার শান্তি হবে


0 comments

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait